শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (লিখিত এবং কথিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো ৷ আমরা ছিলাম গুরুমহারাজের স্বহস্ত লিখিত দ্বিতীয় গ্রন্থ বাউলের মর্মকথা-র শেষ পরিচ্ছেদ (নবম)-এর কথায় ৷ এই অংশে গুরুজী বাউলদের বেশভূষা, চালচলন ইত্যাদি বাহ্যিক বিষয়সমূহের তাত্ত্বিক আলোচনা এবং বাউলগণ নিজেরা নারীভাবে বা প্রকৃতিভাবে থেকে সহজপুরে স্থিত সহজ মানুষের বা তার মনের মানুষের সাধনা করে থাকেন__এইসব আলোচনা করছিলেন । এই আলোচনা করার ফাঁকে উনি সাধারণ বা প্রাকৃত নর-নারীর প্রেমের কথাও বলেছেন ৷ আমরা দেখবো সেই আলোচনাংশ থেকে আমরা কতটা মর্মোদ্ধার করতে পারি !
গুরুমহারাজ বলেছেন, নরনারী (সাধারণ বা প্রাকৃত) পরস্পরকে ঘিরে যে আকর্ষণ বোধ করে – এই আকর্ষণ প্রবৃত্তিজাত ৷ কিন্তু ‘প্রেম’-এর সংজ্ঞায় প্রবৃত্তির কোনো স্থান নাই ৷ নরনারী বা পুরুষজাতি ও স্ত্রীজাতির প্রতি পারস্পরিক এই প্রবৃত্তিজাত আকর্ষণ সমগ্র জীবজগতেই পরিলক্ষিত হয় এবং এই আকর্ষণ মূলতঃ বংশবিস্তারের নিমিত্ত ৷ এটি শুধু প্রবৃত্তিগতই নয় – প্রকৃতিগত ৷ কিন্তু গুরুমহারাজ এখানে যে সিদ্ধান্তের অবতারণা করেছেন তা হোলো – মানব যেহেতু প্রাণীজগতের (জীবজগতের) শ্রেষ্ঠ অভিব্যক্তি, তাই মানব কেন প্রকৃতির (প্রবৃত্তির) হাতের ক্রীড়নক হয়ে থাকবে বরং প্রবৃত্তির তাড়না থেকে মুক্ত হওয়াই মানবের সহজাত বৃত্তি এবং সাবলীল বৈশিষ্ট্য ৷’
তার মানেটা হোলো এই যে, আমরা যারা সাধারণ মানুষ এবং প্রাকৃত কামের আবর্তনের মধ্যে রয়েছি – আমরা আমাদের স্বাভাবিকতা বা সহজাত বৃত্তি ও সাবলীল বৈশিষ্ট্যকে হারিয়ে ফেলেছি – তাই নয় কি ? তবে অবশ্য গুরুমহারাজ এই ব্যাপারটিকে অন্যায় বা অপরাধ বলে গণ্য করেন নি – তিনি এর জন্য বিস্ময়ও প্রকাশ করেন নি ! উনি শুধু বলেছেন, ‘প্রবৃত্তির তাড়না মুক্ত হওয়া মানবের সহজাত প্রবৃত্তি হওয়া সত্ত্বেও নরনারীর পারস্পরিক আকর্ষণ বড়ই রহস্যময়। উনি এটিকে ‘প্রবৃত্তিগত স্বাভাবিকতা’ বলে উল্লেখ করেছেন ৷ উনি এটিকেও স্বাভাবিকতা কেন বলেছেন – তার উত্তর পাওয়া যায় পরের ছত্রে ৷ যেখানে উনি বলেছেন, ‘ওই আকর্ষণ থেকেই প্রেমের আবির্ভাব ঘটে ! কিন্তু ঐ আকর্ষণ বিকারযুক্ত অর্থাৎ নির্বিকার নয় ৷ সেইজন্য নর-নারীর পরস্পরিক প্রবৃত্তিজাত আকর্ষণ কিন্তু প্রকৃত অর্থে ‘প্রেম’ নয়, কারণ ‘প্রেম’ এতোটা সংকীর্ণ বিচারে আবদ্ধ হোতে পারে না – প্রেম অনির্বচনীয়’ ৷৷
যাইহোক, এবার আমরা দেখবো গুরুমহারাজ এরপরে এই নিয়ে আরো কি কি আলোচনা করেছেন ৷ এরপরে গুরুজী বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ ! ‘প্রেম’ অর্থে পরস্পর প্রবৃত্তির নির্বিচার ভোগ মাত্র নয়। ‘প্রেম’ হোলো একান্ত একনিষ্ঠ এবং অখন্ড ৷ প্রেম স্বাভাবিক, সাবলীল, সহজ, নিবিড় এবং অনবদ্য।
জৈবিক কাম হোচ্ছে – এক ধরনের আচ্ছন্নতা বা আবেশ, এটা চিরস্থায়ীও নয় ৷ এটা চিত্তের দশা মাত্র ৷ নর-নারীর সম্পর্ক ঘিরেই এই আবেশ বা আচ্ছন্নদশা উপস্থিত হয় এবং তা হোতে বিকার উপস্থিত হয়।
কিন্তু প্রেম বলতে কেবল নর-নারীর সম্পর্কই নয় এবং শুধুমাত্র তাদের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ নয় ৷ প্রেম স্বাধীন এবং সর্বজনীন ৷ প্রেম-ই জীবনের প্রকৃতি – যা সহজ, সাবলীল ও অনবদ্য ৷ যেখানে রয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা ৷ আর ‘কাম’ হোলো আবেশ বা আচ্ছন্নতা। তা যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ চিত্তবিক্ষেপ এবং ইন্দ্রিয় বিকার ৷”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ – গুরুমহারাজ এই অংশে ‘কাম’ এবং ‘প্রেম’ বিষয়ে দু-চার কথায় সুন্দরভাবে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করে বলেছেন ৷ কাম-কে উনি বলেছেন পুরুষ-নারীর পরস্পর প্রবৃত্তির নির্বিচার ভোগমাত্র ৷ ‘কাম’ জৈবিক একটা প্রবৃত্তি – এটি এক ধরনের আচ্ছন্নতা বা আবেশ ৷ ‘কাম’ চিরস্থায়ী নয়, এটি চিত্তের একটা বিশেষ দশা বা বলা যায় আচ্ছন্নদশা ৷ নর-নারীর মধ্যে যখন জৈবিক আকর্ষণ বা শারীরিক সম্পর্কের সৃষ্টি হয় – তখনই তাদের মধ্যে এই আচ্ছন্নদশা উপস্থিত হয় – যার পরিণতিস্বরূপ আসে বিকার ৷ আর এই কামবিকারই মানবজীবনে বেশিরভাগ সমস্যার মূল ৷
অপরপক্ষে ‘প্রেম’ কিন্তু নর-নারীর শারীরিক সম্পর্কের নির্বিচার ভোগমাত্র নয় ৷ ‘প্রেম’ বিষয়ে বলতে গিয়ে গুরুমহারাজ বলেছেন, ‘প্রেম হোলো একান্ত একনিষ্ঠ এবং অখন্ড ৷ প্রেম স্বাভাবিক, সাবলীল, সহজ, নিবিড় এবং অনবদ্য ৷’ এছাড়া উনি আরো বলেছেন, ‘প্রেম স্বাধীন এবং সর্বজনীন ৷ প্রেম-ই জীবনের প্রকৃতি – যা সহজ, সাবলীল অনবদ্য – যেখানে রয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা।
প্রিয় পাঠক – এতো অল্প কথায় প্রেম বিষয়ে এতো সুন্দর ব্যাখ্যা আগে কোথাও শুনেছেন কি? এর থেকে এতো সংক্ষিপ্তভাবে প্রেমের মহিমা সংজ্ঞায়িত করার কৌশল গুরুজী ছাড়া আর কে-ই বা করতে পারে ! উনি বলেছেন__’প্রেম হোলো একনিষ্ঠ ও অখন্ড ৷’ তার মানে, প্রেমে একান্ত একাগ্রতা প্রয়োজন – যা সাধক ধ্যানের গভীরতায় অর্জন করতে পারে। আবার, এটি অখন্ড – তার মানে এখানে কোনো আত্যান্তিক বিচ্ছেদ নাই, শুধু প্রেমই রয়েছে ৷ এছাড়া গুরুজী বলেছেন যে ‘প্রেম’ স্বাভাবিক, সাবলীল, সহজ, নিবিড় ও অনবদ্য – যেখানে রয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা ৷’ তার মানে হোলো – মানুষ যখনই বিকারমুক্ত হয়, সহজ হয়, তার জীবন প্রকৃতির স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে , মানুষ যখন সমস্ত বন্ধন (মায়া, মোহ, রূপ-রসাদির বন্ধন ইত্যাদি) থেকে মুক্ত হয়, স্বাধীন হয় – তখনই সেই মানবের মধ্যে প্রকৃত অর্থে ‘প্রেম’ প্রকটিত হয়ে থাকে ৷৷
গুরুমহারাজ বলেছেন, নরনারী (সাধারণ বা প্রাকৃত) পরস্পরকে ঘিরে যে আকর্ষণ বোধ করে – এই আকর্ষণ প্রবৃত্তিজাত ৷ কিন্তু ‘প্রেম’-এর সংজ্ঞায় প্রবৃত্তির কোনো স্থান নাই ৷ নরনারী বা পুরুষজাতি ও স্ত্রীজাতির প্রতি পারস্পরিক এই প্রবৃত্তিজাত আকর্ষণ সমগ্র জীবজগতেই পরিলক্ষিত হয় এবং এই আকর্ষণ মূলতঃ বংশবিস্তারের নিমিত্ত ৷ এটি শুধু প্রবৃত্তিগতই নয় – প্রকৃতিগত ৷ কিন্তু গুরুমহারাজ এখানে যে সিদ্ধান্তের অবতারণা করেছেন তা হোলো – মানব যেহেতু প্রাণীজগতের (জীবজগতের) শ্রেষ্ঠ অভিব্যক্তি, তাই মানব কেন প্রকৃতির (প্রবৃত্তির) হাতের ক্রীড়নক হয়ে থাকবে বরং প্রবৃত্তির তাড়না থেকে মুক্ত হওয়াই মানবের সহজাত বৃত্তি এবং সাবলীল বৈশিষ্ট্য ৷’
তার মানেটা হোলো এই যে, আমরা যারা সাধারণ মানুষ এবং প্রাকৃত কামের আবর্তনের মধ্যে রয়েছি – আমরা আমাদের স্বাভাবিকতা বা সহজাত বৃত্তি ও সাবলীল বৈশিষ্ট্যকে হারিয়ে ফেলেছি – তাই নয় কি ? তবে অবশ্য গুরুমহারাজ এই ব্যাপারটিকে অন্যায় বা অপরাধ বলে গণ্য করেন নি – তিনি এর জন্য বিস্ময়ও প্রকাশ করেন নি ! উনি শুধু বলেছেন, ‘প্রবৃত্তির তাড়না মুক্ত হওয়া মানবের সহজাত প্রবৃত্তি হওয়া সত্ত্বেও নরনারীর পারস্পরিক আকর্ষণ বড়ই রহস্যময়। উনি এটিকে ‘প্রবৃত্তিগত স্বাভাবিকতা’ বলে উল্লেখ করেছেন ৷ উনি এটিকেও স্বাভাবিকতা কেন বলেছেন – তার উত্তর পাওয়া যায় পরের ছত্রে ৷ যেখানে উনি বলেছেন, ‘ওই আকর্ষণ থেকেই প্রেমের আবির্ভাব ঘটে ! কিন্তু ঐ আকর্ষণ বিকারযুক্ত অর্থাৎ নির্বিকার নয় ৷ সেইজন্য নর-নারীর পরস্পরিক প্রবৃত্তিজাত আকর্ষণ কিন্তু প্রকৃত অর্থে ‘প্রেম’ নয়, কারণ ‘প্রেম’ এতোটা সংকীর্ণ বিচারে আবদ্ধ হোতে পারে না – প্রেম অনির্বচনীয়’ ৷৷
যাইহোক, এবার আমরা দেখবো গুরুমহারাজ এরপরে এই নিয়ে আরো কি কি আলোচনা করেছেন ৷ এরপরে গুরুজী বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ ! ‘প্রেম’ অর্থে পরস্পর প্রবৃত্তির নির্বিচার ভোগ মাত্র নয়। ‘প্রেম’ হোলো একান্ত একনিষ্ঠ এবং অখন্ড ৷ প্রেম স্বাভাবিক, সাবলীল, সহজ, নিবিড় এবং অনবদ্য।
জৈবিক কাম হোচ্ছে – এক ধরনের আচ্ছন্নতা বা আবেশ, এটা চিরস্থায়ীও নয় ৷ এটা চিত্তের দশা মাত্র ৷ নর-নারীর সম্পর্ক ঘিরেই এই আবেশ বা আচ্ছন্নদশা উপস্থিত হয় এবং তা হোতে বিকার উপস্থিত হয়।
কিন্তু প্রেম বলতে কেবল নর-নারীর সম্পর্কই নয় এবং শুধুমাত্র তাদের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ নয় ৷ প্রেম স্বাধীন এবং সর্বজনীন ৷ প্রেম-ই জীবনের প্রকৃতি – যা সহজ, সাবলীল ও অনবদ্য ৷ যেখানে রয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা ৷ আর ‘কাম’ হোলো আবেশ বা আচ্ছন্নতা। তা যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ চিত্তবিক্ষেপ এবং ইন্দ্রিয় বিকার ৷”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ – গুরুমহারাজ এই অংশে ‘কাম’ এবং ‘প্রেম’ বিষয়ে দু-চার কথায় সুন্দরভাবে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করে বলেছেন ৷ কাম-কে উনি বলেছেন পুরুষ-নারীর পরস্পর প্রবৃত্তির নির্বিচার ভোগমাত্র ৷ ‘কাম’ জৈবিক একটা প্রবৃত্তি – এটি এক ধরনের আচ্ছন্নতা বা আবেশ ৷ ‘কাম’ চিরস্থায়ী নয়, এটি চিত্তের একটা বিশেষ দশা বা বলা যায় আচ্ছন্নদশা ৷ নর-নারীর মধ্যে যখন জৈবিক আকর্ষণ বা শারীরিক সম্পর্কের সৃষ্টি হয় – তখনই তাদের মধ্যে এই আচ্ছন্নদশা উপস্থিত হয় – যার পরিণতিস্বরূপ আসে বিকার ৷ আর এই কামবিকারই মানবজীবনে বেশিরভাগ সমস্যার মূল ৷
অপরপক্ষে ‘প্রেম’ কিন্তু নর-নারীর শারীরিক সম্পর্কের নির্বিচার ভোগমাত্র নয় ৷ ‘প্রেম’ বিষয়ে বলতে গিয়ে গুরুমহারাজ বলেছেন, ‘প্রেম হোলো একান্ত একনিষ্ঠ এবং অখন্ড ৷ প্রেম স্বাভাবিক, সাবলীল, সহজ, নিবিড় এবং অনবদ্য ৷’ এছাড়া উনি আরো বলেছেন, ‘প্রেম স্বাধীন এবং সর্বজনীন ৷ প্রেম-ই জীবনের প্রকৃতি – যা সহজ, সাবলীল অনবদ্য – যেখানে রয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা।
প্রিয় পাঠক – এতো অল্প কথায় প্রেম বিষয়ে এতো সুন্দর ব্যাখ্যা আগে কোথাও শুনেছেন কি? এর থেকে এতো সংক্ষিপ্তভাবে প্রেমের মহিমা সংজ্ঞায়িত করার কৌশল গুরুজী ছাড়া আর কে-ই বা করতে পারে ! উনি বলেছেন__’প্রেম হোলো একনিষ্ঠ ও অখন্ড ৷’ তার মানে, প্রেমে একান্ত একাগ্রতা প্রয়োজন – যা সাধক ধ্যানের গভীরতায় অর্জন করতে পারে। আবার, এটি অখন্ড – তার মানে এখানে কোনো আত্যান্তিক বিচ্ছেদ নাই, শুধু প্রেমই রয়েছে ৷ এছাড়া গুরুজী বলেছেন যে ‘প্রেম’ স্বাভাবিক, সাবলীল, সহজ, নিবিড় ও অনবদ্য – যেখানে রয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা ৷’ তার মানে হোলো – মানুষ যখনই বিকারমুক্ত হয়, সহজ হয়, তার জীবন প্রকৃতির স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে , মানুষ যখন সমস্ত বন্ধন (মায়া, মোহ, রূপ-রসাদির বন্ধন ইত্যাদি) থেকে মুক্ত হয়, স্বাধীন হয় – তখনই সেই মানবের মধ্যে প্রকৃত অর্থে ‘প্রেম’ প্রকটিত হয়ে থাকে ৷৷