শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (লিখিত এবং কথিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। আমরা গুরুমহারাজের স্বহস্ত লিখিত দ্বিতীয় গ্রন্থ ” *বাউলের মর্মকথা* “-র চতুর্থ পরিচ্ছেদে প্রবেশ করেছি। এর আগে আমরা দেখেছি, সেখানে গুরুমহারাজ সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এবার এসেছেন রসতত্ত্ব-এ, বিশেষতঃ আদিরস বা কামতত্ত্ব-এ। এখানে পৌঁছে গুরুমহারাজ যে কথা বলেছেন – তার মর্মার্থ হজম করা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে সত্যিই দূরহ, আর শুধু দূরহ নয় – অতীব দূরহ।৷
কারণ উনি বললেন – “এই যে বিশ্বসংসার সৃষ্টি হয়েছে, এর মূল বা আদি হোলো ‘রস’৷ আর এই আদিরস বা ‘কাম’-তত্ত্বই সৃষ্টির আদি রূপ। সেই অর্থে ‘কাম’– ত্রিগুণাতীত, মায়াতীত, দেশ-কাল-পাত্রের ঊর্ধ্বে অপ্রাকৃত শুদ্ধ-দিব্য-প্রেমস্বরূপ।” এতোদূর পর্যন্ত শোনার পর মাথা ঝিমঝিম করলেও বোঝার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু এরপরেই গুরুমহারাজ বললেন – “এই ‘কাম’ বা ‘রস’-ই হোলো পরম রসিকশেখর রসরাজ শ্রীকৃষ্ণ।” – ব্যস্, এই কথাগুলিকে গ্রহণ করা একটু-আধটু নয় – যথেষ্টই অসুবিধা হোচ্ছে ! কিন্তু বাউলগণ এটাকেই বললেন যে, –” শ্রীকৃষ্ণতত্ত্বটি হোলো অপ্রাকৃত কামতত্ত্ব – কামবীজ, কামগায়ত্রী যার স্বরূপ।” তবে তাঁরা এটাও বলে দিয়েছেন যে, ‘সহজ সাধক ভিন্ন অন্য কেউ তা বুঝতে পারবে না।’ আমরা – এই সমাজের বেশিরভাগ সদস্যেরা – তো আর ‘সহজ সাধক’ নই, সেইজন্যই এইসব তত্ত্ব-কথা আমাদের বুঝতে এতোটা অসুবিধা হোচ্ছে বা আদপেই বুঝতে পারছি না। যাইহোক, এরপরে গুরুমহারাজ ‘রাধাতত্ত্ব’-কেও আকারে ইঙ্গিতে এর সাথে জুড়ে দিয়েছেন – কারণ এরপরেই উনি বলেছেন – “কামের বা রসে-র শক্তি-ই হলো ‘রতি’। ফলে ‘রস’ ও ‘রতি’ অভেদ – সেই অর্থে শক্তি ও শক্তিমান অভেদ, ফলতঃ রাধা ও কৃষ্ণ-ও অভেদ।৷
এরপর আমরা গুরুমহারাজ তাঁর গ্রন্থে চতুর্থ পরিচ্ছেদের পরবর্তী অংশে চলে যাবো, যেখানে উনি ‘রাধাতত্ত্ব’ সম্বন্ধে আরও একটু বিস্তারে বলেছেন। এরপর উনি বলেছেন – ” শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব যেমন কামতত্ত্ব বা রসতত্ত্ব; তেমন শ্রীরাধাতত্ত্ব হোলো মদনতত্ত্ব বা রতিতত্ত্ব। একটি রসরাজ রসিকশেখর আর অন্যটি রতি বা হ্লাদিনী স্বরূপিনী মহাভাব। রসরাজ শ্রীকৃষ্ণ এবং মহাভাব স্বরূপিনী শ্রীরাধা অর্থাৎ রস ও রতি। এটাই হোলো কামবীজ-কামগায়ত্রী রহস্য। আর রস ও রতির একীভূত অবস্থায় বাউলমতে মহাউল্লাসময়লীলা মাধুর্য্যরস আস্বাদন হয়ে থাকে।৷
বাউলগন বলে থাকেন – “প্রাকৃত কাম বর্জন করতে না পারলে অপ্রাকৃত কামের কোনো সন্ধানই পাওয়া যাবে না।”
পাঠকবৃন্দ শুনলেন তো__ গুরুমহারাজ কি বললেন !! উনি বললেন কামতত্ত্ব বা রসতত্ত্ব হোলো শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব এবং রতিতত্ত্ব বা মদনতত্ত্ব হোলো রাধাতত্ত্ব। দেখছেন তো – এখানে কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীরাধা ব্যক্তিবিশেষ নয় – এগুলি তত্ত্ববিশেষ ! আবার বললেন – রসরাজ শ্রীকৃষ্ণ এবং মহাভাব স্বরূপিণী শ্রীরাধা অর্থাৎ রস ও রতি ! তবে এই কথাগুলি তবুও মর্মে প্রবেশ করে – কথার মর্মােদ্ধারের চেষ্টা করা যায় – কিন্তু এরপরে গুরুমহারাজ যেটা বললেন, সেইটা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল ৷ ঐ যে উনি বললেন – “এটাই হোলো কামবীজ-কামগায়ত্রী রহস্য”– এইটা ঠিক বোধগম্য হোলো না ৷ আর হবার কথাও না, কারণ এরপরেই উনি নিজে বলে দিয়েছেন যে , ” রস ও রতির একীভূত অবস্থাতেই মহাউল্লাসময় লীলামাধুর্য্যের আস্বাদন হয়ে থাকে।” আর এই রস ও রতির একীভূত অবস্থাই তো রাধাকৃষ্ণের যুগলাবস্থা, এই অবস্থা প্রাপ্ত হওয়াই তো বাউলমতের সাধনার চূড়ান্ত অবস্থা ৷ সুতরাং, আমরা সাধারণ মানুষ তো কোন্ ছাড় , বাউল-সাধনায় রত মানুষেরাও অর্থাৎ সাধকরাও এই মাধুর্য্যরস আস্বাদন করতে পারে না ৷ কারণ আরো একটা কথা উনি বলেছেন যে,– ” প্রাকৃত কামের অবসান না ঘটলে অপ্রাকৃত কামের সন্ধান পায় না সাধক !
যাইহোক , দ্যাখা যাক্ এরপরে গুরুমহারাজ এই ব্যাপারে আরো কি কি বলেছেন ! এরপরে উনি বলেছেন – ” শ্রীকৃষ্ণ অপ্রাকৃত কাম এবং শ্রীরাধাই অপ্রাকৃত রতি ৷ এই রস এবং রতির খেলাই হোলো নিত্যবৃন্দাবনে নিত্যরাসলীলা , যেখানে রস রতিকে আশ্রয় করে আপনি আপনার রসমাধুর্য্য আস্বাদন করছেন।
পূর্বেই (বলেছি) বলা হয়েছে – রাধা এবং কৃষ্ণ একই তত্ত্বের দুটি দিক – এতে কোনো ভেদ নাই, আবার আত্যন্তিক অভেদও নাই। ভেদ এবং অভেদ যুগপৎ বিদ্যমান ৷ তাই একে ‘যুগলতত্ত্ব’ বলা হয় ৷”
যে অপ্রাকৃত প্রেমলাভের কথা আগে বলা হচ্ছিলো – গুরুমহারাজ বললেন – ‘ শ্রীকৃষ্ণই সেই অপ্রাকৃত কাম এবং শ্রীরাধাই হোলো অপ্রাকৃত রতি ৷ এই অপ্রাকৃত রস-রতির খেলাই নিত্যবৃন্দাবনের রাসলীলা ৷ এছাড়া গুরুমহারাজ আরো বলেছেন যে, এই কৃষ্ণতত্ত্ব এবং রাধাতত্ত্ব একই তত্ত্বের দুটি রূপ যেখানে ভেদও নাই আবার আত্যন্তিক অভেদও নাই। ভেদ এবং অভেদ যুগবৎ বিদ্যমান রয়েছে বলেই একে ‘যুগল তত্ত্ব’ বলা হয় ॥
কারণ উনি বললেন – “এই যে বিশ্বসংসার সৃষ্টি হয়েছে, এর মূল বা আদি হোলো ‘রস’৷ আর এই আদিরস বা ‘কাম’-তত্ত্বই সৃষ্টির আদি রূপ। সেই অর্থে ‘কাম’– ত্রিগুণাতীত, মায়াতীত, দেশ-কাল-পাত্রের ঊর্ধ্বে অপ্রাকৃত শুদ্ধ-দিব্য-প্রেমস্বরূপ।” এতোদূর পর্যন্ত শোনার পর মাথা ঝিমঝিম করলেও বোঝার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু এরপরেই গুরুমহারাজ বললেন – “এই ‘কাম’ বা ‘রস’-ই হোলো পরম রসিকশেখর রসরাজ শ্রীকৃষ্ণ।” – ব্যস্, এই কথাগুলিকে গ্রহণ করা একটু-আধটু নয় – যথেষ্টই অসুবিধা হোচ্ছে ! কিন্তু বাউলগণ এটাকেই বললেন যে, –” শ্রীকৃষ্ণতত্ত্বটি হোলো অপ্রাকৃত কামতত্ত্ব – কামবীজ, কামগায়ত্রী যার স্বরূপ।” তবে তাঁরা এটাও বলে দিয়েছেন যে, ‘সহজ সাধক ভিন্ন অন্য কেউ তা বুঝতে পারবে না।’ আমরা – এই সমাজের বেশিরভাগ সদস্যেরা – তো আর ‘সহজ সাধক’ নই, সেইজন্যই এইসব তত্ত্ব-কথা আমাদের বুঝতে এতোটা অসুবিধা হোচ্ছে বা আদপেই বুঝতে পারছি না। যাইহোক, এরপরে গুরুমহারাজ ‘রাধাতত্ত্ব’-কেও আকারে ইঙ্গিতে এর সাথে জুড়ে দিয়েছেন – কারণ এরপরেই উনি বলেছেন – “কামের বা রসে-র শক্তি-ই হলো ‘রতি’। ফলে ‘রস’ ও ‘রতি’ অভেদ – সেই অর্থে শক্তি ও শক্তিমান অভেদ, ফলতঃ রাধা ও কৃষ্ণ-ও অভেদ।৷
এরপর আমরা গুরুমহারাজ তাঁর গ্রন্থে চতুর্থ পরিচ্ছেদের পরবর্তী অংশে চলে যাবো, যেখানে উনি ‘রাধাতত্ত্ব’ সম্বন্ধে আরও একটু বিস্তারে বলেছেন। এরপর উনি বলেছেন – ” শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব যেমন কামতত্ত্ব বা রসতত্ত্ব; তেমন শ্রীরাধাতত্ত্ব হোলো মদনতত্ত্ব বা রতিতত্ত্ব। একটি রসরাজ রসিকশেখর আর অন্যটি রতি বা হ্লাদিনী স্বরূপিনী মহাভাব। রসরাজ শ্রীকৃষ্ণ এবং মহাভাব স্বরূপিনী শ্রীরাধা অর্থাৎ রস ও রতি। এটাই হোলো কামবীজ-কামগায়ত্রী রহস্য। আর রস ও রতির একীভূত অবস্থায় বাউলমতে মহাউল্লাসময়লীলা মাধুর্য্যরস আস্বাদন হয়ে থাকে।৷
বাউলগন বলে থাকেন – “প্রাকৃত কাম বর্জন করতে না পারলে অপ্রাকৃত কামের কোনো সন্ধানই পাওয়া যাবে না।”
পাঠকবৃন্দ শুনলেন তো__ গুরুমহারাজ কি বললেন !! উনি বললেন কামতত্ত্ব বা রসতত্ত্ব হোলো শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব এবং রতিতত্ত্ব বা মদনতত্ত্ব হোলো রাধাতত্ত্ব। দেখছেন তো – এখানে কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীরাধা ব্যক্তিবিশেষ নয় – এগুলি তত্ত্ববিশেষ ! আবার বললেন – রসরাজ শ্রীকৃষ্ণ এবং মহাভাব স্বরূপিণী শ্রীরাধা অর্থাৎ রস ও রতি ! তবে এই কথাগুলি তবুও মর্মে প্রবেশ করে – কথার মর্মােদ্ধারের চেষ্টা করা যায় – কিন্তু এরপরে গুরুমহারাজ যেটা বললেন, সেইটা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল ৷ ঐ যে উনি বললেন – “এটাই হোলো কামবীজ-কামগায়ত্রী রহস্য”– এইটা ঠিক বোধগম্য হোলো না ৷ আর হবার কথাও না, কারণ এরপরেই উনি নিজে বলে দিয়েছেন যে , ” রস ও রতির একীভূত অবস্থাতেই মহাউল্লাসময় লীলামাধুর্য্যের আস্বাদন হয়ে থাকে।” আর এই রস ও রতির একীভূত অবস্থাই তো রাধাকৃষ্ণের যুগলাবস্থা, এই অবস্থা প্রাপ্ত হওয়াই তো বাউলমতের সাধনার চূড়ান্ত অবস্থা ৷ সুতরাং, আমরা সাধারণ মানুষ তো কোন্ ছাড় , বাউল-সাধনায় রত মানুষেরাও অর্থাৎ সাধকরাও এই মাধুর্য্যরস আস্বাদন করতে পারে না ৷ কারণ আরো একটা কথা উনি বলেছেন যে,– ” প্রাকৃত কামের অবসান না ঘটলে অপ্রাকৃত কামের সন্ধান পায় না সাধক !
যাইহোক , দ্যাখা যাক্ এরপরে গুরুমহারাজ এই ব্যাপারে আরো কি কি বলেছেন ! এরপরে উনি বলেছেন – ” শ্রীকৃষ্ণ অপ্রাকৃত কাম এবং শ্রীরাধাই অপ্রাকৃত রতি ৷ এই রস এবং রতির খেলাই হোলো নিত্যবৃন্দাবনে নিত্যরাসলীলা , যেখানে রস রতিকে আশ্রয় করে আপনি আপনার রসমাধুর্য্য আস্বাদন করছেন।
পূর্বেই (বলেছি) বলা হয়েছে – রাধা এবং কৃষ্ণ একই তত্ত্বের দুটি দিক – এতে কোনো ভেদ নাই, আবার আত্যন্তিক অভেদও নাই। ভেদ এবং অভেদ যুগপৎ বিদ্যমান ৷ তাই একে ‘যুগলতত্ত্ব’ বলা হয় ৷”
যে অপ্রাকৃত প্রেমলাভের কথা আগে বলা হচ্ছিলো – গুরুমহারাজ বললেন – ‘ শ্রীকৃষ্ণই সেই অপ্রাকৃত কাম এবং শ্রীরাধাই হোলো অপ্রাকৃত রতি ৷ এই অপ্রাকৃত রস-রতির খেলাই নিত্যবৃন্দাবনের রাসলীলা ৷ এছাড়া গুরুমহারাজ আরো বলেছেন যে, এই কৃষ্ণতত্ত্ব এবং রাধাতত্ত্ব একই তত্ত্বের দুটি রূপ যেখানে ভেদও নাই আবার আত্যন্তিক অভেদও নাই। ভেদ এবং অভেদ যুগবৎ বিদ্যমান রয়েছে বলেই একে ‘যুগল তত্ত্ব’ বলা হয় ॥