শ্রী শ্রী গুরুমহারাজের কথা (লিখিত এবং কথিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। আগের দিন আমরা যে আলোচনায় ছিলাম, তার রেশ টেনে আরো কিছু কথা বলা যায়। এখন সেই চেষ্টাই করা যাক্ ! অনেক বিদ্ব্যোৎজন বলে থাকেন যে, ভালোবাসা হোলো মনের একপ্রকার সূক্ষ্ম অনুভূতি বা বৃত্তি। গুরুমহারাজ সেইখানেই আঘাতটা হেনেছেন ! উনি বলেছেন যে, ‘ভালোবাসা’ মনের বৃত্তি বা মানসিক উত্তেজনা নয়, এটি হা-হুতাশ বা চোখের জল ফেলা অথবা কিছু সুখানুভূতিও নয় – কারণ প্রকৃত ভালোবাসায় মানুষের মধ্যে অপরের কষ্ট মোচনের জন্য, দুঃখ মোচনের জন্য অন্তর থেকে প্রবল তাড়ণার উদয় হয়। এই ‘তাড়ণা’ এতটাই তীব্র যে, মানুষ (সাধক) তার আপনার ‘অহংভাব’ সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হয়ে যায় – শুধুমাত্র অপরের কিসে ভালো হবে – এই কর্মে নিজেকে উৎসর্গ করে দেয় !
মহাত্মা-মহাপুরুষ-যোগী-সন্ন্যাসীদের গৃহত্যাগের অন্যতম কারণই হোচ্ছে এই ভালোবাসার ‘তাড়ণা’ – যা তাকে ব্যষ্টি চেতনা থেকে সমষ্টি চেতনায় উন্নীত করে তোলে। আর যিনি পরমপ্রেমিক বা মহাপ্রেমিক – তাঁর লক্ষণ হোলো – তাঁর মধ্যে তখন শুধুমাত্র মানুষই নয়, সমগ্র জীবজগতের প্রতি অতলান্ত ভালোবাসা জাগ্রত হয়। গুরুমহারাজ আগে একবার বলেছিলেন – ” পরমজ্ঞান এবং পরমপ্রেম বস্তুতঃ একই।” এই যে উনি বললেন – ” প্রেম হোলো অন্ধকার হোতে জ্যোতিঃতে উত্তরণের আকুতি।” এটাই তো উপনিষদের মহামন্ত্রেরই অনুরণন – “তমসো মা জ্যোতির্গময়ঃ”!
তবে এরপরেই গুরুমহারাজ যে কথাটা বলেছেন সেটাকে নিয়েও আলোচনার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে ! কারণ উনি বলেছেন – ” মানব একটি ভাবসত্তা – আর মানবের দেহকে আশ্রয় করে ঐ ভাবসত্তারই অভিবিকাশ বা প্রকাশ ঘটে থাকে।” পাঠকবৃন্দ ! আমরা সকলেই (মানব) তাহলে এক একটি ভাবসত্তা অর্থাৎ ভাবনা বা ভাব দ্বারা নির্মিত সত্তা ! এই ‘ভাব’ বা ‘ভাবনা’ পৃথক পৃথক বলেই সত্তা-র ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। ‘ভাব’ বা ‘ভাবনা’ বন্ধ হয়ে গেলেই সত্তা, পরমসত্তার সাথে মিলে অভিন্ন হয়ে যায়।
যাই হোক – আমরা বরং দেখি এরপরে গুরুমহারাজ ‘প্রেম’ বিষয়ে আরও কি কি বলেছেন। উনি বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ – অখন্ড প্রেমই হোলো (মানবের)ধর্ম। প্রেম ছাড়া মানবের আর কি ধর্ম হোতে পারে ! প্রেমিক ভেদবুদ্ধিরহিত ! তিনি কারও প্রতি ভেদবুদ্ধি পোষণ করতে পারেন না। কারণ এই বিশ্ব অখণ্ড প্রেমের প্রকাশ। খন্ড খন্ড মহাবিশ্বকে অখন্ড প্রেমই ধরে রেখেছে বা ধারণ করে আছে !” ___কতো সুন্দর কথা বলেছেন আমাদের পরমপ্রিয় সুন্দরতম গুরুমহারাজ ! মানব সমাজের কাছে এই কথাগুলি একদমই নতুন ! “অখন্ড প্রেমই হোলো ধর্ম”– এই কথাটা যেদিন মানব সমাজ বুঝতে পারবে, সেদিন আর ভেদ কোথায় – তখন সবাই তো ‘ভেদবুদ্ধিরহিত’ ! ধর্মই সবকিছুকে ধরে আছে –আরো ভালভাবে বলা চলে __’প্রেমধর্মই এই বিশ্বসংসারের সবকিছুকে ধরে রেখেছে।’ গুরু মহারাজের কথা অনুযায়ী পরমেশ্বর তত্ত্বই – অখন্ড প্রেমতত্ত্ব ! আর এই অখণ্ড প্রেমতত্ত্ব থেকেই বিশ্বসংসারের প্রকাশ। যত কিছু খন্ড খন্ড অংশ বা ভেদভাব এই জগতে পরিলক্ষিত হোচ্ছে – তা অজ্ঞানতাবশতঃ বা প্রেমহীনতাবশতঃ। প্রেমিক মানুষের কাছেই “বসুধৈব কুটুম্বকম”! অন্যথায় এসব ‘কথার কথা’! তাই নয় কি ?
প্রেমিক মানুষেরাই বলতে পারেন – ” সর্বে লোকাঃ সুখিনঃ ভবন্তু – সর্বে সন্তু নিরাময়ঃ!” হ্যাঁ, এঁরা ঋষি ছিলেন, কিন্তু মহাজ্ঞানীরাই তো মহাপ্রেমিক – এটাই তো গুরুমহারাজ বলেছেন। কারণ উনি বলেছেন – মহাজ্ঞানী এবং মহাপ্রেমিক বস্তুত একই !
এবার আমরা গুরুমহারাজ এরপরে কি বলেছিলেন, তা শুনে নিই ! উনি বললেন – ” বিশ্বজুড়ে ঐ অখন্ড প্রেমই বিরাজিত, আর অসীম ও সীমিত ব্যক্তিত্বের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে তার ভিতর দিয়ে সীমাহীন, অপার, অখন্ড প্রেমের স্ফুরণ ও প্রকাশই হোলো তার ‘ভগবত্ব’! এইজন্য এই বিশ্বসংসারে অসংখ্য ব্যক্তিত্বের স্ফূরণ হোচ্ছে। এই বিশাল বিশ্বব্যাপী সেই প্রেমস্বরূপ পরমেশ্বরই নাচছেন। বিভিন্ন নাম-রূপ নিয়ে ঐ প্রেমরূপ নটবর বা মহান অভিনেতা নাটকীয় ভঙ্গিতে নেচে চলেছেন অনাদিকাল ধরে। তাই কে বা কাকে হিংসা করবে ? কে, কাকে ঘৃণা করবে কিম্বা বাহবা দেবে ? প্রকারান্তরে এ তো নিজেকেই বা ঈশ্বরকেই হিংসা, ঘৃণা কিংবা বাহবা দেওয়া !”
গুরুমহারাজ উপরোক্ত কথাগুলি যা বলেছেন – তা বোধের কথা ! মোটেই সাধারণ কথা নয়। অখন্ড প্রেমই – পরমেশ্বর তত্ত্ব, আর এই তত্ত্বই খন্ড বা সীমিত ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ মানবসহ বিভিন্ন জীবরূপে এবং সেই সাথে সাথেই অসীম রূপে প্রকাশিত। এই যে একই সাথে অসীম এবং সীমা – এই দুইয়ের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকছে – এটাই পরমেশ্বরের (অখন্ড প্রেমের) ভগবত্ব ! গুরুমহারাজ সেই পরমেশ্বর (অখন্ডপ্রেম)-কে প্রেমরূপ নটবরের সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন যে এই মহান অভিনেতা অনাদিকাল ধরে নাটকীয় ভঙ্গিতে নেচে চলেছে এবং তাতেই বিশ্বব্যাপী খন্ড খন্ড অসংখ্য ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ ঘটছে !
তাহলে সেই অখন্ড প্রেম যদি খন্ড খন্ড রূপে বিভিন্ন নাম ও রূপের প্রকাশ ঘটিয়ে অসংখ্য ব্যক্তিত্বের স্ফূরণ ঘটিয়ে থাকে – তাহলে আর ভেদ কোথায় ? কে কাকে হিংসা করে, কে কাকে বিরোধ করে বা ঘৃণা করে ? সকলেই তো সেই অখন্ড প্রেমেরই প্রকাশ !
মহাত্মা-মহাপুরুষ-যোগী-সন্ন্যাসীদের গৃহত্যাগের অন্যতম কারণই হোচ্ছে এই ভালোবাসার ‘তাড়ণা’ – যা তাকে ব্যষ্টি চেতনা থেকে সমষ্টি চেতনায় উন্নীত করে তোলে। আর যিনি পরমপ্রেমিক বা মহাপ্রেমিক – তাঁর লক্ষণ হোলো – তাঁর মধ্যে তখন শুধুমাত্র মানুষই নয়, সমগ্র জীবজগতের প্রতি অতলান্ত ভালোবাসা জাগ্রত হয়। গুরুমহারাজ আগে একবার বলেছিলেন – ” পরমজ্ঞান এবং পরমপ্রেম বস্তুতঃ একই।” এই যে উনি বললেন – ” প্রেম হোলো অন্ধকার হোতে জ্যোতিঃতে উত্তরণের আকুতি।” এটাই তো উপনিষদের মহামন্ত্রেরই অনুরণন – “তমসো মা জ্যোতির্গময়ঃ”!
তবে এরপরেই গুরুমহারাজ যে কথাটা বলেছেন সেটাকে নিয়েও আলোচনার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে ! কারণ উনি বলেছেন – ” মানব একটি ভাবসত্তা – আর মানবের দেহকে আশ্রয় করে ঐ ভাবসত্তারই অভিবিকাশ বা প্রকাশ ঘটে থাকে।” পাঠকবৃন্দ ! আমরা সকলেই (মানব) তাহলে এক একটি ভাবসত্তা অর্থাৎ ভাবনা বা ভাব দ্বারা নির্মিত সত্তা ! এই ‘ভাব’ বা ‘ভাবনা’ পৃথক পৃথক বলেই সত্তা-র ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। ‘ভাব’ বা ‘ভাবনা’ বন্ধ হয়ে গেলেই সত্তা, পরমসত্তার সাথে মিলে অভিন্ন হয়ে যায়।
যাই হোক – আমরা বরং দেখি এরপরে গুরুমহারাজ ‘প্রেম’ বিষয়ে আরও কি কি বলেছেন। উনি বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ – অখন্ড প্রেমই হোলো (মানবের)ধর্ম। প্রেম ছাড়া মানবের আর কি ধর্ম হোতে পারে ! প্রেমিক ভেদবুদ্ধিরহিত ! তিনি কারও প্রতি ভেদবুদ্ধি পোষণ করতে পারেন না। কারণ এই বিশ্ব অখণ্ড প্রেমের প্রকাশ। খন্ড খন্ড মহাবিশ্বকে অখন্ড প্রেমই ধরে রেখেছে বা ধারণ করে আছে !” ___কতো সুন্দর কথা বলেছেন আমাদের পরমপ্রিয় সুন্দরতম গুরুমহারাজ ! মানব সমাজের কাছে এই কথাগুলি একদমই নতুন ! “অখন্ড প্রেমই হোলো ধর্ম”– এই কথাটা যেদিন মানব সমাজ বুঝতে পারবে, সেদিন আর ভেদ কোথায় – তখন সবাই তো ‘ভেদবুদ্ধিরহিত’ ! ধর্মই সবকিছুকে ধরে আছে –আরো ভালভাবে বলা চলে __’প্রেমধর্মই এই বিশ্বসংসারের সবকিছুকে ধরে রেখেছে।’ গুরু মহারাজের কথা অনুযায়ী পরমেশ্বর তত্ত্বই – অখন্ড প্রেমতত্ত্ব ! আর এই অখণ্ড প্রেমতত্ত্ব থেকেই বিশ্বসংসারের প্রকাশ। যত কিছু খন্ড খন্ড অংশ বা ভেদভাব এই জগতে পরিলক্ষিত হোচ্ছে – তা অজ্ঞানতাবশতঃ বা প্রেমহীনতাবশতঃ। প্রেমিক মানুষের কাছেই “বসুধৈব কুটুম্বকম”! অন্যথায় এসব ‘কথার কথা’! তাই নয় কি ?
প্রেমিক মানুষেরাই বলতে পারেন – ” সর্বে লোকাঃ সুখিনঃ ভবন্তু – সর্বে সন্তু নিরাময়ঃ!” হ্যাঁ, এঁরা ঋষি ছিলেন, কিন্তু মহাজ্ঞানীরাই তো মহাপ্রেমিক – এটাই তো গুরুমহারাজ বলেছেন। কারণ উনি বলেছেন – মহাজ্ঞানী এবং মহাপ্রেমিক বস্তুত একই !
এবার আমরা গুরুমহারাজ এরপরে কি বলেছিলেন, তা শুনে নিই ! উনি বললেন – ” বিশ্বজুড়ে ঐ অখন্ড প্রেমই বিরাজিত, আর অসীম ও সীমিত ব্যক্তিত্বের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে তার ভিতর দিয়ে সীমাহীন, অপার, অখন্ড প্রেমের স্ফুরণ ও প্রকাশই হোলো তার ‘ভগবত্ব’! এইজন্য এই বিশ্বসংসারে অসংখ্য ব্যক্তিত্বের স্ফূরণ হোচ্ছে। এই বিশাল বিশ্বব্যাপী সেই প্রেমস্বরূপ পরমেশ্বরই নাচছেন। বিভিন্ন নাম-রূপ নিয়ে ঐ প্রেমরূপ নটবর বা মহান অভিনেতা নাটকীয় ভঙ্গিতে নেচে চলেছেন অনাদিকাল ধরে। তাই কে বা কাকে হিংসা করবে ? কে, কাকে ঘৃণা করবে কিম্বা বাহবা দেবে ? প্রকারান্তরে এ তো নিজেকেই বা ঈশ্বরকেই হিংসা, ঘৃণা কিংবা বাহবা দেওয়া !”
গুরুমহারাজ উপরোক্ত কথাগুলি যা বলেছেন – তা বোধের কথা ! মোটেই সাধারণ কথা নয়। অখন্ড প্রেমই – পরমেশ্বর তত্ত্ব, আর এই তত্ত্বই খন্ড বা সীমিত ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ মানবসহ বিভিন্ন জীবরূপে এবং সেই সাথে সাথেই অসীম রূপে প্রকাশিত। এই যে একই সাথে অসীম এবং সীমা – এই দুইয়ের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকছে – এটাই পরমেশ্বরের (অখন্ড প্রেমের) ভগবত্ব ! গুরুমহারাজ সেই পরমেশ্বর (অখন্ডপ্রেম)-কে প্রেমরূপ নটবরের সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন যে এই মহান অভিনেতা অনাদিকাল ধরে নাটকীয় ভঙ্গিতে নেচে চলেছে এবং তাতেই বিশ্বব্যাপী খন্ড খন্ড অসংখ্য ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ ঘটছে !
তাহলে সেই অখন্ড প্রেম যদি খন্ড খন্ড রূপে বিভিন্ন নাম ও রূপের প্রকাশ ঘটিয়ে অসংখ্য ব্যক্তিত্বের স্ফূরণ ঘটিয়ে থাকে – তাহলে আর ভেদ কোথায় ? কে কাকে হিংসা করে, কে কাকে বিরোধ করে বা ঘৃণা করে ? সকলেই তো সেই অখন্ড প্রেমেরই প্রকাশ !