শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (কথিত এবং লিখিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। আমরা গুরুজীর লেখা ‘”সহজতা ও প্রেম” নামক গ্রন্থের ‘প্রেম’ বিষয়ক কথায় ছিলাম। গুরুমহারাজ এই নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ – সংসারে দেখা যায় – কেউ কেউ কেবল নিজের মধ্যে এবং তার আপন সম্প্রদায়েরই ভগবত্বা স্বীকার করে থাকেন, অন্যত্র বা অন্য কারও ভিতর ভগবত্বা স্বীকার করেন না ! নিজেরাই একমাত্র পরমেশ্বরের আপনজন, আর অন্য সকলে ভগবান হোতে বিচ্যুত – এরূপ ভেবেই হিংসা, ঘৃণা ও অবজ্ঞার দৃষ্টিতে অন্য সকলের হৃদয়ে ব্যথা প্রদান করে থাকেন। এমনকি পাশবিক, ইতর আচরণ করতেও কুণ্ঠিত হ’ন না !”
এই যে কথাগুলি গুরুমহারাজ বললেন, এর প্রমাণ তো আমরা অহরহ পেয়েই চলেছি ! সমাজে যত অশান্তি, গন্ডগোল, ঝগড়া – তার বেশিরভাগটাই তো ঐরকম সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকেই। “আমার সম্প্রদায়ের উপাস্যের ভগবত্বা স্বীকার্য্য, অন্য সম্প্রদায়ের উপাস্যের মধ্যে কোন ভগবৎসত্ত্বা বিদ্যমান নয়” অথবা “আমার সম্প্রদায়ের মানুষেরা পরমেশ্বরের (গড, আল্লা, হরি) আপনজন – অন্যরা কেউ তা নয়” — এই ভাবনাই বর্তমান সমাজে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে চলেছে। আর এই ভাবনা থেকেই হিংসা, ঘৃণা ইত্যাদির বাতাবরণ তৈরি হয়ে থাকে – যার অবশ্যম্ভাবী ফল হোলো হিংসা, হানাহানি, রক্তপাত এবং সর্বোপরি নিরীহ মানুষের উপর বা অসহায় নারী-শিশুদের উপর পাশবিক ইতর আচরণ ঘটানো !
এই ভাবনা ঠিক নয়। তাই গুরুমহারাজ এর মীমাংসা করার জন্য বলেছেন – ” কিন্তু পরমেশ্বর তো সমস্ত কিছুর মধ্যেই রয়েছেন, কারোকে ছেড়ে অথবা বাদ দিয়ে তো তিনি ন’ন। কারণ তাঁর সৃষ্টির বাইরে তো কিছুই নাই, তাহলে তিনি সৃষ্টিছাড়া করবেন কেমন করে, আর রাখবেনই বা কোথায় ? এই মহাবিশ্ব তাঁর মধ্যেই আশ্রিত। পরমেশ্বরের মধ্যেই তো আমরা রয়েছি, সত্যিই তো তাঁর বাইরে কিছুই নাই। সবকিছুই প্রতিভাসিত বা প্রকাশিত হোচ্ছে তাঁরই মধ্যে ! অতএব ভিতরই বা কি, আর বাহিরই বা কি ? অঙ্গাঙ্গিভাবে বা ওতপ্রোতভাবে তিনি সমস্তকিছু করেন বা করতে পারেন৷ একটিই মাত্র তিনি করতে পারেন না এবং তিনি করেন না, তা হোলো – কাউকে ত্যাগ করা ! আর ত্যাগ করে তাকে রাখবেনই বা কোথায় ! এইখানেই তাঁর মহিমা বা মাধুর্য্য !”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! তাহলে আমরা পরমেশ্বরের প্রকৃত মহিমা বা মাধুর্য্য সম্বন্ধে যা অবগত হোলাম_ তা হোলো পরমেশ্বরের একটি এবং একমাত্র একটিই অসাধ্য কাজ রয়েছে। আর সেটা হোচ্ছে – যেহেতু সবকিছুই তাঁর মধ্যে অবস্থিত, তাই তিনি কাউকে ত্যাগ করতে পারেন না। কারণ ত্যাগ করে তিনি তাকে রাখবেনই বা কোথায় ? তাঁর তো সবটাই ‘ভিতর’ – তাঁর তো ‘বাহির’ বলে কিছুই নাই ! এ বড় অদ্ভুত কথা ! আজকে আমরা এই নতুন কথাটি শুনলাম এবং শিখলাম এবং সেটা হোচ্ছে __পরমেশ্বরের (আল্লা, হরি, গড) অসাধ্য কিছুই থাকার কথা নয় – কারণ তিনি সর্বশক্তিমান, এক এবং অদ্বিতীয় ! কিন্তু তাঁরও একটি অসাধ্য কাজ রয়েছে, আর তা হোলো – ‘কাউকে ত্যাগ না করা’ !
তাহলে সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে, গোষ্ঠীতে-গোষ্ঠীতে, শ্রেণীতে-শ্রেণীতে, জাতিতে-জাতিতে এই যে বিভেদ-হিংসা-হানাহানি – সেটা আসছে চরম অজ্ঞতা থেকে ! এইজন্যেই মহাজনেরা বলে থাকেন – ” মানবজাতি এখনো অজ্ঞানের অন্ধকারে রয়েছে !” এইবার আমরা বুঝতে পারলাম যে, সত্যিই আমরা অজ্ঞান ! আমরা সকলেই সেই পরম করুণাময় পরমেশ্বরের কোলে বসে রয়েছি, কিন্তু সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন হয়ে ভাবছি, ‘পরমেশ্বর শুধুই আমার – ওর নয়’ ! এটাই অজ্ঞতা – এটাই আহাম্মকি – এটাই চরম নির্বুদ্ধিতা এবং বালখিল্যতা !
যাইহোক, আমরা এরপর গুরুমহারাজ কি বলেছেন সেইসব সম্বন্ধে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করি। এরপরে উনি বলেছেন – ” ভেদজ্ঞান বর্জিত বিশুদ্ধ প্রেমের মহিমা অপার ! জীবনের চির আকাঙ্খিত আনন্দ ও শান্তি – এই বিশুদ্ধ প্রেমের মিলনেই লাভ হয়। প্রেম দ্বারা জীবের চিরকল্যাণ সাধিত হয়। ভালোবাসার অপার শক্তিতে রিপুভয় দূরীভূত হয়ে যায়। ঐগুলি আর প্রেমিককে বিরক্ত করে না। তাই আনন্দে বাঁচতে হবে, আনন্দেই মরতে হবে আর আনন্দের মূল (হোলো) ভালোবাসা – স্বার্থগন্ধরহিত তীব্র ভালোবাসা ! ভালোবাসার অপরিমেয় শক্তিতে সমস্ত কিছুই পরম সুখময় বা আনন্দময় হয়ে ওঠে।”
গুরুমহারাজের কথার ব্যাখ্যা করতে যাবার মতো মূর্খতা আর হয় না ! সুতরাং সেই কাজ আমরা কখনোই করবো না। আমরা শুধু তাঁর কথাগুলো যেমন বুঝেছি – সেটাই আলোচনা করবো। ‘বিশুদ্ধ প্রেম’ হোলো ভেদজ্ঞানবর্জিত ! তাই যার মধ্যে এখনো ভেদজ্ঞান যায়নি, ‘ওরা–আমরা’-র গণ্ডি অতিক্রম হয়নি, এটা নিশ্চিত যে তার এখনও প্রেমলাভ হয় নি। গুরুমহারাজ আরো বলেছেন যে, ঐ বিশুদ্ধ প্রেমলাভ হোলেই মানবের (সাধকের) জীবনে চির-আকাঙ্খিত আনন্দ ও শান্তি লাভ হয়। আরও একটা important কথা গুরুমহারাজ এখানে বললেন, আর তা হোলো – ” ভালোবাসার (প্রেমের) অপার শক্তিতে রিপুভয় দূরীভূত হয় !” যে রিপুদেরকে জয় করার জন্য সাধকদের এতো সাধনা – সেই রিপুসকল অনায়াসেই জয়লাভ করা যায় প্রেমলাভ হোলে।
কিন্তু গুরুমহারাজ এখানে বিশেষভাবে ভালোবাসাকে বিশেষিত করে বলেছেন – “স্বার্থগন্ধরহিত ভালোবাসা”! ভালোবাসার মধ্যে স্বার্থগন্ধ থাকলে তা আর ‘প্রেম’ পদবাচ্য থাকে না – তাকে তখন বলা হয় ‘কাম’। অপরপক্ষে, স্বার্থগন্ধরহিত ভালোবাসাই হলো ‘প্রেম’।৷
এই যে কথাগুলি গুরুমহারাজ বললেন, এর প্রমাণ তো আমরা অহরহ পেয়েই চলেছি ! সমাজে যত অশান্তি, গন্ডগোল, ঝগড়া – তার বেশিরভাগটাই তো ঐরকম সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকেই। “আমার সম্প্রদায়ের উপাস্যের ভগবত্বা স্বীকার্য্য, অন্য সম্প্রদায়ের উপাস্যের মধ্যে কোন ভগবৎসত্ত্বা বিদ্যমান নয়” অথবা “আমার সম্প্রদায়ের মানুষেরা পরমেশ্বরের (গড, আল্লা, হরি) আপনজন – অন্যরা কেউ তা নয়” — এই ভাবনাই বর্তমান সমাজে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে চলেছে। আর এই ভাবনা থেকেই হিংসা, ঘৃণা ইত্যাদির বাতাবরণ তৈরি হয়ে থাকে – যার অবশ্যম্ভাবী ফল হোলো হিংসা, হানাহানি, রক্তপাত এবং সর্বোপরি নিরীহ মানুষের উপর বা অসহায় নারী-শিশুদের উপর পাশবিক ইতর আচরণ ঘটানো !
এই ভাবনা ঠিক নয়। তাই গুরুমহারাজ এর মীমাংসা করার জন্য বলেছেন – ” কিন্তু পরমেশ্বর তো সমস্ত কিছুর মধ্যেই রয়েছেন, কারোকে ছেড়ে অথবা বাদ দিয়ে তো তিনি ন’ন। কারণ তাঁর সৃষ্টির বাইরে তো কিছুই নাই, তাহলে তিনি সৃষ্টিছাড়া করবেন কেমন করে, আর রাখবেনই বা কোথায় ? এই মহাবিশ্ব তাঁর মধ্যেই আশ্রিত। পরমেশ্বরের মধ্যেই তো আমরা রয়েছি, সত্যিই তো তাঁর বাইরে কিছুই নাই। সবকিছুই প্রতিভাসিত বা প্রকাশিত হোচ্ছে তাঁরই মধ্যে ! অতএব ভিতরই বা কি, আর বাহিরই বা কি ? অঙ্গাঙ্গিভাবে বা ওতপ্রোতভাবে তিনি সমস্তকিছু করেন বা করতে পারেন৷ একটিই মাত্র তিনি করতে পারেন না এবং তিনি করেন না, তা হোলো – কাউকে ত্যাগ করা ! আর ত্যাগ করে তাকে রাখবেনই বা কোথায় ! এইখানেই তাঁর মহিমা বা মাধুর্য্য !”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! তাহলে আমরা পরমেশ্বরের প্রকৃত মহিমা বা মাধুর্য্য সম্বন্ধে যা অবগত হোলাম_ তা হোলো পরমেশ্বরের একটি এবং একমাত্র একটিই অসাধ্য কাজ রয়েছে। আর সেটা হোচ্ছে – যেহেতু সবকিছুই তাঁর মধ্যে অবস্থিত, তাই তিনি কাউকে ত্যাগ করতে পারেন না। কারণ ত্যাগ করে তিনি তাকে রাখবেনই বা কোথায় ? তাঁর তো সবটাই ‘ভিতর’ – তাঁর তো ‘বাহির’ বলে কিছুই নাই ! এ বড় অদ্ভুত কথা ! আজকে আমরা এই নতুন কথাটি শুনলাম এবং শিখলাম এবং সেটা হোচ্ছে __পরমেশ্বরের (আল্লা, হরি, গড) অসাধ্য কিছুই থাকার কথা নয় – কারণ তিনি সর্বশক্তিমান, এক এবং অদ্বিতীয় ! কিন্তু তাঁরও একটি অসাধ্য কাজ রয়েছে, আর তা হোলো – ‘কাউকে ত্যাগ না করা’ !
তাহলে সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে, গোষ্ঠীতে-গোষ্ঠীতে, শ্রেণীতে-শ্রেণীতে, জাতিতে-জাতিতে এই যে বিভেদ-হিংসা-হানাহানি – সেটা আসছে চরম অজ্ঞতা থেকে ! এইজন্যেই মহাজনেরা বলে থাকেন – ” মানবজাতি এখনো অজ্ঞানের অন্ধকারে রয়েছে !” এইবার আমরা বুঝতে পারলাম যে, সত্যিই আমরা অজ্ঞান ! আমরা সকলেই সেই পরম করুণাময় পরমেশ্বরের কোলে বসে রয়েছি, কিন্তু সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন হয়ে ভাবছি, ‘পরমেশ্বর শুধুই আমার – ওর নয়’ ! এটাই অজ্ঞতা – এটাই আহাম্মকি – এটাই চরম নির্বুদ্ধিতা এবং বালখিল্যতা !
যাইহোক, আমরা এরপর গুরুমহারাজ কি বলেছেন সেইসব সম্বন্ধে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করি। এরপরে উনি বলেছেন – ” ভেদজ্ঞান বর্জিত বিশুদ্ধ প্রেমের মহিমা অপার ! জীবনের চির আকাঙ্খিত আনন্দ ও শান্তি – এই বিশুদ্ধ প্রেমের মিলনেই লাভ হয়। প্রেম দ্বারা জীবের চিরকল্যাণ সাধিত হয়। ভালোবাসার অপার শক্তিতে রিপুভয় দূরীভূত হয়ে যায়। ঐগুলি আর প্রেমিককে বিরক্ত করে না। তাই আনন্দে বাঁচতে হবে, আনন্দেই মরতে হবে আর আনন্দের মূল (হোলো) ভালোবাসা – স্বার্থগন্ধরহিত তীব্র ভালোবাসা ! ভালোবাসার অপরিমেয় শক্তিতে সমস্ত কিছুই পরম সুখময় বা আনন্দময় হয়ে ওঠে।”
গুরুমহারাজের কথার ব্যাখ্যা করতে যাবার মতো মূর্খতা আর হয় না ! সুতরাং সেই কাজ আমরা কখনোই করবো না। আমরা শুধু তাঁর কথাগুলো যেমন বুঝেছি – সেটাই আলোচনা করবো। ‘বিশুদ্ধ প্রেম’ হোলো ভেদজ্ঞানবর্জিত ! তাই যার মধ্যে এখনো ভেদজ্ঞান যায়নি, ‘ওরা–আমরা’-র গণ্ডি অতিক্রম হয়নি, এটা নিশ্চিত যে তার এখনও প্রেমলাভ হয় নি। গুরুমহারাজ আরো বলেছেন যে, ঐ বিশুদ্ধ প্রেমলাভ হোলেই মানবের (সাধকের) জীবনে চির-আকাঙ্খিত আনন্দ ও শান্তি লাভ হয়। আরও একটা important কথা গুরুমহারাজ এখানে বললেন, আর তা হোলো – ” ভালোবাসার (প্রেমের) অপার শক্তিতে রিপুভয় দূরীভূত হয় !” যে রিপুদেরকে জয় করার জন্য সাধকদের এতো সাধনা – সেই রিপুসকল অনায়াসেই জয়লাভ করা যায় প্রেমলাভ হোলে।
কিন্তু গুরুমহারাজ এখানে বিশেষভাবে ভালোবাসাকে বিশেষিত করে বলেছেন – “স্বার্থগন্ধরহিত ভালোবাসা”! ভালোবাসার মধ্যে স্বার্থগন্ধ থাকলে তা আর ‘প্রেম’ পদবাচ্য থাকে না – তাকে তখন বলা হয় ‘কাম’। অপরপক্ষে, স্বার্থগন্ধরহিত ভালোবাসাই হলো ‘প্রেম’।৷