শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (লিখিত এবং কথিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো ৷ আমরা ছিলাম গুরুমহারাজের স্বহস্ত লিখিত দ্বিতীয় গ্রন্থ “বাউলের মর্মকথা” -র একেবারে শেষভাগে অর্থাৎ নবম পরিচ্ছেদের কথায় ৷ গুরুমহারাজ এই অংশে বাউলদের ধর্মাচরণ নিয়ে কথা বলছিলেন ৷ বাউলগণের কোনো প্রথাগত ধর্ম (ধর্মমত) নাই, সেইজন্য তারা সকল ধর্মের (ধর্মমতের) মানুষদের সাথেই অবাধে মেলামেশা করতে পারেন, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হোতে পারেন ! এইজন্যেই তো যুগাবতার গুরুমহারাজ এবার বাউলভাবে বাউলবেশে এলেন এবং সেইজন্যই উনি আমাদেরকে শোনালেন ‘বাউলের মর্মকথা’। যাইহোক, এখন আমরা দেখি উনি এই অধ্যায়ে বাউলদের প্রেমধর্ম বিষয়ে বা অন্যান্য বিষয়ে আরো কি কি বলেছেন !
এরপরে উনি বলেছেন – ” বাউল জীবনধর্ম তথা মানবধর্মকে অস্বীকার করেন না ৷ তাঁদের নাই কোনো জাতিবিদ্বেষ – নাই কোনো ধর্মভেদ ৷ সুতরাং শ্রেণীচেতনা, গোষ্ঠীচেতনা, সম্প্রদায়চেতনা – এগুলি বাউলের ভিতর নাই ৷ তাঁদের মধ্যে আছে এক সার্বিক – সর্বজনীন প্রেমচেতনা – যা সকলকে আপন করে , কাউকেই করে না পর !
সব ধর্মমতের সমন্বয় ঘটাতেই বাউলের মাধুকরী বৃত্তি ৷ প্রচলিত কোনো ধর্মীয় সংস্কারের গণ্ডীর দ্বারা তাঁরা আবদ্ধ ন’ন৷ সমস্ত প্রকার সংকীর্ণ সংস্কারের বাইরে অনন্ত উদারতার মধ্যে তাঁদের অবস্থান ৷ বাউলমনের প্রসারতা সেই কারণেই খুব বিস্তারিত ৷ তাঁদের নিকট মানুষই সমস্ত কিছু – মানুষের সাধনাই সর্বাপেক্ষা বড় সাধনা ৷”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! গুরুমহারাজ বাউল সাধনার ধারা, বাউলদের জীবনদর্শন এইসব বলতে গিয়ে উনি বলেছেন যে, বাউলগণ জীবনধর্ম তথা মানবধর্মকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। তাই তাঁদের মধ্যে জাতিবিদ্বেষ, ধর্মবিদ্বেষ, শ্রেণীচেতনা, গোষ্ঠীচেতনা, সম্প্রদায়চেতনা – এইসবগুলি থাকে না ৷ থাকবেই বা কি করে ! কারণ তাঁরা তো সদা-সর্বদাই সর্বজনীন প্রেমচেতনায় থাকেন ৷ তাই তাদের কাছে পর কেউ-ই নয়, সবাই আপন৷ বৈদিক শাস্ত্রে আমরা পাই – ঋষিগণ বলেছিলেন, “বসুধৈব কুটুম্বকম্”। বাউলগণ সেই ভারতীয় ঋষিদের প্রাচীন ধারারই অনুসারী ৷ আর তাঁরা শুধু অনুসারী-ই ন’ন – তাঁরা নিজের জীবনে তা আচরণ করে দেখান।
এরপরে গুরুমহারাজ বাউল পরম্পরার সাধকদের সম্বন্ধে আরও যা বলেছেন সেটা শুনলে আমরা সকলে সহজেই বুঝতে পারবো যে, বাউলমত কেন এ যুগের যুগধর্ম হোতে চলেছে !! কারণ, বাউলমতে কোনোপ্রকার সংকীর্ণ সংস্কারের স্থান নাই – বাউলমনের প্রসারতা অনন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ৷ মানুষে মানুষে ভেদ তাঁরা কখনই দেখেন না, কারণ তাঁরা মানবের পূজারী, মানবধর্মের অনুসারী ৷ সর্বজনীন প্রেমচেতনায় উদ্বুদ্ধ বাউলগণ সকলকেই ভালোবাসেন ৷ ভালবাসার ক্ষেত্রে কোনো বাছবিচার করেন না ৷
এবার আমরা দেখবো_ এরপরে গুরুমহারাজ বাউলদের সম্বন্ধে আরও কি কি বলেছেন ৷ এরপরে উনি বলেছেন – ” গান হোলো বাউলসাধনার প্রধান অঙ্গ ৷ বোল হোলো বাউলমতের ‘মর্মকথা’ ৷ এই ‘গান’ বা ‘বোল’-এর ভিতর দিয়ে বাউল তাঁর নিজের দর্শন বিশ্বসংসারে পৌঁছে দেন। আর গানের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সাধনতত্ত্বের গুপ্ত সংকেত ৷ গানের ভিতর দিয়েই বাউলের মর্মকথা সংরক্ষিত হয় পরবর্তী প্রজন্মের উত্তরপুরুষের জন্য।
বাউল অনাসক্ত, তাঁর কাছে কোনো গ্রন্থ নাই – নাই কোনো বিতর্ক – নাই জাগতিক স্বস্তি-অস্বস্তি নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ৷ তাঁদের শুধু একটাই জিজ্ঞাসা – ” আমি কোথায় পাব তারে,
আমার মনের মানুষ যে রে ৷৷”
প্রিয় পাঠক ! এইবার গুরুমহারাজ বাউলদের বোল বা বাউলগান বিষয়ে কথা বলছেন ৷ বাউলগানের (বোল) মধ্যে দিয়েই বাউলগণ তাঁদের দর্শন জগৎসংসারকে জানান ৷৷ এই ‘বোল’ বা গানগুলির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে বাউলগানের সাধনতত্ত্বের গুপ্ত কথা !
গুরুমহারাজ নিজেও অনেকসময় আপনভাবে বাউলগান গাইতেন, কোনো কোনোসময় উনি বিভিন্ন দুর্বোধ্য (সাংকেতিক বা সান্ধ্যভাষায় রচিত) বাউলগানগুলির এক একটা লাইন ধরে ধরে ব্যাখ্যা করতেন। তার মধ্যে আমার মনে পড়ছে যেগুলি, সেগুলি হোলো – ” দিল-দরিয়ার মাঝে একটা সর্প ভাসতেছে, তার মাথায় একটা ময়ূর নৃত্য করতেছে, কি বাত্ শুনাইলি, আলেখে বাত আজব পয়দা হইয়াছে !” এছাড়া আরও একটি বাউল গান হোলো – ” চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে – আমরা ভেবে করবো কি !” এই গানগুলির ব্যাখ্যা আমরা গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম !
গুরুমহারাজ নিজে আরও অনেক বাউলগান গাইতেন। তার মধ্যে কয়েকটি হোলো – ‘গুরু আমার মনের ময়লা যাবে কেমনে’, ‘ও জীবন ছাইরা না যাও মোরে’, ‘ও গুরুজি–কি মাছ ধরিছো বঁড়শি দিয়া’, ‘কাঁচা হাঁড়িতে গো হাঁড়িতে রাখিতে নারিলি প্রেমজল ‘ – ইত্যাদি ৷ একটা সিটিং-এ গুরুমহারাজ একটা বিখ্যাত পাঞ্জাবি গান “ও লাল মেরি ……….. দমাদ্দম্ মস্ত কালিন্দার”- এই গানটি গেয়ে গানটির এক একটা কথার ব্যাখ্যা করে আমাদেরকে বুঝিয়েছিলেন ৷৷
এরপরে উনি বলেছেন – ” বাউল জীবনধর্ম তথা মানবধর্মকে অস্বীকার করেন না ৷ তাঁদের নাই কোনো জাতিবিদ্বেষ – নাই কোনো ধর্মভেদ ৷ সুতরাং শ্রেণীচেতনা, গোষ্ঠীচেতনা, সম্প্রদায়চেতনা – এগুলি বাউলের ভিতর নাই ৷ তাঁদের মধ্যে আছে এক সার্বিক – সর্বজনীন প্রেমচেতনা – যা সকলকে আপন করে , কাউকেই করে না পর !
সব ধর্মমতের সমন্বয় ঘটাতেই বাউলের মাধুকরী বৃত্তি ৷ প্রচলিত কোনো ধর্মীয় সংস্কারের গণ্ডীর দ্বারা তাঁরা আবদ্ধ ন’ন৷ সমস্ত প্রকার সংকীর্ণ সংস্কারের বাইরে অনন্ত উদারতার মধ্যে তাঁদের অবস্থান ৷ বাউলমনের প্রসারতা সেই কারণেই খুব বিস্তারিত ৷ তাঁদের নিকট মানুষই সমস্ত কিছু – মানুষের সাধনাই সর্বাপেক্ষা বড় সাধনা ৷”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! গুরুমহারাজ বাউল সাধনার ধারা, বাউলদের জীবনদর্শন এইসব বলতে গিয়ে উনি বলেছেন যে, বাউলগণ জীবনধর্ম তথা মানবধর্মকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। তাই তাঁদের মধ্যে জাতিবিদ্বেষ, ধর্মবিদ্বেষ, শ্রেণীচেতনা, গোষ্ঠীচেতনা, সম্প্রদায়চেতনা – এইসবগুলি থাকে না ৷ থাকবেই বা কি করে ! কারণ তাঁরা তো সদা-সর্বদাই সর্বজনীন প্রেমচেতনায় থাকেন ৷ তাই তাদের কাছে পর কেউ-ই নয়, সবাই আপন৷ বৈদিক শাস্ত্রে আমরা পাই – ঋষিগণ বলেছিলেন, “বসুধৈব কুটুম্বকম্”। বাউলগণ সেই ভারতীয় ঋষিদের প্রাচীন ধারারই অনুসারী ৷ আর তাঁরা শুধু অনুসারী-ই ন’ন – তাঁরা নিজের জীবনে তা আচরণ করে দেখান।
এরপরে গুরুমহারাজ বাউল পরম্পরার সাধকদের সম্বন্ধে আরও যা বলেছেন সেটা শুনলে আমরা সকলে সহজেই বুঝতে পারবো যে, বাউলমত কেন এ যুগের যুগধর্ম হোতে চলেছে !! কারণ, বাউলমতে কোনোপ্রকার সংকীর্ণ সংস্কারের স্থান নাই – বাউলমনের প্রসারতা অনন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ৷ মানুষে মানুষে ভেদ তাঁরা কখনই দেখেন না, কারণ তাঁরা মানবের পূজারী, মানবধর্মের অনুসারী ৷ সর্বজনীন প্রেমচেতনায় উদ্বুদ্ধ বাউলগণ সকলকেই ভালোবাসেন ৷ ভালবাসার ক্ষেত্রে কোনো বাছবিচার করেন না ৷
এবার আমরা দেখবো_ এরপরে গুরুমহারাজ বাউলদের সম্বন্ধে আরও কি কি বলেছেন ৷ এরপরে উনি বলেছেন – ” গান হোলো বাউলসাধনার প্রধান অঙ্গ ৷ বোল হোলো বাউলমতের ‘মর্মকথা’ ৷ এই ‘গান’ বা ‘বোল’-এর ভিতর দিয়ে বাউল তাঁর নিজের দর্শন বিশ্বসংসারে পৌঁছে দেন। আর গানের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সাধনতত্ত্বের গুপ্ত সংকেত ৷ গানের ভিতর দিয়েই বাউলের মর্মকথা সংরক্ষিত হয় পরবর্তী প্রজন্মের উত্তরপুরুষের জন্য।
বাউল অনাসক্ত, তাঁর কাছে কোনো গ্রন্থ নাই – নাই কোনো বিতর্ক – নাই জাগতিক স্বস্তি-অস্বস্তি নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ৷ তাঁদের শুধু একটাই জিজ্ঞাসা – ” আমি কোথায় পাব তারে,
আমার মনের মানুষ যে রে ৷৷”
প্রিয় পাঠক ! এইবার গুরুমহারাজ বাউলদের বোল বা বাউলগান বিষয়ে কথা বলছেন ৷ বাউলগানের (বোল) মধ্যে দিয়েই বাউলগণ তাঁদের দর্শন জগৎসংসারকে জানান ৷৷ এই ‘বোল’ বা গানগুলির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে বাউলগানের সাধনতত্ত্বের গুপ্ত কথা !
গুরুমহারাজ নিজেও অনেকসময় আপনভাবে বাউলগান গাইতেন, কোনো কোনোসময় উনি বিভিন্ন দুর্বোধ্য (সাংকেতিক বা সান্ধ্যভাষায় রচিত) বাউলগানগুলির এক একটা লাইন ধরে ধরে ব্যাখ্যা করতেন। তার মধ্যে আমার মনে পড়ছে যেগুলি, সেগুলি হোলো – ” দিল-দরিয়ার মাঝে একটা সর্প ভাসতেছে, তার মাথায় একটা ময়ূর নৃত্য করতেছে, কি বাত্ শুনাইলি, আলেখে বাত আজব পয়দা হইয়াছে !” এছাড়া আরও একটি বাউল গান হোলো – ” চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে – আমরা ভেবে করবো কি !” এই গানগুলির ব্যাখ্যা আমরা গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম !
গুরুমহারাজ নিজে আরও অনেক বাউলগান গাইতেন। তার মধ্যে কয়েকটি হোলো – ‘গুরু আমার মনের ময়লা যাবে কেমনে’, ‘ও জীবন ছাইরা না যাও মোরে’, ‘ও গুরুজি–কি মাছ ধরিছো বঁড়শি দিয়া’, ‘কাঁচা হাঁড়িতে গো হাঁড়িতে রাখিতে নারিলি প্রেমজল ‘ – ইত্যাদি ৷ একটা সিটিং-এ গুরুমহারাজ একটা বিখ্যাত পাঞ্জাবি গান “ও লাল মেরি ……….. দমাদ্দম্ মস্ত কালিন্দার”- এই গানটি গেয়ে গানটির এক একটা কথার ব্যাখ্যা করে আমাদেরকে বুঝিয়েছিলেন ৷৷