শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (লিখিত ও কথিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। গুরুমহারাজ তার *সহজতা ও প্রেম* গ্রন্থের প্রায় একেবারে শেষ ভাগে প্রেম-বিষয়ক যে সমস্ত কথা বলেছেন – আমরা সেইসব কথাতেই ছিলাম। গুরুমহারাজ এর পরে বলেছেন – ” সংসারে মানব যখন ঘৃণা, মান, অপমান – এইগুলির প্রতি উদাসীন হয়, তখন তার মধ্যে সহজাতক্রমে সহজ ভক্তির আবির্ভাব হয়। আর বিনম্রতা ভগবৎ প্রেমিকের লক্ষণ।”
গুরুজী ‘সহজ ভক্তিমান’ ব্যক্তির লক্ষণ সমূহ উল্লেখ করলেন, উনি বললেন _’ঐ অবস্থায় সাধকেরা ঘৃণা, মান, অপমান এইগুলির প্রতি উদাসীন থাকেন। আর এই অবস্থাতেই ঠিক ঠিক বিনম্র ভাব জাগ্রত হয় আর বিনম্রতাই ভগবৎ প্রেমিকের লক্ষণ !’
কি সুন্দর একটা কথা আজ আমরা নতুন করে গুরুমহারাজের কাছে শুনলাম – “বিনম্রতা”! আমরা যদি মনে মনে ‘বিনম্রতা’- সম্পন্ন কোনো নর-নারীর মূর্তরূপ কল্পনা করি তাহলে তিনি কেমনটা হবেন ? একটা শান্ত_সুন্দর-সৌম্য-প্রাণশক্তিতে পূর্ণ হৃদয়-সদা অবনত মস্তক অথচ চরিত্রবলে দৃঢ়, কথার মাধুর্যে আকর্ষণকারী, যাকে না ভালোবেসে বা শ্রদ্ধা না করে থাকা যায় না__ এমন একটা ছবি ভেসে ওঠে, তাই নয় কী ? এমন ব্যক্তিই (নারী বা পুরুষ) তো ভগবৎ প্রেমিক ! এঁদেরকে উদ্দেশ্য করেই তো মহাজনগণ গান রচনা করেছেন – ” কৃষ্ণ প্রেম যার অন্তরে লেগেছে, নয়ন দেখিলে যায় চেনা ! / পাখিধরা আঁখিদ্বয় – সমর্থা ভাবময়, জগৎ ছাড়া চোখের চাহনি, / আমি পাই যদি দরশন – মনেতে মিশাইয়া মন / তার সাথে কৃষ্ণ কথা করি আলোচনা।৷”
যাইহোক, এরপর আমরা আবার গুরুমহারাজের কথায় চলে যাই। উনি বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ – সংসার যশের পূজা করে৷ ক্ষমতা পিপাসুরা অধিকার ও ক্ষমতার পিছনে দৌড়ায় এবং মানবের দুর্বলতার সুযোগ খোঁজে। অপরের উপর আপন অধিকার প্রতিষ্ঠা করবার নিমিত্ত তারা অলসপ্রকৃতি ও জড়বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের ভক্তির নামে মন-বিকৃতি বা ভাব-বিকৃতি শিক্ষা দেয়। কিন্তু চিন্তা-বিমুখতা, আলস্য-বুদ্ধি, ভাব-বিক্ষেপ এগুলি ভগবদ্ভক্তি নয়। জড়বুদ্ধিসম্পন্ন নির্বোধের জীবনে ভক্তি ও প্রেম প্রকট হয় না৷ তা অবদমিত কামনারই বিভিন্ন মন-সংবেদন বা মন বিক্ষোভ – যা ভয় এবং জাগতিক অভাবকে প্রকট করে।”
” ‘সহজতা ও প্রেম’ গ্রন্থের দু-একটা করে লাইন ধরে ধরে ব্যাখ্যা করতে পারলেই এক একটা ‘Article’ লেখা যাবে অথবা একটা para-কে নিয়ে তাকে বিস্তারিত করতে পারলেই এক একটা পুস্তিকা হয়ে যাবে”—- এমন কথা আমি সেই প্রথম থেকেই শুনে আসছিলাম, আর এই কথাগুলি যে কতটা সত্য সেটা পাঠককুল নিশ্চয়ই এতদিনে বুঝতে পেরে গেছেন। গুরুমহারাজ একটা কথায় কত কথা বলে দিলেন – “এই সংসার যশের পূজা করে।” এই কথাটির একটি অর্থ হোতে পারে – “যশস্বী ব্যক্তিরাই (নারী বা পুরুষ) এই জগৎসংসারে পূজা পেয়ে থাকে।” ‘যশ’ বলতে অপযশ বা সুযশ উভয়প্রকারই হোতে পারে, আর উভয়প্রকার ‘যশ’ থেকেই যশস্বী হওয়া যায় ! রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা, ধনী ব্যবসায়ীরা, সিনেমা-থিয়েটার-যাত্রাপালার নায়ক-নায়িকারা – এরাও তো সাধারণ মানুষের চোখে যশস্বী, যদিও এরা প্রায় সকলেই চরিত্রবান হয় না। তাই প্রকৃত যশস্বী হোলেন চরিত্রবান, বিবেকবান, সাধন-সিদ্ধ আধ্যাত্মিক জগতের মহাপুরুষেরা ! কিন্তু যেভাবেই ‘যশ’ আসুক না কেন – সাধারণ মানুষ সব ধরনের যশস্বীদেরকেই প্রাধান্য দেয়, তাদের অনুগামী হয়ে চলতে চায়। এই হিসাবেই বলা হয়েছে যে, “মানুষ যশের পূজা করে!”
এইভাবে ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তিরা ‘যা হোক করে’ কিছু ক্ষমতা অর্জন করে এবং তার (ধন, বল বা শক্তি ও ক্ষমতা) সাহায্যে দুর্বলচিত্ত, অলস ব্যক্তিদের উপর অধিকার কায়েম করে। ধর্মীয়ভাবে ক্ষমতালিপ্সুরা_ দুর্বল ব্যক্তিদের মনোজগতে নানারকম সাম্প্রদায়িক বিকৃতভাব ঢুকিয়ে দেয় –আর এর চরম কুফল ভোগ করে মানবসমাজ !
কারণ এরফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয় – শুরু হয় হিংসা-হানাহানি-মারামারি। দূর্বলচিত্ত, জড়বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের ভাব-বিকৃতি হয় – তাদের মধ্যে ভগবদ্ভক্তি লাভ হয় না, তাদের জীবনে প্রেম প্রকটিত হয় না। বিকৃত অথচ বুদ্ধিমান ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে উদ্দেশ্য করে গুরুমহারাজ বলেছেন যে, এদের মনোজগতের ভক্তিভাব বিকৃত, যা অবদমিত কামনার মন-সংবেদন, আর এই মন-সংবেদন থেকেই তাদের জীবনে প্রকটিত হয় ‘ভয়’ এবং ‘অভাব’।
কিন্তু এটা বড় সাংঘাতিক কথা ! আমরা গুরুমহারাজের কাছে আগেই শুনেছিলাম যে, জীবের প্রবৃত্তিতেই ‘ভয়’ ব্যাপারটা রয়েছে কিন্তু মানবের ক্ষেত্রে সেটা কিভাবে প্রকটিত হয় – তা আমাদের জানা ছিল না, গুরুজীর উপরিউক্ত কথা থেকে আমরা এটা বুঝতে পারলাম।
এরপরে গুরুমহারাজ বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ – বুদ্ধি, হৃদয় ও শরীরের আলস্যকে কাটিয়ে উঠতে হবে। মানব বিচারকে বন্ধ বা ত্যাগ করতে পারে না। সুতরাং চিন্তাজগতে তীব্র আন্দোলন শুরু করো, বিবেক দ্বারা বিশ্লেষণমুখী হও। তাহলেই দেখবে – বুদ্ধির জড়ত্ব ও হৃদয়ের সংকীর্ণতা বিদূরিত হয়েছে। ক্রমশ অন্তঃকরণ শান্ত ও গভীর প্রশান্ত ভাব ধারণ করবে। সুতরাং ভগবৎমুখী হও – সমস্ত রকমের প্রতিকূলতা কেটে যাবে।”
গুরুজী ‘সহজ ভক্তিমান’ ব্যক্তির লক্ষণ সমূহ উল্লেখ করলেন, উনি বললেন _’ঐ অবস্থায় সাধকেরা ঘৃণা, মান, অপমান এইগুলির প্রতি উদাসীন থাকেন। আর এই অবস্থাতেই ঠিক ঠিক বিনম্র ভাব জাগ্রত হয় আর বিনম্রতাই ভগবৎ প্রেমিকের লক্ষণ !’
কি সুন্দর একটা কথা আজ আমরা নতুন করে গুরুমহারাজের কাছে শুনলাম – “বিনম্রতা”! আমরা যদি মনে মনে ‘বিনম্রতা’- সম্পন্ন কোনো নর-নারীর মূর্তরূপ কল্পনা করি তাহলে তিনি কেমনটা হবেন ? একটা শান্ত_সুন্দর-সৌম্য-প্রাণশক্তিতে পূর্ণ হৃদয়-সদা অবনত মস্তক অথচ চরিত্রবলে দৃঢ়, কথার মাধুর্যে আকর্ষণকারী, যাকে না ভালোবেসে বা শ্রদ্ধা না করে থাকা যায় না__ এমন একটা ছবি ভেসে ওঠে, তাই নয় কী ? এমন ব্যক্তিই (নারী বা পুরুষ) তো ভগবৎ প্রেমিক ! এঁদেরকে উদ্দেশ্য করেই তো মহাজনগণ গান রচনা করেছেন – ” কৃষ্ণ প্রেম যার অন্তরে লেগেছে, নয়ন দেখিলে যায় চেনা ! / পাখিধরা আঁখিদ্বয় – সমর্থা ভাবময়, জগৎ ছাড়া চোখের চাহনি, / আমি পাই যদি দরশন – মনেতে মিশাইয়া মন / তার সাথে কৃষ্ণ কথা করি আলোচনা।৷”
যাইহোক, এরপর আমরা আবার গুরুমহারাজের কথায় চলে যাই। উনি বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ – সংসার যশের পূজা করে৷ ক্ষমতা পিপাসুরা অধিকার ও ক্ষমতার পিছনে দৌড়ায় এবং মানবের দুর্বলতার সুযোগ খোঁজে। অপরের উপর আপন অধিকার প্রতিষ্ঠা করবার নিমিত্ত তারা অলসপ্রকৃতি ও জড়বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের ভক্তির নামে মন-বিকৃতি বা ভাব-বিকৃতি শিক্ষা দেয়। কিন্তু চিন্তা-বিমুখতা, আলস্য-বুদ্ধি, ভাব-বিক্ষেপ এগুলি ভগবদ্ভক্তি নয়। জড়বুদ্ধিসম্পন্ন নির্বোধের জীবনে ভক্তি ও প্রেম প্রকট হয় না৷ তা অবদমিত কামনারই বিভিন্ন মন-সংবেদন বা মন বিক্ষোভ – যা ভয় এবং জাগতিক অভাবকে প্রকট করে।”
” ‘সহজতা ও প্রেম’ গ্রন্থের দু-একটা করে লাইন ধরে ধরে ব্যাখ্যা করতে পারলেই এক একটা ‘Article’ লেখা যাবে অথবা একটা para-কে নিয়ে তাকে বিস্তারিত করতে পারলেই এক একটা পুস্তিকা হয়ে যাবে”—- এমন কথা আমি সেই প্রথম থেকেই শুনে আসছিলাম, আর এই কথাগুলি যে কতটা সত্য সেটা পাঠককুল নিশ্চয়ই এতদিনে বুঝতে পেরে গেছেন। গুরুমহারাজ একটা কথায় কত কথা বলে দিলেন – “এই সংসার যশের পূজা করে।” এই কথাটির একটি অর্থ হোতে পারে – “যশস্বী ব্যক্তিরাই (নারী বা পুরুষ) এই জগৎসংসারে পূজা পেয়ে থাকে।” ‘যশ’ বলতে অপযশ বা সুযশ উভয়প্রকারই হোতে পারে, আর উভয়প্রকার ‘যশ’ থেকেই যশস্বী হওয়া যায় ! রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা, ধনী ব্যবসায়ীরা, সিনেমা-থিয়েটার-যাত্রাপালার নায়ক-নায়িকারা – এরাও তো সাধারণ মানুষের চোখে যশস্বী, যদিও এরা প্রায় সকলেই চরিত্রবান হয় না। তাই প্রকৃত যশস্বী হোলেন চরিত্রবান, বিবেকবান, সাধন-সিদ্ধ আধ্যাত্মিক জগতের মহাপুরুষেরা ! কিন্তু যেভাবেই ‘যশ’ আসুক না কেন – সাধারণ মানুষ সব ধরনের যশস্বীদেরকেই প্রাধান্য দেয়, তাদের অনুগামী হয়ে চলতে চায়। এই হিসাবেই বলা হয়েছে যে, “মানুষ যশের পূজা করে!”
এইভাবে ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তিরা ‘যা হোক করে’ কিছু ক্ষমতা অর্জন করে এবং তার (ধন, বল বা শক্তি ও ক্ষমতা) সাহায্যে দুর্বলচিত্ত, অলস ব্যক্তিদের উপর অধিকার কায়েম করে। ধর্মীয়ভাবে ক্ষমতালিপ্সুরা_ দুর্বল ব্যক্তিদের মনোজগতে নানারকম সাম্প্রদায়িক বিকৃতভাব ঢুকিয়ে দেয় –আর এর চরম কুফল ভোগ করে মানবসমাজ !
কারণ এরফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয় – শুরু হয় হিংসা-হানাহানি-মারামারি। দূর্বলচিত্ত, জড়বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের ভাব-বিকৃতি হয় – তাদের মধ্যে ভগবদ্ভক্তি লাভ হয় না, তাদের জীবনে প্রেম প্রকটিত হয় না। বিকৃত অথচ বুদ্ধিমান ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে উদ্দেশ্য করে গুরুমহারাজ বলেছেন যে, এদের মনোজগতের ভক্তিভাব বিকৃত, যা অবদমিত কামনার মন-সংবেদন, আর এই মন-সংবেদন থেকেই তাদের জীবনে প্রকটিত হয় ‘ভয়’ এবং ‘অভাব’।
কিন্তু এটা বড় সাংঘাতিক কথা ! আমরা গুরুমহারাজের কাছে আগেই শুনেছিলাম যে, জীবের প্রবৃত্তিতেই ‘ভয়’ ব্যাপারটা রয়েছে কিন্তু মানবের ক্ষেত্রে সেটা কিভাবে প্রকটিত হয় – তা আমাদের জানা ছিল না, গুরুজীর উপরিউক্ত কথা থেকে আমরা এটা বুঝতে পারলাম।
এরপরে গুরুমহারাজ বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ – বুদ্ধি, হৃদয় ও শরীরের আলস্যকে কাটিয়ে উঠতে হবে। মানব বিচারকে বন্ধ বা ত্যাগ করতে পারে না। সুতরাং চিন্তাজগতে তীব্র আন্দোলন শুরু করো, বিবেক দ্বারা বিশ্লেষণমুখী হও। তাহলেই দেখবে – বুদ্ধির জড়ত্ব ও হৃদয়ের সংকীর্ণতা বিদূরিত হয়েছে। ক্রমশ অন্তঃকরণ শান্ত ও গভীর প্রশান্ত ভাব ধারণ করবে। সুতরাং ভগবৎমুখী হও – সমস্ত রকমের প্রতিকূলতা কেটে যাবে।”