শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো ৷ আমরা ছিলাম আশীষ মাস্টারমশাই(শ্রীধরপুর)-এর কথায় — অর্থাৎ ওনার সাথে গুরুমহারাজের সাক্ষাৎ-এর পরে ঘটে যাওয়া কিছু বিশেষ ঘটনার কথায় ! এখন আমরা আশীষ মাস্টারমশাই-এর মুখে শুনবো মানুষের ‘ভর’ হওয়া নিয়ে উনি যখন গুরুমহারাজকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন – তখন তিনি ঐ বিষয়ে কি কি কথা বলেছিলেন ৷
আসলে ব্যাপারটা হয়েছিল কি — মাস্টারমশাই একটু পরোপকারী গোছের লোক ৷ নবীন বয়সে একটু বেশিই কর্ম-তৎপর ছিলেন, ফলে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের কোথায় ব্যথা সেগুলি জেনে – তা যতটা সম্ভব নিরসনের উনি চেষ্টা করতেন ৷ সেইরকম ঘুরতে ঘুরতে উনি কোনো মহিলার (খেটে খাওয়া মানুষদের পরিবারের মহিলা) ‘ভর’ হওয়া দেখেন এবং এই ব্যাপারে কৌতুহলী হয়ে এর রহস্য নিরসনের জন্যই উনি গুরুমহারাজের কাছে জিজ্ঞাসাটি রেখেছিলেন ৷ এখন শোনা যাক – গুরুমহারাজ এই জিজ্ঞাসার উত্তরে কি বলেছিলেন !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন —’ সাধারণতঃ সমাজের নিচুতলার মানুষেরা উঁচুতলার মানুষ (অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, সামাজিক মান-মর্যাদায় যারা উঁচুতে রয়েছে)-দের দ্বারা বহুকাল থেকে অত্যাচারিত হয়ে আসছে ৷ তাছাড়া সাধারণ পরিবারের নারীরা (যেখানে নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রচলন অতোটা বেশি নাই) সংসারে পুরুষদের দ্বারা বা বিবাহের পরে শশুর-শাশুড়ির দ্বারা নির্যাতিত হয়ে থাকে ৷ এইভাবে শোষণ, নির্যাতন, অত্যাচার – ইত্যাদির হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষ (বিশেষতঃ নারীরা)-এর মধ্যে তীব্রভাবে একটা আকুতি জন্মায়। সে এইটাকে নিয়েই গভীরভাবে ভাবতে থাকে, এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে থাকে ৷
এইভাবেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওই তীব্র আকুতি বা গভীরভাবে ভাবনার ফলে ব্যক্তিটির মধ্যে কুলকুন্ডলিনীর ক্রিয়া শুরু হয়ে যায় ৷ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসংযমী, অপটু শরীর হওয়ায় (এইজন্যেই যোগীরা যোগ-সাধনার দ্বারা আগে নিজেদের শরীরকে মজবুত করে নেন। যোগশাস্ত্রে বলা হয়েছে – ‘শরীরম্ আদ্যম্ খলু ধর্মসাধনম্।’) শরীরের মধ্যে বিকৃতি শুরু হয়ে যায়। হয় ওই ব্যক্তি কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে যায়—নাহয় হাত-পা ছুঁড়তে থাকে – মাথা দোলাতে থাকে – মুখে নানারকম আওয়াজ করতে থাকে- ইত্যাদি নানারকম অদ্ভুত আচরণ করে থাকে ৷ ওই অবস্থায় তার গলার স্বর পাল্টে যেতে পারে, শরীরে অসম্ভব জোর প্রকাশ পেতে পারে (হয়তো চার-পাঁচ জনে তাকে ধরে আটকাতে পারছে না।) এবং সর্বোপরি ঐ অবস্থায় তার মুখ দিয়ে এমন কিছু কথা বেরিয়ে আসতে পারে – যা উপস্থিত সকলকে অবাক করে দিতে পারে ! এটা বলা হোলো এইজন্য যে, ওই ব্যক্তির (নারী বা পুরুষ) মুখ দিয়ে তখন এমন এমন কথা বেরোতে পারে যা হয়তো উপস্থিত ব্যক্তিদের অতীত জীবনের গোপন কথা অথবা এমন কথা – যা ভবিষ্যতে ফলে যেতে পারে ৷
এইরকম ঘটনা দু-চারবার ঘটতে থাকলেই পারিপার্শ্বিক মানুষজন রটাতে শুরু করে যে, ওই ব্যক্তির মধ্যে ঠাকুর-দেবতা-জিন -পরী ইত্যাদি কোনো কিছুর ‘ভর’ . হয়েছে। এইরকম কান্ড বেশ কিছুদিন ঘটতে ঘটতে দেখা যায় সপ্তাহের বা মাসের অথবা বৎসরের নির্দিষ্ট দিনে ওই ব্যক্তিটির ঐরূপ ‘ভর’ বা ‘আবেশ’ হোচ্ছে এবং বহু মানুষ তার কাছে গিয়ে ধর্না দিচ্ছে – অর্থলাভ, সমস্যা দূরীকরণ, শারীরিক অসুস্থতা দূর – ইত্যাদির আশায়। এখনো গ্রামেগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে কান পাতলেই ওইরকম ‘ভর’ হওয়া বা ‘ডাক’ ধরা-র কাহিনী শুনতে পাওয়া যাবে ৷
গুরুমহারাজ ঐদিন এই সম্পর্কে আরো বলেছিলেন – ” সাধারণতঃ এই ধরনের ‘ভর’ বা ‘আবেশ’ বেশিরভাগই হয় মহিলাদের ৷ নিম্নতর সমাজে তারা এমনিতেই পিছিয়ে পড়া সদস্য – তার উপরে আবার পারিবারিক নানান অত্যাচার, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা অর্থাৎ নানাবিধ নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে তারাই৷ এছাড়া সাধারণ গ্রামঘরের নারীরা শারীরিকভাবেও দুর্বল থাকে। ছোটো বয়সে বিবাহ হওয়ায় এবং অভাবের সংসারে বিবাহ হওয়ায় প্রথম থেকেই অপুষ্টিতে ভোগে – তারপরে আবার অল্প বয়সেই গন্ডায়-গন্ডায় ছেলেমেয়ে হয়ে যায়। এইসব কারণে ঐসব মহিলারা__ সমাজের উপর, সংসারের উপর একেবারে বিরক্ত হয়ে পড়ে ৷ তখন তাদের মধ্যে অনেকেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবার জন্য কোনো না কোনো ঠাকুর-দেবতা (পীর, মারাংবুরু, শিব, কালী ইত্যাদি)-র শরণাপন্ন হয়ে তাকে আকুল হয়ে ডাকতে থাকে । এবার এইরকমটা বেশ কিছুদিন চলতে থাকলেই__ ওই দেব-দেবীদেরকে কেন্দ্র করে তার মধ্যে একটা বিশেষ ক্রিয়া(কুলকুন্ডলীনীর ক্রিয়া) শুরু হয়ে যায়। আর ঐ যে একটা বিশেষ ক্রিয়া হোচ্ছে –সেটির প্রকাশ ঘটানোর জন্য ঐ ব্যক্তি তখন নানারকম অদ্ভুত আচরণ ঘটাতে থাকে ৷ যা পরবর্তীতে ‘ভর’ হওয়া বা ‘আবেশ’ হওয়া বলে চালানো হয় ৷”
তবে এই ব্যাপারে গুরুমহারাজ আরো একটা দিকের কথা উল্লেখ করেছিলেন, আর সেইটা হোলো – ‘ অনেক মেয়ে ছোটবেলাতেই domestic violence-এর শিকার হয় অথবা কোনো কারনে তার প্রথম জীবনে হয়তো কোনো একটা ‘ভুল’ (বিশেষ করে sexual connection) ঘটে গেছিলো বা হয়তো মেয়েটি সত্যিই ‘বদ্’ (যার চরিত্রের ঠিক নাই) – এই ধরনের মহিলারাও তার হীনমন্যতা কাটিয়ে সামাজিক মর্যাদালাভের জন্য তার নিজের উপর এক ধরনের Supremacy আরোপ করতে চায় ! ফলে তাদেরও ‘ভর’ হয় বা বিশেষ বিশেষ তিথি নক্ষত্রে তাদের মধ্যে বিশেষ শক্তির ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়।।
আসলে ব্যাপারটা হয়েছিল কি — মাস্টারমশাই একটু পরোপকারী গোছের লোক ৷ নবীন বয়সে একটু বেশিই কর্ম-তৎপর ছিলেন, ফলে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের কোথায় ব্যথা সেগুলি জেনে – তা যতটা সম্ভব নিরসনের উনি চেষ্টা করতেন ৷ সেইরকম ঘুরতে ঘুরতে উনি কোনো মহিলার (খেটে খাওয়া মানুষদের পরিবারের মহিলা) ‘ভর’ হওয়া দেখেন এবং এই ব্যাপারে কৌতুহলী হয়ে এর রহস্য নিরসনের জন্যই উনি গুরুমহারাজের কাছে জিজ্ঞাসাটি রেখেছিলেন ৷ এখন শোনা যাক – গুরুমহারাজ এই জিজ্ঞাসার উত্তরে কি বলেছিলেন !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন —’ সাধারণতঃ সমাজের নিচুতলার মানুষেরা উঁচুতলার মানুষ (অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, সামাজিক মান-মর্যাদায় যারা উঁচুতে রয়েছে)-দের দ্বারা বহুকাল থেকে অত্যাচারিত হয়ে আসছে ৷ তাছাড়া সাধারণ পরিবারের নারীরা (যেখানে নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রচলন অতোটা বেশি নাই) সংসারে পুরুষদের দ্বারা বা বিবাহের পরে শশুর-শাশুড়ির দ্বারা নির্যাতিত হয়ে থাকে ৷ এইভাবে শোষণ, নির্যাতন, অত্যাচার – ইত্যাদির হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষ (বিশেষতঃ নারীরা)-এর মধ্যে তীব্রভাবে একটা আকুতি জন্মায়। সে এইটাকে নিয়েই গভীরভাবে ভাবতে থাকে, এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে থাকে ৷
এইভাবেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওই তীব্র আকুতি বা গভীরভাবে ভাবনার ফলে ব্যক্তিটির মধ্যে কুলকুন্ডলিনীর ক্রিয়া শুরু হয়ে যায় ৷ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসংযমী, অপটু শরীর হওয়ায় (এইজন্যেই যোগীরা যোগ-সাধনার দ্বারা আগে নিজেদের শরীরকে মজবুত করে নেন। যোগশাস্ত্রে বলা হয়েছে – ‘শরীরম্ আদ্যম্ খলু ধর্মসাধনম্।’) শরীরের মধ্যে বিকৃতি শুরু হয়ে যায়। হয় ওই ব্যক্তি কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে যায়—নাহয় হাত-পা ছুঁড়তে থাকে – মাথা দোলাতে থাকে – মুখে নানারকম আওয়াজ করতে থাকে- ইত্যাদি নানারকম অদ্ভুত আচরণ করে থাকে ৷ ওই অবস্থায় তার গলার স্বর পাল্টে যেতে পারে, শরীরে অসম্ভব জোর প্রকাশ পেতে পারে (হয়তো চার-পাঁচ জনে তাকে ধরে আটকাতে পারছে না।) এবং সর্বোপরি ঐ অবস্থায় তার মুখ দিয়ে এমন কিছু কথা বেরিয়ে আসতে পারে – যা উপস্থিত সকলকে অবাক করে দিতে পারে ! এটা বলা হোলো এইজন্য যে, ওই ব্যক্তির (নারী বা পুরুষ) মুখ দিয়ে তখন এমন এমন কথা বেরোতে পারে যা হয়তো উপস্থিত ব্যক্তিদের অতীত জীবনের গোপন কথা অথবা এমন কথা – যা ভবিষ্যতে ফলে যেতে পারে ৷
এইরকম ঘটনা দু-চারবার ঘটতে থাকলেই পারিপার্শ্বিক মানুষজন রটাতে শুরু করে যে, ওই ব্যক্তির মধ্যে ঠাকুর-দেবতা-জিন -পরী ইত্যাদি কোনো কিছুর ‘ভর’ . হয়েছে। এইরকম কান্ড বেশ কিছুদিন ঘটতে ঘটতে দেখা যায় সপ্তাহের বা মাসের অথবা বৎসরের নির্দিষ্ট দিনে ওই ব্যক্তিটির ঐরূপ ‘ভর’ বা ‘আবেশ’ হোচ্ছে এবং বহু মানুষ তার কাছে গিয়ে ধর্না দিচ্ছে – অর্থলাভ, সমস্যা দূরীকরণ, শারীরিক অসুস্থতা দূর – ইত্যাদির আশায়। এখনো গ্রামেগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে কান পাতলেই ওইরকম ‘ভর’ হওয়া বা ‘ডাক’ ধরা-র কাহিনী শুনতে পাওয়া যাবে ৷
গুরুমহারাজ ঐদিন এই সম্পর্কে আরো বলেছিলেন – ” সাধারণতঃ এই ধরনের ‘ভর’ বা ‘আবেশ’ বেশিরভাগই হয় মহিলাদের ৷ নিম্নতর সমাজে তারা এমনিতেই পিছিয়ে পড়া সদস্য – তার উপরে আবার পারিবারিক নানান অত্যাচার, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা অর্থাৎ নানাবিধ নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে তারাই৷ এছাড়া সাধারণ গ্রামঘরের নারীরা শারীরিকভাবেও দুর্বল থাকে। ছোটো বয়সে বিবাহ হওয়ায় এবং অভাবের সংসারে বিবাহ হওয়ায় প্রথম থেকেই অপুষ্টিতে ভোগে – তারপরে আবার অল্প বয়সেই গন্ডায়-গন্ডায় ছেলেমেয়ে হয়ে যায়। এইসব কারণে ঐসব মহিলারা__ সমাজের উপর, সংসারের উপর একেবারে বিরক্ত হয়ে পড়ে ৷ তখন তাদের মধ্যে অনেকেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবার জন্য কোনো না কোনো ঠাকুর-দেবতা (পীর, মারাংবুরু, শিব, কালী ইত্যাদি)-র শরণাপন্ন হয়ে তাকে আকুল হয়ে ডাকতে থাকে । এবার এইরকমটা বেশ কিছুদিন চলতে থাকলেই__ ওই দেব-দেবীদেরকে কেন্দ্র করে তার মধ্যে একটা বিশেষ ক্রিয়া(কুলকুন্ডলীনীর ক্রিয়া) শুরু হয়ে যায়। আর ঐ যে একটা বিশেষ ক্রিয়া হোচ্ছে –সেটির প্রকাশ ঘটানোর জন্য ঐ ব্যক্তি তখন নানারকম অদ্ভুত আচরণ ঘটাতে থাকে ৷ যা পরবর্তীতে ‘ভর’ হওয়া বা ‘আবেশ’ হওয়া বলে চালানো হয় ৷”
তবে এই ব্যাপারে গুরুমহারাজ আরো একটা দিকের কথা উল্লেখ করেছিলেন, আর সেইটা হোলো – ‘ অনেক মেয়ে ছোটবেলাতেই domestic violence-এর শিকার হয় অথবা কোনো কারনে তার প্রথম জীবনে হয়তো কোনো একটা ‘ভুল’ (বিশেষ করে sexual connection) ঘটে গেছিলো বা হয়তো মেয়েটি সত্যিই ‘বদ্’ (যার চরিত্রের ঠিক নাই) – এই ধরনের মহিলারাও তার হীনমন্যতা কাটিয়ে সামাজিক মর্যাদালাভের জন্য তার নিজের উপর এক ধরনের Supremacy আরোপ করতে চায় ! ফলে তাদেরও ‘ভর’ হয় বা বিশেষ বিশেষ তিথি নক্ষত্রে তাদের মধ্যে বিশেষ শক্তির ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়।।