শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (কথিত ও লিখিত) এখানে পরিবেশন করা হচ্ছিলো। গুরুমহারাজ তাঁর নিজের লেখা গ্রন্থ, এযুগের গীতা “সহজতা ও প্রেম” গ্রন্থে প্রেম-বিষয়ক যে সমস্ত কথা আলোচনা করেছিলেন – আমরা সেইসব কথায় ছিলাম। আমরা আগের আলোচনায় দেখেছি গুরুমহারাজ বলেছেন যে, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মানুষ আপন আপন “সাম্প্রদায়িক ঈশ্বর”-এর নামে একে অপরের বিনাশ চাইছে। এই যে গুরুমহারাজ একটা কথা বললেন – “সাম্প্রদায়িক ঈশ্বর”– এই কথাটা শুনে আমাদের মতো পৃথিবীর সকল মানুষদেরই লজ্জা পাওয়া উচিত ! আমরা এতোই সভ্য, এতোই শিক্ষিত, এতোই বিদ্বান-বুদ্ধিমান যে – আমরা পরমেশ্বরের সঠিক নামকেও মর্যাদা দিতে পারি না। “আমার দেওয়া ঈশ্বরের নামটাই ঠিক(সাম্প্রদায়িক ঈশ্বর), অন্যেরটা ভুল”– এই অজ্ঞতাভরা ভাবনাই মানুষকে পিছন দিকে টেনে রেখেছে – এই অজ্ঞাতাই মানুষকে প্রকৃত অর্থে সভ্য হতে দিচ্ছে না।
এছাড়াও গুরুমহারাজ আর একটা কথার উল্লেখ করে আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, আমাদের চেতনার level-টা ঠিক কতখানি ! হ্যাঁ, সত্যিই তো – প্রাচীন ভারতের ঋষিগণ ছাড়া আর গোটা কয়েক মহাপুরুষগণ ছাড়া কেউই তো বলতে পারি না – “হে ঈশ্বর ! তুমি সকলের সুমতি দান করো। সকলে সত্য, ত্যাগ, প্রেম ও শান্তির পথে চলুক – সকলে পারস্পরিক সম্প্রীতি নিয়ে চলুক !” তা না করে বরং আমরা নিজেরা সম্প্রদায়িক বুদ্ধিতে মত্ত হয়ে চরম অজ্ঞতা – চরম আহাম্মকির পরিচয় দিচ্ছি, পরস্পরে হানাহানি করে মরছি !
যাইহোক, গুরুমহারাজ এরপরে আরো কি কি বলেছেন আমরা সেদিকে মন দিই ! গুরুজী বললেন – ” প্রিয় আত্মন্ – ভগবান বা পরমেশ্বর প্রেমস্বরূপ-প্রেমময় ! মানব – মানব মাত্রকেই ভালোবাসুক, এটাই তাঁর অভিপ্রায় ! ভালোবাসার ধর্ম অপরের দোষ বা কলঙ্ক না দেখা, প্রকারান্তরে অপরের দোষ বা কলঙ্ক মুছিয়ে দেওয়া।” আহা-হা ! কি সুন্দর কথা ! অপরকে দোষারোপ করা, অপরের ছিদ্রান্বেষণ – এগুলিই তো আমাদের ন্যায় সাধারণ মানুষের যেন একমাত্র কাজ ! সেখানে গুরুমহারাজ বললেন সকলকে ‘প্রেমিক’ হয়ে উঠতে – যাতে আমরা কেউই আর পরস্পরের দোষ বা কলঙ্ক না দেখি – বরং একে অপরের দোষ বা কলঙ্ক মুছিয়ে দিতে উন্মুখ থাকি ! এছাড়াও গুরুমহারাজ তাঁর নিজের (ভগবানের) ব্যথার কথাও উল্লেখ করলেন – ” মানব – মানব মাত্রকেই ভালোবাসুক – এটাই তাঁর অভিপ্রায়।” – কিন্তু সেটা তো আর হয় না — এটাই ভগবানের ব্যথার কারণ !
এরপর গুরুমহারাজ বললেন – “পরস্পর পরস্পরকে ভালবাসলে সংসারে কিছুমাত্র অশান্তি থাকে না। ভালবাসতে না পারাটাই আমাদের দূর্বলতা অর্থাৎ আমরা স্বার্থপর। আমাদের স্বার্থপরতাই হোলো ভালোবাসার ক্ষেত্রে অন্তরায় বা প্রতিবন্ধক ! সর্বসাধারণকে না ভালবাসলে, মানব আপন সংকীর্ণ স্বার্থের গন্ডীকে অতিক্রম করতে পারে না। অতএব ভালোবেসে সকল প্রকার দোষকে আত্মসাৎ করো৷”
গুরুমহারাজ আমাদের ন্যায় সাধারণ, অজ্ঞ, আহাম্মক মানুষদের উদ্দেশ্যে বললেন যে, আমরা স্বার্থপর – তাই আমাদের মধ্যে ভালোবাসা জাগ্রত হয় না বা প্রেম প্রকটিত হয় না। কারণ, ভালোবাসার প্রধান অন্তরায় হোলো স্বার্থপরতা ! একবার গুরুমহারাজ বলেছিলেন – “তোরা স্বার্থপর না হয়ে আত্মপর হয়ে ওঠ্ দেখি – জীবনচর্যার মোড়টা একটু ঘুরিয়ে দে, তাহলেই দেখবি কেমন তরতর্ করে চেতনার উন্নতি ঘটতে থাকবে। আর এর ফলে সাধারন মানব প্রথমে দেবমানবে এবং ধীরে ধীরে ঐ দেবমানবেরা মহামানবে উন্নীত হবে।” কিন্তু আমরা আর আত্মপর কোথায় হলাম ? এটা হোতে গেলে তো আমাদের অন্তর্মুখী হোতে হবে, আত্মানুসন্ধানে নামতে হবে ! আমাদের সেই মানসিকতা জাগ্রত হোলো কই ? আমরা শুধু স্বার্থপর হোতেই শিখলাম – আমি বিলাস-ব্যসনে থাকবো, ভোগ-ঐশ্বর্যের মধ্যে থাকবো – তাতে সহস্র মানব বঞ্চিত হোক, বিনা আহারে – বিনা বাসস্থানে থাকুক, তারা সবলের অত্যাচারে-অনাচারে জর্জরিত হোক – তাতে আমার কি যায় আসে ? আমি এবং আমার পরিবার যেন ভোগ-ঐশ্বর্যে অথবা বিলাস-ব্যসনে থাকি, ব্যস্ – তাহলেই হোলো ! এটাই স্বার্থপরতার ভাব ! আর এই দলেই আমরা বেশিরভাগেরা পড়ে যাই !
এইভাব কাটাতেই তো সাধু-গুরু-মহাজন-মহাত্মা-মহাপুরুষদের আগমন এবং সর্বোপরি বলতে হয় – এইজন্যেই ঈশ্বরের অবতরণ ! যাঁরা মানুষের কাছে এসে এই সমাজে মঠ-মিশন-আশ্রম-কুঠিয়া তৈরি করে মানুষের জন্য কাজ করেন – এখানে তাঁদের কথাই উল্লেখ করা হোচ্ছে ! তাঁরা তাঁদের প্রেম বা ভালোবাসার আকর্ষণে সাধারণ মানুষকে টেনে টেনে তাঁর কাছে আসতে বাধ্য করেন এবং এরপর তাদেরকে স্বার্থপরতা ভুলে প্রেম-ভালোবাসার শিক্ষা দেন, পরার্থপর হোতে শেখান। সংস্পর্শের দ্বারা তাঁরা সাধারণ মানুষের বিবেকের জাগরণ ঘটিয়ে দেন – চেতনার উত্তরণ ঘটান ! এরপরে আবার কি চাই ! এবার তো ঐসব সাধারণ মানুষ নিজে নিজেই ছুটতে থাকবে সামনের দিকে, আলোর দিকে, পরার্থপরতার দিকে, ভালোবাসার সন্ধানে !
এটাই মহাপুরুষগণের একমাত্র কাজ। তাঁরা মঠ-মিশন-আশ্রম প্রতিষ্ঠা করতে বা গোটাকয়েক বড় বড় বিল্ডিং বানাতে আসেন না – এগুলো অনুষঙ্গ মাত্র, তাঁদের আসল কাজ হোলো সাধারণ স্বার্থপর মানুষকে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে মানুষকে ভালবাসা শেখানো, মানুষকে পরার্থপর করে তোলা ! তাঁদের ঐ ভালোবাসা তো সাধারন ভালোবাসা নয় –তাঁদের সেই ভালোবাসা হোলো অপার্থিব ভালোবাসা, প্রত্যাশাবিহীন ভালোবাসা। সেই ভালবাসার আকর্ষণেই মানুষ আশ্রম বা মঠ-মিশনমুখী হয়, আর ধীরে ধীরে সে সেখানকার সম্পূর্ণরূপে নিঃস্বার্থ সেবাকাজের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। এইভাবেই মানুষ একটু একটু করে স্বার্থপরতা ত্যাগ করে পরার্থপরতার দিকে অগ্রসর হয়।৷
এছাড়াও গুরুমহারাজ আর একটা কথার উল্লেখ করে আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, আমাদের চেতনার level-টা ঠিক কতখানি ! হ্যাঁ, সত্যিই তো – প্রাচীন ভারতের ঋষিগণ ছাড়া আর গোটা কয়েক মহাপুরুষগণ ছাড়া কেউই তো বলতে পারি না – “হে ঈশ্বর ! তুমি সকলের সুমতি দান করো। সকলে সত্য, ত্যাগ, প্রেম ও শান্তির পথে চলুক – সকলে পারস্পরিক সম্প্রীতি নিয়ে চলুক !” তা না করে বরং আমরা নিজেরা সম্প্রদায়িক বুদ্ধিতে মত্ত হয়ে চরম অজ্ঞতা – চরম আহাম্মকির পরিচয় দিচ্ছি, পরস্পরে হানাহানি করে মরছি !
যাইহোক, গুরুমহারাজ এরপরে আরো কি কি বলেছেন আমরা সেদিকে মন দিই ! গুরুজী বললেন – ” প্রিয় আত্মন্ – ভগবান বা পরমেশ্বর প্রেমস্বরূপ-প্রেমময় ! মানব – মানব মাত্রকেই ভালোবাসুক, এটাই তাঁর অভিপ্রায় ! ভালোবাসার ধর্ম অপরের দোষ বা কলঙ্ক না দেখা, প্রকারান্তরে অপরের দোষ বা কলঙ্ক মুছিয়ে দেওয়া।” আহা-হা ! কি সুন্দর কথা ! অপরকে দোষারোপ করা, অপরের ছিদ্রান্বেষণ – এগুলিই তো আমাদের ন্যায় সাধারণ মানুষের যেন একমাত্র কাজ ! সেখানে গুরুমহারাজ বললেন সকলকে ‘প্রেমিক’ হয়ে উঠতে – যাতে আমরা কেউই আর পরস্পরের দোষ বা কলঙ্ক না দেখি – বরং একে অপরের দোষ বা কলঙ্ক মুছিয়ে দিতে উন্মুখ থাকি ! এছাড়াও গুরুমহারাজ তাঁর নিজের (ভগবানের) ব্যথার কথাও উল্লেখ করলেন – ” মানব – মানব মাত্রকেই ভালোবাসুক – এটাই তাঁর অভিপ্রায়।” – কিন্তু সেটা তো আর হয় না — এটাই ভগবানের ব্যথার কারণ !
এরপর গুরুমহারাজ বললেন – “পরস্পর পরস্পরকে ভালবাসলে সংসারে কিছুমাত্র অশান্তি থাকে না। ভালবাসতে না পারাটাই আমাদের দূর্বলতা অর্থাৎ আমরা স্বার্থপর। আমাদের স্বার্থপরতাই হোলো ভালোবাসার ক্ষেত্রে অন্তরায় বা প্রতিবন্ধক ! সর্বসাধারণকে না ভালবাসলে, মানব আপন সংকীর্ণ স্বার্থের গন্ডীকে অতিক্রম করতে পারে না। অতএব ভালোবেসে সকল প্রকার দোষকে আত্মসাৎ করো৷”
গুরুমহারাজ আমাদের ন্যায় সাধারণ, অজ্ঞ, আহাম্মক মানুষদের উদ্দেশ্যে বললেন যে, আমরা স্বার্থপর – তাই আমাদের মধ্যে ভালোবাসা জাগ্রত হয় না বা প্রেম প্রকটিত হয় না। কারণ, ভালোবাসার প্রধান অন্তরায় হোলো স্বার্থপরতা ! একবার গুরুমহারাজ বলেছিলেন – “তোরা স্বার্থপর না হয়ে আত্মপর হয়ে ওঠ্ দেখি – জীবনচর্যার মোড়টা একটু ঘুরিয়ে দে, তাহলেই দেখবি কেমন তরতর্ করে চেতনার উন্নতি ঘটতে থাকবে। আর এর ফলে সাধারন মানব প্রথমে দেবমানবে এবং ধীরে ধীরে ঐ দেবমানবেরা মহামানবে উন্নীত হবে।” কিন্তু আমরা আর আত্মপর কোথায় হলাম ? এটা হোতে গেলে তো আমাদের অন্তর্মুখী হোতে হবে, আত্মানুসন্ধানে নামতে হবে ! আমাদের সেই মানসিকতা জাগ্রত হোলো কই ? আমরা শুধু স্বার্থপর হোতেই শিখলাম – আমি বিলাস-ব্যসনে থাকবো, ভোগ-ঐশ্বর্যের মধ্যে থাকবো – তাতে সহস্র মানব বঞ্চিত হোক, বিনা আহারে – বিনা বাসস্থানে থাকুক, তারা সবলের অত্যাচারে-অনাচারে জর্জরিত হোক – তাতে আমার কি যায় আসে ? আমি এবং আমার পরিবার যেন ভোগ-ঐশ্বর্যে অথবা বিলাস-ব্যসনে থাকি, ব্যস্ – তাহলেই হোলো ! এটাই স্বার্থপরতার ভাব ! আর এই দলেই আমরা বেশিরভাগেরা পড়ে যাই !
এইভাব কাটাতেই তো সাধু-গুরু-মহাজন-মহাত্মা-মহাপুরুষদের আগমন এবং সর্বোপরি বলতে হয় – এইজন্যেই ঈশ্বরের অবতরণ ! যাঁরা মানুষের কাছে এসে এই সমাজে মঠ-মিশন-আশ্রম-কুঠিয়া তৈরি করে মানুষের জন্য কাজ করেন – এখানে তাঁদের কথাই উল্লেখ করা হোচ্ছে ! তাঁরা তাঁদের প্রেম বা ভালোবাসার আকর্ষণে সাধারণ মানুষকে টেনে টেনে তাঁর কাছে আসতে বাধ্য করেন এবং এরপর তাদেরকে স্বার্থপরতা ভুলে প্রেম-ভালোবাসার শিক্ষা দেন, পরার্থপর হোতে শেখান। সংস্পর্শের দ্বারা তাঁরা সাধারণ মানুষের বিবেকের জাগরণ ঘটিয়ে দেন – চেতনার উত্তরণ ঘটান ! এরপরে আবার কি চাই ! এবার তো ঐসব সাধারণ মানুষ নিজে নিজেই ছুটতে থাকবে সামনের দিকে, আলোর দিকে, পরার্থপরতার দিকে, ভালোবাসার সন্ধানে !
এটাই মহাপুরুষগণের একমাত্র কাজ। তাঁরা মঠ-মিশন-আশ্রম প্রতিষ্ঠা করতে বা গোটাকয়েক বড় বড় বিল্ডিং বানাতে আসেন না – এগুলো অনুষঙ্গ মাত্র, তাঁদের আসল কাজ হোলো সাধারণ স্বার্থপর মানুষকে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে মানুষকে ভালবাসা শেখানো, মানুষকে পরার্থপর করে তোলা ! তাঁদের ঐ ভালোবাসা তো সাধারন ভালোবাসা নয় –তাঁদের সেই ভালোবাসা হোলো অপার্থিব ভালোবাসা, প্রত্যাশাবিহীন ভালোবাসা। সেই ভালবাসার আকর্ষণেই মানুষ আশ্রম বা মঠ-মিশনমুখী হয়, আর ধীরে ধীরে সে সেখানকার সম্পূর্ণরূপে নিঃস্বার্থ সেবাকাজের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। এইভাবেই মানুষ একটু একটু করে স্বার্থপরতা ত্যাগ করে পরার্থপরতার দিকে অগ্রসর হয়।৷