গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের আলোচনা থেকে ‘যুদ্ধ কেন’ – এই প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল । গুরু মহারাজ বলেছিলেন প্রাণের অভিবিকাশের সঙ্গে সঙ্গেই মারামারি , হানাহানি , রেষারেটি-র ব্যাপারটা শুরু হয়ে গিয়েছিল । উনি বলেছিলেন – উদ্ভিদজগতে দেখা যায় বনাঞ্চলে বা যেখানে অনেক গাছ একত্রে আছে — যেখানে উপরে Space পাওয়ার জন্য বা সূর্যের আলো পাবার জন্য গাছেদের শাখা-প্রশাখাদের সে কি Competition !! একটা গাছ যদি একটু শক্তিশালী হয়ে ওঠে — সে অপর গাছগুলির ডালপালাকে আর কিছুতেই বাড়তে দিতে চায় না ! ছোট গাছগুলির ডালপালার ওপর তার নিজস্ব ডালপালা চাপিয়ে দিয়ে তাকে চেপে মেরে ফেলতে চায় — অনেকসময় ছোট গাছগুলি আলো-বাতাসের অভাবে মারাও যায় ! এমনকি লতা গাছগুলি কোন বৃক্ষকে অবলম্বন করে উপরে ওঠে – পরে সেই গাছে উঠে এমনভাবে তার লতাপাতা বিস্তার করে যে ঐ বৃক্ষটিকে আর আলো-বাতাস পেতেই দেয় না ! ফলস্বরূপ অনেক বড় বড় বৃক্ষ ঐ লতাগুলির জন্য মারা যায় ।
গুরু মহারাজ আরও বলেছিলেন – মাটি কেটে গর্ত করার সময় বা কোন জলাশয়ের পাড় কাটার সময় দেখা যায় গাছেদের মূলগুলির মধ্যে কি অসম্ভব লড়াই চলছে ! মূলগুলি মাটির গভীরে প্রবেশ করে কিন্তু মাটির কৈশিক জল গ্রহণ করার কাজটি করে মূলের মূলরোম অঞ্চল , এটি একেবারে শেষপ্রান্তে থাকে ৷ মাটির গভীরে যে স্তরে জল রয়েছে সেখানে মূল চালাতে পারলে গাছের আর কোন জলের অভাব হয় না ৷ কিন্তু মাটির স্তরে সব স্থানে এই Layer বা স্তরটি সমান গভীরতায় থাকে না ! কোথাও হয়তো ১৫/২০ ফুটের মধ্যেই (বিশেষতঃ নদী তীরবর্ত্তী অঞ্চলে) থাকে , কিন্তু কোথাও কোথাও মাটির নীচে প্রথম জলস্তর থাকে ৫০/৬০ ফুট গভীরে ! এছাড়া হয়তো ১৫/২০ ফুট নীচেই অপ্রবেশ্য পাথরের স্তর পড়ে যায় ৷ এইসব কারণে গাছেরা, তাদের মূল মাটির গভীরে প্রবেশ না করিয়ে কাছাকাছি কোন জলাশয়ের দিকে চালিয়ে দেয় ৷ আর সেখানেই দেখা যায় মূলেদের মধ্যে মারামারি , রেষারেষির চিত্র! এক একটি শক্তিশালী গাছের মূল কিভাবে অপেক্ষাকৃত দূর্বল গাছগুলির মূলগুলিকে কি অদ্ভুত কায়দায় আটকে দিতে চাইছে ! শক্তিশালী গাছটির মূলগুলি এমনভাবে জাল সৃষ্টি করছে – যাতে অপর গাছগুলির মূল তা ভেদ করে জলাশয়ের জল টানতে না পারে !!
গুরু মহারাজ আরও বলেছিলেন প্রাণীজগতের কথা ! ‘বাঁচা’ ও ‘বাড়া’ – জীবের ধর্ম ৷ জীব বাঁচতে চায় এবং বংশবৃদ্ধি করতে চায় । এইভাবে যেকোন প্রজাতি তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায় । বাঁচার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন খাদ্যের – তাই প্রাণীজগতে পারস্পারিক লড়াই সংগ্রাম শুরু হয় খাদ্যের অধিকার নিয়ে ! অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম – আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম ! এই লড়াইয়ে যারা টিঁকতে পেরেছে – তাদেরই বিবর্তন হয়েছে , তাদের-ই অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে! আর যারা এই লড়াই-এ হেরে গেছে, সেইসব জীব বা প্রজাতি _হয় একেবারে অবলুপ্ত হয়ে গেছে অথবা লুপ্তপ্রায় প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে the ৷
এখন কথা হচ্ছে, প্রাণীজগতে অন্য আর যে লড়াইটি প্রকট – সেটি হ’ল বংশবিস্তারের জন্য লড়াই , নারীর অধিকার নিয়ে লড়াই । সে লড়াই-ও বড় ভয়ংকর! পাগলের মতো একই প্রজাতির পুরুষেরা নিজেদের মধ্যে নারীর অধিকার নিয়ে লড়াই করছে – কত সংখ্যক আহত হচ্ছে , নিহত-ও হচ্ছে অনেক !
গুরুমহারাজ তাঁর নিজের পূর্ব পূর্ব জীবনের অতীত ইতিহাসের কথা একবার বলেছিলেন ।কোন সময় তাঁর হাতিশরীর ছিল! তিনি ছিলেন এক বিশাল হস্তিযূথের দলপতি, তাঁর ছিল বিরাট শরীর এবং তিনি ছিলেন তেমনি শক্তিশালী! পশুজগতে সাধারণত দলের সমস্ত নারীর উপর দলপতিরই একচেটিয়া অধিকার থাকে! মাঝেমাঝেই দলের তরুন শক্তিশালী হাতিরা এবং বহিরাগত তরুন শক্তিশালী কোন হাতি __দলপতিকে চ্যালেঞ্জ করে বসে! আর তখনই শুরু হয়ে যায় লড়াই!
গুরুমহারাজ বললেন _একবার ৭/৮-জন তরুন হাতি দলপতিকে(গুরুমহারাজের হাতিশরীর) আক্রমণ করে বসল। দলপতি একে একে সকলকেই পরাজিত করল, তাদের সকলেই আহত এবং রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল! গুরুমহারাজ বলতে লাগলেন _”লড়াই শেষ হয়ে গেল। আমিও তখন আহত এবং রক্তাক্ত, বাকিরাও তাই, আর যার জন্য (একটি মাদি হাতি) লড়াই – সে নিশ্চিন্তে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ঘাসপাতা খাচ্ছিল! এইসব দেখে হটাৎ করে আমার মনে একটা তীব্র বৈরাগ্য এল! আমি সাথে সাথে ঐ দলের উপর কর্তৃত্ব ত্যাগ করে একা একা বিপরীত দিকে চলতে শুরু করলাম। মাদি হাতিটি আমার পিছন পিছন অনেক দূর পর্যন্ত এসেছিল, কিন্তু আমি আর পিছন ফিরে তাকাই নি! এরপর আমি হিমালয়ের পাদদেশে বিভিন্ন দলছুট পুরুষ হাতিদের নিয়ে একটা সন্ন্যাসী-হাতির দল করেছিলাম! যে দলের সদস্যরা কেউই আর কখনো নারীর অধিকার নিয়ে অপরের সাথে লড়াই করবে না। কিছুদিন আগে (১৯৮৬/৮৭) আমি যখন উত্তর ভারতে গিয়েছিলাম, তখন একা একা হিমালয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘোরার সময় ঐরকম একটি সন্ন্যাসী হাতির দলের সাথে আমার দেখা হয়েছিল _বুঝলাম, কতকাল আগে তৈরি করা পরম্পরাটি আজও বজায় রয়েছে।”
গুরুমহারাজ আরও বলেছিলেন _মানুষ সহ বিভিন্ন উন্নত প্রানীর জন্মলগ্নের কথা! স্ত্রী পুরুষের মিলনের সময় জরায়ুমধ্যে লক্ষ লক্ষ শুক্রানু একটিমাত্র ডিম্বানুর সাথে মিলিত হবার জন্য ছুটতে থাকে _তখন সেখানে শুরু হয়ে যায় ভয়ানক competition, ভয়ংকর লড়াই! কে লাভ করবে ঐ ডিম্বানুটিকে_লড়াইটা তার জন্য! সুপুষ্ট, সুস্থ-সবল শুক্রানুরা তখন অপেক্ষাকৃত দূর্বলদের হারিয়ে এগিয়ে চলে জয়ের লক্ষ্যে! এরপর হয় প্রকৃত মিলন!
গুরুমহারাজ এই পুরো ব্যাপারটিকে প্রাচীনকালের স্বয়ংবর সভার সঙ্গে তুলনা করে অতি অপূর্ব একটা আলোচনা করেছিলেন _সম্ভব হলে কোন সময় এটি বিবৃত করার চেষ্টা করা হবে। (ক্রমশঃ)
গুরু মহারাজ আরও বলেছিলেন – মাটি কেটে গর্ত করার সময় বা কোন জলাশয়ের পাড় কাটার সময় দেখা যায় গাছেদের মূলগুলির মধ্যে কি অসম্ভব লড়াই চলছে ! মূলগুলি মাটির গভীরে প্রবেশ করে কিন্তু মাটির কৈশিক জল গ্রহণ করার কাজটি করে মূলের মূলরোম অঞ্চল , এটি একেবারে শেষপ্রান্তে থাকে ৷ মাটির গভীরে যে স্তরে জল রয়েছে সেখানে মূল চালাতে পারলে গাছের আর কোন জলের অভাব হয় না ৷ কিন্তু মাটির স্তরে সব স্থানে এই Layer বা স্তরটি সমান গভীরতায় থাকে না ! কোথাও হয়তো ১৫/২০ ফুটের মধ্যেই (বিশেষতঃ নদী তীরবর্ত্তী অঞ্চলে) থাকে , কিন্তু কোথাও কোথাও মাটির নীচে প্রথম জলস্তর থাকে ৫০/৬০ ফুট গভীরে ! এছাড়া হয়তো ১৫/২০ ফুট নীচেই অপ্রবেশ্য পাথরের স্তর পড়ে যায় ৷ এইসব কারণে গাছেরা, তাদের মূল মাটির গভীরে প্রবেশ না করিয়ে কাছাকাছি কোন জলাশয়ের দিকে চালিয়ে দেয় ৷ আর সেখানেই দেখা যায় মূলেদের মধ্যে মারামারি , রেষারেষির চিত্র! এক একটি শক্তিশালী গাছের মূল কিভাবে অপেক্ষাকৃত দূর্বল গাছগুলির মূলগুলিকে কি অদ্ভুত কায়দায় আটকে দিতে চাইছে ! শক্তিশালী গাছটির মূলগুলি এমনভাবে জাল সৃষ্টি করছে – যাতে অপর গাছগুলির মূল তা ভেদ করে জলাশয়ের জল টানতে না পারে !!
গুরু মহারাজ আরও বলেছিলেন প্রাণীজগতের কথা ! ‘বাঁচা’ ও ‘বাড়া’ – জীবের ধর্ম ৷ জীব বাঁচতে চায় এবং বংশবৃদ্ধি করতে চায় । এইভাবে যেকোন প্রজাতি তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায় । বাঁচার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন খাদ্যের – তাই প্রাণীজগতে পারস্পারিক লড়াই সংগ্রাম শুরু হয় খাদ্যের অধিকার নিয়ে ! অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম – আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম ! এই লড়াইয়ে যারা টিঁকতে পেরেছে – তাদেরই বিবর্তন হয়েছে , তাদের-ই অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে! আর যারা এই লড়াই-এ হেরে গেছে, সেইসব জীব বা প্রজাতি _হয় একেবারে অবলুপ্ত হয়ে গেছে অথবা লুপ্তপ্রায় প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে the ৷
এখন কথা হচ্ছে, প্রাণীজগতে অন্য আর যে লড়াইটি প্রকট – সেটি হ’ল বংশবিস্তারের জন্য লড়াই , নারীর অধিকার নিয়ে লড়াই । সে লড়াই-ও বড় ভয়ংকর! পাগলের মতো একই প্রজাতির পুরুষেরা নিজেদের মধ্যে নারীর অধিকার নিয়ে লড়াই করছে – কত সংখ্যক আহত হচ্ছে , নিহত-ও হচ্ছে অনেক !
গুরুমহারাজ তাঁর নিজের পূর্ব পূর্ব জীবনের অতীত ইতিহাসের কথা একবার বলেছিলেন ।কোন সময় তাঁর হাতিশরীর ছিল! তিনি ছিলেন এক বিশাল হস্তিযূথের দলপতি, তাঁর ছিল বিরাট শরীর এবং তিনি ছিলেন তেমনি শক্তিশালী! পশুজগতে সাধারণত দলের সমস্ত নারীর উপর দলপতিরই একচেটিয়া অধিকার থাকে! মাঝেমাঝেই দলের তরুন শক্তিশালী হাতিরা এবং বহিরাগত তরুন শক্তিশালী কোন হাতি __দলপতিকে চ্যালেঞ্জ করে বসে! আর তখনই শুরু হয়ে যায় লড়াই!
গুরুমহারাজ বললেন _একবার ৭/৮-জন তরুন হাতি দলপতিকে(গুরুমহারাজের হাতিশরীর) আক্রমণ করে বসল। দলপতি একে একে সকলকেই পরাজিত করল, তাদের সকলেই আহত এবং রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল! গুরুমহারাজ বলতে লাগলেন _”লড়াই শেষ হয়ে গেল। আমিও তখন আহত এবং রক্তাক্ত, বাকিরাও তাই, আর যার জন্য (একটি মাদি হাতি) লড়াই – সে নিশ্চিন্তে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ঘাসপাতা খাচ্ছিল! এইসব দেখে হটাৎ করে আমার মনে একটা তীব্র বৈরাগ্য এল! আমি সাথে সাথে ঐ দলের উপর কর্তৃত্ব ত্যাগ করে একা একা বিপরীত দিকে চলতে শুরু করলাম। মাদি হাতিটি আমার পিছন পিছন অনেক দূর পর্যন্ত এসেছিল, কিন্তু আমি আর পিছন ফিরে তাকাই নি! এরপর আমি হিমালয়ের পাদদেশে বিভিন্ন দলছুট পুরুষ হাতিদের নিয়ে একটা সন্ন্যাসী-হাতির দল করেছিলাম! যে দলের সদস্যরা কেউই আর কখনো নারীর অধিকার নিয়ে অপরের সাথে লড়াই করবে না। কিছুদিন আগে (১৯৮৬/৮৭) আমি যখন উত্তর ভারতে গিয়েছিলাম, তখন একা একা হিমালয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘোরার সময় ঐরকম একটি সন্ন্যাসী হাতির দলের সাথে আমার দেখা হয়েছিল _বুঝলাম, কতকাল আগে তৈরি করা পরম্পরাটি আজও বজায় রয়েছে।”
গুরুমহারাজ আরও বলেছিলেন _মানুষ সহ বিভিন্ন উন্নত প্রানীর জন্মলগ্নের কথা! স্ত্রী পুরুষের মিলনের সময় জরায়ুমধ্যে লক্ষ লক্ষ শুক্রানু একটিমাত্র ডিম্বানুর সাথে মিলিত হবার জন্য ছুটতে থাকে _তখন সেখানে শুরু হয়ে যায় ভয়ানক competition, ভয়ংকর লড়াই! কে লাভ করবে ঐ ডিম্বানুটিকে_লড়াইটা তার জন্য! সুপুষ্ট, সুস্থ-সবল শুক্রানুরা তখন অপেক্ষাকৃত দূর্বলদের হারিয়ে এগিয়ে চলে জয়ের লক্ষ্যে! এরপর হয় প্রকৃত মিলন!
গুরুমহারাজ এই পুরো ব্যাপারটিকে প্রাচীনকালের স্বয়ংবর সভার সঙ্গে তুলনা করে অতি অপূর্ব একটা আলোচনা করেছিলেন _সম্ভব হলে কোন সময় এটি বিবৃত করার চেষ্টা করা হবে। (ক্রমশঃ)