জিজ্ঞাসু :~ আমরা সমাজে সবসময় শক্তিমান এবং বুদ্ধিমানদেরকেই তো সমাজনেতা হিসাবে পাই – বিবেকবানরা সবসময় এদের ছত্রছায়াতেই থেকে যায় ! কিন্তু হওয়া উচিত এর উল্টো টা__তাই নয় কি ?
গুরুমহারাজ : ~ না, যেমনটা চলছে _ওটাই তো হবে ! সমাজনেতা তো ক্ষত্রিয়শক্তি থেকে আসা কোনো ব্যক্তিই হবে ! কিন্তু হ্যাঁ __এদের মাথায় বসে থাকবে বিবেকবান কোনো মহাত্মা অর্থাৎ গুরুস্থানীয় কোনো ব্যক্তি, তাহলেই একটা আদর্শ সমাজ গড়ে উঠবে ৷ কিন্তু সেইটা হয়না বলেই যত গন্ডগোল । দ্যাখো, এখনো পৃথিবী গ্রহ ততটা উন্নত হয়নি যে, সব সময় বুদ্ধিমানেরা বিবেকবানেদের দ্বারা পরিচালিত হবে ! কোনো কোনো সময় পৃথিবী গ্রহের কোনো কোনো স্থানে এমনটা হয়তো ঘটে থাকে- আর সেইগুলি ই মানবসমাজে ‘আদর্শ’ হয়ে থেকে যায়৷
তবে এটা জেনে রাখবে যে,বিবেক ও বুদ্ধির মধ্যে ‘বিবেক’-ই সবকালে বা সবযুগেই আদৃত – বুদ্ধি নয় ! বুদ্ধিমানেরা মানব সমাজের ভালো হয়তো অনেককিছু করতে পারে – কিন্তু এটাও ঠিক যে, একশ্রেণীর বুদ্ধিমানেরাই জগতে সবচাইতে মন্দ কাজগুলো করেছে বা বলা যায় _জগতের ‘ভালো’-কে বারবার ধ্বংস করেছে !
দেখা যায় _সব দেশেই বুদ্ধিমানেরা নানারকম নীতি নির্ধারণ করেছে এবং সেই গুলি সমাজে লাগু করতে চেয়েছে। কিন্তু দ্যাখো – ন্যায়-অন্যায়, নীতি-দুর্নীতি এগুলি তো স্থান-কাল-পাত্রভেদে সীমাবদ্ধ ! কারণ এটা দেখা যায় _ একটা দেশের যেটি নীতি, অপর একটি দেশে হয়তো সেটাই দুর্নীতি !
আজ থেকে ২০০০ বছর আগে এই ভারতীয় সমাজেই যে সমস্ত নিয়ম– ‘ন্যায়’ হিসাবে বিবেচিত হোতো – এখনকার সমাজে হয়তো সেইগুলিই ‘অন্যায়’ ! আবার আজ থেকে আরো ২০০০ বছর পরে – হয়তো এখনকার অনেক নিয়ম-নীতি-ন্যায়গুলি বেনিয়ম, দুর্নীতি বা অন্যায় বলে বিবেচিত হবে ৷
কিন্তু দ্যাখো “বিবেক”-এর গৌরব সর্বকালীন, এটা universal ! বিবেকপরায়ণ ব্যক্তি সবযুগেই সমানভাবে সম্মান পেয়ে আসেন। কারণ, বিবেকপরায়ণ ব্যক্তিরা সবসময়েই ”বহুজন হিতায়, বহুজন সুখায়”- কাজ করে থাকেন। এটাকেই বৈষ্ণবগণ বলেছে – “কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতি-ইচ্ছা!” আর বুদ্ধি চালিত কর্ম দিয়ে হয় “আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি-ইচ্ছা !”