শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (লিখিত এবং কথিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো ৷ আমরা ছিলাম গুরুমহারাজের স্বহস্ত রচিত দ্বিতীয় গ্রন্থ বাউলের মর্মকথা-র নবম পরিচ্ছেদের কথায় ৷ এই অংশে গুরুমহারাজ বাউলগণের সাধনার অন্তিম লক্ষ্য যে ‘প্রেম’, সেই বিষয়ে কথা বলছিলেন এবং তাছাড়াও উনি ‘বাউল’ শব্দের মর্মার্থ, বাউলগণের পোশাক-পরিচ্ছদের তাৎপর্য, বাদ্যযন্ত্রের তাৎপর্য – এই সকল কথা আলোচনা করছিলেন ৷ আমরা এখন দেখবো – এরপরে গুরুমহারাজ এই বিষয়ে আরো কি কি বলেছেন ৷
এরপরে উনি বলেছেন – ” বাউলেরা সাধনা করেন নারীরূপে, কারণ নারীর প্রেমই সার্থক ও শাশ্বত ৷ নারীর প্রেমে আছে একান্ত নিষ্ঠা এবং ঐকান্তিকতা ৷ পক্ষান্তরে, নরের প্রেমে কামভাবের আধিক্য ৷ সেই কারণে সে একনিষ্ঠ হোতে পারে না। নারীই একমাত্র মধুর প্রেমের আধার ৷ আর এইজন্যেই বাউলের নারীরূপে উপাসনা। বাউলদের এই নারীতত্ত্বটি খুবই গভীর এবং একান্ত গুহ্য ৷ বাইরের লোকের কাছে তাঁরা এসব বলেন না – কেবলমাত্র অন্তরঙ্গজনের কাছে তাঁরা এই বিষয়ে চর্চা করে থাকেন ৷
বাউলরা প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে উদাসীন। সাধারণতঃ লোকে এঁদিগকে ‘পাগল’ বলে থাকে ৷ বাস্তবিক সত্য সত্যই তাঁরা ‘পাগল’, কিন্তু ‘প্রেমের পাগল’ I আর সেই প্রেম হোলো অখন্ড-সর্বজনীন ভগবৎপ্রেম ৷৷
এইজন্য মানুষকে ভালোবাসাই বাউলের সাধনা – বাউলের ধর্ম ৷”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! গুরুমহারাজ বাউল-রহস্য কিভাবে উন্মোচিত করছেন – সেটা কি খেয়াল করেছেন ! আমরা সাধারণ নর-নারীর প্রেমের কথা সকলেই জানি ! আর সেখানে নর-নারীর মধ্যে_ কার কতোটা প্রেমের জোর সেই নিয়ে অনেক গান, অনেক গল্প, অনেক উপন্যাসের কথাও শুনেছি ৷ কিন্তু গুরুমহারাজ পরমসত্য বা নিত্য ও শাশ্বত সত্য তুলে ধরলেন ৷ উনি বললেন যে, ‘নারীর প্রেমই সার্থক ও শাশ্বত’৷ কারণ নারীর প্রেমেই রয়েছে একান্ত নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতা ৷ অপরপক্ষে পুরুষদের প্রেমে কামভাবের আধিক্য থাকায় সেই প্রেম একনিষ্ঠ নয় ৷ আর নারী যেহেতু ‘মধুর প্রেমের আধার’– তাই বাউলেরা নারীরূপে উপাসনা করে থাকেন ৷
তবে বাউলগণ তাঁদের এই যে নারীতত্ত্ব, এটি তাঁরা নিজেদের মধ্যেই গুপ্ত রাখেন – বাইরে কারো কাছে এই রহস্য ব্যক্ত করেন না, শুধুমাত্র গুরু-শিষ্য পরম্পরায় এইসব গুহ্যাতিগুহ্য রহস্য আলোচনা করে থাকেন ৷
বাউলগণ নিজেদেরকে খ্যাপা বা পাগল বলে থাকেন, আবার সাধারণ মানুষেরাও তাঁদেরকে পাগল আখ্যা দিয়ে থাকে ৷ গুরুজী বলেছেন, ‘সত্যি সত্যিই তাঁরা পাগল–কিন্তু তাঁরা প্রেমের পাগল ৷ তাঁদের এই প্রেম সর্বজনীন ভগবৎপ্রেম।’ অন্যত্র এক স্থানে পাগলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ বলেছিলেন – ‘ যিনি পেয়েছেন (ঈশ্বর লাভ করেছেন) – তিনিই পাগল ৷’ সুতরাং বাউলগণ যখন মনের মানুষ – অধর মানুষ – সহজ মানুষের সন্ধান পান, প্রকৃত অর্থে তখনই তিনি ‘পাগল’ পদবাচ্য হ’ন।
যাইহোক, এটা বোঝা গেল যে_ বাউলগাণের কাছে ধর্ম বলে যদি কিছু থাকে, তা হোলো – মানুষকে ভালোবাসা ৷ ধর্ম-বর্ণ-জাতি-উচ্চ-নিচ-ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সকলকে ভালোবাসা ৷৷
প্রিয় পাঠক – এরপরে আমরা দেখবো গুরুমহারাজ ‘প্রেম’ বিষয়ে আরো কি কি কথা বলেছেন ৷ এরপরে গুরুজী জিজ্ঞাসার অবতারণা করেছেন এবং ‘প্রেম’ বিষয়ে আরো কিছু আলোচনা করেছেন ৷ উনি বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ ! জগতে নরনারীর সম্পর্ক ঘিরেই প্রেম বহুলভাবে প্রচলিত। কিন্তু এই সম্পর্ককে অতিক্রম করেও জগতে অনেক প্রেমিক এসেছেন, যদিও সংখ্যায় তাঁরা বিরল ৷
যে প্রেম স্বাধীন এবং সর্বজনীন – তাই(সেটাই) আদর্শ প্রেম ৷ প্রিয় আত্মন্ – নরনারী পরস্পরকে ঘিরে যে আকর্ষণ বোধ করে – এই আকর্ষণ প্রবৃত্তিজাত ৷ প্রেমের সংজ্ঞায় প্রবৃত্তিকে মানা যায় না ৷ নরনারীর পরস্পরের প্রতি আকর্ষণটা যে মূলতঃ প্রবৃত্তিজাত__ এটা যুক্তির দিক দিয়েও অস্বীকার করার উপায় নাই ৷ কিন্তু প্রাণী জগতের শ্রেষ্ঠ জীবন মানবজীবন, তার বিষয়টি নিশ্চয়ই ভিন্ন ৷ আর মানবও প্রকৃতির হাতের ক্রীড়ানক নয় ৷ সুতরাং প্রবৃত্তির তাড়না হ হোতে মুক্ত হওয়া তার সহজাত বৃত্তি এবং সাবলীল বৈশিষ্ট্য ৷ কিন্তু তবুও পরস্পরের প্রতি আকর্ষণের প্রকৃতিগত স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করা যায় না – এটা বড় রহস্যময় ! আর ওই আকর্ষণ থেকেই প্রেমের আবির্ভাব ঘটে এবং আকর্ষণটাও নির্বিকার নয় ৷ কিন্তু তবুও প্রেমকে এতো সংকীর্ণ বিচারে আবদ্ধ করা যায় না। এইজন্য মহাজনরা প্রেমকে অনির্বচনীয় বলেছেন ৷”
এই আলোচনার কথাগুলি আমরা পরের সংখ্যায় আর একবার বিচার-বিশ্লেষণ করবো। আজ এই পর্যন্তই থাক্ !
এরপরে উনি বলেছেন – ” বাউলেরা সাধনা করেন নারীরূপে, কারণ নারীর প্রেমই সার্থক ও শাশ্বত ৷ নারীর প্রেমে আছে একান্ত নিষ্ঠা এবং ঐকান্তিকতা ৷ পক্ষান্তরে, নরের প্রেমে কামভাবের আধিক্য ৷ সেই কারণে সে একনিষ্ঠ হোতে পারে না। নারীই একমাত্র মধুর প্রেমের আধার ৷ আর এইজন্যেই বাউলের নারীরূপে উপাসনা। বাউলদের এই নারীতত্ত্বটি খুবই গভীর এবং একান্ত গুহ্য ৷ বাইরের লোকের কাছে তাঁরা এসব বলেন না – কেবলমাত্র অন্তরঙ্গজনের কাছে তাঁরা এই বিষয়ে চর্চা করে থাকেন ৷
বাউলরা প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে উদাসীন। সাধারণতঃ লোকে এঁদিগকে ‘পাগল’ বলে থাকে ৷ বাস্তবিক সত্য সত্যই তাঁরা ‘পাগল’, কিন্তু ‘প্রেমের পাগল’ I আর সেই প্রেম হোলো অখন্ড-সর্বজনীন ভগবৎপ্রেম ৷৷
এইজন্য মানুষকে ভালোবাসাই বাউলের সাধনা – বাউলের ধর্ম ৷”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! গুরুমহারাজ বাউল-রহস্য কিভাবে উন্মোচিত করছেন – সেটা কি খেয়াল করেছেন ! আমরা সাধারণ নর-নারীর প্রেমের কথা সকলেই জানি ! আর সেখানে নর-নারীর মধ্যে_ কার কতোটা প্রেমের জোর সেই নিয়ে অনেক গান, অনেক গল্প, অনেক উপন্যাসের কথাও শুনেছি ৷ কিন্তু গুরুমহারাজ পরমসত্য বা নিত্য ও শাশ্বত সত্য তুলে ধরলেন ৷ উনি বললেন যে, ‘নারীর প্রেমই সার্থক ও শাশ্বত’৷ কারণ নারীর প্রেমেই রয়েছে একান্ত নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতা ৷ অপরপক্ষে পুরুষদের প্রেমে কামভাবের আধিক্য থাকায় সেই প্রেম একনিষ্ঠ নয় ৷ আর নারী যেহেতু ‘মধুর প্রেমের আধার’– তাই বাউলেরা নারীরূপে উপাসনা করে থাকেন ৷
তবে বাউলগণ তাঁদের এই যে নারীতত্ত্ব, এটি তাঁরা নিজেদের মধ্যেই গুপ্ত রাখেন – বাইরে কারো কাছে এই রহস্য ব্যক্ত করেন না, শুধুমাত্র গুরু-শিষ্য পরম্পরায় এইসব গুহ্যাতিগুহ্য রহস্য আলোচনা করে থাকেন ৷
বাউলগণ নিজেদেরকে খ্যাপা বা পাগল বলে থাকেন, আবার সাধারণ মানুষেরাও তাঁদেরকে পাগল আখ্যা দিয়ে থাকে ৷ গুরুজী বলেছেন, ‘সত্যি সত্যিই তাঁরা পাগল–কিন্তু তাঁরা প্রেমের পাগল ৷ তাঁদের এই প্রেম সর্বজনীন ভগবৎপ্রেম।’ অন্যত্র এক স্থানে পাগলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ বলেছিলেন – ‘ যিনি পেয়েছেন (ঈশ্বর লাভ করেছেন) – তিনিই পাগল ৷’ সুতরাং বাউলগণ যখন মনের মানুষ – অধর মানুষ – সহজ মানুষের সন্ধান পান, প্রকৃত অর্থে তখনই তিনি ‘পাগল’ পদবাচ্য হ’ন।
যাইহোক, এটা বোঝা গেল যে_ বাউলগাণের কাছে ধর্ম বলে যদি কিছু থাকে, তা হোলো – মানুষকে ভালোবাসা ৷ ধর্ম-বর্ণ-জাতি-উচ্চ-নিচ-ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সকলকে ভালোবাসা ৷৷
প্রিয় পাঠক – এরপরে আমরা দেখবো গুরুমহারাজ ‘প্রেম’ বিষয়ে আরো কি কি কথা বলেছেন ৷ এরপরে গুরুজী জিজ্ঞাসার অবতারণা করেছেন এবং ‘প্রেম’ বিষয়ে আরো কিছু আলোচনা করেছেন ৷ উনি বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ ! জগতে নরনারীর সম্পর্ক ঘিরেই প্রেম বহুলভাবে প্রচলিত। কিন্তু এই সম্পর্ককে অতিক্রম করেও জগতে অনেক প্রেমিক এসেছেন, যদিও সংখ্যায় তাঁরা বিরল ৷
যে প্রেম স্বাধীন এবং সর্বজনীন – তাই(সেটাই) আদর্শ প্রেম ৷ প্রিয় আত্মন্ – নরনারী পরস্পরকে ঘিরে যে আকর্ষণ বোধ করে – এই আকর্ষণ প্রবৃত্তিজাত ৷ প্রেমের সংজ্ঞায় প্রবৃত্তিকে মানা যায় না ৷ নরনারীর পরস্পরের প্রতি আকর্ষণটা যে মূলতঃ প্রবৃত্তিজাত__ এটা যুক্তির দিক দিয়েও অস্বীকার করার উপায় নাই ৷ কিন্তু প্রাণী জগতের শ্রেষ্ঠ জীবন মানবজীবন, তার বিষয়টি নিশ্চয়ই ভিন্ন ৷ আর মানবও প্রকৃতির হাতের ক্রীড়ানক নয় ৷ সুতরাং প্রবৃত্তির তাড়না হ হোতে মুক্ত হওয়া তার সহজাত বৃত্তি এবং সাবলীল বৈশিষ্ট্য ৷ কিন্তু তবুও পরস্পরের প্রতি আকর্ষণের প্রকৃতিগত স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করা যায় না – এটা বড় রহস্যময় ! আর ওই আকর্ষণ থেকেই প্রেমের আবির্ভাব ঘটে এবং আকর্ষণটাও নির্বিকার নয় ৷ কিন্তু তবুও প্রেমকে এতো সংকীর্ণ বিচারে আবদ্ধ করা যায় না। এইজন্য মহাজনরা প্রেমকে অনির্বচনীয় বলেছেন ৷”
এই আলোচনার কথাগুলি আমরা পরের সংখ্যায় আর একবার বিচার-বিশ্লেষণ করবো। আজ এই পর্যন্তই থাক্ !