শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (লিখিত ও কথিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো ৷ আমরা ছিলাম গুরুমহারাজের স্বহস্ত লিখিত দ্বিতীয় গ্রন্থ বাউলের মর্মকথা-র একেবারে শেষভাগে অর্থাৎ নবম পরিচ্ছেদের কথায় ৷ সেখানে আমরা এর আগে দেখেছিলাম গুরুমহারাজ বাউল সাধনার চরম ও পরম অবস্থা ‘প্রেম’ সম্বন্ধে আলোচনা করছিলেন ৷ এবার আমরা দেখব সেই ‘প্রেম’ বা ‘ভালবাসা’ নিয়ে গুরুজী আরো কি কি বলেছেন ৷
এরপরে উনি বলেছেন – ” ভালবাসার ধর্মই বাউলদের ধর্ম ৷ সেইজন্য এটা ‘মানবধর্ম’ ৷ বাউল ঘুরে বেড়ায় এক বিশেষ জনের খোঁজে ৷ তিনি তাঁর মনের মানুষ ৷ সে মানুষ পাওয়া কি সহজ কথা ? অজ্ঞান অন্ত:করণে যখন চেতনার উন্মেষ ঘটে, তখন চৈতন্যের আলোকে মনের মানুষ ধরা দেন, যিনি তাঁর চির আকাঙ্ক্ষিত__ ‘মনের মানুষ’ ৷ যাঁকে পেলে সবই পাওয়া যায় – যাঁকে জানলে অমরত্ব লাভ হয়।
আমি কোথায় পাব তারে,
আমার মনে মানুষ যে রে ৷
বাউলের প্রথাগত কোনো ধর্ম (ধর্মমত) নাই৷ সকল ধর্ম (ধর্মমত)-ই তাঁর কাছে সমান। সকল ধর্মে (ধর্মমতে)-ই বাউলের মতি আছে ৷ কারণ বাউল জীবনধর্মকে অস্বীকার করে না। সব ধর্মে (ধর্মমতে)-ই তো মানুষের কথা – মানুষের মঙ্গলের কথা – জীবনের কথা – সুতরাং বিরোধ কোথায় ?
অহংকার, স্বার্থপরতা এবং অজ্ঞান ভাবাবেগবশতঃ মানব ‘ধর্ম’ (ধর্মমত) নিয়ে মারামারি – ঝগড়া করে ৷ তাদের অন্তরে যদি একটু ভগবৎপ্রেম জাগ্রত হোতো, তাহলে তারা এইরূপ ভুল কাজ করতো না, সকলের মধ্যে শ্রীভগবানের প্রকাশ দেখতো ৷ সমস্ত বিদ্বেষ ভুলে মানুষকে আরোও অধিক ভালোবাসতো ৷
সম্প্রদায়গত সংস্কার প্রাচীরের মতো, যা মানুষের জীবনকে বেষ্টন করে ফেলে – বদ্ধ করে শ্বাসরুদ্ধ করে দেয় – মানুষ হয়ে ওঠে অমানুষ ৷৷”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! আগেই আমরা উল্লেখ করেছি যে, আমরা বাউলের মর্মকথা গ্রন্থের একেবারে শেষ পরিচ্ছেদের কথায় রয়েছি। আমরা গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম – ‘ সাধকের (মানবের) জীবনে ‘প্রেম’-ই শেষ কথা।’ সমস্ত সাধনার অন্তে সাধকের প্রেমলাভ হয়। এইজন্যেই গুরুমহারাজ বলতেন – ‘ প্রকৃত বৈষ্ণব হোতে গেলে আগে প্রকৃত শাক্ত হোতে হবে।’ কথাটা আমাদের কাছে একটু গোলমেলে বলে মনে হোতে পারে ! আর হবেই তো – কারণ আমরা তো সংকীর্ণ বুদ্ধি নিয়ে চলি ! সংকীর্ণতা, অজ্ঞানতা, সাম্প্রদায়িক বুদ্ধি ইত্যাদি আমাদেরকে একেবারে আচ্ছন্ন করে রেখেছে – তাই আমরা মহাজন – মহাপুরুষদের সহজ কথাগুলি বুঝতে চাই না, বরং সেগুলিকে নিজেদের সংকীর্ণ বুদ্ধির ছাঁচে ফেলে জটিল থেকে জটিলতর করে তুলি !
প্রকৃত আধ্যাত্মিকতা হোলো সমন্বয়, মিলন, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের খোঁজ – যে কথা সবসময় বাউলগণ বলে থাকেন এবং তাঁদের জীবনে আচরণ করে দেখান। মহাবাউল গুরুমহারাজ এইজন্যই তো বললেন – ‘প্রকৃত আধ্যাত্মিক মানবের থাকবে শাক্তের শরীর, বৈষ্ণবের হৃদয়, বেদান্তের মস্তিষ্ক ৷’ বাউলগণ সেই ঠিকানা খোঁজেন, যেখানে “আল্লা-হরি-রাম-কালী-গড একথালাতে খায় খানা ৷” সত্যিই তো – একটু নিরালায় চিন্তা করলেই এটা বোঝা যায় , প্রকৃতিতেই তো বৈচিত্র রয়েছে, সুতরাং ধর্মজগতে বা অধ্যাত্মজগতেও বৈচিত্র থাকাটাই স্বাভাবিক ৷ প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নিয়েই যেমন মহাপ্রকৃতি যুগ যুগ ধরে তার আপন কার্য করে চলেছে, ধর্মজগৎ বা অধ্যাত্ম্যজগতের ব্যক্তিরা সেই ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যতান’টি ধরতে পারছে না ! অবশ্য সিদ্ধ-যোগী-মহাপুরুষগণের কোনো অসুবিধা হয় না ৷ যত অসুবিধা হয়__ যে কোনো পরম্পরার পরবর্তীকালের সম্প্রদায়বুদ্ধিযুক্ত followrs-দেরকে নিয়ে ! যত গন্ডগোল পাকায় এই ধরনের মানুষেরা ! সুতরাং আধুনিক শিক্ষিত, চেতনায় উন্নত তরুণ-তরুণীদের সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হোতে হবে, ভেদবুদ্ধি ত্যাগ করতেই হবে – আগামী প্রজন্মকে বাউলদের মহামিলন মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে মুক্তমনা-উদার-মনোভাব সম্পন্ন হোতেই হবে এবং মহাপ্রকৃতির শিক্ষা (বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য) গ্রহণ করে নিজেদের জীবনে যোজনা করতে হবে ৷ তবেই তো মানব সমাজের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে_তাই না !!
যাইহোক আমরা আবার ফিরে যাই গুরুমহারাজের কথায় ৷ যদিও আমাদের যেটুকু সুশিক্ষা– তা সবই গুরুমহারাজের কাছেই শেখা, সেই অর্থে এখানে উল্লেখিত কথাগুলি সবই গুরুমহারাজেরই কথা ! তবে আমরা এখন ফিরবো গুরুমহারাজের আজকের আলোচনার কথায় ৷ উনি বলেছেন – ” বাউলগণের ধর্মই হলো ভালোবাসা ৷ এটাই মানবধর্ম ৷ এই ধর্মাবলম্বীর কাছে সমস্ত মানবই আপনজন – কেউ পর নয় ! এ এক অখণ্ড ভালোবাসার জগৎ ! তাইতো বাউল সার্বজনীন – বিশ্বজনীন ! মানুষের মাঝেই ‘মনের মানুষ’ বা ‘মানুষ রতন’ খুঁজে বেড়ায় বাউল ৷ পৃথিবীতে যত ধর্মমত রয়েছে – তাদের সবার সাথে চলতে পারে ‘বাউল’, সবাইকে গ্রহণ করতে তাদের কোনো অসুবিধা হয় না ৷ কারণ তাঁরা এটা মানেন যে, সমস্ত ধর্মমতের প্রবক্তাগণ মানুষের মঙ্গলের জন্যই তা সৃষ্টি করেছিলেন ৷
অহংকার, স্বার্থপরতা, ভাবাবেগ, সম্প্রদায়গত সংস্কার মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে তাকে অমানুষে পরিণত করে। ফলে বিভিন্ন ধর্মমতের অনুগামীরা পরস্পরের সাথে ঝগড়া-মারামারি করে ! কিন্তু তাদের মধ্যেও যদি ‘প্রেম’ জাগ্রত হোতো, তাহলে তারা সকলকেই সেই পরমেশ্বরের প্রকাশ বলে মনে করতো, তারা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসার বাঁধনে বেঁধে ফেলতো ! এই পৃথিবী বারবার রক্তস্নাত হয়েছে এই সমস্ত মানবতাবিরোধী মানুষের জন্যই – কিন্তু বাউলধর্ম বা ভালোবাসার ধর্ম দ্বারাই এই পৃথিবীর সমস্ত মানুষ আবার এক অটুট ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে – বিশ্বভ্রাতৃত্বের বোধে, পরমাত্মার বোধে উন্নীত হোতে পারবে ৷ আর তখনই এই গ্রহের (পৃথিবীর) শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের বসবাসের যোগ্য হয়ে উঠবে ৷৷
এরপরে উনি বলেছেন – ” ভালবাসার ধর্মই বাউলদের ধর্ম ৷ সেইজন্য এটা ‘মানবধর্ম’ ৷ বাউল ঘুরে বেড়ায় এক বিশেষ জনের খোঁজে ৷ তিনি তাঁর মনের মানুষ ৷ সে মানুষ পাওয়া কি সহজ কথা ? অজ্ঞান অন্ত:করণে যখন চেতনার উন্মেষ ঘটে, তখন চৈতন্যের আলোকে মনের মানুষ ধরা দেন, যিনি তাঁর চির আকাঙ্ক্ষিত__ ‘মনের মানুষ’ ৷ যাঁকে পেলে সবই পাওয়া যায় – যাঁকে জানলে অমরত্ব লাভ হয়।
আমি কোথায় পাব তারে,
আমার মনে মানুষ যে রে ৷
বাউলের প্রথাগত কোনো ধর্ম (ধর্মমত) নাই৷ সকল ধর্ম (ধর্মমত)-ই তাঁর কাছে সমান। সকল ধর্মে (ধর্মমতে)-ই বাউলের মতি আছে ৷ কারণ বাউল জীবনধর্মকে অস্বীকার করে না। সব ধর্মে (ধর্মমতে)-ই তো মানুষের কথা – মানুষের মঙ্গলের কথা – জীবনের কথা – সুতরাং বিরোধ কোথায় ?
অহংকার, স্বার্থপরতা এবং অজ্ঞান ভাবাবেগবশতঃ মানব ‘ধর্ম’ (ধর্মমত) নিয়ে মারামারি – ঝগড়া করে ৷ তাদের অন্তরে যদি একটু ভগবৎপ্রেম জাগ্রত হোতো, তাহলে তারা এইরূপ ভুল কাজ করতো না, সকলের মধ্যে শ্রীভগবানের প্রকাশ দেখতো ৷ সমস্ত বিদ্বেষ ভুলে মানুষকে আরোও অধিক ভালোবাসতো ৷
সম্প্রদায়গত সংস্কার প্রাচীরের মতো, যা মানুষের জীবনকে বেষ্টন করে ফেলে – বদ্ধ করে শ্বাসরুদ্ধ করে দেয় – মানুষ হয়ে ওঠে অমানুষ ৷৷”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! আগেই আমরা উল্লেখ করেছি যে, আমরা বাউলের মর্মকথা গ্রন্থের একেবারে শেষ পরিচ্ছেদের কথায় রয়েছি। আমরা গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম – ‘ সাধকের (মানবের) জীবনে ‘প্রেম’-ই শেষ কথা।’ সমস্ত সাধনার অন্তে সাধকের প্রেমলাভ হয়। এইজন্যেই গুরুমহারাজ বলতেন – ‘ প্রকৃত বৈষ্ণব হোতে গেলে আগে প্রকৃত শাক্ত হোতে হবে।’ কথাটা আমাদের কাছে একটু গোলমেলে বলে মনে হোতে পারে ! আর হবেই তো – কারণ আমরা তো সংকীর্ণ বুদ্ধি নিয়ে চলি ! সংকীর্ণতা, অজ্ঞানতা, সাম্প্রদায়িক বুদ্ধি ইত্যাদি আমাদেরকে একেবারে আচ্ছন্ন করে রেখেছে – তাই আমরা মহাজন – মহাপুরুষদের সহজ কথাগুলি বুঝতে চাই না, বরং সেগুলিকে নিজেদের সংকীর্ণ বুদ্ধির ছাঁচে ফেলে জটিল থেকে জটিলতর করে তুলি !
প্রকৃত আধ্যাত্মিকতা হোলো সমন্বয়, মিলন, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের খোঁজ – যে কথা সবসময় বাউলগণ বলে থাকেন এবং তাঁদের জীবনে আচরণ করে দেখান। মহাবাউল গুরুমহারাজ এইজন্যই তো বললেন – ‘প্রকৃত আধ্যাত্মিক মানবের থাকবে শাক্তের শরীর, বৈষ্ণবের হৃদয়, বেদান্তের মস্তিষ্ক ৷’ বাউলগণ সেই ঠিকানা খোঁজেন, যেখানে “আল্লা-হরি-রাম-কালী-গড একথালাতে খায় খানা ৷” সত্যিই তো – একটু নিরালায় চিন্তা করলেই এটা বোঝা যায় , প্রকৃতিতেই তো বৈচিত্র রয়েছে, সুতরাং ধর্মজগতে বা অধ্যাত্মজগতেও বৈচিত্র থাকাটাই স্বাভাবিক ৷ প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নিয়েই যেমন মহাপ্রকৃতি যুগ যুগ ধরে তার আপন কার্য করে চলেছে, ধর্মজগৎ বা অধ্যাত্ম্যজগতের ব্যক্তিরা সেই ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যতান’টি ধরতে পারছে না ! অবশ্য সিদ্ধ-যোগী-মহাপুরুষগণের কোনো অসুবিধা হয় না ৷ যত অসুবিধা হয়__ যে কোনো পরম্পরার পরবর্তীকালের সম্প্রদায়বুদ্ধিযুক্ত followrs-দেরকে নিয়ে ! যত গন্ডগোল পাকায় এই ধরনের মানুষেরা ! সুতরাং আধুনিক শিক্ষিত, চেতনায় উন্নত তরুণ-তরুণীদের সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হোতে হবে, ভেদবুদ্ধি ত্যাগ করতেই হবে – আগামী প্রজন্মকে বাউলদের মহামিলন মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে মুক্তমনা-উদার-মনোভাব সম্পন্ন হোতেই হবে এবং মহাপ্রকৃতির শিক্ষা (বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য) গ্রহণ করে নিজেদের জীবনে যোজনা করতে হবে ৷ তবেই তো মানব সমাজের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে_তাই না !!
যাইহোক আমরা আবার ফিরে যাই গুরুমহারাজের কথায় ৷ যদিও আমাদের যেটুকু সুশিক্ষা– তা সবই গুরুমহারাজের কাছেই শেখা, সেই অর্থে এখানে উল্লেখিত কথাগুলি সবই গুরুমহারাজেরই কথা ! তবে আমরা এখন ফিরবো গুরুমহারাজের আজকের আলোচনার কথায় ৷ উনি বলেছেন – ” বাউলগণের ধর্মই হলো ভালোবাসা ৷ এটাই মানবধর্ম ৷ এই ধর্মাবলম্বীর কাছে সমস্ত মানবই আপনজন – কেউ পর নয় ! এ এক অখণ্ড ভালোবাসার জগৎ ! তাইতো বাউল সার্বজনীন – বিশ্বজনীন ! মানুষের মাঝেই ‘মনের মানুষ’ বা ‘মানুষ রতন’ খুঁজে বেড়ায় বাউল ৷ পৃথিবীতে যত ধর্মমত রয়েছে – তাদের সবার সাথে চলতে পারে ‘বাউল’, সবাইকে গ্রহণ করতে তাদের কোনো অসুবিধা হয় না ৷ কারণ তাঁরা এটা মানেন যে, সমস্ত ধর্মমতের প্রবক্তাগণ মানুষের মঙ্গলের জন্যই তা সৃষ্টি করেছিলেন ৷
অহংকার, স্বার্থপরতা, ভাবাবেগ, সম্প্রদায়গত সংস্কার মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে তাকে অমানুষে পরিণত করে। ফলে বিভিন্ন ধর্মমতের অনুগামীরা পরস্পরের সাথে ঝগড়া-মারামারি করে ! কিন্তু তাদের মধ্যেও যদি ‘প্রেম’ জাগ্রত হোতো, তাহলে তারা সকলকেই সেই পরমেশ্বরের প্রকাশ বলে মনে করতো, তারা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসার বাঁধনে বেঁধে ফেলতো ! এই পৃথিবী বারবার রক্তস্নাত হয়েছে এই সমস্ত মানবতাবিরোধী মানুষের জন্যই – কিন্তু বাউলধর্ম বা ভালোবাসার ধর্ম দ্বারাই এই পৃথিবীর সমস্ত মানুষ আবার এক অটুট ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে – বিশ্বভ্রাতৃত্বের বোধে, পরমাত্মার বোধে উন্নীত হোতে পারবে ৷ আর তখনই এই গ্রহের (পৃথিবীর) শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের বসবাসের যোগ্য হয়ে উঠবে ৷৷