গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ একবার সিটিং-এ বলেছিলেন – ” পৃথিবীতে মানুষের দুটি বিভাগ বা দুটি জাত (জাতি) আছে ‘নারী ও পুরুষ’ এবং সেটি ঈশ্বরসৃষ্ট। বাকি যে সমস্ত বিভাগ রয়েছে বর্ণভেদ অর্থাৎ সাদা-কালো , জাতিভেদ অর্থাৎ উঁচু জাতি-নিচু জাতি , ধর্মীয় বিভেদ অর্থাৎ হিন্দু , মুসলমান , খ্রীষ্টান , জৈন , বৌদ্ধ , শিখ ইত্যাদি । সমস্ত ভেদগুলি মানুষ সৃষ্টি করেছে ঈশ্বর সৃষ্টি করেনি ৷”
পৃথিবীর সমস্ত দেশে সমস্যা রয়েছে। এক একটা দেশে মানুষে মানুষে বিভেদের সমস্যাটা শুধু ভিন্ন ভিন্ন ধরণের – কিন্তু বিভেদ রয়েছে ! বর্তমানে ভারতবর্ষে একটা বিশাল সমস্যা , ভারত-পাকিস্থান বিভেদ ৷ এটাই দ্রুত হিন্দু-মুসলমান বিভেদের দিকে turn নিচ্ছে , জায়গায় জায়গায় আগে এই বিভেদগত দাঙ্গা হয়ে গেছে , খুব শীঘ্র হয়তো ব্যাপক আকারে দেখা দেবে – ভারতীয় সমাজে !
কিন্তু একটা কথা সকলেরই ভাবা উচিত _খোদ পাকিস্থান বা অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের ভিতরে কি সমস্যা নাই ? বিভেদ নাই ? নিজেদেরই মধ্যে হিংসা-মারামারি নাই ? নিশ্চই আছে ৷ মুসলিম রাষ্ট্রগুলিও নানান বিভেদে বিপন্ন — সিয়া-সুন্নী-মুজাহিদিন , তালিবান কত বিভেদ! রক্তারক্তি তো লেগেই আছে !!
খ্রীষ্টান দেশগুলিতেও রয়েছে বিভেদ – প্রথমেই সাদা-কালো বিভেদ ! উভয়েই খ্রীষ্টান কিন্তু বর্ণগত বৈষম্য ! এছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য , অবস্থানগত বৈষম্য! শুধু বৈষম্য আর বৈষম্য !
কিন্তু এর কারণ কি ? গুরু মহারাজ বলেছিলেন – “বিভেদ-বৈষম্য মানুষের মনে-ই রয়েছে । মনের বিভেদ না কাটলে _ সমাজের বৈষম্য বা বিভেদ , মানুষে-মানুষে বিভেদ থাকবেই ৷”
সত্যিই তো – বর্ণভেদ , ধর্মভেদ , জাতিভেদ তো কারণ নয় – তা যদি হোত তাহলে একই পরিবারের মানুষের মধ্যে বিভেদ কেন ? ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ-মারামারি তো সমাজে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা এবং যে ঘটনা বহু প্রাচীনকাল থেকেই সমাজে রয়েছে। প্রমাণ হিসাবে বলা যায় ‘কুরু-পান্ডবের যুদ্ধ বা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ’, যা ভারতীয় মহাকাব্যে অমর হয়ে আছে’!
যাইহোক , ফিরে আসি গুরু মহারাজের কথায় – উনি বলেছিলেন পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে প্রকৃতিগতভাবে দুটি জাতি বা ভেদ , তা হ’ল নারী ও পুরুষ , বাকি মানুষে-মানুষে ভেদ হোল মানুষের সৃষ্টি। ভারতীয় সমাজের জাতিভেদ প্রথার সৃষ্টির কথা বলতে গিয়ে গুরু মহারাজ বলেছিলেন – “রাজতন্ত্রের সময়েই এই জাতিভেদ গুলি হয়েছে । এক একটি শক্তিশালী রাজা যখনই অন্য কোন রাজ্যকে আক্রমণ করতো , তখন শক্তিশালী রাজার সৈন্যসামন্ত বিজিত রাজার সৈন্যদেরকে মেরে ফেলত বা বন্দী করে তাদের ক্রীতদাস হিসাবে কাজ করাতো । ফলে সেই রাজ্যে যারা ক্ষত্রিয় ছিল তারা হয়ে যেত ‘দাস’ ৷ তাছাড়াও বহুসংখ্যক সৈনিকরা মারা যাওয়ায় তাদের স্ত্রী-রাও অসহায় হয়ে পড়তো । ফলে বিজয়ী সেনাবাহিনী তাদেরকে নিজেদের অধিকারে নিয়ে আসতো – ধনরত্ন লুঠপাটের মতো স্ত্রীরত্নও লুঠের মাল হিসাবে বিবেচিত হোত । সেনাছাউনি সরে গেলেই ঐ বেচারা অসহায় স্ত্রী-লোকেরা সমাজে ব্রাত্য হয়ে যেতো – তাদের গর্ভস্থ সন্তানেরা সমাজের সবচাইতে তলায় স্থান পেতো ! এইভাবে নিম্নশ্রেণী বা নিম্নজাতি , অস্পৃশ্যজাতি – ইত্যাদির জন্ম হয়েছিল ভারতীয় সমাজে !”
হিন্দু-মুসলমান সমস্যা ভারতীয় সমাজে খুব বেশীদিনের নয় , মাত্র ৮০০/৯০০ বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে ৷ যেখানে ভারতবর্ষের সভ্যতার প্রাচীনত্ব সম্বন্ধে আধুনিক প্রত্নতত্ত্ববিদদের গবেষণায় জানা গিয়েছে অন্ততঃ ১৫/২০ হাজার বছর (মেহেরগরের সাতটি স্তরে পৃথক পৃথক সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ এখনও পাওয়া গেছে — হয়তো আরও আছে !) ! সেইবিচারে মুসলমানদের স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাসের সূচনা হয় মহম্মদ ঘোরী বা কুতুবুদ্দিন আইবকের সময়কালে (১১৯২/৯৩ খ্রীষ্টাব্দ) । তুর্কী , পারসিক , পাঠান ও মোঙ্গলীয়রা ইসলামধর্মে দীক্ষিত হবার পর প্রথমদিকে এরা ভারতবর্ষের ঐশ্বর্য্য দেখে অতর্কিতে আক্রমণ করে কিছু ধনরত্ন , খাদ্য এবং স্ত্রীরত্ন লুঠপাট করে পালাতো ! স্ত্রীরত্ন লুঠপাট করার একটা কারণ ছিল – প্রথমতঃ মরুভূমির নারীরা বেশীরভাগই বন্ধ্যা হয় ! ” নদী-নারী-মৃত্তিকা ” – গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ” এরা সম্পর্কযুক্ত ! যেখানকার মৃত্তিকা বন্ধ্যা , নদী নাই বা কম আছে সেখানে নারীও বন্ধ্যা বা প্রায় বন্ধ্যা হবার সম্ভাবনা।” আর দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে – যাযাবর দস্যুদের গোষ্ঠিতে অধিক নারী থাকলে অধিক সন্তান জন্মাবে এবং সেই দলের লোকসংখ্যা বাড়লে , দলটি শক্তিশালী হবে । এইসব কারণেই মুসলিমরা আসার পর থেকেই নারীরা রত্ন হিসাবে বিবেচিত হতে শুরু করল।
মুসলিমরা ভারতে আসার আগে ভারতবর্ষে নারীরা অপেক্ষাকৃত স্বাধীন ছিল। বহুপূর্বে ভারতে ঋষি-মুনিরা বনজঙ্গলে, সমাজের বাইরে গিয়ে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা দের নিয়ে বসবাস করতো, সেখানে কোন অশান্তি বা অসুবিধা তো হোতই না বরং শান্তির সন্ধানে সমাজের উচ্চস্তরের সদস্যরা, এমনকি রাজপরিবারের লোকজনেরাও মাঝে মাঝে সেখানে বেড়াতে যেতো।।
তবু পৌরাণিক শাশ্ত্রে উল্লেখ রয়েছে _দু-একটি অসুর কোন কোন সময় ঐ আশ্রমগুলিতে উৎপাত কোরতো, তখন আবার রাজাকে সৈন্য পাঠাতে হোত _ঐ অত্যাচার দমন করতে!
ভারতবর্ষে মুসলমান আগ্রাসনের আগে নারীদের ঘোমটাও (ঘুঙ্গট) ছিল না, বোরখা তো দূর অস্ত! প্রাচীন ভারতে নারীরা খুব সুন্দর কেশবিন্যাস, কেশচর্চা কোরতো (খুব ভালো এবং লম্বা চুল ছিল ভারতীয় নারীদের) _এবং তা প্রদর্শন করতো! মাথার খোঁপার সাথে উড়নি বা ওরনা আঁটা থাকতো। গুরুমহারাজ বলেছিলেন _”ঊর্ননাভ অর্থাৎ মাকড়সার জালের মতো সুক্ষ ও স্বচ্ছ বস্তু হিসাবেই উরনি বা ওরনার নামকরন। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে _ওরনার ব্যবহারে কেশবিন্যাস অথবা শরীরের অন্যান্য অংশ ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করা হোত না _কারন তার কোন প্রয়োজন ছিল না।
নারীদের ঊর্ধ্বাঙ্গের পোষাক পরিধানের ব্যাপারেও প্রাচীনকালের নারীরা ছিল অনেকটাই স্বাধীন ও খোলামেলা। শুধুমাত্র বক্ষবন্ধনীই পোষাক হিসাবে যথেষ্ট ছিল। প্রাচীন ভারতীয় শাশ্ত্রাদিতে নারীর পোষাকের যে বর্ণনা পাওয়া যায় এবং প্রাচীন মন্দিরগাত্রে যে সমস্ত চিত্রকলা দেখা যায়, তাতে প্রাচীন ভারতের (মুসলিমদের ভারতে আসার আগের ভারতবর্ষে) নারীদের পোষাক কেমন ছিল _তার সুস্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায়।
ভারতবর্ষে বসবাসকারীরা নিজেরা ‘আর্য্য’ হিসাবে পরিচয় দিতো। নারীদের সম্বোধন করা হোত ‘আর্যা’ হিসাবে । রামায়ন, মহাভারতের ন্যায় প্রাচীন গ্রন্থে ঐ শব্দগুলির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। মাত্র প্রায় ২৫০-বছর আগে ইংরেজরা এদেশে _’উড়ে এসে জুড়ে বসা’-র পর হটাৎ করে একটা গল্প রচনা করে বসলো (অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে) _”আর্য্যরা ভারতবর্ষের বাইরে থেকে এসেছিল”। আর ইংরেজদের বদান্যতায় শিক্ষিত তৎকালীন সমাজের কর্তাব্যক্তিরা এই কথা খেয়ে ও নিল(আত্নস্থ করল)। ভারতীয় পাঠ্যপুস্তকে লেখা হয়ে গেল _” আর্য্যরা ভারতের বাইরে থেকে এসেছে”, যেটা আজও আমাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা পড়তে বসে মুখস্থ করে যাচ্ছে। (ক্রমশঃ)
[এই আলোচনাটা চলবে]
পৃথিবীর সমস্ত দেশে সমস্যা রয়েছে। এক একটা দেশে মানুষে মানুষে বিভেদের সমস্যাটা শুধু ভিন্ন ভিন্ন ধরণের – কিন্তু বিভেদ রয়েছে ! বর্তমানে ভারতবর্ষে একটা বিশাল সমস্যা , ভারত-পাকিস্থান বিভেদ ৷ এটাই দ্রুত হিন্দু-মুসলমান বিভেদের দিকে turn নিচ্ছে , জায়গায় জায়গায় আগে এই বিভেদগত দাঙ্গা হয়ে গেছে , খুব শীঘ্র হয়তো ব্যাপক আকারে দেখা দেবে – ভারতীয় সমাজে !
কিন্তু একটা কথা সকলেরই ভাবা উচিত _খোদ পাকিস্থান বা অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের ভিতরে কি সমস্যা নাই ? বিভেদ নাই ? নিজেদেরই মধ্যে হিংসা-মারামারি নাই ? নিশ্চই আছে ৷ মুসলিম রাষ্ট্রগুলিও নানান বিভেদে বিপন্ন — সিয়া-সুন্নী-মুজাহিদিন , তালিবান কত বিভেদ! রক্তারক্তি তো লেগেই আছে !!
খ্রীষ্টান দেশগুলিতেও রয়েছে বিভেদ – প্রথমেই সাদা-কালো বিভেদ ! উভয়েই খ্রীষ্টান কিন্তু বর্ণগত বৈষম্য ! এছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য , অবস্থানগত বৈষম্য! শুধু বৈষম্য আর বৈষম্য !
কিন্তু এর কারণ কি ? গুরু মহারাজ বলেছিলেন – “বিভেদ-বৈষম্য মানুষের মনে-ই রয়েছে । মনের বিভেদ না কাটলে _ সমাজের বৈষম্য বা বিভেদ , মানুষে-মানুষে বিভেদ থাকবেই ৷”
সত্যিই তো – বর্ণভেদ , ধর্মভেদ , জাতিভেদ তো কারণ নয় – তা যদি হোত তাহলে একই পরিবারের মানুষের মধ্যে বিভেদ কেন ? ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ-মারামারি তো সমাজে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা এবং যে ঘটনা বহু প্রাচীনকাল থেকেই সমাজে রয়েছে। প্রমাণ হিসাবে বলা যায় ‘কুরু-পান্ডবের যুদ্ধ বা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ’, যা ভারতীয় মহাকাব্যে অমর হয়ে আছে’!
যাইহোক , ফিরে আসি গুরু মহারাজের কথায় – উনি বলেছিলেন পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে প্রকৃতিগতভাবে দুটি জাতি বা ভেদ , তা হ’ল নারী ও পুরুষ , বাকি মানুষে-মানুষে ভেদ হোল মানুষের সৃষ্টি। ভারতীয় সমাজের জাতিভেদ প্রথার সৃষ্টির কথা বলতে গিয়ে গুরু মহারাজ বলেছিলেন – “রাজতন্ত্রের সময়েই এই জাতিভেদ গুলি হয়েছে । এক একটি শক্তিশালী রাজা যখনই অন্য কোন রাজ্যকে আক্রমণ করতো , তখন শক্তিশালী রাজার সৈন্যসামন্ত বিজিত রাজার সৈন্যদেরকে মেরে ফেলত বা বন্দী করে তাদের ক্রীতদাস হিসাবে কাজ করাতো । ফলে সেই রাজ্যে যারা ক্ষত্রিয় ছিল তারা হয়ে যেত ‘দাস’ ৷ তাছাড়াও বহুসংখ্যক সৈনিকরা মারা যাওয়ায় তাদের স্ত্রী-রাও অসহায় হয়ে পড়তো । ফলে বিজয়ী সেনাবাহিনী তাদেরকে নিজেদের অধিকারে নিয়ে আসতো – ধনরত্ন লুঠপাটের মতো স্ত্রীরত্নও লুঠের মাল হিসাবে বিবেচিত হোত । সেনাছাউনি সরে গেলেই ঐ বেচারা অসহায় স্ত্রী-লোকেরা সমাজে ব্রাত্য হয়ে যেতো – তাদের গর্ভস্থ সন্তানেরা সমাজের সবচাইতে তলায় স্থান পেতো ! এইভাবে নিম্নশ্রেণী বা নিম্নজাতি , অস্পৃশ্যজাতি – ইত্যাদির জন্ম হয়েছিল ভারতীয় সমাজে !”
হিন্দু-মুসলমান সমস্যা ভারতীয় সমাজে খুব বেশীদিনের নয় , মাত্র ৮০০/৯০০ বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে ৷ যেখানে ভারতবর্ষের সভ্যতার প্রাচীনত্ব সম্বন্ধে আধুনিক প্রত্নতত্ত্ববিদদের গবেষণায় জানা গিয়েছে অন্ততঃ ১৫/২০ হাজার বছর (মেহেরগরের সাতটি স্তরে পৃথক পৃথক সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ এখনও পাওয়া গেছে — হয়তো আরও আছে !) ! সেইবিচারে মুসলমানদের স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাসের সূচনা হয় মহম্মদ ঘোরী বা কুতুবুদ্দিন আইবকের সময়কালে (১১৯২/৯৩ খ্রীষ্টাব্দ) । তুর্কী , পারসিক , পাঠান ও মোঙ্গলীয়রা ইসলামধর্মে দীক্ষিত হবার পর প্রথমদিকে এরা ভারতবর্ষের ঐশ্বর্য্য দেখে অতর্কিতে আক্রমণ করে কিছু ধনরত্ন , খাদ্য এবং স্ত্রীরত্ন লুঠপাট করে পালাতো ! স্ত্রীরত্ন লুঠপাট করার একটা কারণ ছিল – প্রথমতঃ মরুভূমির নারীরা বেশীরভাগই বন্ধ্যা হয় ! ” নদী-নারী-মৃত্তিকা ” – গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ” এরা সম্পর্কযুক্ত ! যেখানকার মৃত্তিকা বন্ধ্যা , নদী নাই বা কম আছে সেখানে নারীও বন্ধ্যা বা প্রায় বন্ধ্যা হবার সম্ভাবনা।” আর দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে – যাযাবর দস্যুদের গোষ্ঠিতে অধিক নারী থাকলে অধিক সন্তান জন্মাবে এবং সেই দলের লোকসংখ্যা বাড়লে , দলটি শক্তিশালী হবে । এইসব কারণেই মুসলিমরা আসার পর থেকেই নারীরা রত্ন হিসাবে বিবেচিত হতে শুরু করল।
মুসলিমরা ভারতে আসার আগে ভারতবর্ষে নারীরা অপেক্ষাকৃত স্বাধীন ছিল। বহুপূর্বে ভারতে ঋষি-মুনিরা বনজঙ্গলে, সমাজের বাইরে গিয়ে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা দের নিয়ে বসবাস করতো, সেখানে কোন অশান্তি বা অসুবিধা তো হোতই না বরং শান্তির সন্ধানে সমাজের উচ্চস্তরের সদস্যরা, এমনকি রাজপরিবারের লোকজনেরাও মাঝে মাঝে সেখানে বেড়াতে যেতো।।
তবু পৌরাণিক শাশ্ত্রে উল্লেখ রয়েছে _দু-একটি অসুর কোন কোন সময় ঐ আশ্রমগুলিতে উৎপাত কোরতো, তখন আবার রাজাকে সৈন্য পাঠাতে হোত _ঐ অত্যাচার দমন করতে!
ভারতবর্ষে মুসলমান আগ্রাসনের আগে নারীদের ঘোমটাও (ঘুঙ্গট) ছিল না, বোরখা তো দূর অস্ত! প্রাচীন ভারতে নারীরা খুব সুন্দর কেশবিন্যাস, কেশচর্চা কোরতো (খুব ভালো এবং লম্বা চুল ছিল ভারতীয় নারীদের) _এবং তা প্রদর্শন করতো! মাথার খোঁপার সাথে উড়নি বা ওরনা আঁটা থাকতো। গুরুমহারাজ বলেছিলেন _”ঊর্ননাভ অর্থাৎ মাকড়সার জালের মতো সুক্ষ ও স্বচ্ছ বস্তু হিসাবেই উরনি বা ওরনার নামকরন। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে _ওরনার ব্যবহারে কেশবিন্যাস অথবা শরীরের অন্যান্য অংশ ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করা হোত না _কারন তার কোন প্রয়োজন ছিল না।
নারীদের ঊর্ধ্বাঙ্গের পোষাক পরিধানের ব্যাপারেও প্রাচীনকালের নারীরা ছিল অনেকটাই স্বাধীন ও খোলামেলা। শুধুমাত্র বক্ষবন্ধনীই পোষাক হিসাবে যথেষ্ট ছিল। প্রাচীন ভারতীয় শাশ্ত্রাদিতে নারীর পোষাকের যে বর্ণনা পাওয়া যায় এবং প্রাচীন মন্দিরগাত্রে যে সমস্ত চিত্রকলা দেখা যায়, তাতে প্রাচীন ভারতের (মুসলিমদের ভারতে আসার আগের ভারতবর্ষে) নারীদের পোষাক কেমন ছিল _তার সুস্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায়।
ভারতবর্ষে বসবাসকারীরা নিজেরা ‘আর্য্য’ হিসাবে পরিচয় দিতো। নারীদের সম্বোধন করা হোত ‘আর্যা’ হিসাবে । রামায়ন, মহাভারতের ন্যায় প্রাচীন গ্রন্থে ঐ শব্দগুলির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। মাত্র প্রায় ২৫০-বছর আগে ইংরেজরা এদেশে _’উড়ে এসে জুড়ে বসা’-র পর হটাৎ করে একটা গল্প রচনা করে বসলো (অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে) _”আর্য্যরা ভারতবর্ষের বাইরে থেকে এসেছিল”। আর ইংরেজদের বদান্যতায় শিক্ষিত তৎকালীন সমাজের কর্তাব্যক্তিরা এই কথা খেয়ে ও নিল(আত্নস্থ করল)। ভারতীয় পাঠ্যপুস্তকে লেখা হয়ে গেল _” আর্য্যরা ভারতের বাইরে থেকে এসেছে”, যেটা আজও আমাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা পড়তে বসে মুখস্থ করে যাচ্ছে। (ক্রমশঃ)
[এই আলোচনাটা চলবে]