নগেনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল গুরুজীকে নিয়ে । ও বলছিল – ” তখন তো গুরুজীর প্রায়-ই সমাধি হোত ৷” —
” ‘সমাধি’ হোত মানে? ”
— ” সমাধি জানো না ? ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের হোত ৷” হ্যাঁ , মনে পড়ছে , শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত-য় পড়েছিলাম । আমার জিজ্ঞাসা – ” তুমি দেখেছ ? কি রকম অবস্থা হোত ?” Prompt উত্তর , ” দেখব না কেন ? যেদিন প্রথম এলেন সেদিন-ই তো সন্ধ্যাবেলায় বামুন বাড়ীর (মুখার্জীদের বাড়ী) কালীমন্দিরে ওনার সমাধি হয়েছিল । হাতে একটা জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে মন্দিরের দাওয়ায় বসেছিলেন – আর সন্ধ্যাবেলায় প্রতিদিনকার মতো খোল-করতাল বাজিয়ে মায়ের নাম কীর্তন হচ্ছিল ৷ কখন যে মায়ের নাম শুনতে শুনতে ওনার ‘সমাধি’ হয়ে গেছে কেউ জানতে পারেনি ৷ তারপর যখন জ্বলন্ত সিগারেটে ওনার হাতের আঙুল পুড়ে গেছিল – তখন দেবেন্দ্রদা বা তৃষানদা খেয়াল করে সিগারেটটা ঝেড়ে ফেলে দিয়েছিল ৷ ( দেবেন্দ্রদা অন্ধ্রপ্রদেশের লোক ৷ প্রথম যেদিন গুরু মহারাজ বনগ্রামে আসেন সেদিন দেবেন্দ্রদাও ওনার সঙ্গে ছিল ।) আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম , ” তুমি সেদিন ওখানে ছিলে ? ঐ একদিনই হয়েছিল ? না আরও দু-একবার দেখেছিলে ?” নগেন বলল , ” না-না ! একদিন কেন ? প্রায়ই তো হোত ! বামুন বাড়ীতে গান শুনতে শুনতে , রেডিওয় কোন মহাপুরুষের নাটক শুনলে , আবার এমনি বসে থাকতে থাকতেই – ওনার ‘সমাধি’ হয়ে যেত । সমাধি হয়ে গেলে ওনার শরীরে আর কোন ‘সাড়’ থাকতোনা ৷ এক-একদিন শরীর বেঁকে যেত । এক-একদিন ওনার শরীর এত ভারী হয়ে যেত যে আমরা একটা পা -ও তুলতে পারতাম না । অাবার এক-একদিন তাঁর শরীর এত হালকা হয়ে যেতো যে মনে হোত আমি একাই শরীরটা কোলে তুলে নিয়ে যেতে পারব ৷”
— ” তোমরা তুলতেই বা কেন ? শুনেছি এই অবস্থায় শরীর কে ছুঁতে নাই ?”
— ” কি করা যাবে ? এক-একদিন তো ওনার ‘সমাধি’ ভাঙতোই না। সেই সন্ধ্যাবেলায় হয়তো ওনার ‘সমাধি’ হয়েছে – রাত্রি ১১টা বেজে গেল , ১১-৩০ বেজে গেল , ওনার সমাধি অার ভাঙছে না – তখন সবাই মিলে ধরে ওনাকে একটা দড়ির-খাটিয়ায় শুইয়ে হয় কালীমন্দিরে অথবা একেবারে আশ্রমে নিয়ে গিয়ে ওনার ঘরে দিয়ে আসা হোত ৷ আর আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে সকালবেলায় একদম fresh ! তখন দেখে বোঝাই যেত না যে এই লোকটার শরীর কাল রাতে ওমনি ‘কাঠ’ মতন হয়ে গেছিল ! আর যে দিন ওনার ‘সমাধি’ ১ ঘণ্টা – ২ ঘন্টার মধ্যে ভেঙে যেত – সেদিন শরীরে ‘সাড়’ আসতেই বলতেন , ” জল খাবো ৷” তারপর জল খেয়ে অনেকক্ষণ পরে সুস্থ হতেন । বলতেন – আমার কি কিছু হয়েছিল ?”
অবাক হয়ে শুনেছিলাম নগেনের কথা ! মনে হয়েছিল এদের কি সৌভাগ্য ! এরা এসব নিজের চোখে দেখেছে !!!! একটু একটু ঐ ‘সমাধি’ দেখার ইচ্ছে যে হচ্ছিল না__তা বলব না। কিন্তু “আর পাঁচজনের মতো কি আমি? “__এই ভাব টা প্রবল থাকায় ইচ্ছে টা দমে দিলাম। (গুরুমহারাজের সমাধি দেখা আর আমার কপালে হয় নি। কারণটা পরে গুরুমহারাজই বলেছিলেন যে ওনার নির্বিকল্প হবার আগে পর্যন্ত এই সব হোত কিন্তু নির্বিকল্পের পর আর হবে না।)
যাইহোক তিনটে সাড়ে তিনটের মধ্যেই গুরুমহারাজ বাইরে এসে বসলেন। অবশ্য পরে দেখেছিলাম যে গুরুমহারাজ বাইরে বেরোনোর আগেই অনেকে ওনার সাথে ঘরে দেখা করতে যেত। আমার জানা না থাকায় তখনি বিদায় নিতে গেলাম। বিদায়ের কথা বলতেই উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন_”তোমার এখানে থাকতে কি কোন অসুবিধা হচ্ছে?? ”
এমন কোন কথা শুনতে হবে এটা আশা করিনি_তাই প্রথমটায় একটু থতমত খেয়ে গেলাম। পরে বললাম_” না মানে তেমন কিছু নয় তবে বাড়িতে(শিবপুরে) কোন খবর দেওয়া হয় নি, তাছাড়া একটা জামা কাপড়ে___প্রায় দুদিন হয়ে গেল। ”
____”তুমি মুরারী র কাছ থেকে কাপড় নিয়ে নাও, ওই টা পড়ে রাত্রিটা কাটিয়ে দাও “_গুরুজী বিধান দিয়ে দিলেন।
আচ্ছা ঝকমারিতে পড়া গেল তো!! কিন্তু কি বলব__ওনার ঐ কথা শুনে কেন জানিনা ভিতরে ভিতরে একটা কেমন যেন একটা “ভালোই হল” ভাবও কাজ করছিল। আবার বাইরে এলাম_আবার অনুপদাকে বললাম “দ্যাখো, আবার আটকে দিল”।
উনি বললেন “ভালোই তো,! ওখানেই বা তোর কি এমন রাজকার্য আছে?”
__তুমি তো জানো_আমার পড়া আছে, পড়ানো আছে। তাছাড়া আরো কত কি রয়েছে। আমার এখানে বসে থাকলে চলবে?
__”আমাকে না বলে ওখানে বললেই তো পারতিস! আমার কাছে ভ্যানর ভ্যানর করিস না_যা!! ”
যাঃ!! আমার নিজের লোকটা ও আর পাত্তা দিচ্ছেনা_কি দশা হল আমার!! নগেন কে খুব ভালো লেগেছে_কিন্তু সে তো গিয়ে গুরুমহারাজের সামনে গিয়ে বসে পড়ল। উদয়দা (স্বরূপানন্দ)_র কাছে গিয়ে বসলাম, ওখানে কিছু বই(ধর্মপুস্তক) রয়েছে, ওলেখালেখি করছিল। আমি দু একটা বই নাড়াচাড়া করতে করতে গুরুজীকে নিয়েই আলোচনা করছিলাম। ও সেদিন আমাকে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের পূনরাবির্ভাব সম্বন্ধে বলেছিল। বলেছিল যে শুধু ঠাকুর ই নয় তাঁর সঙ্গীসাথীরাও শরীর নিয়েছেন। । ও আরো বলল যে এবার অনেক ঠাকুরের সন্ন্যাসী ভক্ত গৃহে আছে, আবার তখনকার অনেক গৃহী এবার সন্ন্যাসী হয়েছে।একজন মুসলিম ছেলে ঠাকুরের সন্ন্যাসী ভক্ত ছিলেন।…. আমি কল্পনার সাগরে ভেসে যাচ্ছিলাম।
এসব কি শুনছি!!! এসব যদি সত্যি হয়?? তাহলে তো আমি একটা বোকা হাঁদা গাধা!!! উদয়দা সেদিন আমাকে_এবার (পরমানন্দ লীলা) কে কি role play করছে তারও নাম সমেত বলেছিল_যদিও তখন পর্যন্ত আমি বিশেষ কাউকেই চিনতাম না।
মাথা চিনচিন করছিল_এক একবার মনে হচ্ছিল যাই_মানুষটাকে একবার ভালো করে দেখে আসি। পরক্ষনেই নিজেকে আটকালাম।
মাঠে তপিমার বাবা, স্বপন খুড়ো, রাম খুড়ো, নবু মাস্টার__এরা সব বসেছিল। আমি ওখানে গিয়ে গুরুমহারাজকে ওরা কি মনে করে__গুরুমহারাজের কোন দিক গুলো ওদের ভালো লাগে__এইসব জিজ্ঞাসা করছিলাম। তপিমার বাবা (মেজ কাকা) অবশ্য এই ব্যাপারগুলো মোটেই পছন্দ করছিল না__সেটা বুঝতে পারছিলাম। তবে ওরা বেশ সহজ সরলভাবে আমার কথার উত্তর দিচ্ছিল। দেখলাম ওদের মধ্যে নবু মাস্টার খুব বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষন ব্যক্তি।
সবার কথা শুনে মোটামুটি আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার পূর্বের ধারণা সম্পুর্ন ভুল ছিল। সন্ধ্যার আগেই সিটিং ভেঙে গেল_নগেন বেড়িয়ে এসে আমাকে মাঠে দেখে বলল “কি গো সিটিং এ বসলে না?” আমি বললাম “না, যাওয়া হয় নি”। ও বলল “চল, আমার বাড়ি যাবে?”
__তা গেলেও হয়। চল তাহলে।
সেই প্রথম ওদের বাড়ি যাওয়া। তারপর তো ঐ বাড়ি টাই আমার দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যার পর ওদের বাড়িতেই মুড়ি চা খেয়ে মুখার্জি বাড়ি গেলাম। ওখানে সেদিন সেজকাকার (কেশব খ্যাপাঠাকুরের বাবা) সাথে আলাপ হল। উনি দুর্গাপুরে থাকেন। ওনার জন্যই দুর্গাপুরের অনেক ভক্ত আশ্রমে আসত। তার মধ্যে ঝা মাইজী একজন। ওনার সাথেও মাঠে কথা হয়েছিল__সেইটা এখন বলে নেওয়া যাক, তারপর নাহয় আবার মুখার্জি বাড়িতে ফিরে আসব। (ক্রমশঃ)
” ‘সমাধি’ হোত মানে? ”
— ” সমাধি জানো না ? ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের হোত ৷” হ্যাঁ , মনে পড়ছে , শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত-য় পড়েছিলাম । আমার জিজ্ঞাসা – ” তুমি দেখেছ ? কি রকম অবস্থা হোত ?” Prompt উত্তর , ” দেখব না কেন ? যেদিন প্রথম এলেন সেদিন-ই তো সন্ধ্যাবেলায় বামুন বাড়ীর (মুখার্জীদের বাড়ী) কালীমন্দিরে ওনার সমাধি হয়েছিল । হাতে একটা জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে মন্দিরের দাওয়ায় বসেছিলেন – আর সন্ধ্যাবেলায় প্রতিদিনকার মতো খোল-করতাল বাজিয়ে মায়ের নাম কীর্তন হচ্ছিল ৷ কখন যে মায়ের নাম শুনতে শুনতে ওনার ‘সমাধি’ হয়ে গেছে কেউ জানতে পারেনি ৷ তারপর যখন জ্বলন্ত সিগারেটে ওনার হাতের আঙুল পুড়ে গেছিল – তখন দেবেন্দ্রদা বা তৃষানদা খেয়াল করে সিগারেটটা ঝেড়ে ফেলে দিয়েছিল ৷ ( দেবেন্দ্রদা অন্ধ্রপ্রদেশের লোক ৷ প্রথম যেদিন গুরু মহারাজ বনগ্রামে আসেন সেদিন দেবেন্দ্রদাও ওনার সঙ্গে ছিল ।) আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম , ” তুমি সেদিন ওখানে ছিলে ? ঐ একদিনই হয়েছিল ? না আরও দু-একবার দেখেছিলে ?” নগেন বলল , ” না-না ! একদিন কেন ? প্রায়ই তো হোত ! বামুন বাড়ীতে গান শুনতে শুনতে , রেডিওয় কোন মহাপুরুষের নাটক শুনলে , আবার এমনি বসে থাকতে থাকতেই – ওনার ‘সমাধি’ হয়ে যেত । সমাধি হয়ে গেলে ওনার শরীরে আর কোন ‘সাড়’ থাকতোনা ৷ এক-একদিন শরীর বেঁকে যেত । এক-একদিন ওনার শরীর এত ভারী হয়ে যেত যে আমরা একটা পা -ও তুলতে পারতাম না । অাবার এক-একদিন তাঁর শরীর এত হালকা হয়ে যেতো যে মনে হোত আমি একাই শরীরটা কোলে তুলে নিয়ে যেতে পারব ৷”
— ” তোমরা তুলতেই বা কেন ? শুনেছি এই অবস্থায় শরীর কে ছুঁতে নাই ?”
— ” কি করা যাবে ? এক-একদিন তো ওনার ‘সমাধি’ ভাঙতোই না। সেই সন্ধ্যাবেলায় হয়তো ওনার ‘সমাধি’ হয়েছে – রাত্রি ১১টা বেজে গেল , ১১-৩০ বেজে গেল , ওনার সমাধি অার ভাঙছে না – তখন সবাই মিলে ধরে ওনাকে একটা দড়ির-খাটিয়ায় শুইয়ে হয় কালীমন্দিরে অথবা একেবারে আশ্রমে নিয়ে গিয়ে ওনার ঘরে দিয়ে আসা হোত ৷ আর আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে সকালবেলায় একদম fresh ! তখন দেখে বোঝাই যেত না যে এই লোকটার শরীর কাল রাতে ওমনি ‘কাঠ’ মতন হয়ে গেছিল ! আর যে দিন ওনার ‘সমাধি’ ১ ঘণ্টা – ২ ঘন্টার মধ্যে ভেঙে যেত – সেদিন শরীরে ‘সাড়’ আসতেই বলতেন , ” জল খাবো ৷” তারপর জল খেয়ে অনেকক্ষণ পরে সুস্থ হতেন । বলতেন – আমার কি কিছু হয়েছিল ?”
অবাক হয়ে শুনেছিলাম নগেনের কথা ! মনে হয়েছিল এদের কি সৌভাগ্য ! এরা এসব নিজের চোখে দেখেছে !!!! একটু একটু ঐ ‘সমাধি’ দেখার ইচ্ছে যে হচ্ছিল না__তা বলব না। কিন্তু “আর পাঁচজনের মতো কি আমি? “__এই ভাব টা প্রবল থাকায় ইচ্ছে টা দমে দিলাম। (গুরুমহারাজের সমাধি দেখা আর আমার কপালে হয় নি। কারণটা পরে গুরুমহারাজই বলেছিলেন যে ওনার নির্বিকল্প হবার আগে পর্যন্ত এই সব হোত কিন্তু নির্বিকল্পের পর আর হবে না।)
যাইহোক তিনটে সাড়ে তিনটের মধ্যেই গুরুমহারাজ বাইরে এসে বসলেন। অবশ্য পরে দেখেছিলাম যে গুরুমহারাজ বাইরে বেরোনোর আগেই অনেকে ওনার সাথে ঘরে দেখা করতে যেত। আমার জানা না থাকায় তখনি বিদায় নিতে গেলাম। বিদায়ের কথা বলতেই উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন_”তোমার এখানে থাকতে কি কোন অসুবিধা হচ্ছে?? ”
এমন কোন কথা শুনতে হবে এটা আশা করিনি_তাই প্রথমটায় একটু থতমত খেয়ে গেলাম। পরে বললাম_” না মানে তেমন কিছু নয় তবে বাড়িতে(শিবপুরে) কোন খবর দেওয়া হয় নি, তাছাড়া একটা জামা কাপড়ে___প্রায় দুদিন হয়ে গেল। ”
____”তুমি মুরারী র কাছ থেকে কাপড় নিয়ে নাও, ওই টা পড়ে রাত্রিটা কাটিয়ে দাও “_গুরুজী বিধান দিয়ে দিলেন।
আচ্ছা ঝকমারিতে পড়া গেল তো!! কিন্তু কি বলব__ওনার ঐ কথা শুনে কেন জানিনা ভিতরে ভিতরে একটা কেমন যেন একটা “ভালোই হল” ভাবও কাজ করছিল। আবার বাইরে এলাম_আবার অনুপদাকে বললাম “দ্যাখো, আবার আটকে দিল”।
উনি বললেন “ভালোই তো,! ওখানেই বা তোর কি এমন রাজকার্য আছে?”
__তুমি তো জানো_আমার পড়া আছে, পড়ানো আছে। তাছাড়া আরো কত কি রয়েছে। আমার এখানে বসে থাকলে চলবে?
__”আমাকে না বলে ওখানে বললেই তো পারতিস! আমার কাছে ভ্যানর ভ্যানর করিস না_যা!! ”
যাঃ!! আমার নিজের লোকটা ও আর পাত্তা দিচ্ছেনা_কি দশা হল আমার!! নগেন কে খুব ভালো লেগেছে_কিন্তু সে তো গিয়ে গুরুমহারাজের সামনে গিয়ে বসে পড়ল। উদয়দা (স্বরূপানন্দ)_র কাছে গিয়ে বসলাম, ওখানে কিছু বই(ধর্মপুস্তক) রয়েছে, ওলেখালেখি করছিল। আমি দু একটা বই নাড়াচাড়া করতে করতে গুরুজীকে নিয়েই আলোচনা করছিলাম। ও সেদিন আমাকে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের পূনরাবির্ভাব সম্বন্ধে বলেছিল। বলেছিল যে শুধু ঠাকুর ই নয় তাঁর সঙ্গীসাথীরাও শরীর নিয়েছেন। । ও আরো বলল যে এবার অনেক ঠাকুরের সন্ন্যাসী ভক্ত গৃহে আছে, আবার তখনকার অনেক গৃহী এবার সন্ন্যাসী হয়েছে।একজন মুসলিম ছেলে ঠাকুরের সন্ন্যাসী ভক্ত ছিলেন।…. আমি কল্পনার সাগরে ভেসে যাচ্ছিলাম।
এসব কি শুনছি!!! এসব যদি সত্যি হয়?? তাহলে তো আমি একটা বোকা হাঁদা গাধা!!! উদয়দা সেদিন আমাকে_এবার (পরমানন্দ লীলা) কে কি role play করছে তারও নাম সমেত বলেছিল_যদিও তখন পর্যন্ত আমি বিশেষ কাউকেই চিনতাম না।
মাথা চিনচিন করছিল_এক একবার মনে হচ্ছিল যাই_মানুষটাকে একবার ভালো করে দেখে আসি। পরক্ষনেই নিজেকে আটকালাম।
মাঠে তপিমার বাবা, স্বপন খুড়ো, রাম খুড়ো, নবু মাস্টার__এরা সব বসেছিল। আমি ওখানে গিয়ে গুরুমহারাজকে ওরা কি মনে করে__গুরুমহারাজের কোন দিক গুলো ওদের ভালো লাগে__এইসব জিজ্ঞাসা করছিলাম। তপিমার বাবা (মেজ কাকা) অবশ্য এই ব্যাপারগুলো মোটেই পছন্দ করছিল না__সেটা বুঝতে পারছিলাম। তবে ওরা বেশ সহজ সরলভাবে আমার কথার উত্তর দিচ্ছিল। দেখলাম ওদের মধ্যে নবু মাস্টার খুব বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষন ব্যক্তি।
সবার কথা শুনে মোটামুটি আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার পূর্বের ধারণা সম্পুর্ন ভুল ছিল। সন্ধ্যার আগেই সিটিং ভেঙে গেল_নগেন বেড়িয়ে এসে আমাকে মাঠে দেখে বলল “কি গো সিটিং এ বসলে না?” আমি বললাম “না, যাওয়া হয় নি”। ও বলল “চল, আমার বাড়ি যাবে?”
__তা গেলেও হয়। চল তাহলে।
সেই প্রথম ওদের বাড়ি যাওয়া। তারপর তো ঐ বাড়ি টাই আমার দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যার পর ওদের বাড়িতেই মুড়ি চা খেয়ে মুখার্জি বাড়ি গেলাম। ওখানে সেদিন সেজকাকার (কেশব খ্যাপাঠাকুরের বাবা) সাথে আলাপ হল। উনি দুর্গাপুরে থাকেন। ওনার জন্যই দুর্গাপুরের অনেক ভক্ত আশ্রমে আসত। তার মধ্যে ঝা মাইজী একজন। ওনার সাথেও মাঠে কথা হয়েছিল__সেইটা এখন বলে নেওয়া যাক, তারপর নাহয় আবার মুখার্জি বাড়িতে ফিরে আসব। (ক্রমশঃ)