শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা (লিখিত এবং কথিত) এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো ৷ আমরা গুরুমহারাজের স্বহস্ত লিখিত দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘বাউলের মর্মকথা’ -র নবম পরিচ্ছেদের কথায় ছিলাম ৷ এই অংশে গুরুমহারাজ ‘কাম’ ও ‘প্রেম’ বিষয়ে সুন্দর এবং প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা করে সকলকে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন ৷ সুতরাং ওনার কথাগুলি একটু মনোযোগ সহকারে পড়লে বা শুনলেই আমরা বাউলগণের সাধনা, বাউলতত্ত্ব, বাউলমতে প্রেমতত্ত্ব বা কামতত্ত্ব সম্বন্ধে ধারণা করতে পারবো।
যাইহোক, এখন আমরা দেখবো গুরুমহারাজ এই বিষয়ে আরো কি কি বলেছেন ৷ গুরুমহারাজ এরপরে বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ ! মানবের ওই আবেশ বা আচ্ছন্নতা দূর হোলে মানব মুক্ত হয় এবং স্বাধীনতার বোধে বোধ (বোধ) হয়ে থাকে ৷ তখন সে পূর্ব আচরণের কথা চিন্তা করে বা স্মরণ করে হাসতে থাকে ৷
সুতরাং নর-নারীর সকাম প্রেম বা দেহজ আকর্ষণ একটি আচ্ছন্নদশা ছাড়া অন্য কিছুই নয়।
প্রাণী হিসাবে মানব স্রেষ্ঠ তথা উত্তম বলে ‘প্রেম’ তার সহজাত স্বভাবধর্ম। অনাদিকাল হোতে মানবের এই প্রেমই সমস্ত রকমের সংকটময় অবস্থা হোতে মানবকে এবং মানবসমাজকে বাঁচিয়ে রেখেছে ৷ মানবের এই সহজাত সহজধর্ম যদি ওই আবেশ বা আচ্ছন্নতা মুক্ত হয়, তাহলেই ওটা হয় – মাধুর্যমণ্ডিত চিরসুন্দর প্রেম ! আর তা জীবনকে করে তোলে অমৃতময় – মাধুর্যময় এবং ওইখানেই জীবনের সার্থকতা বা পূর্ণতা ৷৷”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! এই অংশে গুরুমহারাজ সাধকের সাধনার ক্রমোন্নতির কথা বলেছেন, যা একজন্মেও হোতে পারে আবার জন্ম-জন্মান্তরেও হোতে পারে ৷ উনি বলেছেন যে, সাধারণ মানবের মধ্যে থাকা জৈবিক প্রবৃত্তি বা ‘কাম’ যা মানবের অহংকার থেকেই সৃষ্টি – তা একটা আচ্ছন্নতা বা আবেশ, এটি স্বাভাবিক নয়। তাই ‘কাম’ -এর হাত থেকে মুক্ত হোতে পারে মানব সাধনার দ্বারা – সদ্গুরুর পদপ্রান্তে বসে তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করে – তা জীবনে যোজনা করার মাধ্যমে ৷ আর ‘কাম’-মুক্ত হোলে অর্থাৎ মানবের অর্ন্তজগতে থাকা প্রবৃত্তির তাড়না মুক্ত হোলে বা আচ্ছন্নতা-আবেশ কাটিয়ে উঠতে পারলেই মানবের মধ্যে ‘প্রেম’ প্রকটিত হয় ৷ তখন মানব সমস্ত রকম পরাধীনতা কাটিয়ে ওঠে এবং মুক্ত হয় – স্বাধীন হয় ৷
এখানে গুরুমহারাজ আরো একটা দারুন কথা বলেছেন, আর তা হোলো – ‘স্বাধীনতার বোধ হোলে সেই মানব (সাধক বা বলা চলে সাধনার দ্বারা সিদ্ধ সাধক) পূর্ব আচরণের কথা স্মরণ করে হাসতে থাকে।’ কি সাংঘাতিক কথা – দেখেছেন ! গুরুমহারাজ অন্যত্র একবার বলেছিলেন – ‘ সাধনা করতে করতে পূর্ব পূর্ব জীবনের স্মৃতি জাগরুক হয়ে গেলে বহু সাধক পাগল হয়ে যায় ! কারণ সে তখন দেখতে পায় যে, এই শরীরে যারা তার নারী শরীরের পরমাত্মীয়া (স্নেহভাজন বা গুরুজন)_ তারাও কোনো না কোনো পূর্বশরীরে ওই ব্যক্তির দ্বারাই তার আবেশ বা আচ্ছন্নতারূপ কাম-প্রবৃত্তির শিকার হয়েছিল ! এই সত্য, এই রহস্য চোখের সামনে উদ্ঘাটিত হয়ে যাওয়ায় – সাধক তার পুর্ব পূর্ব জন্মের অজ্ঞানতাহেতু অজ্ঞতাপূর্ণ কৃতকর্মের জন্য নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকে – অনেকেই সহ্য না করতে পেরে পাগল হয়ে যায় ! তবে পূর্ণজ্ঞানীরা হাসেন, কারণ তাঁরা এটা বোধ করেন যে, _’সবই তো কল্পনা, সবই অলীক !’ সমস্ত কল্পনামাত্রম্, আত্মা মুক্ত সনাতন: ৷’
যাইহোক, আমরা আবার গুরুমহারাজের কথা ধরে সামনের দিকে আগিয়ে যাই – দেখি এরপরে গুরুমহারাজ এই বিষয়ে আরো কি কি বলেছেন ৷ এরপরে উনি বলেছেন – ” মানবের প্রেম – বিশ্বাস এবং আস্থায় ভরপুর হোলে জীবন হবে নিরাপদ ৷ সমাজে নেমে আসবে কল্যাণ বা মঙ্গল যা সকলের চির আকাঙ্ক্ষিত। জীবন হবে সত্যম্-শিবম্-সুন্দরম্ ৷ যদি তা না হয়, তাহলে বিচ্ছেদ, বেদনা আর অমঙ্গলরূপ অসহজতাকে চোখের জলে ধৌত করে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে মানবকে ৷
একমাত্র গভীর প্রেমই মানবকে পরস্পর সংযত রাখে – সভ্যতার এটাই লক্ষণ। কারণ সভ্যতার পরিভাষা সংযম ৷৷”
প্রিয় পাঠক — গুরুমহারাজ বারবার একটা কথার উপর জোর দিতেন যে, “তোমরা নিজেরা হয়ে ওঠো ! সমাজের কে কি করছে, কে ভালো – কে মন্দ, কারটা খারাপ – কারটা গ্রহনীয় — এসব বিচাবিচারে যেয়ো না। যদি এইসব বিচার করতে বসো – তাহলে সহস্র জন্ম কেটে যাবে – কূলকিনারা পাবে না ! তাই তোমরা নিজেরা সৎ-সুন্দর -পবিত্র-সংযত হও, প্রেমিক হয়ে ওঠো। তাহলেই তোমরা তখন সমাজের ‘কালো’ দিকগুলোকে ‘আলো’-য় ভরাতে পারবে ৷ একটা ‘মানব’ হোলো বৃহৎ মানব সমাজের একটা Unit। এইভাবে একটা একটা করে অনেক unit যদি perfection লাভ করতে পারে_ তাহলেই মানবসমাজ সুন্দর হয়ে উঠবে ৷ সমাজে নেমে আসবে কল্যাণ বা মঙ্গল ৷”
তাই আমাদের প্রত্যেককেই (এক একটা unit -কে) সাধনার দ্বারা শুদ্ধ হয়ে উঠতেই হবে, তা না হয়ে উঠে__ সমাজকল্যাণ, জগৎকল্যাণ করতে গেলে সবই গোলমাল হয়ে যাবে ! যেমনটা আজ আমরা সমাজজীবনে প্রতিনিয়তই দেখছি, যার প্রতিফলন ঘটছে ধর্মজগতে, রাজনীতির জগতে অর্থাৎ বৃহত্তর অর্থে সেই মানবসমাজে ৷ আর এই অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়াটাই হোক বর্তমানে প্রতিটি unit-এর উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য৷
যাইহোক, এখন আমরা দেখবো গুরুমহারাজ এই বিষয়ে আরো কি কি বলেছেন ৷ গুরুমহারাজ এরপরে বলেছেন – ” প্রিয় আত্মন্ ! মানবের ওই আবেশ বা আচ্ছন্নতা দূর হোলে মানব মুক্ত হয় এবং স্বাধীনতার বোধে বোধ (বোধ) হয়ে থাকে ৷ তখন সে পূর্ব আচরণের কথা চিন্তা করে বা স্মরণ করে হাসতে থাকে ৷
সুতরাং নর-নারীর সকাম প্রেম বা দেহজ আকর্ষণ একটি আচ্ছন্নদশা ছাড়া অন্য কিছুই নয়।
প্রাণী হিসাবে মানব স্রেষ্ঠ তথা উত্তম বলে ‘প্রেম’ তার সহজাত স্বভাবধর্ম। অনাদিকাল হোতে মানবের এই প্রেমই সমস্ত রকমের সংকটময় অবস্থা হোতে মানবকে এবং মানবসমাজকে বাঁচিয়ে রেখেছে ৷ মানবের এই সহজাত সহজধর্ম যদি ওই আবেশ বা আচ্ছন্নতা মুক্ত হয়, তাহলেই ওটা হয় – মাধুর্যমণ্ডিত চিরসুন্দর প্রেম ! আর তা জীবনকে করে তোলে অমৃতময় – মাধুর্যময় এবং ওইখানেই জীবনের সার্থকতা বা পূর্ণতা ৷৷”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! এই অংশে গুরুমহারাজ সাধকের সাধনার ক্রমোন্নতির কথা বলেছেন, যা একজন্মেও হোতে পারে আবার জন্ম-জন্মান্তরেও হোতে পারে ৷ উনি বলেছেন যে, সাধারণ মানবের মধ্যে থাকা জৈবিক প্রবৃত্তি বা ‘কাম’ যা মানবের অহংকার থেকেই সৃষ্টি – তা একটা আচ্ছন্নতা বা আবেশ, এটি স্বাভাবিক নয়। তাই ‘কাম’ -এর হাত থেকে মুক্ত হোতে পারে মানব সাধনার দ্বারা – সদ্গুরুর পদপ্রান্তে বসে তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করে – তা জীবনে যোজনা করার মাধ্যমে ৷ আর ‘কাম’-মুক্ত হোলে অর্থাৎ মানবের অর্ন্তজগতে থাকা প্রবৃত্তির তাড়না মুক্ত হোলে বা আচ্ছন্নতা-আবেশ কাটিয়ে উঠতে পারলেই মানবের মধ্যে ‘প্রেম’ প্রকটিত হয় ৷ তখন মানব সমস্ত রকম পরাধীনতা কাটিয়ে ওঠে এবং মুক্ত হয় – স্বাধীন হয় ৷
এখানে গুরুমহারাজ আরো একটা দারুন কথা বলেছেন, আর তা হোলো – ‘স্বাধীনতার বোধ হোলে সেই মানব (সাধক বা বলা চলে সাধনার দ্বারা সিদ্ধ সাধক) পূর্ব আচরণের কথা স্মরণ করে হাসতে থাকে।’ কি সাংঘাতিক কথা – দেখেছেন ! গুরুমহারাজ অন্যত্র একবার বলেছিলেন – ‘ সাধনা করতে করতে পূর্ব পূর্ব জীবনের স্মৃতি জাগরুক হয়ে গেলে বহু সাধক পাগল হয়ে যায় ! কারণ সে তখন দেখতে পায় যে, এই শরীরে যারা তার নারী শরীরের পরমাত্মীয়া (স্নেহভাজন বা গুরুজন)_ তারাও কোনো না কোনো পূর্বশরীরে ওই ব্যক্তির দ্বারাই তার আবেশ বা আচ্ছন্নতারূপ কাম-প্রবৃত্তির শিকার হয়েছিল ! এই সত্য, এই রহস্য চোখের সামনে উদ্ঘাটিত হয়ে যাওয়ায় – সাধক তার পুর্ব পূর্ব জন্মের অজ্ঞানতাহেতু অজ্ঞতাপূর্ণ কৃতকর্মের জন্য নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকে – অনেকেই সহ্য না করতে পেরে পাগল হয়ে যায় ! তবে পূর্ণজ্ঞানীরা হাসেন, কারণ তাঁরা এটা বোধ করেন যে, _’সবই তো কল্পনা, সবই অলীক !’ সমস্ত কল্পনামাত্রম্, আত্মা মুক্ত সনাতন: ৷’
যাইহোক, আমরা আবার গুরুমহারাজের কথা ধরে সামনের দিকে আগিয়ে যাই – দেখি এরপরে গুরুমহারাজ এই বিষয়ে আরো কি কি বলেছেন ৷ এরপরে উনি বলেছেন – ” মানবের প্রেম – বিশ্বাস এবং আস্থায় ভরপুর হোলে জীবন হবে নিরাপদ ৷ সমাজে নেমে আসবে কল্যাণ বা মঙ্গল যা সকলের চির আকাঙ্ক্ষিত। জীবন হবে সত্যম্-শিবম্-সুন্দরম্ ৷ যদি তা না হয়, তাহলে বিচ্ছেদ, বেদনা আর অমঙ্গলরূপ অসহজতাকে চোখের জলে ধৌত করে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে মানবকে ৷
একমাত্র গভীর প্রেমই মানবকে পরস্পর সংযত রাখে – সভ্যতার এটাই লক্ষণ। কারণ সভ্যতার পরিভাষা সংযম ৷৷”
প্রিয় পাঠক — গুরুমহারাজ বারবার একটা কথার উপর জোর দিতেন যে, “তোমরা নিজেরা হয়ে ওঠো ! সমাজের কে কি করছে, কে ভালো – কে মন্দ, কারটা খারাপ – কারটা গ্রহনীয় — এসব বিচাবিচারে যেয়ো না। যদি এইসব বিচার করতে বসো – তাহলে সহস্র জন্ম কেটে যাবে – কূলকিনারা পাবে না ! তাই তোমরা নিজেরা সৎ-সুন্দর -পবিত্র-সংযত হও, প্রেমিক হয়ে ওঠো। তাহলেই তোমরা তখন সমাজের ‘কালো’ দিকগুলোকে ‘আলো’-য় ভরাতে পারবে ৷ একটা ‘মানব’ হোলো বৃহৎ মানব সমাজের একটা Unit। এইভাবে একটা একটা করে অনেক unit যদি perfection লাভ করতে পারে_ তাহলেই মানবসমাজ সুন্দর হয়ে উঠবে ৷ সমাজে নেমে আসবে কল্যাণ বা মঙ্গল ৷”
তাই আমাদের প্রত্যেককেই (এক একটা unit -কে) সাধনার দ্বারা শুদ্ধ হয়ে উঠতেই হবে, তা না হয়ে উঠে__ সমাজকল্যাণ, জগৎকল্যাণ করতে গেলে সবই গোলমাল হয়ে যাবে ! যেমনটা আজ আমরা সমাজজীবনে প্রতিনিয়তই দেখছি, যার প্রতিফলন ঘটছে ধর্মজগতে, রাজনীতির জগতে অর্থাৎ বৃহত্তর অর্থে সেই মানবসমাজে ৷ আর এই অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়াটাই হোক বর্তমানে প্রতিটি unit-এর উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য৷