গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা বলা হচ্ছিল – পৃথিবীগ্রহ যে এখনও অনুন্নত চেতনায় রয়েছে এবং তারজন্যেই যে এই মারামারি-হানাহানি , এইসব কথা হচ্ছিল। সুপ্রাচীন কাল থেকেই যে, ভারতবর্ষ পৃথিবীর অন্যান্য অংশ থেকে সভ্যতায়-সংস্কৃতিতে, জ্ঞানে, বিদ্যায় _অনেক উন্নত ছিল গুরু মহারাজ একদিন সেই সব কথা বলতে গিয়ে ভারতের প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করছিলেন ! উনি বলছিলেন (স্বামী বিবেকানন্দও ইউরোপে গিয়ে এই কথাই বলেছিলেন) _”ভারতবর্ষে বাইরে থেকে কোন ধর্মমত, কোন সংস্কৃতি, কোন দর্শন আনার একেবারেই প্রয়োজনই নাই! ভারত থেকেই সভ্যতা একদিন বাইরে গেছিল, এখন যা ফিরে আসছে তা তো originality হারিয়ে ফিরে আসছে!! তাকে নেব কেন? আমি original – টাকে খুঁজে বের করব।” মহাবীর জৈন এবং অমিতাভ বুদ্ধ ভারতবর্ষেরই লোক _তাই তাঁদের প্রচারিত ধর্মাচরনে সনাতন ভারতের মূলসূরটি বিদ্যমান! মঝঝিম্ পন্থা_প্রকৃতপক্ষে সুষম্নামার্গ অবলম্বন করে যোগসাধনা। ধ্যান, সংযম পালন _এগুলি ও ভারতীয় সনাতন সাধন পদ্ধতিরই অঙ্গ ।
কিন্তু খ্রীষ্টীয় এবং ইসলামীয় ধর্মাচরন, মার্ক্স দর্শন সহ বিভিন্ন বিদেশী দর্শন যখন থেকে ভারতে ঢুকল__ভারতের সবকিছুই গোলমাল হোতে শুরু করল।
প্রাচীন ভারতবর্ষে যে সভ্যতার সবরকম উপকরনই ছিল, সেই সব কথা বলতে গিয়ে উনি বলেছিলেন — হরপ্পা , মহেঞ্জোদারো , মেহেরগড় ইত্যাদি সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ খুঁড়ে বড় বড় নগর সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে ! সেখানে সার সার অট্টালিকা , রাজপথ বা পাকারাস্তা , পয়ঃপ্রণালী , স্নানাগার , শষ্যগোলা – ইত্যাদি আরও অনেক কিছু পাওয়া গেছে ! তাহলে দেখা যাচ্ছে ঐ সময় অর্থাৎ আজ থেকে ৫০০০/৭০০০/১০০০০ বছর আগেও প্রাচীন ভারতে স্কুল ছিল , কলেজ ছিল , পাঠ্যপুস্তক ছিল , লাইব্রেরী ছিল ! আর শুধু সাধারণ Academic কলেজ-ই নয় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ , মেডিক্যাল কলেজ ইত্যাদিও ছিল । বড় বড় অট্টালিকা তৈরীর জন্য স্থপতি বা বাস্তুকার যে ছিল – এটা বলাই বাহুল্য ! কিন্তু আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা দেখছে এখনকার উচ্চশিক্ষার যে কোন পুস্তক (ডাক্তারী , ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ যে কোন উচ্চশিক্ষা)-এর জ্ঞান এসেছে ইউরোপ থেকে ৷ ইউরোপের নবজাগরনের সময় যে এক ঝাঁক মনীষী জন্মগ্রহণ করেছিলেন_ তারাই বা তাদের উত্তরসূরীরা সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের পুস্তকের প্রণেতা ! আধুনিক পন্ডিতরা বিশেষত ভারতের বুদ্ধিজীবীরা আরও বলেন যে – ইউরোপের যাবতীয় জ্ঞান এসেছিল প্রাচীন গ্রীসদেশ থেকে ! ভারতবর্ষের নাম কোথাও শুনতে পাওয়া যায় না !!
কিন্তু গুরু মহারাজ মানুষের কাছে বলে গেলেন ‘প্রকৃত ইতিহাস’ ! যে ইতিহাস হাজার হাজার বছর আগে মাটি চাপা পড়ে গেছে – যে সমস্ত সভ্যতার শিলালিপি এখনও পর্যন্ত পাঠোদ্ধার-ই করা যায় নি – তার কথা কে বলবে ? হ্যাঁ , বলতে পারেন তিনিই – যিনি কালদ্রষ্টা ! অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ – এই তিন কালকে যিনি অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছেন – তিনিই কালদ্রষ্টা ! গুরু মহারাজ অর্থাৎ স্বয়ং “কালদ্রষ্টা”, নিজেই একদিন কথায় কথায় প্রকাশ করে ফেললেন কালের বুকে লুকিয়ে থাকা সত্যরাজি! উনি বলছিলেন – ” আজ থেকে প্রায় ২৩৫০ (সাড়ে তেইশ শো) বছর আগে আলেকজান্ডার এবং পুরুর ছেলের যুদ্ধ (পুরুর সাথে সরাসরি কোন যুদ্ধ আলেকজান্ডারের হয়ই নি) আমি যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেছি ! অসাধারণ সেই অসিযুদ্ধ পৃথিবীর দ্বন্দ্বযুদ্ধের ইতিহাসে ফ্রেমে ধরে রাখার মতো ছিল ! সত্যি সত্যিই যুদ্ধক্ষেত্রের অন্যান্য যোদ্ধারা নিজেদের যুদ্ধ করা ভুলে ঐ দুই মহারথের অদ্ভুত রণকৌশল অবাক হয়ে দেখছিল !” গুরু মহারাজ আর একবার কথায় কথায় বলে ফেলেছিলেন – ” আমি মহাকালের ডানায় ভর করে পিছন দিকে হেঁটে কুরক্ষেত্রের যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছিলাম ৷ ওখানে দেখেছিলাম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মাত্র সাড়ে সাত মিনিট সময়ে সমগ্র গীতা ভক্তবর অর্জুনকে বলেছিলেন ৷”
সুতরাং এই কালদ্রষ্টা (স্বামী পরমানন্দ) পৃথিবীর ইতিহাস প্রসঙ্গে কি বলেছিলেন – তা একটু শোনা যাক্ !
উনি বলেছিলেন – ভারতবর্ষ-ই সমগ্র পৃথিবীকে জ্ঞানের আলো দেখিয়েছে । এখান থেকেই সমগ্র বিশ্বে , জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমস্ত শিক্ষা গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল ৷ প্রাচীন গ্রীসদেশ থেকেই শিক্ষা-সভ্যতা-সংস্কৃতি সমগ্র ইউরোপে গিয়েছিল – এটা ইউরোপীয় পন্ডিতদের অভিমত । গুরু মহারাজ বলেছিলেন – প্রাচীন গ্রীসের সাথে প্রাচীন ভারতের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল । প্রাচীন গ্রীস দেব-দেবী , ওখানকার প্রাচীন সাহিত্য , প্রাচীন সংস্কৃতির সাথে ভারতবর্ষের সবকিছুই অদ্ভুত মিল দেখা যায় । গ্রীক দেবী এথেনা (যেখান থেকে এথেন্স নগরী) – ভারতীয় দেবী দূর্গার-ই পরিবর্তিত রূপ ! এখানেও দেবী দূর্গা-কে স্মরণ করে দূর্গানগর বা দূর্গাপুর – ইত্যাদি জনপদের নাম করা হয় ৷ গ্রীক দেবী ‘মিনার্ভা’ – ভারতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতির দেবী সরস্বতীর সঙ্গে অদ্ভুত মিল ! এইভাবে দেখা যায় সমস্ত গ্রীক দেব-দেবী যেন ভারতীয় দেব-দেবীরই একটু আধটু পরিবর্তিত রূপ! গ্রীক মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসির সাথে ভারতীয় মহাকাব্য রামায়নের অনেকটাই মিল পাওয়া যায়! গ্রীক বীর আলেকজান্ডার (বর্তমান তুরস্কের লোক)-এর গুরু অ্যারিষ্টটল, শিক্ষক ডায়াজেনেস খুব ছোট বয়সের আলেকজান্ডারকে বলেছিলেন যে _’ভারতবর্ষের জ্ঞান – বিজ্ঞানের শিক্ষাতেই তাঁরা জ্ঞানী! ভারতবর্ষ_পূর্বের সেই দেশ যেখানে গুরু-গঙ্গা ও গীতা রয়েছে’।
গুরুমহারাজ এই প্রসঙ্গে আরও বলেছিলেন যে _এইজন্যই আলেকজান্ডার ছোট বয়স থেকেই ভারতবর্ষের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন এবং সংকল্প করেন _বড় হয়ে তিনি যেভাবেই হোক না কেন জীবনে অন্তত একবার ‘ভারতবর্ষে ‘ যাবেন। আলেকজান্ডারের রাজ্যবিজয়ের ম্যাপটা যদি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে ম্যাসিডন থেকে বেড়িয়ে উনি একটার পর একটা রাজ্য জয় করতে করতে অন্য দিকে চলে যাচ্ছিলেন, পরে আবার গতিপথ পাল্টে ভারতের দিকে এসেছিলেন!!
কোন কথায় কত কথা এসে গেল! তবে এসব কথা বলতে হোল কারন _তথাকথিত পন্ডিতেরা আমাদেরকে এতদিন ধরে যে সব কথা বলে এসেছে, সেগুলি যে কতটা ভুলে ভরা _তা আমরা গুরুজীর কাছে শুনেছিলাম! সেটাই সবার সাথে শেয়ার করলাম।
ভারতীয় ইতিহাসবিদরা আলেকজান্ডারকে “great” উপাধি দিয়েছে কিন্তু আধুনিক গ্রীসের মানুষেরা আলেকজান্ডারকে বলে “barbarian”! বর্তমানে ম্যাসিডন অঞ্চল তুরস্কের অন্তর্গত। গুরুমহারাজ যখন গ্রীসে গিয়েছিলেন, তখন ওখানকার পন্ডিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ওনার আলোচনা হয়েছিল। ওরাই গুরুমহারাজকে বলেছিল যে অপরের রাজ্য আক্রমণ করা বা দখল করা সুসভ্য গ্রীক জাতির culture নয়। ওটা পাহাড়ি অঞ্চলের (তৎকালীন ম্যাকিডন বা ম্যাসিডন গ্রীসের অন্তর্গত থাকলেও বর্তমানে ঐ অঞ্চল তুরস্কের মধ্যে পড়ে গেছে) অসভ্য জনজাতির culture!!
ভাবো একবার! ভারতের ইতিহাসে লেখা হচ্ছে _’আলেকজান্ডার দি গ্রেট’, আর খোদ গ্রীসের লোকেরা বলছে ‘আলেকজান্ডার দি বারবেরিয়ান’!!
আলেকজান্ডার অল্প বয়সেই মারা যান। এই অল্প জীবন কালে তাকে অনেকগুলি যুদ্ধ, অনেক রক্তপাত ঘটাতে হয়েছিল। যুদ্ধ করতে করতে গান্ধার(আফগানিস্তান), পুস্কলাবতী(কাফিরীস্তান, শোনা যায় এখানে এখনও প্রাচীন জনজাতিরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নি। লড়াই করে নিজেদের স্বাতন্ত্রতা বজায় রেখেছে!) হয়ে পুরুর রাজ্য পান্জাবে(বর্তমান পাকিস্তানের অংশ) ঢোকে। এখানে ওনার সাথে এক ভারতীয় যোগীর সাক্ষাৎ হয, যিনি আলেকজান্ডারকে অহেতুক রক্তপাত ঘটানোর জন্য খুবই তিরস্কার করেন এবং সেখান থেকেই ফিরে যেতে বলেন।
আলেকজান্ডার ওনার কথা উপেক্ষা করে আরও অগ্রসর হতে গিয়েই, তার নিজের জীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছিলেন ।। পুরুর সাথে আলেকজান্ডারের মুখোমুখি যুদ্ধই হয় নি _পুরুর ছেলের সাথে হয়েছিল! সেই লড়াইয়ে আলেকজান্ডারের তরবারি ভেঙে গিয়েছিল! পুরুর ছেলে নিরস্ত্রকে আঘাত করবে না বলে _যেই না একটু সময় দিয়েছে, অমনি পিছন থেকে রাজা পুরুর শত্রু, প্রতিবেশী রাজ্য তক্ষশীলার রাজা অম্ভি (যে আলেকজান্ডারের সাথে মিত্রতা করেছিল) বল্লমের আঘাতে তাকে মেরে ফেলেছিল! যুদ্ধ এখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনায় দুঃখিত, তাছাড়া দীঘকালের পথশ্রম ও যুদ্ধ-বিগ্রহে ক্লান্ত, আহত আলেকজান্ডারের ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল রাজা পুরু নিজে! পথিমধ্যেই মৃত্যু হয় সম্রাট আলেকজান্ডারের ।
এই সব ইতিহাস গুরুমহারাজ নিজের মুখে আমাদেরকে বলে গিয়েছিলেন।। (ক্রমশঃ)
কিন্তু খ্রীষ্টীয় এবং ইসলামীয় ধর্মাচরন, মার্ক্স দর্শন সহ বিভিন্ন বিদেশী দর্শন যখন থেকে ভারতে ঢুকল__ভারতের সবকিছুই গোলমাল হোতে শুরু করল।
প্রাচীন ভারতবর্ষে যে সভ্যতার সবরকম উপকরনই ছিল, সেই সব কথা বলতে গিয়ে উনি বলেছিলেন — হরপ্পা , মহেঞ্জোদারো , মেহেরগড় ইত্যাদি সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ খুঁড়ে বড় বড় নগর সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে ! সেখানে সার সার অট্টালিকা , রাজপথ বা পাকারাস্তা , পয়ঃপ্রণালী , স্নানাগার , শষ্যগোলা – ইত্যাদি আরও অনেক কিছু পাওয়া গেছে ! তাহলে দেখা যাচ্ছে ঐ সময় অর্থাৎ আজ থেকে ৫০০০/৭০০০/১০০০০ বছর আগেও প্রাচীন ভারতে স্কুল ছিল , কলেজ ছিল , পাঠ্যপুস্তক ছিল , লাইব্রেরী ছিল ! আর শুধু সাধারণ Academic কলেজ-ই নয় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ , মেডিক্যাল কলেজ ইত্যাদিও ছিল । বড় বড় অট্টালিকা তৈরীর জন্য স্থপতি বা বাস্তুকার যে ছিল – এটা বলাই বাহুল্য ! কিন্তু আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা দেখছে এখনকার উচ্চশিক্ষার যে কোন পুস্তক (ডাক্তারী , ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ যে কোন উচ্চশিক্ষা)-এর জ্ঞান এসেছে ইউরোপ থেকে ৷ ইউরোপের নবজাগরনের সময় যে এক ঝাঁক মনীষী জন্মগ্রহণ করেছিলেন_ তারাই বা তাদের উত্তরসূরীরা সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের পুস্তকের প্রণেতা ! আধুনিক পন্ডিতরা বিশেষত ভারতের বুদ্ধিজীবীরা আরও বলেন যে – ইউরোপের যাবতীয় জ্ঞান এসেছিল প্রাচীন গ্রীসদেশ থেকে ! ভারতবর্ষের নাম কোথাও শুনতে পাওয়া যায় না !!
কিন্তু গুরু মহারাজ মানুষের কাছে বলে গেলেন ‘প্রকৃত ইতিহাস’ ! যে ইতিহাস হাজার হাজার বছর আগে মাটি চাপা পড়ে গেছে – যে সমস্ত সভ্যতার শিলালিপি এখনও পর্যন্ত পাঠোদ্ধার-ই করা যায় নি – তার কথা কে বলবে ? হ্যাঁ , বলতে পারেন তিনিই – যিনি কালদ্রষ্টা ! অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ – এই তিন কালকে যিনি অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছেন – তিনিই কালদ্রষ্টা ! গুরু মহারাজ অর্থাৎ স্বয়ং “কালদ্রষ্টা”, নিজেই একদিন কথায় কথায় প্রকাশ করে ফেললেন কালের বুকে লুকিয়ে থাকা সত্যরাজি! উনি বলছিলেন – ” আজ থেকে প্রায় ২৩৫০ (সাড়ে তেইশ শো) বছর আগে আলেকজান্ডার এবং পুরুর ছেলের যুদ্ধ (পুরুর সাথে সরাসরি কোন যুদ্ধ আলেকজান্ডারের হয়ই নি) আমি যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেছি ! অসাধারণ সেই অসিযুদ্ধ পৃথিবীর দ্বন্দ্বযুদ্ধের ইতিহাসে ফ্রেমে ধরে রাখার মতো ছিল ! সত্যি সত্যিই যুদ্ধক্ষেত্রের অন্যান্য যোদ্ধারা নিজেদের যুদ্ধ করা ভুলে ঐ দুই মহারথের অদ্ভুত রণকৌশল অবাক হয়ে দেখছিল !” গুরু মহারাজ আর একবার কথায় কথায় বলে ফেলেছিলেন – ” আমি মহাকালের ডানায় ভর করে পিছন দিকে হেঁটে কুরক্ষেত্রের যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছিলাম ৷ ওখানে দেখেছিলাম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মাত্র সাড়ে সাত মিনিট সময়ে সমগ্র গীতা ভক্তবর অর্জুনকে বলেছিলেন ৷”
সুতরাং এই কালদ্রষ্টা (স্বামী পরমানন্দ) পৃথিবীর ইতিহাস প্রসঙ্গে কি বলেছিলেন – তা একটু শোনা যাক্ !
উনি বলেছিলেন – ভারতবর্ষ-ই সমগ্র পৃথিবীকে জ্ঞানের আলো দেখিয়েছে । এখান থেকেই সমগ্র বিশ্বে , জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমস্ত শিক্ষা গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল ৷ প্রাচীন গ্রীসদেশ থেকেই শিক্ষা-সভ্যতা-সংস্কৃতি সমগ্র ইউরোপে গিয়েছিল – এটা ইউরোপীয় পন্ডিতদের অভিমত । গুরু মহারাজ বলেছিলেন – প্রাচীন গ্রীসের সাথে প্রাচীন ভারতের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল । প্রাচীন গ্রীস দেব-দেবী , ওখানকার প্রাচীন সাহিত্য , প্রাচীন সংস্কৃতির সাথে ভারতবর্ষের সবকিছুই অদ্ভুত মিল দেখা যায় । গ্রীক দেবী এথেনা (যেখান থেকে এথেন্স নগরী) – ভারতীয় দেবী দূর্গার-ই পরিবর্তিত রূপ ! এখানেও দেবী দূর্গা-কে স্মরণ করে দূর্গানগর বা দূর্গাপুর – ইত্যাদি জনপদের নাম করা হয় ৷ গ্রীক দেবী ‘মিনার্ভা’ – ভারতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতির দেবী সরস্বতীর সঙ্গে অদ্ভুত মিল ! এইভাবে দেখা যায় সমস্ত গ্রীক দেব-দেবী যেন ভারতীয় দেব-দেবীরই একটু আধটু পরিবর্তিত রূপ! গ্রীক মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসির সাথে ভারতীয় মহাকাব্য রামায়নের অনেকটাই মিল পাওয়া যায়! গ্রীক বীর আলেকজান্ডার (বর্তমান তুরস্কের লোক)-এর গুরু অ্যারিষ্টটল, শিক্ষক ডায়াজেনেস খুব ছোট বয়সের আলেকজান্ডারকে বলেছিলেন যে _’ভারতবর্ষের জ্ঞান – বিজ্ঞানের শিক্ষাতেই তাঁরা জ্ঞানী! ভারতবর্ষ_পূর্বের সেই দেশ যেখানে গুরু-গঙ্গা ও গীতা রয়েছে’।
গুরুমহারাজ এই প্রসঙ্গে আরও বলেছিলেন যে _এইজন্যই আলেকজান্ডার ছোট বয়স থেকেই ভারতবর্ষের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন এবং সংকল্প করেন _বড় হয়ে তিনি যেভাবেই হোক না কেন জীবনে অন্তত একবার ‘ভারতবর্ষে ‘ যাবেন। আলেকজান্ডারের রাজ্যবিজয়ের ম্যাপটা যদি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে ম্যাসিডন থেকে বেড়িয়ে উনি একটার পর একটা রাজ্য জয় করতে করতে অন্য দিকে চলে যাচ্ছিলেন, পরে আবার গতিপথ পাল্টে ভারতের দিকে এসেছিলেন!!
কোন কথায় কত কথা এসে গেল! তবে এসব কথা বলতে হোল কারন _তথাকথিত পন্ডিতেরা আমাদেরকে এতদিন ধরে যে সব কথা বলে এসেছে, সেগুলি যে কতটা ভুলে ভরা _তা আমরা গুরুজীর কাছে শুনেছিলাম! সেটাই সবার সাথে শেয়ার করলাম।
ভারতীয় ইতিহাসবিদরা আলেকজান্ডারকে “great” উপাধি দিয়েছে কিন্তু আধুনিক গ্রীসের মানুষেরা আলেকজান্ডারকে বলে “barbarian”! বর্তমানে ম্যাসিডন অঞ্চল তুরস্কের অন্তর্গত। গুরুমহারাজ যখন গ্রীসে গিয়েছিলেন, তখন ওখানকার পন্ডিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ওনার আলোচনা হয়েছিল। ওরাই গুরুমহারাজকে বলেছিল যে অপরের রাজ্য আক্রমণ করা বা দখল করা সুসভ্য গ্রীক জাতির culture নয়। ওটা পাহাড়ি অঞ্চলের (তৎকালীন ম্যাকিডন বা ম্যাসিডন গ্রীসের অন্তর্গত থাকলেও বর্তমানে ঐ অঞ্চল তুরস্কের মধ্যে পড়ে গেছে) অসভ্য জনজাতির culture!!
ভাবো একবার! ভারতের ইতিহাসে লেখা হচ্ছে _’আলেকজান্ডার দি গ্রেট’, আর খোদ গ্রীসের লোকেরা বলছে ‘আলেকজান্ডার দি বারবেরিয়ান’!!
আলেকজান্ডার অল্প বয়সেই মারা যান। এই অল্প জীবন কালে তাকে অনেকগুলি যুদ্ধ, অনেক রক্তপাত ঘটাতে হয়েছিল। যুদ্ধ করতে করতে গান্ধার(আফগানিস্তান), পুস্কলাবতী(কাফিরীস্তান, শোনা যায় এখানে এখনও প্রাচীন জনজাতিরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নি। লড়াই করে নিজেদের স্বাতন্ত্রতা বজায় রেখেছে!) হয়ে পুরুর রাজ্য পান্জাবে(বর্তমান পাকিস্তানের অংশ) ঢোকে। এখানে ওনার সাথে এক ভারতীয় যোগীর সাক্ষাৎ হয, যিনি আলেকজান্ডারকে অহেতুক রক্তপাত ঘটানোর জন্য খুবই তিরস্কার করেন এবং সেখান থেকেই ফিরে যেতে বলেন।
আলেকজান্ডার ওনার কথা উপেক্ষা করে আরও অগ্রসর হতে গিয়েই, তার নিজের জীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছিলেন ।। পুরুর সাথে আলেকজান্ডারের মুখোমুখি যুদ্ধই হয় নি _পুরুর ছেলের সাথে হয়েছিল! সেই লড়াইয়ে আলেকজান্ডারের তরবারি ভেঙে গিয়েছিল! পুরুর ছেলে নিরস্ত্রকে আঘাত করবে না বলে _যেই না একটু সময় দিয়েছে, অমনি পিছন থেকে রাজা পুরুর শত্রু, প্রতিবেশী রাজ্য তক্ষশীলার রাজা অম্ভি (যে আলেকজান্ডারের সাথে মিত্রতা করেছিল) বল্লমের আঘাতে তাকে মেরে ফেলেছিল! যুদ্ধ এখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনায় দুঃখিত, তাছাড়া দীঘকালের পথশ্রম ও যুদ্ধ-বিগ্রহে ক্লান্ত, আহত আলেকজান্ডারের ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল রাজা পুরু নিজে! পথিমধ্যেই মৃত্যু হয় সম্রাট আলেকজান্ডারের ।
এই সব ইতিহাস গুরুমহারাজ নিজের মুখে আমাদেরকে বলে গিয়েছিলেন।। (ক্রমশঃ)