শ্রীশ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দকে নিয়ে সিঙ্গুরের ভক্তদের সুন্দরবন ভ্রমণকাহিনীর কথা এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো ৷ আমরা আগেই আলোচনা করেছিলাম যে, প্রথম রাত্রেই ওনারা সকলেই ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন ৷ ভালো করে বলতে গেলে বলতে হয় যে – লঞ্চ দুটি ঘূর্ণিঝড়ের মুখে পড়েছিল ৷ সে এক ভয়ঙ্কর ঝড় ! সারেং দুজন বুঝতেই পারছিল না – কিভাবে এতগুলো যাত্রী নিয়ে লঞ্চকে রক্ষা করবে ! সেইসময় বিপদের তারণ করতে স্বয়ং বিপদতারণ পরমানন্দ বিধান দিলেন – ” ঝড়ের গতিপথের বিপরীতে লঞ্চ দুটির মুখ ঘুরিয়ে দিয়ে full speed-এ ইঞ্জিন চালু করে দিতে হবে ৷” অনন্যোপায় সারেং-রা গুরুমহারাজের বিধান মেনে তাই করেছিল !
কিন্তু যাত্রীগণ ওই ভয়ঙ্কর ঝড়ের তাণ্ডব দেখে সত্যি সত্যিই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল ৷ তাছাড়া প্রচন্ড speed-এ ঝড়ের গতির বিপরীতে ইঞ্জিনগুলি চালু করায় – লঞ্চের ভিতরে অর্থাৎ কেবিনে ধোঁয়ায় ভর্তি হয়ে গেছিল – বয়স্কদের বা বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করেছিল ৷ কিন্তু এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝড়ের গতিবেগ কমতে থাকে এবং পরে একেবারে শান্ত হয়ে যায়। সারেং-দের কাছে ঝড়ের মোকাবিলা করার ওই পদ্ধতিটি ছিল একেবারে নতুন – ফলে তারা ভেবেছিল গুরুজীর বোধহয় জাহাজ বা লঞ্চ ইত্যাদি চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে ! গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” হ্যাঁ ! অভিজ্ঞতা রয়েছে, কিন্তু তা পূর্ব-পূর্ব বহুজন্মের আগের অভিজ্ঞতা ৷”
এবার আমরা ওনাদের ভ্রমণের দিনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথায় চলে যাবো ৷ তবে তার আগে আমরা জেনে নেবো _ওনারা সুন্দরবন ভ্রমণকালে কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন – সেইসব কথা ! ১৯৯২ সালের ভ্রমণ কাহিনী, তার মানে হোচ্ছে প্রায় ৩০/৩১ বছর আগেকার কথা ! যারা সেইসময় গুরুমহারাজের সাথী হয়েছিলেন – তাদের অনেকেই এখন আর এই ইহজগতেই নাই ৷ যারা আছে – তাদের তো আর পরপর যাত্রাপথগুলির কথা note করা ছিল না – ফলে কাটা-কাটা, ছেঁড়া-ছেঁড়া কথাই তারা বলতে পারছে – স্মৃতির সোপান বেয়ে বেয়ে উজান পথে হেঁটে সেই জায়গায় পৌঁছে যাওয়া সত্যিই মুশকিল ! এটা একমাত্র ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ বা আত্মজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব – সাধারণ মানুষের পক্ষে নয় ৷
তবু আমরা যেটুকু জানতে পেরেছি তা হোলো আর পাঁচটা সাধারণ পর্যটক যেভাবে যান বা যে স্থানগুলি পরিদর্শন করেন – গুরুমহারাজ ও তাঁর সঙ্গীরা ঠিক সেই প্রচলিত পথে হাঁটেন নি ৷ আয়োজক কর্মকর্তারা,যাত্রিগণকে নিয়ে গুরুমহারাজের নির্দেশ এবং সারেং-কে অনুসরণ করেই ঐ বিপদসংকুল পথে চার দিন – পাঁচ রাত কাটিয়েছিল ৷ যাইহোক, যেটুকু জানা গেল তা হোচ্ছে – ওনারা ভাগবতপুর (ভগবতীপুর) কুমির প্রকল্প দেখেছিলেন, সজনেখালি পাখিরালয় দেখেছিলেন, নেতাধোপানী(নেতিধোপানী) দ্বীপে গেছিলেন ৷ যাত্রাপথে আরো দু-চার জায়গায় (ভাঙাদুনির National forest_ তার মধ্যে একটি) ওয়াচ টাওয়ারে উঠে wild-life পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেছিলেন ৷ ওনারা গিয়েছিলেন জম্বুদ্বীপে – সর্বোপরি ওনারা হলদিবাড়িতে নেমেছিলেন, সেখানে জেটিঘাট থেকে খাঁচার মতো তার দিয়ে ঘেরা সংরক্ষিত পথ ধরে ধরে ওয়াচ টাওয়ারে উঠে জঙ্গলের শোভা এবং বন্যপ্রাণী দেখার চেষ্টা করেছিলেন।
আর একটা কথা এখানে না বললেই নয় – সেটা হোলো ওনারা Lower হলদিবাড়ির অনেকটা ভিতরে (বঙ্গোপসাগরে) পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন ৷ সাধারণতঃ ওইসব স্থানে পর্যটকরা যেতে পারে না, কারণ Coast guard রা আটকে দেয় ৷ কিন্তু গুরুমহারাজ লঞ্চে থাকায় বা অন্য যেকোনো কারণে_ কোনো রক্ষীবাহিনী ওনাদের যাত্রায় বাধা দেয়নি । তাই ওনারা অতোটা গভীর পর্যন্ত চলে যেতে পেরেছিলেন ৷৷
ওনাদের সুন্দরবন ভ্রমণকাহিনীর কথা বলতে গেলে আরো যেটা উল্লেখ করতে হয়, সেটা হোলো – যাত্রার দ্বিতীয় কি তৃতীয় দিনে রমেশবাবুর দুটো লঞ্চের ফাঁকে পড়ে যাবার ঘটনা৷ রমেশবাবু অর্থাৎ
হাওড়ার প্রখ্যাত ব্যবসায়ী (হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজের কাছে ওনাদের বাড়ি ছিল) রমেশচন্দ্র দত্তের কথা বলা হোচ্ছে, যার দাদার নাম ছিল নরেশচন্দ্র দত্ত। ওনারা হাওড়া অঞ্চলের খুবই পুরোনো ব্যবসায়ী ৷ Originally ওনাদের বাড়ি ছিল নদিয়া জেলার রানাঘাটের কাছে হবিবপুরে ৷ যে ক’জন ব্যক্তিকে গুরু মহারাজ ‘বাবু’ সম্বোধন করতেন – তাঁদের মধ্যে রমেশবাবু অন্যতম ৷ শুধু ধনী ব্যবসায়ী বললেই ওনার পরিচয় দেওয়া শেষ হয় না – উনি ছিলেন ভীষণ আমুদে ও মজাদার এবং খুবই সহজ-সরল ও মিশুকে মানুষ। বয়স, সম্মান বা মর্যাদা অথবা অর্থকৌলিন্য – এগুলির কোনোটাতেই উনি আটকে থাকতেন না, সর্বোপরি রমেশবাবুর এবং ওনার দাদারও যে মহান গুণটি ছিল, তা হোলো – আশ্রমের জন্য অকাতরে ও নিঃশর্তে দান। গুরুজীর কাছেই শুনেছিলাম, “রমেশবাবুর ডান হাত দিলে বাম হাত জানতে পারে না ৷”
সেই হেন রমেনবাবু দুটো লঞ্চের ফাঁক গলে একেবারে নিচে জলে কি করে পড়ে গেলেন _তা প্রথমটায় কেউ বুঝতেই পারে নি– শুধুমাত্র একজন ছাড়া _আর তিনি হোলেন পরমপ্রিয় গুরুদেব করুনাময় ভগবান পরমেশ্বর পরমানন্দ।।
[বাকি অংশ পরের দিন]