কলকাতার কোনো এক স্থানে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে সেখান থেকে কলকাতার অপরপ্রান্তে(বরানগরে) সিঙ্গারা খেতে যাবার ঘটনাটা ছিল আকস্মিক – কোনো পূর্বপরিকল্পিত নয়। কোনো এক আত্মীয় ঐ স্থানের সিঙ্গারার প্রশংসা করায় মাস্টারমশাই বলেছিলেন — ‘চল্, তাহলে সেইস্থানের সিঙ্গারাই খেয়ে আসি ৷’ এটা নিছকই একটা তুচ্ছ ঘটনা – যেটা গুরুমহারাজের কান পর্যন্ত কোনোভাবে পৌঁছানো সত্যিই অসম্ভব ছিল ৷ কিন্তু গুরুমহারাজ কথাপ্রসঙ্গে তুচ্ছাতিতুচ্ছ ওই ঘটনাটিরই উল্লেখ করেছিলেন। এই উদাহরণ দিয়ে গুরুমহারাজ এটাও বোঝালেন যে, মাস্টারমশাইয়ের কলকাতা যাবার অন্য উদ্দেশ্য ছিল কিন্তু ওই সিঙ্গারার ঘটনাটা আকস্মিকভাবে ঘটে গেছে – ওটার জন্যই কলকাতা যাওয়া নয় ! তেমনি মানবজীবনে ঈশ্বরলাভ বা ঈশ্বরত্ব অর্জনই একমাত্র লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য_সূর্যবিজ্ঞান, চন্দ্রবিজ্ঞান জানাটা নয়।
তবে ঈশ্বরলাভের উদ্দেশ্যে সত্য—ত্যাগ—প্রেম ও শান্তির বা সংযমের পথে চলতে চলতে এইসব নানান বিজ্ঞান কখন যে সাধকের অধিগত হয়ে যায় — সাধক নিজেই তা প্রথমে টের পায় না ৷ দৈবাৎক্রমে কোনো ঘটনায় শক্তির প্রকাশ ঘটে গেলে – সে বুঝতে পারে যে, তার মধ্যে ওই শক্তির ক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে ৷ কোনো কোনো সাধক এইসব শক্তিকে অগ্রাহ্য করে আরও উজান পথে অগ্রসর হ’ন – আবার অনেকে এইসব শক্তিলাভ করতে না করতেই শক্তির প্রয়োগ (অপপ্রয়োগ) ঘটিয়ে ফেলে – ফলে ওই শক্তি কিছুদিনের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে যায় । ফলে ওই ব্যক্তি আবার আর পাঁচটা সাধারণ মানবের ন্যায় জীবন কাটাতে বাধ্য হয় ৷
কিন্তু গুরুমহারাজের কথা স্বতন্ত্র ! সিদ্ধ হওয়ার শক্তি, সিদ্ধাই-এর শক্তি, সাধনার ফলে বা কুলকুণ্ডলীনী জাগ্রত হবার ফলে প্রাপ্ত শক্তি, যাগ-যজ্ঞ বা তপ-জপ করে অথবা সাধন-ভজনের ফলে প্রাপ্ত শক্তি – ইত্যাদি যে নামেই মানব (সাধক) শক্তিলাভ করুক না কেন –ঈশ্বরলাভ বা ঈশ্বরত্বে উপনীত না হওয়া পর্যন্ত শক্তির সম্পূর্ণটা করায়ত্ব হয় না ৷ ওইসব অর্জিত শক্তি সবই partial বা আংশিক ৷ আর সর্বোপরি এই সকল শক্তি প্রয়োগ (অপপ্রয়োগ) করতে থাকলেই – শক্তির হানি ঘটতে থাকে এবং একদিন ওই বিপুলশক্তিও নিঃশেষ হয়ে যায়।
কিন্তু ওই যে বলা হোলো – গুরুমহারাজ বা এই ধরনের অবতরিত স্বয়ং ঈশ্বরের রূপ যখন পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন – তখন তাঁর মধ্যে পূর্ণশক্তির প্রকাশ ঘটে ৷ আর ঘটবেই তো – কারণ তিনি যে পূর্ণত্বের বোধে বোধি ৷ আর এই বোধ তাঁদের মধ্যে সতত প্রকাশিত থাকে ৷ সাধারণ মানুষসহ যে কোনো জীব (এমনকি জড়জগৎ)-ও সেই পূর্ণ থেকেই এসেছে – কিন্তু আমাদের সাথে তাঁদের(অবতার পুরুষদের) পার্থক্য হোলো – ‘আমরা যে পূর্ণ’– সেই ‘বোধ’ আমরা বিস্মৃত হয়েছি – যেটা অবতারপুরুষদের মধ্যে সদাসর্বদা পূর্ণরূপে বিরাজমান ৷
সেইজন্যেই বলা হচ্ছিলো – গুরুমহারাজের কথা স্বতন্ত্র ! উনি ইচ্ছা করলেই যে কোনো শক্তির প্রকাশও ঘটাতে পারতেন, আবার প্রয়োজন হোলে অন্য কারূকে সেই শক্তি প্রদানও করতে পারেন।
যাইহোক, আমরা আবার আশীষ মাস্টারমশাইয়ের কথায় ফিরি ৷ উনি একটু সমাজ-সংস্কারক গোছের লোক, মানুষের আপদে-বিপদে বা যে কোনো প্রয়োজনে একটু-আধটু পাশে থাকার চেষ্টা করেন ৷ উনি এইসব কাজ করার সময় দেখেছিলেন – গ্রামের সাধারণ মানুষের অনেকেরই প্রায়শঃ ‘ভর’ হয়__ আর ‘ভর’ হোলে কোনো নর বা নারী হঠাৎ করে অদ্ভুত আচরণ করতে থাকে, মাটিতে পড়ে গিয়ে ঘন ঘন মাথা দোলাতে থাকে, অন্যরকম কণ্ঠস্বরে কথা বলে, তার মধ্যে একটা supremacy বোধ ক্রিয়া করে ইত্যাদি ইত্যাদি ৷ ফলে সে তখন বয়ঃজ্যেষ্ঠদেরও নাম ধরে সম্বোধন করে, উপস্থিত জনেদেরকে নানারকম নির্দেশ দেয়, তাদের জীবনের কিছু গোপন ঘটনাও গড়গড় করে বলে দিতে থাকে, আবার অনেক সময় ভবিষ্যৎ সম্বন্ধেও বলতে থাকে – ইত্যাদি নানারকম ব্যাপার-স্যাপার হয়। এইটাকেই ওই ব্যক্তির বাড়ির লোক বা পাড়াপড়শীরা__ যে কোনো দেব-দেবীর ‘ভর’ হয়েছে বলে প্রচার করতে থাকে ৷ [এই ব্যাপারে গুরুমহারাজের আরো আলোচনা পরের দিন… ৷ ]