শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের সুন্দরবন ভ্রমণের (সিঙ্গুর তত্ত্বমসি যোগাশ্রমের ব্যবস্থাপনায়) সময়কালীন ঘটনার কথা এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। আমরা ছিলাম যাত্রাপথের শুরুর দিনের কথায় ৷ আগেই বলা হয়েছিল যে, সেদিন লঞ্চ বিকালে ছাড়া হয়েছিল এবং ওখানকার নিয়ম অনুযায়ী কয়েক ঘন্টার মধ্যেই লঞ্চযাত্রা বন্ধ রাখতে হয়েছিল। ফলে, লঞ্চ নোঙর করে প্রথম রাতের প্রথম দিকটায় রাত্রির খাওয়া-দাওয়ার তোড়জোড় করা এবং গুরুমহারাজের সৎসঙ্গ আস্বাদনেই কাটবে–এটাই সকলে ভেবেছিল ৷ কিন্তু প্রকৃতিরানীর ইচ্ছা ছিল অন্যরকম!
পুরো ঘটনাটা বিস্তারিত বলা যাক্। যাত্রার দিনটি সম্ভবতঃ ছিল পূর্ণিমা বা তার ঠিক কাছাকাছি (এক-আধদিন এদিক বা ওদিক) ! মেঘমুক্ত রাত্রির আকাশে পূর্ণচন্দ্র আর চারিদিকে জল ও জঙ্গল, জলের মাঝে লঞ্চের মাথায় অর্থাৎ ‘ডেকে’ চন্দ্র(চাঁদ) এবং সকল গ্রহ-নক্ষত্রসহ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর স্বয়ং বিরাজমান ! ফলে সেখানে চাঁদের শোভা, জল-জঙ্গলের শোভা ম্লান হয়ে যায় – শোভা তো শুধু সেই ব্রহ্মাণ্ডের রাজাধিরাজ পরমেশ্বর পরমানন্দের ! ভক্তগণ আপ্লুত হয়ে তাঁর সেই রূপ-রস-সুধা পান করছিল ৷ আবার তার সাথে টুকরো টুকরো ঝরে পড়ছিল পরমানন্দ বচনামৃত ! ঐ সফরের সহযাত্রীরা (ভক্তরা) কতটা ভাগ্যবান ছিল — বলুন তো !!
কিন্তু ভক্তদের ভাগ্য কতোটা ভালো – তা আমরা এখন নিশ্চিন্তে ঘরে বসে (প্রায় তিরিশ বছর বা আরো বেশি বছর পরে) বিচার করছি এবং অবশ্যই কল্পনায় ভগবান পরমানন্দের সঙ্গী হয়ে তাঁর সঙ্গসুধা অনুভব করার চেষ্টা করছি ৷ কিন্তু সেইসময় ওই দুটি লঞ্চে যে আরোহীরা (ভক্তরা) ছিল – তাদের মনোজগতে কিন্তু সদাসর্বদাই ভগবান-ভাবটি (গুরুমহারাজের প্রতি) ক্রিয়াশীল ছিল না। অবশ্য এটা থাকা সম্ভবও নয় ! কারণ ‘যোগমায়া’ কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করলেও ‘মহামায়া’-র মায়াশক্তি, মোহিনীশক্তি সবসময় জীবসকলকে বাইরের দিকে বিকর্ষণ করে থাকে – এটাই মহাজাগতিক নিয়ম।
সে যাইহোক, এরূপ কথার অবতারণা কেন করা হোলো – সেটাই বলি ! আমরা প্রায় সকলেই জানি – এই জগতে সুখের পরেই আসে দুঃখ ৷ দেখবেন__ সিনেমা-থিয়েটারে (যেখানে মানুষের সমাজজীবনের ঘটনারই প্রতিফলন দেখানো হয়) যখনই কোনো আনন্দদায়ক অনুষ্ঠান হয় অর্থাৎ নায়ক-নায়িকাসহ সকলে মিলে খুব আনন্দ করছে, কোনো দৃশ্যে যখনই খুশি-মজা, নাচ-গান চলছে – ঠিক তখনই দেখবেন, ঠিক এরপরেই ভিলেনের আগমন ঘটে থাকে ! আর শুরু হয়ে যায় – মারপিট, গুলি-গোলা, অত্যাচার-অবিচার এইসব ! ওই দিনকার যাত্রাপথেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি !
লঞ্চ নোঙর করার পর সাধারণত দুটি লঞ্চকেই জুড়ে দেওয়া হোতো – যাতে সকলেই এই লঞ্চ থেকে ওই লঞ্চে যাতায়াত করতে পারে, বিশেষতঃ খাওয়ার সময় যাতে সকলে এক জায়গায় হোতে পারে – সেইরকমটাই ব্যবস্থা ছিল ৷ সেই রাত্রিতে খাওয়া দাওয়ার পর দু-চারজন ছাড়া (যারা একটু বিশ্রামকাতর বা নিদ্রাকাতর) বাকি সকলেই লঞ্চের ডেকে বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য্যসুধা এবং প্রকৃতির স্বামী (স্বামী পরমানন্দ)-র সঙ্গসুধা পান করছিল ৷ বিশ্রাম তো সবদিনই রয়েছে _ সেদিনের রাতটা ছিল ভক্তদের কাছে special একটা রাত! কিন্তু রাত্রি এগারোটা বা তার আশপাশের সময়ে আকাশের পূর্ণচন্দ্র কোথায় হারিয়ে গেলো – কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেলো – শুরু হয়ে গেলো ভয়ংকর ঝড়—‘সাইক্লোন’ !
লঞ্চ দুটির সে কি টাল-মাটাল অবস্থা ! আর লঞ্চের ভিতরের যাত্রীদের অবস্থা ছিল আরো করুণ ! যাত্রাপথের প্রথম দিনেই এই বিপত্তি ! সাধারণ ভক্তরা তো সংসারী মানুষ – ফলে তাদের তো আর ষোলআনা বিশ্বাস-ভক্তি কখনোই থাকা সম্ভব নয় ! তাই তাদের মধ্যে এই বিশ্বাস – আবার এই সংশয় ! বিশেষতঃ যারা সন্তানাদি নিয়ে সপরিবারে ঐ tour-এ গিয়েছিল – তাদের অন্ধ সন্তান-প্রীতি বিপদের সময় সংশয় ডেকে নিয়ে আসবেই ! লঞ্চগুলির অবস্থা যখন খুবই খারাপ – তখন বিপদের ওপর বিপদ দেখা দিল ! লঞ্চের হেড সারেং সুভাষ ওই ভয়ানক ঝড়ের হাত থেকে লঞ্চকে কিভাবে রক্ষা করবে – তা বুঝতে পারছিল না। ফলে সে তার অপারগতার কথা প্রকাশ করে দিয়েছিল ৷ আর এতেই যাত্রীদের মধ্যে অতোটা ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু যেখানে বিপদভঞ্জন মধুসূদন স্বয়ং উপস্থিত – সেখানে আবার বিপদ কোথা দিয়ে আসবে ? যদিও ওই দুটি লঞ্চে উপস্থিত young-brigade (ব্রহ্মচারী, সন্ন্যাসীসহ)- তারা ওই ঘটনায় একদমই ভয় পায়নি ! বরং তারা পুরো ঝড়টাকে ভালোমতোই enjoy করছিল ! তারা বোধহয় ভাবছিল যে, যদি লঞ্চডুবি হয় – তাহলে তো ভালোই হবে – গুরুমহারাজের সাথে একসাথে পাতালপ্রবেশ হবে, আর সেখানেই (অর্থাৎ পাতালেই) গুরুমহারাজ রাজা আর বাকিরা তাঁর পাত্র-মিত্র-সভাসদ হয়ে কাটিয়ে দিতে পারবে ৷ তৎকালীন young brigade-এর মধ্যে দু-একজন (এখন তারা প্রায় বৃদ্ধ)-এর সাথে আমার এখন কথা হচ্ছিলো। এদের মধ্যে পাপু, পল্লব (পেলু), রীতাদি প্রমূখরা বলছিল যে, ওরা ওই প্রথম রাত্রির ঝড়টাকে খুবই enjoy করেছিল ৷
সেদিন Head সারেং যখন নিজের বিদ্যে-বুদ্ধির প্রতি আস্থা হারিয়েছিল – তখন গুরুমহারাজ তাকে নানান পরামর্শ দিয়ে সেই বিপদ থেকে লঞ্চটিকে এবং বাকি সকলকে রক্ষা করেছিলেন ৷ ঝড় একঘন্টা মতো থাকার পর থেমে গেছিলো ৷ আবার আকাশে ঝলমলে চাঁদ উঠেছিল ৷ অনেকেই আরো কিছুক্ষণ সেই চন্দ্রালোকিত রাত্রির শোভা আস্বাদন করেছিল আর বাকিরা চলে গিয়েছিল নিদ্রাদেবীর কোলে আশ্রয় নিতে। প্রথম রাত্রিতেই ভয়ানক বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে সকলেই ভেবে নিয়েছিল যে ‘শ্রেয়াংশে বহু বিঘ্নানি’ – প্রবাদ তো রয়েছেই, সুতরাং যা বিপদ ছিল – তার অবসান হয়ে গেল, এবার বাকি যাত্রা খুবই সুশৃংখলভাবে কাটবে ! কিন্তু তাই কি হয় – এর মধ্যে (বাকি চারদিনে) যে কত কান্ড ঘটে গিয়েছিল, তার বর্ণনা আমরা এরপর থেকে একে একে করতে থাকবো ৷
পুরো ঘটনাটা বিস্তারিত বলা যাক্। যাত্রার দিনটি সম্ভবতঃ ছিল পূর্ণিমা বা তার ঠিক কাছাকাছি (এক-আধদিন এদিক বা ওদিক) ! মেঘমুক্ত রাত্রির আকাশে পূর্ণচন্দ্র আর চারিদিকে জল ও জঙ্গল, জলের মাঝে লঞ্চের মাথায় অর্থাৎ ‘ডেকে’ চন্দ্র(চাঁদ) এবং সকল গ্রহ-নক্ষত্রসহ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর স্বয়ং বিরাজমান ! ফলে সেখানে চাঁদের শোভা, জল-জঙ্গলের শোভা ম্লান হয়ে যায় – শোভা তো শুধু সেই ব্রহ্মাণ্ডের রাজাধিরাজ পরমেশ্বর পরমানন্দের ! ভক্তগণ আপ্লুত হয়ে তাঁর সেই রূপ-রস-সুধা পান করছিল ৷ আবার তার সাথে টুকরো টুকরো ঝরে পড়ছিল পরমানন্দ বচনামৃত ! ঐ সফরের সহযাত্রীরা (ভক্তরা) কতটা ভাগ্যবান ছিল — বলুন তো !!
কিন্তু ভক্তদের ভাগ্য কতোটা ভালো – তা আমরা এখন নিশ্চিন্তে ঘরে বসে (প্রায় তিরিশ বছর বা আরো বেশি বছর পরে) বিচার করছি এবং অবশ্যই কল্পনায় ভগবান পরমানন্দের সঙ্গী হয়ে তাঁর সঙ্গসুধা অনুভব করার চেষ্টা করছি ৷ কিন্তু সেইসময় ওই দুটি লঞ্চে যে আরোহীরা (ভক্তরা) ছিল – তাদের মনোজগতে কিন্তু সদাসর্বদাই ভগবান-ভাবটি (গুরুমহারাজের প্রতি) ক্রিয়াশীল ছিল না। অবশ্য এটা থাকা সম্ভবও নয় ! কারণ ‘যোগমায়া’ কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করলেও ‘মহামায়া’-র মায়াশক্তি, মোহিনীশক্তি সবসময় জীবসকলকে বাইরের দিকে বিকর্ষণ করে থাকে – এটাই মহাজাগতিক নিয়ম।
সে যাইহোক, এরূপ কথার অবতারণা কেন করা হোলো – সেটাই বলি ! আমরা প্রায় সকলেই জানি – এই জগতে সুখের পরেই আসে দুঃখ ৷ দেখবেন__ সিনেমা-থিয়েটারে (যেখানে মানুষের সমাজজীবনের ঘটনারই প্রতিফলন দেখানো হয়) যখনই কোনো আনন্দদায়ক অনুষ্ঠান হয় অর্থাৎ নায়ক-নায়িকাসহ সকলে মিলে খুব আনন্দ করছে, কোনো দৃশ্যে যখনই খুশি-মজা, নাচ-গান চলছে – ঠিক তখনই দেখবেন, ঠিক এরপরেই ভিলেনের আগমন ঘটে থাকে ! আর শুরু হয়ে যায় – মারপিট, গুলি-গোলা, অত্যাচার-অবিচার এইসব ! ওই দিনকার যাত্রাপথেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি !
লঞ্চ নোঙর করার পর সাধারণত দুটি লঞ্চকেই জুড়ে দেওয়া হোতো – যাতে সকলেই এই লঞ্চ থেকে ওই লঞ্চে যাতায়াত করতে পারে, বিশেষতঃ খাওয়ার সময় যাতে সকলে এক জায়গায় হোতে পারে – সেইরকমটাই ব্যবস্থা ছিল ৷ সেই রাত্রিতে খাওয়া দাওয়ার পর দু-চারজন ছাড়া (যারা একটু বিশ্রামকাতর বা নিদ্রাকাতর) বাকি সকলেই লঞ্চের ডেকে বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য্যসুধা এবং প্রকৃতির স্বামী (স্বামী পরমানন্দ)-র সঙ্গসুধা পান করছিল ৷ বিশ্রাম তো সবদিনই রয়েছে _ সেদিনের রাতটা ছিল ভক্তদের কাছে special একটা রাত! কিন্তু রাত্রি এগারোটা বা তার আশপাশের সময়ে আকাশের পূর্ণচন্দ্র কোথায় হারিয়ে গেলো – কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেলো – শুরু হয়ে গেলো ভয়ংকর ঝড়—‘সাইক্লোন’ !
লঞ্চ দুটির সে কি টাল-মাটাল অবস্থা ! আর লঞ্চের ভিতরের যাত্রীদের অবস্থা ছিল আরো করুণ ! যাত্রাপথের প্রথম দিনেই এই বিপত্তি ! সাধারণ ভক্তরা তো সংসারী মানুষ – ফলে তাদের তো আর ষোলআনা বিশ্বাস-ভক্তি কখনোই থাকা সম্ভব নয় ! তাই তাদের মধ্যে এই বিশ্বাস – আবার এই সংশয় ! বিশেষতঃ যারা সন্তানাদি নিয়ে সপরিবারে ঐ tour-এ গিয়েছিল – তাদের অন্ধ সন্তান-প্রীতি বিপদের সময় সংশয় ডেকে নিয়ে আসবেই ! লঞ্চগুলির অবস্থা যখন খুবই খারাপ – তখন বিপদের ওপর বিপদ দেখা দিল ! লঞ্চের হেড সারেং সুভাষ ওই ভয়ানক ঝড়ের হাত থেকে লঞ্চকে কিভাবে রক্ষা করবে – তা বুঝতে পারছিল না। ফলে সে তার অপারগতার কথা প্রকাশ করে দিয়েছিল ৷ আর এতেই যাত্রীদের মধ্যে অতোটা ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু যেখানে বিপদভঞ্জন মধুসূদন স্বয়ং উপস্থিত – সেখানে আবার বিপদ কোথা দিয়ে আসবে ? যদিও ওই দুটি লঞ্চে উপস্থিত young-brigade (ব্রহ্মচারী, সন্ন্যাসীসহ)- তারা ওই ঘটনায় একদমই ভয় পায়নি ! বরং তারা পুরো ঝড়টাকে ভালোমতোই enjoy করছিল ! তারা বোধহয় ভাবছিল যে, যদি লঞ্চডুবি হয় – তাহলে তো ভালোই হবে – গুরুমহারাজের সাথে একসাথে পাতালপ্রবেশ হবে, আর সেখানেই (অর্থাৎ পাতালেই) গুরুমহারাজ রাজা আর বাকিরা তাঁর পাত্র-মিত্র-সভাসদ হয়ে কাটিয়ে দিতে পারবে ৷ তৎকালীন young brigade-এর মধ্যে দু-একজন (এখন তারা প্রায় বৃদ্ধ)-এর সাথে আমার এখন কথা হচ্ছিলো। এদের মধ্যে পাপু, পল্লব (পেলু), রীতাদি প্রমূখরা বলছিল যে, ওরা ওই প্রথম রাত্রির ঝড়টাকে খুবই enjoy করেছিল ৷
সেদিন Head সারেং যখন নিজের বিদ্যে-বুদ্ধির প্রতি আস্থা হারিয়েছিল – তখন গুরুমহারাজ তাকে নানান পরামর্শ দিয়ে সেই বিপদ থেকে লঞ্চটিকে এবং বাকি সকলকে রক্ষা করেছিলেন ৷ ঝড় একঘন্টা মতো থাকার পর থেমে গেছিলো ৷ আবার আকাশে ঝলমলে চাঁদ উঠেছিল ৷ অনেকেই আরো কিছুক্ষণ সেই চন্দ্রালোকিত রাত্রির শোভা আস্বাদন করেছিল আর বাকিরা চলে গিয়েছিল নিদ্রাদেবীর কোলে আশ্রয় নিতে। প্রথম রাত্রিতেই ভয়ানক বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে সকলেই ভেবে নিয়েছিল যে ‘শ্রেয়াংশে বহু বিঘ্নানি’ – প্রবাদ তো রয়েছেই, সুতরাং যা বিপদ ছিল – তার অবসান হয়ে গেল, এবার বাকি যাত্রা খুবই সুশৃংখলভাবে কাটবে ! কিন্তু তাই কি হয় – এর মধ্যে (বাকি চারদিনে) যে কত কান্ড ঘটে গিয়েছিল, তার বর্ণনা আমরা এরপর থেকে একে একে করতে থাকবো ৷