গুরু মহারাজ (স্বামী পরমানন্দ)-ই তাঁর নিজের লেখা বই-এ লিখেছিলেন – ” পরমেশ্বরের লীলা কে বুঝিতে পারে ?” পরমেশ্বরের লীলা বোঝা যায় না , ঈশ্বরের লীলা বোঝা যায় না , ভগবানের লীলাও বোঝা যায় না ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণও বলেছিলেন – ” ঈশ্বরের নরলীলা বুঝতে পারাই সবচাইতে কঠিন !” ঐটুকু চৌদ্দপোয়া (সাড়ে তিন হাত) শরীরে সেই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়কারী শক্তি ক্রিয়া করছে ! অথচ শান্ত , স্থির , ঠিক যেন আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো ! হাঁটছেন , চলছেন , কথা বলছেন , খাচ্ছেন – শৌচ যাচ্ছেন – ঠিক যেন সাধারণ মানুষ ! সেই সাধারণ হয়েও অসাধারণ মানুষটি! সেই সোনার মানুষ – মজার মানুষটির কি অন্য কারো তুলনা হয় ? যাঁর জগৎ , যিনি জগৎপতি – তিনিই ছদ্মবেশ ধারণ করে নেমে এসেছিলেন মাটির পৃথিবীতে , কিছুদিন লীলা করলেন , লীলার প্রয়োজনে কাউকে মন্ত্রী , কাউকে সান্ত্রী ইত্যাদি কতজনকে কতকিছু Roll play করিয়ে নিলেন ! তারপর লীলা খেলা শেষ হতেই “অনন্ত” – “অনন্তে”-ই মিশে গেলেন ! মায়ার জগৎ পড়ে থাকল – এখন আমরা সবাই রাজা !
আমাদের গ্রামের বাড়ী অজয় নদের তীরে ! বর্ষার সময় যখন বন্যা আসে তখন আমরা দেখেছি যেদিন প্রথম আষাঢ়ে নদীতে ঢল নামে – তখন ‘হড়পা’ বানের মতো প্রচন্ড শব্দ করে জলরাশি হু হু করে নদী খাতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যায় – দু-কুলকে প্লাবিত করে! তার যাত্রাপথে যা কিছু পায় প্রায় সবিকছুকেই (হালকা জিনিষগুলো নিয়ে যায় ভারীগুলোকে পারে না শুধু একটু স্থানান্তরে নিয়ে যায় – এইমাত্র !) সঙ্গে করে নিয়ে চলে যায়। এইসব ভয়ঙ্কর ব্যাপার-স্যাপার ঘটে যাবার পর দেখা যায় নদী দু-কুল প্লাবিত হোল ঠিকই, তবু যেন অপেক্ষাকৃত অনেকটা শান্ত ! কিন্তু জায়গায় জায়গায় তুমুল কলরোল! ব্যাপারটা কি ? স্থানে স্থানে ছোট ছোট ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়েছে – সেগুলিও নদীগর্ভের বালি তুলে তুলে ভাসিয়ে দিচ্ছে – পরে সেই স্থানগুলি হয়তো গভীর গর্ত হয়ে যায় , আমরা একে তখন ‘দহ’ বলি ! নদীর যখন জল কমে যায় তখনও এইগুলিতে জল থাকে , স্থানে স্থানে হয়তো গভীর জল থাকে ৷ আর এইসব ‘দহে’ জল যেমন থাকে তেমনি অনেক জলজ প্রাণীও যেখানে বসবাস করে ৷ গ্রীষ্মকালে জেলেরা জাল টেনে টেনে ক্যুইন্টাল ক্যুইন্টাল মাছ ধরে । অনেক সময় বড় বড় মাছও পাওয়া যায় ! ৮–১০ কেজী কাতলা – রুই – মৃগেল !
” অধ্যাত্মজগতের বিচিত্র বিধান ” – গুরু মহারাজ বলেছিলেন ! অধ্যাত্মজগতের কোন রহস্য-ই জাগতিক কোন বস্তু বা বিষয়ের উপর নির্ভর করে না , জাগতিক কোন উদাহরণ দিয়েই অধ্যাত্মজগতের কোন ঘটনাকে ঠিক ঠিক বোঝানো যায় না – এটাও গুরু মহারাজ বলেছিলেন । তবুও ওনারা (অবতার পুরুষেরা , অবতার বরিষ্ঠরা) কথায় কথায় example দিয়েই মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন , মানুষের মোটা মাথায় সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ধারণা ঢোকানোর চেষ্টা করেছেন ৷ এক্ষেত্রেও আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি বা ধারণায় মনে হয়েছে যে বন্যার আগমন এবং চলে যাওয়ার সময় কিন্তু আলাদা করে কোন ‘ঘূর্ণি’ পরিলক্ষিত হয় না বা সেই ঘূর্ণির ক্রিয়াশীলতা, গর্জন ইত্যাদি দেখা বা শোনা যায় না ! কিন্তু বন্যার তাণ্ডব কমে গেলে – ঐ ঘূর্ণিগুলির তর্জন-গর্জন স্থানীয় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে !
ঠিক তেমনি অবতারপুরুষ যখন বন্যার মতন আসেন তখন অন্য কাউকে বা অন্য কোন কিছুকেই তেমন করে চোখে পড়ে না ! কিন্তু অবতার পুরুষের শরীর চলে যাবার পর অধ্যাত্মপিপাসু মানুষ খুঁজে খুঁজে ফেরে – “কোথায় পাব তাঁরে” ! তখনই ছোট ছোট , বড় বড় ঘূর্ণিগুলির ন্যায় বিভিন্ন মহাত্মা-মহাপুরুষের ক্রিয়াশীলতা শুরু হয়ে যায় ! তাদের এক-একজনকে কেন্দ্র করে (নদীর ঘূর্ণির ন্যায়) অনেকে ঘুরতে থাকে , তার ক্রিয়াশীলতার সাথী হয়ে সমাজে কাজ করতে থাকে ৷ এই ভাবে দেখা যায় একই অবতারপুরুষের শিক্ষা নানান ধারায় _নানা কৌশলে সমাজে ক্রিয়াশীল থাকে ! আর এর ফলে সমাজের মঙ্গল নিশ্চয়ই হয়! নাহলে বিবর্তন – সংবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকবে কেমন করে?
ভগবান পরমানন্দ এসেছিলেন সমাজের সমস্ত শ্রেনীর, সমস্ত মতের, সমস্ত পথের, সমস্ত থাকের _মানুষের মঙ্গলের জন্য। তাঁর কাছে সবাইকে সব রঙে রাঙানোর ব্যবস্থা ছিল _তাই তাঁর কাছে পাঁচ গোয়ালের গরু, এক গোয়ালে জড়ো হয়েছিল।
এখন অনেকের কাছেই রঙের ডাব্বা রয়েছে _কিন্তু তাতে পৃথক পৃথক রঙ!! পৃথিবীতে যত ধরনের মানুষ আছে – তাদের প্রত্যেকেরই ‘মনের মতো গুরু আছে বা গ্রহণযোগ্য আদর্শ আছে ।যেমন চাওয়া _তেমনি পাওয়া!!
রঙের কথা যেটা বলা হোল _ওটা হচ্ছে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের বলা একটা গল্প। ____এক গাছতলায় এক ম্যাজিক-ম্যান বাস করত। তার কাছে একটাই মাত্র রঙের গামলা(বড় পাত্র) ছিল। আশ্চর্যের বিষয় ছিল এটাই যে, কোন ব্যক্তি তার কাছে এসে নিজের বস্ত্রকে যে রঙে রাঙাতে চাইতো _ঐ ম্যাজিক ম্যান তার বস্ত্রকে সেই রঙে রাঙিয়ে দিতো! এক ব্যক্তি অনেকক্ষণ ধরে তার এই কেরামতি দেখে, তার কাছে এসে বলল__”ওহে জাদুকর! আমার অন্য কোন রঙ চাই না, তুমি যে রঙে রেঙেছ আমাকে সেই রঙে রাঙিয়ে দাও!!!”
গুরুমহারাজের কাছে সব রঙ ছিল। যে ব্যক্তি যে রঙ চেয়েছে _উনি তাকে সেই রঙে রাঙিয়ে দিয়েছেন। সেই সব রঙে রঙিন ব্যক্তিরা আবার নিজ নিজ রঙে অপর রঙপিপাসুদের কে রাঙাচ্ছেন! আলাদা আলাদা রঙপিপাসু, আলাদা আলাদা রঙের পসরা সাজিয়ে, আলাদা আলাদা রঙিন ব্যক্তিরা!!
সবার জন্যই রঙের ব্যবস্থা আছে _কিন্তু এক জায়গায় নয! এক জায়গায় _যার কাছে ছিল, সে ফুরুৎ!! হাজার খুঁজলেও আর তাকে স্থুলে পাবে না! পেতে চাইলে __ডোবো প্রেমের গভীরে, জ্ঞানের গভীরে!! তবে যারা ডুবতে পারছে না _তাদের ও চিন্তার কোন কারন নাই!
আবার তিনি আসবেন! একটাই পাত্রে বিভিন্ন রঙের পসরা নিয়ে! অন্য কোন রুপে_অন্য কোন নামে _অন্য কোন স্থানে, পৃথিবী গ্রহেরই অন্য কোন প্রান্তে!! (ক্রমশঃ)
আমাদের গ্রামের বাড়ী অজয় নদের তীরে ! বর্ষার সময় যখন বন্যা আসে তখন আমরা দেখেছি যেদিন প্রথম আষাঢ়ে নদীতে ঢল নামে – তখন ‘হড়পা’ বানের মতো প্রচন্ড শব্দ করে জলরাশি হু হু করে নদী খাতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যায় – দু-কুলকে প্লাবিত করে! তার যাত্রাপথে যা কিছু পায় প্রায় সবিকছুকেই (হালকা জিনিষগুলো নিয়ে যায় ভারীগুলোকে পারে না শুধু একটু স্থানান্তরে নিয়ে যায় – এইমাত্র !) সঙ্গে করে নিয়ে চলে যায়। এইসব ভয়ঙ্কর ব্যাপার-স্যাপার ঘটে যাবার পর দেখা যায় নদী দু-কুল প্লাবিত হোল ঠিকই, তবু যেন অপেক্ষাকৃত অনেকটা শান্ত ! কিন্তু জায়গায় জায়গায় তুমুল কলরোল! ব্যাপারটা কি ? স্থানে স্থানে ছোট ছোট ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়েছে – সেগুলিও নদীগর্ভের বালি তুলে তুলে ভাসিয়ে দিচ্ছে – পরে সেই স্থানগুলি হয়তো গভীর গর্ত হয়ে যায় , আমরা একে তখন ‘দহ’ বলি ! নদীর যখন জল কমে যায় তখনও এইগুলিতে জল থাকে , স্থানে স্থানে হয়তো গভীর জল থাকে ৷ আর এইসব ‘দহে’ জল যেমন থাকে তেমনি অনেক জলজ প্রাণীও যেখানে বসবাস করে ৷ গ্রীষ্মকালে জেলেরা জাল টেনে টেনে ক্যুইন্টাল ক্যুইন্টাল মাছ ধরে । অনেক সময় বড় বড় মাছও পাওয়া যায় ! ৮–১০ কেজী কাতলা – রুই – মৃগেল !
” অধ্যাত্মজগতের বিচিত্র বিধান ” – গুরু মহারাজ বলেছিলেন ! অধ্যাত্মজগতের কোন রহস্য-ই জাগতিক কোন বস্তু বা বিষয়ের উপর নির্ভর করে না , জাগতিক কোন উদাহরণ দিয়েই অধ্যাত্মজগতের কোন ঘটনাকে ঠিক ঠিক বোঝানো যায় না – এটাও গুরু মহারাজ বলেছিলেন । তবুও ওনারা (অবতার পুরুষেরা , অবতার বরিষ্ঠরা) কথায় কথায় example দিয়েই মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন , মানুষের মোটা মাথায় সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ধারণা ঢোকানোর চেষ্টা করেছেন ৷ এক্ষেত্রেও আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি বা ধারণায় মনে হয়েছে যে বন্যার আগমন এবং চলে যাওয়ার সময় কিন্তু আলাদা করে কোন ‘ঘূর্ণি’ পরিলক্ষিত হয় না বা সেই ঘূর্ণির ক্রিয়াশীলতা, গর্জন ইত্যাদি দেখা বা শোনা যায় না ! কিন্তু বন্যার তাণ্ডব কমে গেলে – ঐ ঘূর্ণিগুলির তর্জন-গর্জন স্থানীয় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে !
ঠিক তেমনি অবতারপুরুষ যখন বন্যার মতন আসেন তখন অন্য কাউকে বা অন্য কোন কিছুকেই তেমন করে চোখে পড়ে না ! কিন্তু অবতার পুরুষের শরীর চলে যাবার পর অধ্যাত্মপিপাসু মানুষ খুঁজে খুঁজে ফেরে – “কোথায় পাব তাঁরে” ! তখনই ছোট ছোট , বড় বড় ঘূর্ণিগুলির ন্যায় বিভিন্ন মহাত্মা-মহাপুরুষের ক্রিয়াশীলতা শুরু হয়ে যায় ! তাদের এক-একজনকে কেন্দ্র করে (নদীর ঘূর্ণির ন্যায়) অনেকে ঘুরতে থাকে , তার ক্রিয়াশীলতার সাথী হয়ে সমাজে কাজ করতে থাকে ৷ এই ভাবে দেখা যায় একই অবতারপুরুষের শিক্ষা নানান ধারায় _নানা কৌশলে সমাজে ক্রিয়াশীল থাকে ! আর এর ফলে সমাজের মঙ্গল নিশ্চয়ই হয়! নাহলে বিবর্তন – সংবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকবে কেমন করে?
ভগবান পরমানন্দ এসেছিলেন সমাজের সমস্ত শ্রেনীর, সমস্ত মতের, সমস্ত পথের, সমস্ত থাকের _মানুষের মঙ্গলের জন্য। তাঁর কাছে সবাইকে সব রঙে রাঙানোর ব্যবস্থা ছিল _তাই তাঁর কাছে পাঁচ গোয়ালের গরু, এক গোয়ালে জড়ো হয়েছিল।
এখন অনেকের কাছেই রঙের ডাব্বা রয়েছে _কিন্তু তাতে পৃথক পৃথক রঙ!! পৃথিবীতে যত ধরনের মানুষ আছে – তাদের প্রত্যেকেরই ‘মনের মতো গুরু আছে বা গ্রহণযোগ্য আদর্শ আছে ।যেমন চাওয়া _তেমনি পাওয়া!!
রঙের কথা যেটা বলা হোল _ওটা হচ্ছে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের বলা একটা গল্প। ____এক গাছতলায় এক ম্যাজিক-ম্যান বাস করত। তার কাছে একটাই মাত্র রঙের গামলা(বড় পাত্র) ছিল। আশ্চর্যের বিষয় ছিল এটাই যে, কোন ব্যক্তি তার কাছে এসে নিজের বস্ত্রকে যে রঙে রাঙাতে চাইতো _ঐ ম্যাজিক ম্যান তার বস্ত্রকে সেই রঙে রাঙিয়ে দিতো! এক ব্যক্তি অনেকক্ষণ ধরে তার এই কেরামতি দেখে, তার কাছে এসে বলল__”ওহে জাদুকর! আমার অন্য কোন রঙ চাই না, তুমি যে রঙে রেঙেছ আমাকে সেই রঙে রাঙিয়ে দাও!!!”
গুরুমহারাজের কাছে সব রঙ ছিল। যে ব্যক্তি যে রঙ চেয়েছে _উনি তাকে সেই রঙে রাঙিয়ে দিয়েছেন। সেই সব রঙে রঙিন ব্যক্তিরা আবার নিজ নিজ রঙে অপর রঙপিপাসুদের কে রাঙাচ্ছেন! আলাদা আলাদা রঙপিপাসু, আলাদা আলাদা রঙের পসরা সাজিয়ে, আলাদা আলাদা রঙিন ব্যক্তিরা!!
সবার জন্যই রঙের ব্যবস্থা আছে _কিন্তু এক জায়গায় নয! এক জায়গায় _যার কাছে ছিল, সে ফুরুৎ!! হাজার খুঁজলেও আর তাকে স্থুলে পাবে না! পেতে চাইলে __ডোবো প্রেমের গভীরে, জ্ঞানের গভীরে!! তবে যারা ডুবতে পারছে না _তাদের ও চিন্তার কোন কারন নাই!
আবার তিনি আসবেন! একটাই পাত্রে বিভিন্ন রঙের পসরা নিয়ে! অন্য কোন রুপে_অন্য কোন নামে _অন্য কোন স্থানে, পৃথিবী গ্রহেরই অন্য কোন প্রান্তে!! (ক্রমশঃ)