শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (কথিত এবং লিখিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। আমরা গুরুমহারাজের লেখা *সহজতা ও প্রেম* গ্রন্থের প্রেম-বিষয়ক আলোচনার প্রায় শেষ দিকে এসে পৌঁছে গেছি। গত episode-এ আমরা দেখেছিলাম যে, গুরুমহারাজ আমাদের মতো সাধারণ মানুষজনদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন – ” ভগবৎমুখী হও – (তাহলেই) সমস্ত রকমের প্রতিকূলতা কেটে যাবে।” এই কথাগুলি সিটিংয়েও গুরুমহারাজ বারবার বলতেন। সংসারে চলার পথে নানান বাধা বা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হই আমরা – আর তাতে আমরা বড়ই বিচলিত হয়ে পড়ি। ফলে – কেউ গণৎকারের কাছে ছুটি, কেউ তাবিজ-কবজ-মাদুলীর সন্ধানে যাই, কেউ পড়ে যাই ‘তান্ত্রিক-ফকির-বাবা’ইত্যাদি নামধারী প্রবঞ্চকের পাল্লায় ! কিন্তু গুরুমহারাজ জোরের সাথে বলেছিলেন – ” মানুষ ভগবৎমুখী হোলেই তার জীবনপথের সমস্ত প্রতিকূলতা কেটে যায়।”
আসলে এটি অন্য নিয়ম – এটি এক অমোঘ নিয়ম। যে নিয়মের সন্ধান ধান্দাবাজ পুরোহিত, আলেম-উলেমা নামধারী তান্ত্রিক (প্রকৃত তান্ত্রিক আলাদা)- গুনিন-ওঝা ইত্যাদিরা জানেই না, আর নিজেরা জানলেও অপরকে জানাতে চায় না। মানুষের জীবনে সমস্ত প্রতিকূলতা কেটে যায় ভগবৎমুখী হোলে৷ ভগবৎমুখী মানুষের জীবনেও কি কোনো বিপর্যয় আসে না ? – নিশ্চয়ই আসে। কিন্তু ঐ সমস্ত ভক্ত মানুষেরা এতে মোটেই বিচলিত হয় না – কারণ তারা জানে বা অন্তর থেকে বিশ্বাস করে যে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যখন তার সহায়, তখন সামান্য জাগতিক প্রতিকূলতা তার কি এমন ক্ষতি সাধন করতে পারে ?
গুরুমহারাজ সমুদ্রের ধারে সেই বুড়ির ‘ছাগল বাঁধা’র গল্প বলেছিলেন, যেখানে মহল্লার অন্যান্য ছাগলগুলি সমুদ্রের হঠাৎ ওঠা প্রবল জলোচ্ছাসে ভেসে গিয়েছিল – কিন্তু বুড়ির শক্ত খোঁটায় লম্বা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা ছাগলগুলি সমুদ্রের জলে হাবুডুবু খেলো, নাকানি-চোবানিও খেলো__ কিন্তু একেবারে ভেসে যায়নি। জলোচ্ছ্বাস সরে যেতেই তারা সেইখানেই থেকে যেতে পেরেছিল এবং দিনের শেষে বুড়ি এসে তাদেরকে ঘরে নিয়ে গিয়ে তুলেছিল!
ভগবৎপরায়ণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়। তাদের জীবনেও নানান জাগতিক বিপর্যয় আসতে পারে – কিন্তু সেই বিপদের দিনে তারা নানারকমভাবে বাইরে থেকে সাহায্য পায়, আবার অন্তর থেকেও প্রচণ্ড মানসিক জোর পায় ! এর ফলে বাইরে থেকে যারা দেখে, তারা হয়তো ভাবে যে, ‘ দ্যাখো, মানুষটা এতো ঈশ্বরের ভক্ত, কিন্তু ওর এইরকম দুর্গতি !!’ কিন্তু সেই ভক্ত মানুষটির খুব একটা অসুবিধা হয় না। সে তখন অন্তর্জগতে একটাই প্রার্থনা করে চলে – ” দুঃখ যদি দিয়েছো প্রভু – শক্তি দাও সহিবারে !”
যাইহোক, আমরা আবার গুরুমহারাজের কথায় ফিরে যাই। দেখি – পরম করুণাময় ভগবান স্বামী পরমানন্দ আমাদের মতো অজ্ঞানী, অভাজন, আহাম্মকদেরকে সহজভাবে বোঝানোর জন্য আরো কি কি বলেছেন ! উনি এর আগে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন অন্তর্মুখী হোতে, ভগবৎমুখী হোতে ! এইবার ভক্ত সাধকের আরও অগ্রগতি কিভাবে হবে সেই সম্পর্কে উনি বলেছেন – ” অন্তর্মুখী হবার পর প্রচণ্ড আগ্রহ প্রকাশ করতে থাকো ! অসহ্য ব্যাকুলতা প্রকট করো, তাহলেই চরম ও পরম বস্তুতে তুমি শীঘ্রই উপনীত হবে। তখন দেখবে বিচার আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেছে। চিত্ত নিস্তরঙ্গ হোলে আত্মসমাহিত অবস্থা লাভ হয়, আর ঐ নির্মল অন্তঃকরণে তখন ভগবৎ প্রেমের আবির্ভাব হয়।”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! তাহলে আমরা আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য কিভাবে সোপান বেয়ে বেয়ে উপরে উঠতে হয়, তার সহজ সরল বিধান প্রাপ্ত হলাম – তাই নয় কি ? গুরুমহারাজ প্রথমে বলেছিলেন – ‘ভগবৎমুখী হও’ অর্থাৎ অন্তর্মুখী হও ! অন্তর্মুখী হোলে সংসারের সমস্ত প্রতিকূলতা কেটে যাবে ! অন্তর্মুখী হোলে বা ভগবৎমুখী হোলে সাধকের বিনম্রতা আসে, যা ভগবৎ প্রেমিকের লক্ষণ ! কিন্তু এরপরে উনি ভক্ত-সাধকদের আরো কিভাবে এগিয়ে যেতে হবে, সে কথাও বলেছেন। উনি যা বলেছেন তাতে বোঝা গেল যে, সাধকের অন্তর্মুখী হয়ে থেমে থাকলেই চলবে না, এরপর ঐ অবস্থায় চরম বা পরম লক্ষ্যে উপনীত হোতে গেলে অসহ্য ব্যাকুলতা প্রয়োজন এবং পরম লক্ষ্য প্রাপ্তির জন্য প্রচণ্ড আগ্রহ প্রকাশ প্রয়োজন !
এরপরের অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে গুরুমহারাজ বলেছেন যে, ঐ অবস্থায় উপনীত হোলে ‘বিচার’ অর্থাৎ ভালো-মন্দ, নিত্য-অনিত্য, সদ-অসদ ইত্যাদির বিচার আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যায়, চিত্ত নিস্তরঙ্গ অবস্থা লাভ করে এবং সাধকের আত্মসমাহিত অবস্থা লাভ হয়। তখনই সাধকের অন্তঃকরণে প্রকৃত ভগবৎ-প্রেমের আবির্ভাব ঘটে !
তাহলে এরপর দেখা যাক্ অন্তঃকরণ নির্মল হোলে বা আত্মসমাহিত অবস্থা লাভ করলে আরো কি কি অবস্থা হয় – সেই প্রসঙ্গে গুরুমহারাজ কি বলেছেন ! গুরুজী বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ ! তখন (আত্মসমাহিত অবস্থায়) আর শ্রেষ্ঠ-কনিষ্ঠ, মান-অপমান, পুরস্কার-তিরস্কার, স্তুতি-নিন্দা, ইষ্ট, অধিকার, ক্ষমতার লোভ ইত্যাদি অভিমানিক মানের সংবেদন বা স্থিতির ক্রিয়া থাকে না। যতক্ষণ অভিমানী মন থাকে, ততক্ষণ খন্ডিত বা ভেদভাব বিদ্যমান। যখন অভিমানী মন বিলুপ্ত হয়, তখনই প্রকৃত প্রেমের আবির্ভাব হয় – তা সহজ ভক্তের একান্ত কাম্য।”
আসলে এটি অন্য নিয়ম – এটি এক অমোঘ নিয়ম। যে নিয়মের সন্ধান ধান্দাবাজ পুরোহিত, আলেম-উলেমা নামধারী তান্ত্রিক (প্রকৃত তান্ত্রিক আলাদা)- গুনিন-ওঝা ইত্যাদিরা জানেই না, আর নিজেরা জানলেও অপরকে জানাতে চায় না। মানুষের জীবনে সমস্ত প্রতিকূলতা কেটে যায় ভগবৎমুখী হোলে৷ ভগবৎমুখী মানুষের জীবনেও কি কোনো বিপর্যয় আসে না ? – নিশ্চয়ই আসে। কিন্তু ঐ সমস্ত ভক্ত মানুষেরা এতে মোটেই বিচলিত হয় না – কারণ তারা জানে বা অন্তর থেকে বিশ্বাস করে যে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যখন তার সহায়, তখন সামান্য জাগতিক প্রতিকূলতা তার কি এমন ক্ষতি সাধন করতে পারে ?
গুরুমহারাজ সমুদ্রের ধারে সেই বুড়ির ‘ছাগল বাঁধা’র গল্প বলেছিলেন, যেখানে মহল্লার অন্যান্য ছাগলগুলি সমুদ্রের হঠাৎ ওঠা প্রবল জলোচ্ছাসে ভেসে গিয়েছিল – কিন্তু বুড়ির শক্ত খোঁটায় লম্বা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা ছাগলগুলি সমুদ্রের জলে হাবুডুবু খেলো, নাকানি-চোবানিও খেলো__ কিন্তু একেবারে ভেসে যায়নি। জলোচ্ছ্বাস সরে যেতেই তারা সেইখানেই থেকে যেতে পেরেছিল এবং দিনের শেষে বুড়ি এসে তাদেরকে ঘরে নিয়ে গিয়ে তুলেছিল!
ভগবৎপরায়ণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়। তাদের জীবনেও নানান জাগতিক বিপর্যয় আসতে পারে – কিন্তু সেই বিপদের দিনে তারা নানারকমভাবে বাইরে থেকে সাহায্য পায়, আবার অন্তর থেকেও প্রচণ্ড মানসিক জোর পায় ! এর ফলে বাইরে থেকে যারা দেখে, তারা হয়তো ভাবে যে, ‘ দ্যাখো, মানুষটা এতো ঈশ্বরের ভক্ত, কিন্তু ওর এইরকম দুর্গতি !!’ কিন্তু সেই ভক্ত মানুষটির খুব একটা অসুবিধা হয় না। সে তখন অন্তর্জগতে একটাই প্রার্থনা করে চলে – ” দুঃখ যদি দিয়েছো প্রভু – শক্তি দাও সহিবারে !”
যাইহোক, আমরা আবার গুরুমহারাজের কথায় ফিরে যাই। দেখি – পরম করুণাময় ভগবান স্বামী পরমানন্দ আমাদের মতো অজ্ঞানী, অভাজন, আহাম্মকদেরকে সহজভাবে বোঝানোর জন্য আরো কি কি বলেছেন ! উনি এর আগে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন অন্তর্মুখী হোতে, ভগবৎমুখী হোতে ! এইবার ভক্ত সাধকের আরও অগ্রগতি কিভাবে হবে সেই সম্পর্কে উনি বলেছেন – ” অন্তর্মুখী হবার পর প্রচণ্ড আগ্রহ প্রকাশ করতে থাকো ! অসহ্য ব্যাকুলতা প্রকট করো, তাহলেই চরম ও পরম বস্তুতে তুমি শীঘ্রই উপনীত হবে। তখন দেখবে বিচার আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেছে। চিত্ত নিস্তরঙ্গ হোলে আত্মসমাহিত অবস্থা লাভ হয়, আর ঐ নির্মল অন্তঃকরণে তখন ভগবৎ প্রেমের আবির্ভাব হয়।”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! তাহলে আমরা আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য কিভাবে সোপান বেয়ে বেয়ে উপরে উঠতে হয়, তার সহজ সরল বিধান প্রাপ্ত হলাম – তাই নয় কি ? গুরুমহারাজ প্রথমে বলেছিলেন – ‘ভগবৎমুখী হও’ অর্থাৎ অন্তর্মুখী হও ! অন্তর্মুখী হোলে সংসারের সমস্ত প্রতিকূলতা কেটে যাবে ! অন্তর্মুখী হোলে বা ভগবৎমুখী হোলে সাধকের বিনম্রতা আসে, যা ভগবৎ প্রেমিকের লক্ষণ ! কিন্তু এরপরে উনি ভক্ত-সাধকদের আরো কিভাবে এগিয়ে যেতে হবে, সে কথাও বলেছেন। উনি যা বলেছেন তাতে বোঝা গেল যে, সাধকের অন্তর্মুখী হয়ে থেমে থাকলেই চলবে না, এরপর ঐ অবস্থায় চরম বা পরম লক্ষ্যে উপনীত হোতে গেলে অসহ্য ব্যাকুলতা প্রয়োজন এবং পরম লক্ষ্য প্রাপ্তির জন্য প্রচণ্ড আগ্রহ প্রকাশ প্রয়োজন !
এরপরের অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে গুরুমহারাজ বলেছেন যে, ঐ অবস্থায় উপনীত হোলে ‘বিচার’ অর্থাৎ ভালো-মন্দ, নিত্য-অনিত্য, সদ-অসদ ইত্যাদির বিচার আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যায়, চিত্ত নিস্তরঙ্গ অবস্থা লাভ করে এবং সাধকের আত্মসমাহিত অবস্থা লাভ হয়। তখনই সাধকের অন্তঃকরণে প্রকৃত ভগবৎ-প্রেমের আবির্ভাব ঘটে !
তাহলে এরপর দেখা যাক্ অন্তঃকরণ নির্মল হোলে বা আত্মসমাহিত অবস্থা লাভ করলে আরো কি কি অবস্থা হয় – সেই প্রসঙ্গে গুরুমহারাজ কি বলেছেন ! গুরুজী বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ ! তখন (আত্মসমাহিত অবস্থায়) আর শ্রেষ্ঠ-কনিষ্ঠ, মান-অপমান, পুরস্কার-তিরস্কার, স্তুতি-নিন্দা, ইষ্ট, অধিকার, ক্ষমতার লোভ ইত্যাদি অভিমানিক মানের সংবেদন বা স্থিতির ক্রিয়া থাকে না। যতক্ষণ অভিমানী মন থাকে, ততক্ষণ খন্ডিত বা ভেদভাব বিদ্যমান। যখন অভিমানী মন বিলুপ্ত হয়, তখনই প্রকৃত প্রেমের আবির্ভাব হয় – তা সহজ ভক্তের একান্ত কাম্য।”