শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ (স্বামী পরমানন্দ)-কে নিয়ে সিঙ্গুর আশ্রমের ভক্তগণ কর্তৃক আয়োজিত সুন্দরবন ভ্রমণের কথা এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। আমরা গত আলোচনায় হাওড়ার রমেশবাবুর দুটি লঞ্চের ফাঁকে পড়ে যাবার ঘটনায় ছিলাম ৷ আসলে সেইসময় আমরা যারা নিয়মিত বনগ্রাম আশ্রমে যেতাম – তারা প্রায় সকলেই রমেশবাবুর ওই পড়ে যাওয়া নিয়ে এতো কথা – এতো হাসাহাসি শুনেছিলাম যে, এই কথাটা বিশেষভাবে বলতেই হোতো।
আগেই বলা হয়েছিল খাওয়া-দাওয়া করার সময় দুটি লঞ্চকে পাশাপাশি বেঁধে দেওয়া হোতো – যাতে সকলেই এক লঞ্চ থেকে অন্য লঞ্চে যাতায়াত করতে পারে ৷ রমেশবাবুও কোনো প্রয়োজনে অথবা অপ্রয়োজনেই (কেননা রমেশবাবু বয়সে তখন হয়তো প্রায় ৬০-এর কাছাকাছি ছিলেন এবং একটু ভারিক্কি শরীরও ছিল, কিন্তু তাঁর অন্তঃকরণ ছিল খুবই বড় এবং তিনি স্বভাবে ছিলেন তরুণ) উনি তৎকালীন কর্মকর্তাগণ অর্থাৎ পাপু, বাবু, রঞ্জন প্রমুখদের সাথে এ-লঞ্চ ও-লাঞ্চ করতে ভালোবাসছিলেন ৷ এদিকে ওনার চোখের দৃষ্টিশক্তিরও একটু problem ছিল, সেটা বয়সজনিত কারণে আরও প্রকট হয়েছিল ৷ আমরা দেখতাম উনি খুব মোটা লেন্সের চশমা ব্যবহার করতেন। ফলে ওনার চোখ দুটো খুব বড় বড় দেখাতো ৷
যাইহোক, যেকোনোভাবেই হোক না কেন – রমেশবাবু দুটো লঞ্চের ফাঁকে পড়ে গেছিলেন। কি বিপদ বলুন তো – সবাই যখন ফুরফুরে মেজাজে গুরুমহারাজের সঙ্গ-সুধা পান করছেন, সুন্দরবনের অরণ্যশোভা দর্শনে মত্ত, জলপথে ভ্রমণের আনন্দে মশগুল – সেইসময় হঠাৎ চিৎকার, চেঁচামেচি – ” রমেশবাবু জলে পড়ে গেছে !” কেউ বলছে – ‘রমেশবাবু জলের তলায় তলিয়ে গেছে — কেউ বলছে – রমেশবাবু ইচ্ছা করেই লাফ দিয়েছে।’ কিন্তু আসল ঘটনাটা কি ঘটেছিল, আর তারপরেই বা কি ঘটলো – এই প্রসঙ্গে গুরুমহারাজ কি বলেছিলেন – এখন সেইসব কথাতেই আসছি !
আসলে রমেশদা এক লঞ্চ থেকে অন্য লঞ্চে যাবার সময় একটু অসাবধানতাবশতঃ বা দৃষ্টিশক্তির অসুবিধা ঘটায় অথবা ওই ভারি চেহারার কারণে টাল সামলাতে না পেরে – দুটো লঞ্চের ফাঁকে পড়ে যান ৷ এটা ঠিকই যে ঢেউয়ের ধাক্কায় ধাক্কায় সেই মুহূর্তে লঞ্চ দুটিও পরস্পরের থেকে একটু বেশি-ই ফাঁক হয়ে গেছিলো। উনি সত্যি সত্যিই একেবারে জলে পড়ে গিয়েছিলেন – ওইসব জায়গায় (খুব সম্ভবতঃ মাতলা নদীতেই ঘটনাটা ঘটেছিল) স্রোতের টানও থাকে আবার নদীও খুবই গভীর ৷ ফলে রমেশবাবুর ঐদিন মৃত্যু অবধারিত ছিল ৷ কিন্তু ‘শেষ কথা’ বলে তো কিছু হয় না, সব কথার পরেও কিছু কথা থাকে ৷ সুন্দরবন tour-এ ওই যে পরপর প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলি ঘটেছিল এবং রমেশবাবুর নির্ঘাত মৃত্যুর মুখ থেকে রেহাই পাওয়া – এগুলির ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন গুরুমহারাজ। উনি পরবর্তীতে বলেছিলেন – “এই tour programme-এ যে সমস্ত ভক্তেরা গিয়েছিল, তাদের অনেকেরই ‘মৃত্যুযোগ’ চলছিল, – তাই সকলকে একত্রিত করে সেই ‘যোগ’-টা কাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷”
তাছাড়া গুরুমহারাজ আরো বলেছিলেন – ” রমেশবাবু যতক্ষন ভয়ার্ত হয়ে গুরুকেও ভুলে গিয়েছিল অর্থাৎ নির্ঘাৎ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে আর পাঁচজনের মতোই ঘাবড়ে গিয়েছিল – ততক্ষণ কোনো বাঁচার উপায় পায়নি, কিন্তু যে মুহূর্তে ‘গুরু’-কে স্মরণ করলো – অমনি রমেশবাবু দেখলো যে, সে লঞ্চের গায়ে ঝুলতে থাকা রশিতে আটকে গেছে ৷” শরীরের বেশিরভাগ অংশ জলের মধ্যে কিন্তু দুটো বাহুর মধ্যে আটকে যাওয়া রশি__ রমেশবাবুর গলা ও মাথাকে জলের উপর ধরে রেখেছিল ৷ এর ফলে রমেশদা ডুবেও যাননি বা স্রোতে ভেসেও যান নি ৷ মুহূর্তের মধ্যেই অবশ্য ওখানে লোকজন জুটে গেছিল এবং অনেকে মিলে চেষ্টা করে ভয়কাতর কিন্তু অক্ষত রমেশবাবুকে জল থেকে তুলে এনেছিল ৷
রমেশ বাবুর কথা সেরে __এবার অন্য প্রসঙ্গে যাওয়া যাক্। প্রথম দিনের ঝড়ের কথা আগেই বলা হয়েছিল ৷ ঐদিন গুরুমহারাজ সমস্ত ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন – সবাই যেন লঞ্চের ভিতরে থাকে (অর্থাৎ ডেকে যেন কেউ কোনো কারণেই না ওঠে) এবং সকলে যেন ঐ সময়ে ইষ্টমন্ত্র জপ করে ৷ দুটো লঞ্চকে একসাথে বেঁধে ঝড়ের অভিমুখে full speed-এ চালাতে বলেছিলেন গুরুজী ৷ সারেংরা তাই করেছিল ৷ আর এতেই যাত্রীরা সকলে লঞ্চডুবির হাত থেকে রেহাই পেয়েছিল ৷ যদিও ওই বিপদের সময়ে বিবেকবোধ হারিয়ে ফেলে অনেকেই গুরু মহারাজকেও দোষারোপ করতে শুরু করেছিল !
সে যাই হোক – ওই ঘটনার পরেই গুরুমহারাজ ভক্তদেরকে উদ্দেশ্য করে যে কথাটা বলেছিলেন_তা হোলো এইসব বিপদ-আপদ, দৈব-দুর্বিপাকের মধ্যে দিয়ে ঐদিন ভক্তদের অনেকেরই মৃত্যুযোগ কাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
[পরেরদিন ওনাদের ফেরার পথে টর্নেডো ঝড়ের বর্ণনা !]
আগেই বলা হয়েছিল খাওয়া-দাওয়া করার সময় দুটি লঞ্চকে পাশাপাশি বেঁধে দেওয়া হোতো – যাতে সকলেই এক লঞ্চ থেকে অন্য লঞ্চে যাতায়াত করতে পারে ৷ রমেশবাবুও কোনো প্রয়োজনে অথবা অপ্রয়োজনেই (কেননা রমেশবাবু বয়সে তখন হয়তো প্রায় ৬০-এর কাছাকাছি ছিলেন এবং একটু ভারিক্কি শরীরও ছিল, কিন্তু তাঁর অন্তঃকরণ ছিল খুবই বড় এবং তিনি স্বভাবে ছিলেন তরুণ) উনি তৎকালীন কর্মকর্তাগণ অর্থাৎ পাপু, বাবু, রঞ্জন প্রমুখদের সাথে এ-লঞ্চ ও-লাঞ্চ করতে ভালোবাসছিলেন ৷ এদিকে ওনার চোখের দৃষ্টিশক্তিরও একটু problem ছিল, সেটা বয়সজনিত কারণে আরও প্রকট হয়েছিল ৷ আমরা দেখতাম উনি খুব মোটা লেন্সের চশমা ব্যবহার করতেন। ফলে ওনার চোখ দুটো খুব বড় বড় দেখাতো ৷
যাইহোক, যেকোনোভাবেই হোক না কেন – রমেশবাবু দুটো লঞ্চের ফাঁকে পড়ে গেছিলেন। কি বিপদ বলুন তো – সবাই যখন ফুরফুরে মেজাজে গুরুমহারাজের সঙ্গ-সুধা পান করছেন, সুন্দরবনের অরণ্যশোভা দর্শনে মত্ত, জলপথে ভ্রমণের আনন্দে মশগুল – সেইসময় হঠাৎ চিৎকার, চেঁচামেচি – ” রমেশবাবু জলে পড়ে গেছে !” কেউ বলছে – ‘রমেশবাবু জলের তলায় তলিয়ে গেছে — কেউ বলছে – রমেশবাবু ইচ্ছা করেই লাফ দিয়েছে।’ কিন্তু আসল ঘটনাটা কি ঘটেছিল, আর তারপরেই বা কি ঘটলো – এই প্রসঙ্গে গুরুমহারাজ কি বলেছিলেন – এখন সেইসব কথাতেই আসছি !
আসলে রমেশদা এক লঞ্চ থেকে অন্য লঞ্চে যাবার সময় একটু অসাবধানতাবশতঃ বা দৃষ্টিশক্তির অসুবিধা ঘটায় অথবা ওই ভারি চেহারার কারণে টাল সামলাতে না পেরে – দুটো লঞ্চের ফাঁকে পড়ে যান ৷ এটা ঠিকই যে ঢেউয়ের ধাক্কায় ধাক্কায় সেই মুহূর্তে লঞ্চ দুটিও পরস্পরের থেকে একটু বেশি-ই ফাঁক হয়ে গেছিলো। উনি সত্যি সত্যিই একেবারে জলে পড়ে গিয়েছিলেন – ওইসব জায়গায় (খুব সম্ভবতঃ মাতলা নদীতেই ঘটনাটা ঘটেছিল) স্রোতের টানও থাকে আবার নদীও খুবই গভীর ৷ ফলে রমেশবাবুর ঐদিন মৃত্যু অবধারিত ছিল ৷ কিন্তু ‘শেষ কথা’ বলে তো কিছু হয় না, সব কথার পরেও কিছু কথা থাকে ৷ সুন্দরবন tour-এ ওই যে পরপর প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলি ঘটেছিল এবং রমেশবাবুর নির্ঘাত মৃত্যুর মুখ থেকে রেহাই পাওয়া – এগুলির ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন গুরুমহারাজ। উনি পরবর্তীতে বলেছিলেন – “এই tour programme-এ যে সমস্ত ভক্তেরা গিয়েছিল, তাদের অনেকেরই ‘মৃত্যুযোগ’ চলছিল, – তাই সকলকে একত্রিত করে সেই ‘যোগ’-টা কাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷”
তাছাড়া গুরুমহারাজ আরো বলেছিলেন – ” রমেশবাবু যতক্ষন ভয়ার্ত হয়ে গুরুকেও ভুলে গিয়েছিল অর্থাৎ নির্ঘাৎ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে আর পাঁচজনের মতোই ঘাবড়ে গিয়েছিল – ততক্ষণ কোনো বাঁচার উপায় পায়নি, কিন্তু যে মুহূর্তে ‘গুরু’-কে স্মরণ করলো – অমনি রমেশবাবু দেখলো যে, সে লঞ্চের গায়ে ঝুলতে থাকা রশিতে আটকে গেছে ৷” শরীরের বেশিরভাগ অংশ জলের মধ্যে কিন্তু দুটো বাহুর মধ্যে আটকে যাওয়া রশি__ রমেশবাবুর গলা ও মাথাকে জলের উপর ধরে রেখেছিল ৷ এর ফলে রমেশদা ডুবেও যাননি বা স্রোতে ভেসেও যান নি ৷ মুহূর্তের মধ্যেই অবশ্য ওখানে লোকজন জুটে গেছিল এবং অনেকে মিলে চেষ্টা করে ভয়কাতর কিন্তু অক্ষত রমেশবাবুকে জল থেকে তুলে এনেছিল ৷
রমেশ বাবুর কথা সেরে __এবার অন্য প্রসঙ্গে যাওয়া যাক্। প্রথম দিনের ঝড়ের কথা আগেই বলা হয়েছিল ৷ ঐদিন গুরুমহারাজ সমস্ত ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন – সবাই যেন লঞ্চের ভিতরে থাকে (অর্থাৎ ডেকে যেন কেউ কোনো কারণেই না ওঠে) এবং সকলে যেন ঐ সময়ে ইষ্টমন্ত্র জপ করে ৷ দুটো লঞ্চকে একসাথে বেঁধে ঝড়ের অভিমুখে full speed-এ চালাতে বলেছিলেন গুরুজী ৷ সারেংরা তাই করেছিল ৷ আর এতেই যাত্রীরা সকলে লঞ্চডুবির হাত থেকে রেহাই পেয়েছিল ৷ যদিও ওই বিপদের সময়ে বিবেকবোধ হারিয়ে ফেলে অনেকেই গুরু মহারাজকেও দোষারোপ করতে শুরু করেছিল !
সে যাই হোক – ওই ঘটনার পরেই গুরুমহারাজ ভক্তদেরকে উদ্দেশ্য করে যে কথাটা বলেছিলেন_তা হোলো এইসব বিপদ-আপদ, দৈব-দুর্বিপাকের মধ্যে দিয়ে ঐদিন ভক্তদের অনেকেরই মৃত্যুযোগ কাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
[পরেরদিন ওনাদের ফেরার পথে টর্নেডো ঝড়ের বর্ণনা !]