শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (লিখিত ও কথিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। আমরা গুরুমহারাজের স্বহস্ত লিখিত দ্বিতীয় গ্রন্থ *বাউলের মর্মকথা* থেকে লাইন তুলে তুলে ধরে বাউলতত্ত্ব ও বাউলমতের দেহতত্ত্ব বিষয়ে গুরুমহারাজ কি বোঝাতে চেয়েছেন – সেইগুলি এখানে আলোচনা করছিলাম। গুরুজী ‘ভান্ডে ব্রহ্মাণ্ড’ তত্ত্ব বিষয়ে যে আলোচনা করেছিলেন, এখন আমরা তার পরবর্তী অংশে চলে যাবো। দ্যাখা যাক্, গুরুজী এরপরে ‘সৃষ্টিরহস্য’ বিষয়ে আরো কি কি বলেছেন।
উনি বলেছেন – ” পরমেশ্বর প্রথমে একা ছিলেন – অখণ্ড-অদ্বৈত-পরম মহাচৈতন্যরূপে। কিন্তু তখন তিনি আপন মাধুর্য্যরস আস্বাদন করতে পারেন নি। সেইজন্য তিনি (পুরুষ ও) প্রকৃতিরূপে নিজেকে দ্বিধাবিভক্ত করলেন, আর তা হোতেই বিশ্বপ্রকৃতির উদ্ভব হোলো এবং তা থেকেই সমগ্র সৃষ্টি। ঐ পরম এক আনন্দরস আস্বাদনের জন্য নিজেকে দ্বিধাকরণ করে যে দুই সত্ত্বায় পরিণত হলেন – তার একটি পুরুষ (পরম পুরুষ) আর অন্যটি প্রকৃতি (পরমা প্রকৃতি)। উপনিষদেও এই তত্ত্ব উল্লিখিত রয়েছে –
” আত্মৈবেদমগ্র আসীৎ পুরুষ বিধাঃ ……
স বৈ নৈব রেমে তস্মাদেকাকী ন রমতে সদ্বিতীয়মৈচ্ছৎ।
স হৈতাবানাস যথা স্ত্রী পুমাংসৗে সম্পবিষ্বক্তৗে
স ইমমেবাত্মানং দ্বেধাহপাতয়ং ততঃ পতিশ্চ পত্নী চাভবতাং।৷”
[“প্রথমতঃ এই জগৎ পুরুষকার আত্মা (বা বিরাট) রূপেই ছিল…….। তিনি মোটেই আনন্দিত হইলেন না, এইজন্য যে–কেহ একাকী থাকিলে সুখী হয় না। তিনি সঙ্গীর অভিলাষ করিলেন। স্বামী ও স্ত্রী অলিঙ্গিত হইয়া যে পরিমাণ হয়, তিনি সেই পরিমাণ হইলেন। তিনি সেই দেহকেই দুই ভাগে ভাগ করিলেন। তাহা হইতে পতি ও পত্নী জাত হইলেন।”– বৃহদারণ্যকোপনিষৎ (১/৪/৩)]
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! উপরোক্ত আলোচনা ও উদ্ধৃতি থেকে আজ আমরা অনেক কিছুর উৎস ও সূত্র খুঁজে পেলাম। আমরা বুঝতে পারলাম_ সেমিটিক বা সুমেরীয়দের সৃষ্টিতত্ত্ব(আদম ও ইভের সৃষ্টি ইত্যাদি)-এর উৎস সহ বিভিন্ন ধর্মমতের সৃষ্টিকাহিনীর মূল সূত্রগুলি উপনিষদের বিভিন্ন শ্লোকে বর্ণিত রয়েছে – আমরা ভারতবাসী হয়েও উপনিষদ-রূপ মহা আকর গ্রন্থরাজির সন্ধান করি না, তাই এসব কিছুই জানতে পারি না। আসলে আমাদেরও যে বড় একটা দোষ রয়েছে – এমনটাও বলা যায় না। কারণ আমরা একটা যুগের এবং কিছু system-এর শিকার !!
দীর্ঘদিন ধরে ভারতবর্ষ বিদেশী শাসনাধীন ছিল – তখন তো ভারতীয়দের কোনো স্বাধীন চিন্তা-ই ছিল না, বরং তার উপর জোর করে বিদেশী রাজশক্তির নতুন নতুন ধর্মমত, তাদের দর্শন, তাদের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেবার প্রচেষ্টায় সমগ্র দেশটা ছারখার হয়ে পড়েছিল। বহু রক্ত ঝরিয়ে, বহু প্রাণ বলি দিয়ে, বহু অত্যাচার-নিগ্রহ-দুরাগ্রহ সহ্য করে ভারতবাসী নতুন করে স্বাধীনতা পেয়েছিল ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস ! আমরা গুরুজীর কাছে শুনেছিলাম – ওটা স্বাধীনতাপ্রাপ্তিই ছিল না। ওটা ছিল একটা চুক্তিভিত্তিক ক্ষমতার হস্তান্তর প্রক্রিয়া ! যার জন্য আজও ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের চুক্তির কাছে অনেকটাই পরাধীন। বিশ্বের দরবারে বহু বিষয়ে ভারত নিজে থেকে স্বাধীন মতামত জ্ঞাপন করতে পারে না, এখনো ভারতবর্ষকে কমনওয়েলথের সদস্যভুক্ত হয়ে থাকতে হয়েছে –ইত্যাদি ইত্যাদি!
সে না হয়– যা হয় হোলো, কিন্তু ধূর্ত ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে চলে যাবার আগে আরও কিছু কিছু বড় বড় চাল চেলে গেল। তার মধ্যে এক নম্বর হোলো – দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভারতবর্ষকে ভাগ করা এবং সেই ভাগও বিষমভাবে ভাগ ! কারণ বাংলাকে ভেঙে পূর্বপাকিস্তান বানানোটা যে ভারতবর্ষকে কতটা দুর্বল করলো ও বিপদের মধ্যে ফেললো, তা এখনো আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ ধূর্ত, বদমাইশ ব্রিটিশরা করে গেল, আর সেটি হোলো – বেছে বেছে কিছু ভারতবর্ষের মূল সংস্কৃতি-বিরোধী মানুষজনের হাতে এই দেশটির ক্ষমতাভার তুলে দেওয়া এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মতো দেশপ্রেমিক সিংহহৃদয় ব্যক্তিকে war-criminal ঘোষণা করে, তাঁকে পেলে জীবিত বা মৃত অবস্থায় ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হবে – এইসব অপমানজনক শর্তে ঐ দুর্বল নেতৃবৃন্দের কাছে চুক্তিপত্রে সই করিয়ে নেওয়া !
এর ফলে কি হোলো – ভারতবর্ষ খাতায়-কলমে স্বাধীন হোলো ঠিকই, কিন্তু বেশ কয়েক দশক ধরে সাধারণ মানুষ যখন স্বাধীনতার আনন্দ মানাতেই ব্যস্ত থাকলো – সেই ফাঁস গলে রাজশক্তির প্রচেষ্টা চলতে থাকলো – কতো সুন্দরভাবে সাধারণ মানুষের মনে ভারতবর্ষের প্রাচীন কৃষ্টি-সংস্কৃতি-দর্শন, মুনি-ঋষিদের জীবন, মহাকাব্যের শিক্ষাসমূহ সম্বন্ধে বিরূপ ধারণা তৈরি করে ফেলা যায়, আর তার সাথে সাথে বিভিন্ন বিদেশী সস্তা দর্শনকে শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানভিত্তিক চর্চা হিসাবে ভারতীয় সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায় ! আমরা সাধারণ মানুষেরা – বেচারা ! একটা বিশাল শক্তিশালী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সাত-আটটা দশক কাটিয়ে গেলাম আমরা !!
মাঝখানে মাঝখানে মহাপুরুষগণ শরীর ধারণ করে ভারতবর্ষের কৃষ্টি-সংস্কৃতি-দর্শন-বেদ-বেদান্তের মহিমা প্রতিষ্ঠা না করে গেলে – হয়তো ভারতবর্ষ তার প্রাচীনতার গৌরব এতদিনে হারিয়েই বসতো।
সেইজন্যেই আমাদের অর্থাৎ প্রতিটি ভারতবাসীর আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তোলা থাক এই দেশে শরীরধারণকারী সকল মহাপুরুষগণের প্রতি ! পরমেশ্বরের শক্তির প্রকাশ সকল মহাপুরুষদের প্রতি, আর সর্বোপরি আমরা যাঁর চরণের দাস, এই যুগের যুগপুরুষ, ঈশ্বরীয় শক্তির আধুনিকতম প্রকাশ– সেই ‘ *স্বামী পরমানন্দ* ‘-এর প্রতি।৷
উনি বলেছেন – ” পরমেশ্বর প্রথমে একা ছিলেন – অখণ্ড-অদ্বৈত-পরম মহাচৈতন্যরূপে। কিন্তু তখন তিনি আপন মাধুর্য্যরস আস্বাদন করতে পারেন নি। সেইজন্য তিনি (পুরুষ ও) প্রকৃতিরূপে নিজেকে দ্বিধাবিভক্ত করলেন, আর তা হোতেই বিশ্বপ্রকৃতির উদ্ভব হোলো এবং তা থেকেই সমগ্র সৃষ্টি। ঐ পরম এক আনন্দরস আস্বাদনের জন্য নিজেকে দ্বিধাকরণ করে যে দুই সত্ত্বায় পরিণত হলেন – তার একটি পুরুষ (পরম পুরুষ) আর অন্যটি প্রকৃতি (পরমা প্রকৃতি)। উপনিষদেও এই তত্ত্ব উল্লিখিত রয়েছে –
” আত্মৈবেদমগ্র আসীৎ পুরুষ বিধাঃ ……
স বৈ নৈব রেমে তস্মাদেকাকী ন রমতে সদ্বিতীয়মৈচ্ছৎ।
স হৈতাবানাস যথা স্ত্রী পুমাংসৗে সম্পবিষ্বক্তৗে
স ইমমেবাত্মানং দ্বেধাহপাতয়ং ততঃ পতিশ্চ পত্নী চাভবতাং।৷”
[“প্রথমতঃ এই জগৎ পুরুষকার আত্মা (বা বিরাট) রূপেই ছিল…….। তিনি মোটেই আনন্দিত হইলেন না, এইজন্য যে–কেহ একাকী থাকিলে সুখী হয় না। তিনি সঙ্গীর অভিলাষ করিলেন। স্বামী ও স্ত্রী অলিঙ্গিত হইয়া যে পরিমাণ হয়, তিনি সেই পরিমাণ হইলেন। তিনি সেই দেহকেই দুই ভাগে ভাগ করিলেন। তাহা হইতে পতি ও পত্নী জাত হইলেন।”– বৃহদারণ্যকোপনিষৎ (১/৪/৩)]
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! উপরোক্ত আলোচনা ও উদ্ধৃতি থেকে আজ আমরা অনেক কিছুর উৎস ও সূত্র খুঁজে পেলাম। আমরা বুঝতে পারলাম_ সেমিটিক বা সুমেরীয়দের সৃষ্টিতত্ত্ব(আদম ও ইভের সৃষ্টি ইত্যাদি)-এর উৎস সহ বিভিন্ন ধর্মমতের সৃষ্টিকাহিনীর মূল সূত্রগুলি উপনিষদের বিভিন্ন শ্লোকে বর্ণিত রয়েছে – আমরা ভারতবাসী হয়েও উপনিষদ-রূপ মহা আকর গ্রন্থরাজির সন্ধান করি না, তাই এসব কিছুই জানতে পারি না। আসলে আমাদেরও যে বড় একটা দোষ রয়েছে – এমনটাও বলা যায় না। কারণ আমরা একটা যুগের এবং কিছু system-এর শিকার !!
দীর্ঘদিন ধরে ভারতবর্ষ বিদেশী শাসনাধীন ছিল – তখন তো ভারতীয়দের কোনো স্বাধীন চিন্তা-ই ছিল না, বরং তার উপর জোর করে বিদেশী রাজশক্তির নতুন নতুন ধর্মমত, তাদের দর্শন, তাদের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেবার প্রচেষ্টায় সমগ্র দেশটা ছারখার হয়ে পড়েছিল। বহু রক্ত ঝরিয়ে, বহু প্রাণ বলি দিয়ে, বহু অত্যাচার-নিগ্রহ-দুরাগ্রহ সহ্য করে ভারতবাসী নতুন করে স্বাধীনতা পেয়েছিল ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস ! আমরা গুরুজীর কাছে শুনেছিলাম – ওটা স্বাধীনতাপ্রাপ্তিই ছিল না। ওটা ছিল একটা চুক্তিভিত্তিক ক্ষমতার হস্তান্তর প্রক্রিয়া ! যার জন্য আজও ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের চুক্তির কাছে অনেকটাই পরাধীন। বিশ্বের দরবারে বহু বিষয়ে ভারত নিজে থেকে স্বাধীন মতামত জ্ঞাপন করতে পারে না, এখনো ভারতবর্ষকে কমনওয়েলথের সদস্যভুক্ত হয়ে থাকতে হয়েছে –ইত্যাদি ইত্যাদি!
সে না হয়– যা হয় হোলো, কিন্তু ধূর্ত ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে চলে যাবার আগে আরও কিছু কিছু বড় বড় চাল চেলে গেল। তার মধ্যে এক নম্বর হোলো – দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভারতবর্ষকে ভাগ করা এবং সেই ভাগও বিষমভাবে ভাগ ! কারণ বাংলাকে ভেঙে পূর্বপাকিস্তান বানানোটা যে ভারতবর্ষকে কতটা দুর্বল করলো ও বিপদের মধ্যে ফেললো, তা এখনো আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ ধূর্ত, বদমাইশ ব্রিটিশরা করে গেল, আর সেটি হোলো – বেছে বেছে কিছু ভারতবর্ষের মূল সংস্কৃতি-বিরোধী মানুষজনের হাতে এই দেশটির ক্ষমতাভার তুলে দেওয়া এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মতো দেশপ্রেমিক সিংহহৃদয় ব্যক্তিকে war-criminal ঘোষণা করে, তাঁকে পেলে জীবিত বা মৃত অবস্থায় ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হবে – এইসব অপমানজনক শর্তে ঐ দুর্বল নেতৃবৃন্দের কাছে চুক্তিপত্রে সই করিয়ে নেওয়া !
এর ফলে কি হোলো – ভারতবর্ষ খাতায়-কলমে স্বাধীন হোলো ঠিকই, কিন্তু বেশ কয়েক দশক ধরে সাধারণ মানুষ যখন স্বাধীনতার আনন্দ মানাতেই ব্যস্ত থাকলো – সেই ফাঁস গলে রাজশক্তির প্রচেষ্টা চলতে থাকলো – কতো সুন্দরভাবে সাধারণ মানুষের মনে ভারতবর্ষের প্রাচীন কৃষ্টি-সংস্কৃতি-দর্শন, মুনি-ঋষিদের জীবন, মহাকাব্যের শিক্ষাসমূহ সম্বন্ধে বিরূপ ধারণা তৈরি করে ফেলা যায়, আর তার সাথে সাথে বিভিন্ন বিদেশী সস্তা দর্শনকে শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানভিত্তিক চর্চা হিসাবে ভারতীয় সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায় ! আমরা সাধারণ মানুষেরা – বেচারা ! একটা বিশাল শক্তিশালী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সাত-আটটা দশক কাটিয়ে গেলাম আমরা !!
মাঝখানে মাঝখানে মহাপুরুষগণ শরীর ধারণ করে ভারতবর্ষের কৃষ্টি-সংস্কৃতি-দর্শন-বেদ-বেদান্তের মহিমা প্রতিষ্ঠা না করে গেলে – হয়তো ভারতবর্ষ তার প্রাচীনতার গৌরব এতদিনে হারিয়েই বসতো।
সেইজন্যেই আমাদের অর্থাৎ প্রতিটি ভারতবাসীর আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তোলা থাক এই দেশে শরীরধারণকারী সকল মহাপুরুষগণের প্রতি ! পরমেশ্বরের শক্তির প্রকাশ সকল মহাপুরুষদের প্রতি, আর সর্বোপরি আমরা যাঁর চরণের দাস, এই যুগের যুগপুরুষ, ঈশ্বরীয় শক্তির আধুনিকতম প্রকাশ– সেই ‘ *স্বামী পরমানন্দ* ‘-এর প্রতি।৷