শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (কথিত এবং লিখিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। আগের আলোচনায় আমরা দেখেছিলাম যে, গুরুমহারাজ বলেছেন – আত্মসমাহিত অবস্থায় যখন সাধকের অন্তঃকরণে ভগবৎ প্রেমের আবির্ভাব ঘটে, তখন তার মধ্যে যাবতীয় ভেদভাব (শ্রেষ্ঠ-কনিষ্ঠ, মান-অপমান, পুরস্কার-তিরস্কার, স্তুতি-নিন্দা, ঈর্ষা, অধিকার, ক্ষমতার লোভ – ইত্যাদি) থাকে না। যাবতীয় ভেদ ভাবকে গুরুমহারাজ মানবের অভিমানিক মনের সংবেদন হিসাবে বর্ণনা করেছেন। প্রেমের আবির্ভাব ঘটলে ঐ ‘সংবেদন’ ক্রিয়াশীল থাকে না৷ ‘অভিমানী মন’ থেকেই মানবের জীবনে ভেদ ভাব আসে, আর ‘অভিমানী মন’ বিলুপ্ত হোলেই প্রকৃত প্রেমের আবির্ভাব হয়। আর এই অবস্থাই মানবের অর্থাৎ সাধকের সহজ অবস্থা !!!
এরপরে আমরা দেখব, গুরুমহারাজ তাঁর স্বহস্ত রচিত “সহজতা ও প্রেম” গ্রন্থে আরো কি কি বলেছেন ! উনি বলেছেন – ” সাধারণতঃ জীবজগৎ অভিমানী মনের স্তরে অবস্থান করছে – এই অবস্থা মানবের সহজ অবস্থা নয়। মানবকে এই অসহজ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হবে। অভিমানী মন বিলুপ্ত হোলেই প্রকৃত সত্যের উপলব্ধি ও অখণ্ড প্রেমের আবির্ভাব হয়।” গুরুমহারাজ আগে একবার অভিমানী মনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু কথা হোচ্ছে_ ‘অভিমানী মনের স্তর’ বলতে ঠিক কী বোঝায় ? ওই যে গুরুমহারাজ আগেই আলোচনা করলেন, যে মনের স্তরে ভেদ-ভাব থাকে, যেখানে সদাই দ্বন্দ্বাত্বক ভাব বিদ্যমান অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ-কনিষ্ঠ, মান-অপমান, পুরস্কার-তিরস্কার, নিন্দা-স্তুতি ইত্যাদির বোধ ক্রিয়াশীল – মনের সেই স্তরকেই ‘অভিমানিক স্তর’ বলা হোচ্ছে। এই স্তরে মানুষের ‘অহং’ এবং ‘অভিমান’ সতত ক্রিয়াশীল অর্থাৎ সবকিছুতেই ‘আমি’ ব্যাপারটা রয়েছে। কিন্তু গুরুমহারাজ মানব মনের এই স্তরকে ‘সহজ অবস্থা’ বলেন নি – এটা অসহজ অবস্থা। সাধককে অসহজ অবস্থা কাটিয়ে উঠতেই হবে, যাতে প্রকৃত সত্যের উপলব্ধি হয় এবং অখন্ড প্রেমের আবির্ভাব হয়।
এরপর গুরুমহারাজ বলেছেন – ” অভিমানী মনের স্তরে মানব যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ কামনারই নানারকম বিকার পরিলক্ষিত হয়। এটা চিত্ত বিক্ষোভ – ভগবৎ প্রেম নয়। স্বার্থবুদ্ধি, শ্রেণীবুদ্ধি, সম্প্রদায় বুদ্ধি – এইগুলিই নিম্ন-অভিমানী মনের প্রতিক্রিয়া বা সংবেদন। অখন্ড বোধে (অখন্ডের বোধ হোলে) নিম্নমনের প্রতিক্রিয়াগুলি মানব স্বভাব হোতে অদৃশ্য হয়ে যায়। আর উক্ত চারিত্রিক দুর্বলতাগুলি আধ্যাত্মিক মানবের কখনোই লক্ষ্য হোতে পারে না। এগুলি আধ্যাত্মিক অপূর্ণতার লক্ষণ। আধ্যাত্মিক পূর্ণতা লাভ হোলে সমস্ত রকমের স্বার্থজড়িত দুর্বলতাগুলির অবসান হয়। এক কথায় স্বার্থের মৃত্যু হয় আর প্রেমের আবির্ভাব হয়।”
গুরুমহারাজের উপরোক্ত কথাগুলি থেকে মানবের ‘অভিমানী মন’ এবং তার ক্রিয়া সম্বন্ধে আমরা আরো কিছু কথা জানতে পারলাম৷ অভিমানী মনের স্তরে থাকা মানবের মধ্যে কামনা-বিকার পরিলক্ষিত হয়। এই অবস্থায় থাকা মানবের মধ্যেই শ্রেণীচেতনা, গোষ্ঠীচেতনা, সম্প্রদায়চেতনা ক্রিয়াশীল থাকে। এছাড়া আমরা আরো জানতে পারলাম যে, অখন্ডের বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরাই প্রকৃত অর্থে আধ্যাত্মিক ব্যক্তি এবং তাদের আর কোনোরকম চারিত্রিক দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয় না। আর আধ্যাত্মিকভাবে পূর্ণ হোতে পারলে মানবের স্বার্থবোধ কাজ করে না। কারণ তখন মানবজীবনে প্রেমের আবির্ভাব ঘটে। যার মধ্যে প্রেমের আবির্ভাব ঘটে – তার মধ্যে স্বার্থবুদ্ধি কাজ করে না।
এরপরে গুরুমহারাজ যা বলেছেন সেটা এবার দেখা যাক্। উনি বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ – স্বার্থজড়িত অভিমানী মনের স্তর হোতে চরম ও পরম স্থিতির দিকে অগ্রসর হও। আকুল হয়ে বলো – ‘অসতো মা সদ্গময়, তমসো মা জ্যোতির্গময়, মৃত্যোর্মামৃতংগময়।৷”– [অসৎ হোতে আমাকে সতে নিয়ে চলো৷ অন্ধকার হোতে আমাকে আলোকে নিয়ে চলো। মৃত্যু হোতে আমাকে অমৃতে নিয়ে চলো !]
পরমপ্রেমময় গুরুমহারাজের প্রেম ও করুণার কথা স্মরণ করলেই চোখ জল ভরে আসে, বেশিক্ষণ কথাও বলা যায় না – লেখাও যায় না। কিন্তু আপনারা অর্থাৎ সুধী পাঠকবৃন্দেরা – আপনারা তো সবই বুঝতে পারছেন ! কি অসম্ভব করুণায় বিগলিত হয়ে গুরুমহারাজ উপরিউক্ত কথাগুলি বলেছেন ! উনি সদাসর্বদা সকলকে নিজের আত্মার আত্মীয় জ্ঞান করতেন আর তাই উনি সকলকে “প্রিয় আত্মন্” বলে সম্বোধন করতেন এবং উনি প্রাণপণে চাইতেন ওনার চারিপাশে থাকা মানুষগুলি যেভাবেই হোক__ যেন আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত হয়ে ওঠে। অবশ্য এটাই সকল মহাপুরুষদের একমাত্র কাজ।
আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরা _ মহামায়ার এই জগতে জন্মগ্রহণ করে তাঁর ভুবনমোহিনী মায়ায় জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য কি _ তা ভুলে যাই এবং তাঁর পাতা রূপ-রসাদির জালে বা মায়া-মোহের ফাঁদে পড়ে যাই। আর এই সবে আমরা এমনভাবে আটকে পড়ি যে, কিছুতেই সেখান থেকে ছাড়া পাই না।
এই অবস্থায় নানান জ্বালায় জ্বলতে জ্বলতে বহু মানুষ যখন আকূল হয়ে ঈশ্বরকে আহ্বান করেন এবং মহামায়ার জগতের আমোঘ আকর্ষণ থেকে মুক্ত হোতে চান, তখনই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হ’ন মহাপুরুষগণ। তাঁরাই তাঁদের শারীরিক উপস্থিতি দিয়ে, অপার্থিব প্রেমের স্পর্শ দিয়ে, পরমজ্ঞান দান করে, ক্রিয়াযোগের শিক্ষা দান করে__ তাঁর চারপাশের মানুষজনকে অসৎ হতে সতে, অন্ধকার থেকে আলোয় এবং মৃত্যু থেকে অমৃতলোকে যাবার পথ দেখান। এইভাবেই মানবসমাজ যুগ যুগ ধরে এগিয়ে চলেছে সম্মুখপানে, পরিপূর্ণতা লাভের দিকে।।
এরপরে আমরা দেখব, গুরুমহারাজ তাঁর স্বহস্ত রচিত “সহজতা ও প্রেম” গ্রন্থে আরো কি কি বলেছেন ! উনি বলেছেন – ” সাধারণতঃ জীবজগৎ অভিমানী মনের স্তরে অবস্থান করছে – এই অবস্থা মানবের সহজ অবস্থা নয়। মানবকে এই অসহজ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হবে। অভিমানী মন বিলুপ্ত হোলেই প্রকৃত সত্যের উপলব্ধি ও অখণ্ড প্রেমের আবির্ভাব হয়।” গুরুমহারাজ আগে একবার অভিমানী মনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু কথা হোচ্ছে_ ‘অভিমানী মনের স্তর’ বলতে ঠিক কী বোঝায় ? ওই যে গুরুমহারাজ আগেই আলোচনা করলেন, যে মনের স্তরে ভেদ-ভাব থাকে, যেখানে সদাই দ্বন্দ্বাত্বক ভাব বিদ্যমান অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ-কনিষ্ঠ, মান-অপমান, পুরস্কার-তিরস্কার, নিন্দা-স্তুতি ইত্যাদির বোধ ক্রিয়াশীল – মনের সেই স্তরকেই ‘অভিমানিক স্তর’ বলা হোচ্ছে। এই স্তরে মানুষের ‘অহং’ এবং ‘অভিমান’ সতত ক্রিয়াশীল অর্থাৎ সবকিছুতেই ‘আমি’ ব্যাপারটা রয়েছে। কিন্তু গুরুমহারাজ মানব মনের এই স্তরকে ‘সহজ অবস্থা’ বলেন নি – এটা অসহজ অবস্থা। সাধককে অসহজ অবস্থা কাটিয়ে উঠতেই হবে, যাতে প্রকৃত সত্যের উপলব্ধি হয় এবং অখন্ড প্রেমের আবির্ভাব হয়।
এরপর গুরুমহারাজ বলেছেন – ” অভিমানী মনের স্তরে মানব যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ কামনারই নানারকম বিকার পরিলক্ষিত হয়। এটা চিত্ত বিক্ষোভ – ভগবৎ প্রেম নয়। স্বার্থবুদ্ধি, শ্রেণীবুদ্ধি, সম্প্রদায় বুদ্ধি – এইগুলিই নিম্ন-অভিমানী মনের প্রতিক্রিয়া বা সংবেদন। অখন্ড বোধে (অখন্ডের বোধ হোলে) নিম্নমনের প্রতিক্রিয়াগুলি মানব স্বভাব হোতে অদৃশ্য হয়ে যায়। আর উক্ত চারিত্রিক দুর্বলতাগুলি আধ্যাত্মিক মানবের কখনোই লক্ষ্য হোতে পারে না। এগুলি আধ্যাত্মিক অপূর্ণতার লক্ষণ। আধ্যাত্মিক পূর্ণতা লাভ হোলে সমস্ত রকমের স্বার্থজড়িত দুর্বলতাগুলির অবসান হয়। এক কথায় স্বার্থের মৃত্যু হয় আর প্রেমের আবির্ভাব হয়।”
গুরুমহারাজের উপরোক্ত কথাগুলি থেকে মানবের ‘অভিমানী মন’ এবং তার ক্রিয়া সম্বন্ধে আমরা আরো কিছু কথা জানতে পারলাম৷ অভিমানী মনের স্তরে থাকা মানবের মধ্যে কামনা-বিকার পরিলক্ষিত হয়। এই অবস্থায় থাকা মানবের মধ্যেই শ্রেণীচেতনা, গোষ্ঠীচেতনা, সম্প্রদায়চেতনা ক্রিয়াশীল থাকে। এছাড়া আমরা আরো জানতে পারলাম যে, অখন্ডের বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরাই প্রকৃত অর্থে আধ্যাত্মিক ব্যক্তি এবং তাদের আর কোনোরকম চারিত্রিক দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয় না। আর আধ্যাত্মিকভাবে পূর্ণ হোতে পারলে মানবের স্বার্থবোধ কাজ করে না। কারণ তখন মানবজীবনে প্রেমের আবির্ভাব ঘটে। যার মধ্যে প্রেমের আবির্ভাব ঘটে – তার মধ্যে স্বার্থবুদ্ধি কাজ করে না।
এরপরে গুরুমহারাজ যা বলেছেন সেটা এবার দেখা যাক্। উনি বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ – স্বার্থজড়িত অভিমানী মনের স্তর হোতে চরম ও পরম স্থিতির দিকে অগ্রসর হও। আকুল হয়ে বলো – ‘অসতো মা সদ্গময়, তমসো মা জ্যোতির্গময়, মৃত্যোর্মামৃতংগময়।৷”– [অসৎ হোতে আমাকে সতে নিয়ে চলো৷ অন্ধকার হোতে আমাকে আলোকে নিয়ে চলো। মৃত্যু হোতে আমাকে অমৃতে নিয়ে চলো !]
পরমপ্রেমময় গুরুমহারাজের প্রেম ও করুণার কথা স্মরণ করলেই চোখ জল ভরে আসে, বেশিক্ষণ কথাও বলা যায় না – লেখাও যায় না। কিন্তু আপনারা অর্থাৎ সুধী পাঠকবৃন্দেরা – আপনারা তো সবই বুঝতে পারছেন ! কি অসম্ভব করুণায় বিগলিত হয়ে গুরুমহারাজ উপরিউক্ত কথাগুলি বলেছেন ! উনি সদাসর্বদা সকলকে নিজের আত্মার আত্মীয় জ্ঞান করতেন আর তাই উনি সকলকে “প্রিয় আত্মন্” বলে সম্বোধন করতেন এবং উনি প্রাণপণে চাইতেন ওনার চারিপাশে থাকা মানুষগুলি যেভাবেই হোক__ যেন আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত হয়ে ওঠে। অবশ্য এটাই সকল মহাপুরুষদের একমাত্র কাজ।
আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরা _ মহামায়ার এই জগতে জন্মগ্রহণ করে তাঁর ভুবনমোহিনী মায়ায় জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য কি _ তা ভুলে যাই এবং তাঁর পাতা রূপ-রসাদির জালে বা মায়া-মোহের ফাঁদে পড়ে যাই। আর এই সবে আমরা এমনভাবে আটকে পড়ি যে, কিছুতেই সেখান থেকে ছাড়া পাই না।
এই অবস্থায় নানান জ্বালায় জ্বলতে জ্বলতে বহু মানুষ যখন আকূল হয়ে ঈশ্বরকে আহ্বান করেন এবং মহামায়ার জগতের আমোঘ আকর্ষণ থেকে মুক্ত হোতে চান, তখনই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হ’ন মহাপুরুষগণ। তাঁরাই তাঁদের শারীরিক উপস্থিতি দিয়ে, অপার্থিব প্রেমের স্পর্শ দিয়ে, পরমজ্ঞান দান করে, ক্রিয়াযোগের শিক্ষা দান করে__ তাঁর চারপাশের মানুষজনকে অসৎ হতে সতে, অন্ধকার থেকে আলোয় এবং মৃত্যু থেকে অমৃতলোকে যাবার পথ দেখান। এইভাবেই মানবসমাজ যুগ যুগ ধরে এগিয়ে চলেছে সম্মুখপানে, পরিপূর্ণতা লাভের দিকে।।