শ্রী শ্রী গুরুমহারাজের কথা (লিখিত এবং কথিত) নিয়ে এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। গুরুমহারাজের আলোচনা থেকে ‘নাম উপাসনা’ নিয়ে কথা বলা হচ্ছিলো। আমরা আগের আলোচনায় দেখেছিলাম যে, গুরুমহারাজ পৃথিবীর সমস্ত ধর্মমতের নাম-উপাসনার মধ্যে সমন্বয়ের সুরটি কেমন সুন্দরভাবে আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। সেইজন্যেই উনি বলেছিলেন – ” সংসারে যত প্রকারের উপাসনা বিরাজমান, তা সবই নাম-রূপাত্মক – শুধু পার্থক্য আচার-অনুষ্ঠানগত।”
যাইহোক, এরপর গুরুমহারাজ বললেন – ” যে কোনো নাম-সহায়ে অর্চনা করলে তাঁরই উপাসনা হয়। সেইহেতু উপাসনায় বৈচিত্র আছে, কিন্তু বিরোধ নাই। এই গভীর রহস্যপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুভূতির বোধ না হোলে সংসারের বিরোধ বা কলহ মিটবে না। একমাত্র তখনই বিবাদ বা কলহ সমাপ্ত হবে – যখন অখন্ড অধ্যাত্ম চেতনার অনুভূতি হবে। স্বার্থচেতনা, শ্রেণীচেতনা, গোষ্ঠীচেতনা, সাম্প্রদায়িক-চেতনা সেদিন বিলুপ্ত হবে – যেদিন মানবের অধ্যাত্মমানস উন্মেষিত হবে এবং ‘অখন্ড’ বোধে ‘বোধ’ হবে।”
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণও বলেছিলেন – ‘ছোট শিশুরা বাবাকে ‘বাবা’ বলতে পারে না, হয়তো ‘পা’ বলে – কিন্তু তাতেই বাবা বুঝতে পারে এবং কতো খুশি হয়।’ সেইরূপ আন্তরিকভাবে পরমেশ্বরকে একান্ত আপন ভেবে যে কোনো নামেই তাঁকে অর্থাৎ পরমেশ্বরকে (আল্লা, হরি, রাম, কালি, গড ইত্যাদি) ডাকা হোক না কেন – তিনি নিশ্চয়ই সাড়া দেবেন। এই প্রাপ্তিকেই ‘পরমেশ্বরের বোধ’ বা ‘আত্মবোধ’ বলা হয়েছে।
এরপর গুরুমহারাজ এই জগতে বিভিন্ন ধর্মমতের মধ্যে যে কলহ-বিবাদ-বিরোধ রয়েছে, সেগুলির কিসে অবসান হবে__ এই ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন। উনি বলেছেন – ” গভীর রহস্যপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুভূতির বোধ না হওয়া পর্যন্ত জগতের কলহ-বিরোধ-বিবাদ কিছুই মিটবে না !” এই যে কথা – এটাই চরম সত্য! শুধু ধর্মমত নিয়েই যে জগতে সব অশান্তি-ঝামেলা-মারামারি-রক্তপাত,__ তা তো নয় ! ধর্মনীতি ছাড়াও রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি ইত্যাদি নিয়েও এই পৃথিবীতে কম রক্ত ঝরে নি, কম অশান্তি-বিরােধ হয়নি বা এখনও যে হয়ে চলেছে না_তাও নয় ! কিন্তু এই সমস্ত অশান্তি, ঝগড়াঝাঁটি, রক্তপাতের অবসান ঘটতে পারে তখনই – যখন মানুষ পরমেশ্বরের বোধ করবে অর্থাৎ গুরুমহারাজের ভাষায় – ” মানবের অধ্যাত্মমানস উন্মেষিত হবে।” সেইদিনই এই জগতের সমস্ত স্বার্থচেতনা, শ্রেণীচেতনা, গোষ্ঠীচেতনা, সাম্প্রদায়িকতার অবসান হয়ে যাবে। এই জগতের ভালো মানুষেরা যুগে যুগে সমাজের ভালো করার জন্য, মানুষের ভালো করার জন্য কতো প্রচেষ্ঠা করেছেন, এখনও কতো মানুষ– কতো সংস্থা বা সংগঠন এই কাজটাই করে চলেছেন কিন্তু বারে বারে এরা সকলেই অসফল হোচ্ছেন। আর কেন এটা হোচ্ছে__ তার কারণটা বললেন গুরুমহারাজ ! জগতের বেশিরভাগ মানুষ যেদিন আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত হবে – সেইদিনই একমাত্র এই জগৎ থেকে হানাহানি-মারামারির অবসান হবে, মানুষে-মানুষে বিরোধ-কলহ মিটে যাবে – অন্যথায় নয়।
এরপর গুরুমহারাজ একেবারে মূল কথাগুলির উল্লেখ করলেন। উনি বললেন – ” প্রিয় আত্মন্ – অজ্ঞানতায় বা ভ্রান্তিবশতঃ শোক কোরো না। আত্মসচেতন হও। আত্মবিস্মৃত ভাব হোতে উন্নীত হও। অজ্ঞানতা ও ভ্রান্তি হোতে মুক্ত হও। তমসাচ্ছন্ন আবেশ কাটিয়ে ওঠাে। তুমি নিত্যমুক্ত। তোমার নতুন কোনো মুক্তির সম্ভাবনা কোথায় ! একমাত্র ভ্রান্তির কারণ – ‘বন্ধন কল্পনা’। সত্ত্বর অবিদ্যার অজ্ঞানতা হোতে মুক্ত হও। ত্রিগুণাতীত, অচিন্ত্য, অমৃততত্ত্বকে অনুভব করো। যা একমাত্র যোগলব্ধ সমাধি দ্বারা বোধে বোধ হবে। ‘তত্ত্বমসি’ ! *আনন্দ প্রতিষ্ঠিত। পরমেশ্বরের করুণা অপার* !”
পাঠকবৃন্দ ! এটাই আরণ্যক বা উপনিষদের মূল কথা ! এই শিক্ষা বহুকাল ধরে গিরি-গুহা-অরণ্যে জ্ঞানী-যোগী-মহাসাধকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” বনের বেদান্তকে স্বামী বিবেকানন্দ এই যুগে টেনে এনে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন।” স্বামীজি যেটুকু সম্ভব করেছেন – এইবার এইযুগের(বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ) তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য__ এই কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন ভগবান স্বামী পরমানন্দ স্বয়ং ! তিনি প্রথমেই এই পৃথিবীর দল-মত-জাতি-বর্ণ-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল মানুষকে “প্রিয় আত্মন্”_ বলে সম্মোধন করে এটাই বোঝালেন যে, আত্মবোধ বা ব্রহ্মবোধে বোধিপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে সকলেই আত্মস্বরূপ!! আর এই ‘বোধে’-ই সকলকে পৌঁছাতে হবে। সেইজন্যেই গুরুমহারাজ অনেকবার তাঁর সিটিংয়ে ভক্তদের উদ্দেশ্য করে বলতেন – “তোরা এক-একটা পরমানন্দ হয়ে ওঠ্ দেখি – তাহলেই আমি জানবো আমার আসার (অবতরণের) সার্থকতা !”
ভারতবর্ষের প্রাচীন ঋষিদের সুরেই উপনিষদের অন্যতম মহাবাক্য পুনরায় উচ্চারণ করলেন গুরুমহারাজ – ‘তত্ত্বমসি’ ! এই শব্দটাকে ভেঙে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ‘তৎ–তমসি’– তুমিই সেই। এখানে ‘সেই’ অর্থে কোনো ব্যক্তি, বস্তু, শক্তি বা কোনো কিছুই নয়। এইসব দিয়ে ‘সেই’ বা ত্রিগুণ ব্রহ্মকে বোঝানো যায় না। গুরুমহারাজ এইজন্যেই মহাবাক্যগুলির ইংরেজি করে বলেছিলেন – ‘সোহহং’ বা ‘আমিই সেই’ এর সঠিক ইংরাজি অনুবাদ হবে – ” I am that !” ‘তত্ত্বমসি’ বা ‘তুমিই সেই’ এর ইংরাজি অনুবাদ হবে – ” You are that !” এখানে ‘that’ শব্দটি কোনো বস্তুবাচক, ব্যক্তিবাচক, গুণবাচক ইত্যাদি কোনো ‘বাচক’-ই নয়। এটি absolute !!
যাইহোক, এরপর গুরুমহারাজ বললেন – ” যে কোনো নাম-সহায়ে অর্চনা করলে তাঁরই উপাসনা হয়। সেইহেতু উপাসনায় বৈচিত্র আছে, কিন্তু বিরোধ নাই। এই গভীর রহস্যপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুভূতির বোধ না হোলে সংসারের বিরোধ বা কলহ মিটবে না। একমাত্র তখনই বিবাদ বা কলহ সমাপ্ত হবে – যখন অখন্ড অধ্যাত্ম চেতনার অনুভূতি হবে। স্বার্থচেতনা, শ্রেণীচেতনা, গোষ্ঠীচেতনা, সাম্প্রদায়িক-চেতনা সেদিন বিলুপ্ত হবে – যেদিন মানবের অধ্যাত্মমানস উন্মেষিত হবে এবং ‘অখন্ড’ বোধে ‘বোধ’ হবে।”
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণও বলেছিলেন – ‘ছোট শিশুরা বাবাকে ‘বাবা’ বলতে পারে না, হয়তো ‘পা’ বলে – কিন্তু তাতেই বাবা বুঝতে পারে এবং কতো খুশি হয়।’ সেইরূপ আন্তরিকভাবে পরমেশ্বরকে একান্ত আপন ভেবে যে কোনো নামেই তাঁকে অর্থাৎ পরমেশ্বরকে (আল্লা, হরি, রাম, কালি, গড ইত্যাদি) ডাকা হোক না কেন – তিনি নিশ্চয়ই সাড়া দেবেন। এই প্রাপ্তিকেই ‘পরমেশ্বরের বোধ’ বা ‘আত্মবোধ’ বলা হয়েছে।
এরপর গুরুমহারাজ এই জগতে বিভিন্ন ধর্মমতের মধ্যে যে কলহ-বিবাদ-বিরোধ রয়েছে, সেগুলির কিসে অবসান হবে__ এই ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন। উনি বলেছেন – ” গভীর রহস্যপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুভূতির বোধ না হওয়া পর্যন্ত জগতের কলহ-বিরোধ-বিবাদ কিছুই মিটবে না !” এই যে কথা – এটাই চরম সত্য! শুধু ধর্মমত নিয়েই যে জগতে সব অশান্তি-ঝামেলা-মারামারি-রক্তপাত,__ তা তো নয় ! ধর্মনীতি ছাড়াও রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি ইত্যাদি নিয়েও এই পৃথিবীতে কম রক্ত ঝরে নি, কম অশান্তি-বিরােধ হয়নি বা এখনও যে হয়ে চলেছে না_তাও নয় ! কিন্তু এই সমস্ত অশান্তি, ঝগড়াঝাঁটি, রক্তপাতের অবসান ঘটতে পারে তখনই – যখন মানুষ পরমেশ্বরের বোধ করবে অর্থাৎ গুরুমহারাজের ভাষায় – ” মানবের অধ্যাত্মমানস উন্মেষিত হবে।” সেইদিনই এই জগতের সমস্ত স্বার্থচেতনা, শ্রেণীচেতনা, গোষ্ঠীচেতনা, সাম্প্রদায়িকতার অবসান হয়ে যাবে। এই জগতের ভালো মানুষেরা যুগে যুগে সমাজের ভালো করার জন্য, মানুষের ভালো করার জন্য কতো প্রচেষ্ঠা করেছেন, এখনও কতো মানুষ– কতো সংস্থা বা সংগঠন এই কাজটাই করে চলেছেন কিন্তু বারে বারে এরা সকলেই অসফল হোচ্ছেন। আর কেন এটা হোচ্ছে__ তার কারণটা বললেন গুরুমহারাজ ! জগতের বেশিরভাগ মানুষ যেদিন আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত হবে – সেইদিনই একমাত্র এই জগৎ থেকে হানাহানি-মারামারির অবসান হবে, মানুষে-মানুষে বিরোধ-কলহ মিটে যাবে – অন্যথায় নয়।
এরপর গুরুমহারাজ একেবারে মূল কথাগুলির উল্লেখ করলেন। উনি বললেন – ” প্রিয় আত্মন্ – অজ্ঞানতায় বা ভ্রান্তিবশতঃ শোক কোরো না। আত্মসচেতন হও। আত্মবিস্মৃত ভাব হোতে উন্নীত হও। অজ্ঞানতা ও ভ্রান্তি হোতে মুক্ত হও। তমসাচ্ছন্ন আবেশ কাটিয়ে ওঠাে। তুমি নিত্যমুক্ত। তোমার নতুন কোনো মুক্তির সম্ভাবনা কোথায় ! একমাত্র ভ্রান্তির কারণ – ‘বন্ধন কল্পনা’। সত্ত্বর অবিদ্যার অজ্ঞানতা হোতে মুক্ত হও। ত্রিগুণাতীত, অচিন্ত্য, অমৃততত্ত্বকে অনুভব করো। যা একমাত্র যোগলব্ধ সমাধি দ্বারা বোধে বোধ হবে। ‘তত্ত্বমসি’ ! *আনন্দ প্রতিষ্ঠিত। পরমেশ্বরের করুণা অপার* !”
পাঠকবৃন্দ ! এটাই আরণ্যক বা উপনিষদের মূল কথা ! এই শিক্ষা বহুকাল ধরে গিরি-গুহা-অরণ্যে জ্ঞানী-যোগী-মহাসাধকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” বনের বেদান্তকে স্বামী বিবেকানন্দ এই যুগে টেনে এনে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন।” স্বামীজি যেটুকু সম্ভব করেছেন – এইবার এইযুগের(বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ) তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য__ এই কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন ভগবান স্বামী পরমানন্দ স্বয়ং ! তিনি প্রথমেই এই পৃথিবীর দল-মত-জাতি-বর্ণ-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল মানুষকে “প্রিয় আত্মন্”_ বলে সম্মোধন করে এটাই বোঝালেন যে, আত্মবোধ বা ব্রহ্মবোধে বোধিপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে সকলেই আত্মস্বরূপ!! আর এই ‘বোধে’-ই সকলকে পৌঁছাতে হবে। সেইজন্যেই গুরুমহারাজ অনেকবার তাঁর সিটিংয়ে ভক্তদের উদ্দেশ্য করে বলতেন – “তোরা এক-একটা পরমানন্দ হয়ে ওঠ্ দেখি – তাহলেই আমি জানবো আমার আসার (অবতরণের) সার্থকতা !”
ভারতবর্ষের প্রাচীন ঋষিদের সুরেই উপনিষদের অন্যতম মহাবাক্য পুনরায় উচ্চারণ করলেন গুরুমহারাজ – ‘তত্ত্বমসি’ ! এই শব্দটাকে ভেঙে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ‘তৎ–তমসি’– তুমিই সেই। এখানে ‘সেই’ অর্থে কোনো ব্যক্তি, বস্তু, শক্তি বা কোনো কিছুই নয়। এইসব দিয়ে ‘সেই’ বা ত্রিগুণ ব্রহ্মকে বোঝানো যায় না। গুরুমহারাজ এইজন্যেই মহাবাক্যগুলির ইংরেজি করে বলেছিলেন – ‘সোহহং’ বা ‘আমিই সেই’ এর সঠিক ইংরাজি অনুবাদ হবে – ” I am that !” ‘তত্ত্বমসি’ বা ‘তুমিই সেই’ এর ইংরাজি অনুবাদ হবে – ” You are that !” এখানে ‘that’ শব্দটি কোনো বস্তুবাচক, ব্যক্তিবাচক, গুণবাচক ইত্যাদি কোনো ‘বাচক’-ই নয়। এটি absolute !!