গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ বলেছিলেন — ধর্মগুরুরা ধর্মমত প্রচার করলে তবেই মানুষের মধ্যে ধর্মভাব জাগ্রত হয় ! একমাত্র ধার্মিক ব্যক্তি-ই পারেন ধর্মের প্রকৃত তত্ত্ব মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত করতে ৷ এর কারণ _তিনি যে practical ! তিনি সাধন-ভজন-যোগাভ্যাসের দ্বারা , ত্যাগ-বৈরাগ্যের দ্বারা ধর্মে-র নিগূঢ় রহস্য অবগত হয়েছেন। এই অবস্থায় মহাপ্রকৃতির শক্তি সেই শরীরকে কেন্দ্র করে ক্রিয়াশীল হয় , ফলে তাঁর মধ্যে নানান শক্তির প্রকাশ ঘটে ! তিনি কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে স্পর্শ্য করে সুস্থ করে দিতে পারেন , কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন – মানুষ এগুলোকে অলৌকিক বা অতিলৌকিক নামে আখ্যা দিলেও এগুলি তখন তাঁর কাছে স্বাভাবিক ঘটনা ! এইজন্যেই তো বলা হয় – সাধারণ মানুষের চিন্তাধারা দিয়ে অসাধারণ মানুষের লীলার ব্যাখ্যা করতে যাওয়া আহম্মকি ছাড়া আর কিছুই নয় !
তাহলে দেখা গেল – ইতিহাসে যখনই শুদ্ধসত্ত্বগুণ বিশিষ্ট ধর্মগুরুরা ধর্মমত প্রচার না করে রজোগুনী ক্ষত্রিয় অথবা রজস্তমগুণসম্পন্ন বৈশ্যশ্রেনীর মনোনীত বা সাজানো ধর্মগুরুরা (যাদের জীবনে ত্যাগ-বৈরাগ্যের দ্বারা , সুতীব্র সাধনার দ্বারা আত্মতত্ত্বের বোধ হয়নি) যখনই ধর্মমত প্রচার ও প্রসারের কাজ করেছে — তখনই হয়ে গেছে গন্ডগোল ! আর জোর করে বা কৌশল প্রয়োগ করে ধর্মান্তরকরণে তো অধ্যাত্মিকতার নাম-গন্ধও থাকে না ।
বর্তমান ভারতবর্ষের হিন্দু ধর্মমতের (শিখ ও জৈন সমেত) অন্তর্গত জনসংখ্যাই সবচাইতে বেশী , এরপরেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ , তারপর সংখ্যালঘু হিসাবে খ্রীষ্টান , বৌদ্ধ ইত্যাদিরা পড়ে যাবে ৷ গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ভারতীয় মুসলীমরা বা খ্রীষ্টানরা তো ভারতীয়-ই ! কয়েক পুরুষ পিছনে গেলেই দেখা যাবে – তাদের পূর্বপুরুষ হিন্দু ছিল । আরবের লোকেরা তো এখানে এসে মুসলিম হিসাবে বসবাস করছে না – এখানকার মানুষ-ই এখানে বসবাস করে ৷ জেরুজালেম বা রোমের মানুষ ভারতে এসে খ্রীষ্টান হিসাবে বাস করে না! ইউরোপীয়রা যখন ভারতবর্ষে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল – তখন যারা ধর্মান্তরিত হয়েছিল এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা অর্থাৎ যাদের বাবা ইউরোপীয় কিন্তু মা এদেশীয় – তারাই এখানে খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী !
সাধারণত: “রাজার ধর্ম”-ই “প্রজার ধর্ম” হয় ! এখনো দেখা যায় এ রাজ্যে যখন কংগ্রেস গর্ভমেন্ট ছিল – তখন গোটা রাজ্যের বেশীরভাগ মানুষ ছিল কংগ্রেস সমর্থক । যখন এ রাজ্যে কম্যুনিষ্টরা রাজা হ’ল (সরকার গঠন করে) সাধারণ মানুষ দলে দলে সিপিএম হয়ে গেল । বর্তমানে রাজ্যে অন্য সরকার – এখন সাধারণ মানুষের বেশীরভাগ-ই সেই দলের সমর্থক !
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন – ” ভারতবর্ষের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষও দেব-প্রকৃতির ।” এখানকার সাধারণ মানুষ ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট পছন্দ করে না ! ঝঞ্ঝাট এড়াতে তারা দলে দলে শক্তিশালীর দিকে নিজের নামটা লিখিয়ে দেয় ! এতে একটু রাজ-অনুগ্রহও পাওয়া যায় আর স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে একটু স্বস্তিতেও থাকা যায়! এইভাবেই ভারতের সাধারণ মানুষ মহাবীর জৈনের প্রভাবে বা নাথ যোগীদের প্রভাবে তাঁদের মত গ্রহণ করেছিল , বৌদ্ধ-প্লাবণের সময় – বেশীরভাগ সাধারণ মানুষ বৌদ্ধ হয়ে গিয়েছিল ৷ আচার্য্য শঙ্করের পর এবং শৈব রাজাদের প্রভাবে একসময় দেশের সাধারণ মানুষ শৈব-প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছিল এবং এর ফলেই গ্রামে গ্রামে শিবমন্দির , ধর্মরাজ , বুড়োরাজ ঠাকুরের আবির্ভাব ঘটেছিল । আবার ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রভাবে ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষ – নিজ নিজ এলাকার মহাপুরুষদের মতাদর্শ গ্রহণ করেছিল ৷ এইভাবেই মুসলিম ও খ্রীষ্টানরা যখন এদেশে রাজা হয়েছিল – তখন বহু সাধারণ মানুষ এই ধর্মমতগুলিও গ্রহণ করেছিল !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _ব্রাহ্মণ্যবাদের চরম গোঁড়ামি এবং মূর্খতার জন্যেও বহু সাধারণ মানুষ ধর্মান্তরিত হয়েছিল। সেই সময় এক একটা গ্রাম বা জনপদ কিভাবে রাতারাতি ধর্মান্তরিত হয়ে গিয়েছিল _উনি তার একটা দৃষ্টান্ত উপস্থাপনা করেছিলেন:—তখনকার দিনে গ্রামের কোন বড় পুস্করিনীর জল গ্রামের মানুষ ব্যবহার করতো(কারণ তখনও টিউবওয়েলের প্রচলন ছিল না)। ব্যবহার করতো অর্থে_ ঐ পুকুরের জলেই স্নান-পান-রান্নাবান্না সবকিছু সারতো। বাবু, জমিদার, ব্রাহ্মণদের জন্য ছিল ঘেরাবেরা আলাদা পুস্করিনী থাকতো।
এইবার ভোররাতে একটা কাপড়ের পুটলিতে বেঁধে, সদ্যকাটা হিন্দুদের কাছে ‘নিষিদ্ধ রক্তাক্ত মাংস’ _একটা লাঠির মধ্যে বেঁধে ঐ পুকুরের মাঝামাঝি জায়গায় গিয়ে বেশ করে পুঁতে দিয়ে আসা হোত। গ্রামের মানুষ তো কিছুই জানেনা! তারা যথারীতি সকাল থেকেই ঐ পুকুরের জল পান করেছে, স্নান করেছে, ঐ জল দিয়ে রান্নাও করেছে। গ্রামের সব লোকের খাওয়া-দাওয়ার পরে বিকালের দিকে এক দাড়িওয়ালা মৌলভী এবং কিছু রাজকর্মচারী ঢ্যাঁরা পেটাতে পেটাতে গ্রামের মাঝখানে ঐ পুকুরটির পাড়ে এসে হাজির! ঢ্যাঁরার আওয়াজে গ্রামবাসীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে গেল। এবার ঘোষক ঢ্যাঁরা পিটিয়ে বলতে শুরু করল_”ড্যাম্ ড্যাম্ ড্যাম্! শোন শোন শোন! আজ হইতে এই পুকুরের জল যারাই ব্যবহার করেছ _তারা আজ থেকে মুসলমান হইয়া গেলে-এ-এ-এ__ড্যাম্ ড্যাম্ ড্যাম্।” এর মধ্যেই মৌলভীর নির্দেশে একজন জলে নেমে মাংসের পুটলিটা তুলে এনে সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছে।
কি সর্বনাশ! ভীত, ত্রস্ত গ্রামবাসীরা ছুটল ব্রাহ্মণপাড়ায়! _ঠাকুরমশায় আমাদের বাঁচান! বিধান দিন”।
সব কথা শুনে তর্করত্ন, শিরোমনিমশাই-এর দল অত্যন্ত ঘৃনাভরে বলে উঠল_”আরে ছ্যা-ছ্যা-ছ্যা! তোরা তো তাহলে ম্লেচ্ছ হয়ে গেছিস! কোন আস্পর্ধায় আমার বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে আছিস? ওরে কে আছিস? _এদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে জায়গাটায় গোবরজল ছিটিয়ে দে! একটু গঙ্গাজল ও দিবি!”
ঐ মানুষগুলি নিদারুণ রাগে ক্ষোভে অপমানে ফুঁসতে ফুঁসতে ফিরে গেল! তাদের পিতৃপুরুষের পরম্পরাগত পরিচয়, ব্রাহ্মণদের বিধানে এক লহমায় হারিয়ে গেল! এরা তো reactionist হবেই!
এই ভাবেই একটা ‘কালাপাহাড়’ নয় _শত সহস্র কালাপাহাড়ের জন্ম হয়েছিল ভারতীয় সমাজে। বাইরে থেকে আসা মুসলিম শাসকেরাও(তুর্কি বা মোঙ্গল) তো এই ধরনেরই জবরদস্তি ধর্মান্তরিত লোক! এই সব কারনেই reaction, আর ফলস্বরূপ নালন্দা, বিক্রমশীলার মতো সংস্কৃতির পীঠস্থান অথবা শত শত মন্দির বা ধর্মস্থান ধংস হওয়া! একটা মানুষ reactionist হচ্ছে _মানেই জানতে হবে, তার জীবনে অবহেলা-অবজ্ঞা-অত্যাচার হয়েছে।
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _বিদেশীয়রা(তুর্কি, মোঙ্গল, ইউরোপীয়) যখন ভারতের একটা একটা রাজ্য আক্রমণ করছিল বা দখল করছিল __তখন এই দেশের সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করে নি। তারা রাজার হয়ে কখনো অস্ত্র ধরে নি।
কারন _রাজতন্ত্রের যুগে তারা দেশের নাগরিক হিসাবে সেভাবে কোন মর্যাদাই পেতো না!
গুরুমহারাজ আরও বললেন _দ্যাখো মহামায়ার খেল্ _শুধুমাত্র নিষিদ্ধ মাংসের পুটলিটা জলে পড়ে ছিল, তাই ব্রাহ্মণেরা হাজার হাজার মানুষকে ‘মুসলিম’ হয়ে যাবার বিধান দিয়েছিল, অথচ আজকের দিনে কলকাতায় শিক্ষিত হিন্দু ছেলেমেয়েরাই হোটেল রেস্টুরেন্টে বেশি ‘বিফ্’ খায।আর এদের মধ্যে বামুনের ছেলে মেয়েরাই বেশি।[#কদিন আগে TV ক্যামেরার সামনে যে কজন অতি প্রগতিবাদী ‘বিফ’ খেয়েছিল তাদের মধ্যে কম্যুনিস্ট পার্টির লোকেরা টাইটেলের দিক থেকে বামুন ই ছিল।#] এইতো! সিটিং-এ রয়েছে _……! কি রে! তুই এদের বল_ তুই কলকাতায় থাকাকালীন সস্তায় পেতিস বলে রোজই তো ঐসব খেতিস!!”(ক্রমশঃ)
তাহলে দেখা গেল – ইতিহাসে যখনই শুদ্ধসত্ত্বগুণ বিশিষ্ট ধর্মগুরুরা ধর্মমত প্রচার না করে রজোগুনী ক্ষত্রিয় অথবা রজস্তমগুণসম্পন্ন বৈশ্যশ্রেনীর মনোনীত বা সাজানো ধর্মগুরুরা (যাদের জীবনে ত্যাগ-বৈরাগ্যের দ্বারা , সুতীব্র সাধনার দ্বারা আত্মতত্ত্বের বোধ হয়নি) যখনই ধর্মমত প্রচার ও প্রসারের কাজ করেছে — তখনই হয়ে গেছে গন্ডগোল ! আর জোর করে বা কৌশল প্রয়োগ করে ধর্মান্তরকরণে তো অধ্যাত্মিকতার নাম-গন্ধও থাকে না ।
বর্তমান ভারতবর্ষের হিন্দু ধর্মমতের (শিখ ও জৈন সমেত) অন্তর্গত জনসংখ্যাই সবচাইতে বেশী , এরপরেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ , তারপর সংখ্যালঘু হিসাবে খ্রীষ্টান , বৌদ্ধ ইত্যাদিরা পড়ে যাবে ৷ গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ভারতীয় মুসলীমরা বা খ্রীষ্টানরা তো ভারতীয়-ই ! কয়েক পুরুষ পিছনে গেলেই দেখা যাবে – তাদের পূর্বপুরুষ হিন্দু ছিল । আরবের লোকেরা তো এখানে এসে মুসলিম হিসাবে বসবাস করছে না – এখানকার মানুষ-ই এখানে বসবাস করে ৷ জেরুজালেম বা রোমের মানুষ ভারতে এসে খ্রীষ্টান হিসাবে বাস করে না! ইউরোপীয়রা যখন ভারতবর্ষে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল – তখন যারা ধর্মান্তরিত হয়েছিল এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা অর্থাৎ যাদের বাবা ইউরোপীয় কিন্তু মা এদেশীয় – তারাই এখানে খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী !
সাধারণত: “রাজার ধর্ম”-ই “প্রজার ধর্ম” হয় ! এখনো দেখা যায় এ রাজ্যে যখন কংগ্রেস গর্ভমেন্ট ছিল – তখন গোটা রাজ্যের বেশীরভাগ মানুষ ছিল কংগ্রেস সমর্থক । যখন এ রাজ্যে কম্যুনিষ্টরা রাজা হ’ল (সরকার গঠন করে) সাধারণ মানুষ দলে দলে সিপিএম হয়ে গেল । বর্তমানে রাজ্যে অন্য সরকার – এখন সাধারণ মানুষের বেশীরভাগ-ই সেই দলের সমর্থক !
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন – ” ভারতবর্ষের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষও দেব-প্রকৃতির ।” এখানকার সাধারণ মানুষ ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট পছন্দ করে না ! ঝঞ্ঝাট এড়াতে তারা দলে দলে শক্তিশালীর দিকে নিজের নামটা লিখিয়ে দেয় ! এতে একটু রাজ-অনুগ্রহও পাওয়া যায় আর স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে একটু স্বস্তিতেও থাকা যায়! এইভাবেই ভারতের সাধারণ মানুষ মহাবীর জৈনের প্রভাবে বা নাথ যোগীদের প্রভাবে তাঁদের মত গ্রহণ করেছিল , বৌদ্ধ-প্লাবণের সময় – বেশীরভাগ সাধারণ মানুষ বৌদ্ধ হয়ে গিয়েছিল ৷ আচার্য্য শঙ্করের পর এবং শৈব রাজাদের প্রভাবে একসময় দেশের সাধারণ মানুষ শৈব-প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছিল এবং এর ফলেই গ্রামে গ্রামে শিবমন্দির , ধর্মরাজ , বুড়োরাজ ঠাকুরের আবির্ভাব ঘটেছিল । আবার ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রভাবে ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষ – নিজ নিজ এলাকার মহাপুরুষদের মতাদর্শ গ্রহণ করেছিল ৷ এইভাবেই মুসলিম ও খ্রীষ্টানরা যখন এদেশে রাজা হয়েছিল – তখন বহু সাধারণ মানুষ এই ধর্মমতগুলিও গ্রহণ করেছিল !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _ব্রাহ্মণ্যবাদের চরম গোঁড়ামি এবং মূর্খতার জন্যেও বহু সাধারণ মানুষ ধর্মান্তরিত হয়েছিল। সেই সময় এক একটা গ্রাম বা জনপদ কিভাবে রাতারাতি ধর্মান্তরিত হয়ে গিয়েছিল _উনি তার একটা দৃষ্টান্ত উপস্থাপনা করেছিলেন:—তখনকার দিনে গ্রামের কোন বড় পুস্করিনীর জল গ্রামের মানুষ ব্যবহার করতো(কারণ তখনও টিউবওয়েলের প্রচলন ছিল না)। ব্যবহার করতো অর্থে_ ঐ পুকুরের জলেই স্নান-পান-রান্নাবান্না সবকিছু সারতো। বাবু, জমিদার, ব্রাহ্মণদের জন্য ছিল ঘেরাবেরা আলাদা পুস্করিনী থাকতো।
এইবার ভোররাতে একটা কাপড়ের পুটলিতে বেঁধে, সদ্যকাটা হিন্দুদের কাছে ‘নিষিদ্ধ রক্তাক্ত মাংস’ _একটা লাঠির মধ্যে বেঁধে ঐ পুকুরের মাঝামাঝি জায়গায় গিয়ে বেশ করে পুঁতে দিয়ে আসা হোত। গ্রামের মানুষ তো কিছুই জানেনা! তারা যথারীতি সকাল থেকেই ঐ পুকুরের জল পান করেছে, স্নান করেছে, ঐ জল দিয়ে রান্নাও করেছে। গ্রামের সব লোকের খাওয়া-দাওয়ার পরে বিকালের দিকে এক দাড়িওয়ালা মৌলভী এবং কিছু রাজকর্মচারী ঢ্যাঁরা পেটাতে পেটাতে গ্রামের মাঝখানে ঐ পুকুরটির পাড়ে এসে হাজির! ঢ্যাঁরার আওয়াজে গ্রামবাসীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে গেল। এবার ঘোষক ঢ্যাঁরা পিটিয়ে বলতে শুরু করল_”ড্যাম্ ড্যাম্ ড্যাম্! শোন শোন শোন! আজ হইতে এই পুকুরের জল যারাই ব্যবহার করেছ _তারা আজ থেকে মুসলমান হইয়া গেলে-এ-এ-এ__ড্যাম্ ড্যাম্ ড্যাম্।” এর মধ্যেই মৌলভীর নির্দেশে একজন জলে নেমে মাংসের পুটলিটা তুলে এনে সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছে।
কি সর্বনাশ! ভীত, ত্রস্ত গ্রামবাসীরা ছুটল ব্রাহ্মণপাড়ায়! _ঠাকুরমশায় আমাদের বাঁচান! বিধান দিন”।
সব কথা শুনে তর্করত্ন, শিরোমনিমশাই-এর দল অত্যন্ত ঘৃনাভরে বলে উঠল_”আরে ছ্যা-ছ্যা-ছ্যা! তোরা তো তাহলে ম্লেচ্ছ হয়ে গেছিস! কোন আস্পর্ধায় আমার বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে আছিস? ওরে কে আছিস? _এদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে জায়গাটায় গোবরজল ছিটিয়ে দে! একটু গঙ্গাজল ও দিবি!”
ঐ মানুষগুলি নিদারুণ রাগে ক্ষোভে অপমানে ফুঁসতে ফুঁসতে ফিরে গেল! তাদের পিতৃপুরুষের পরম্পরাগত পরিচয়, ব্রাহ্মণদের বিধানে এক লহমায় হারিয়ে গেল! এরা তো reactionist হবেই!
এই ভাবেই একটা ‘কালাপাহাড়’ নয় _শত সহস্র কালাপাহাড়ের জন্ম হয়েছিল ভারতীয় সমাজে। বাইরে থেকে আসা মুসলিম শাসকেরাও(তুর্কি বা মোঙ্গল) তো এই ধরনেরই জবরদস্তি ধর্মান্তরিত লোক! এই সব কারনেই reaction, আর ফলস্বরূপ নালন্দা, বিক্রমশীলার মতো সংস্কৃতির পীঠস্থান অথবা শত শত মন্দির বা ধর্মস্থান ধংস হওয়া! একটা মানুষ reactionist হচ্ছে _মানেই জানতে হবে, তার জীবনে অবহেলা-অবজ্ঞা-অত্যাচার হয়েছে।
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _বিদেশীয়রা(তুর্কি, মোঙ্গল, ইউরোপীয়) যখন ভারতের একটা একটা রাজ্য আক্রমণ করছিল বা দখল করছিল __তখন এই দেশের সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করে নি। তারা রাজার হয়ে কখনো অস্ত্র ধরে নি।
কারন _রাজতন্ত্রের যুগে তারা দেশের নাগরিক হিসাবে সেভাবে কোন মর্যাদাই পেতো না!
গুরুমহারাজ আরও বললেন _দ্যাখো মহামায়ার খেল্ _শুধুমাত্র নিষিদ্ধ মাংসের পুটলিটা জলে পড়ে ছিল, তাই ব্রাহ্মণেরা হাজার হাজার মানুষকে ‘মুসলিম’ হয়ে যাবার বিধান দিয়েছিল, অথচ আজকের দিনে কলকাতায় শিক্ষিত হিন্দু ছেলেমেয়েরাই হোটেল রেস্টুরেন্টে বেশি ‘বিফ্’ খায।আর এদের মধ্যে বামুনের ছেলে মেয়েরাই বেশি।[#কদিন আগে TV ক্যামেরার সামনে যে কজন অতি প্রগতিবাদী ‘বিফ’ খেয়েছিল তাদের মধ্যে কম্যুনিস্ট পার্টির লোকেরা টাইটেলের দিক থেকে বামুন ই ছিল।#] এইতো! সিটিং-এ রয়েছে _……! কি রে! তুই এদের বল_ তুই কলকাতায় থাকাকালীন সস্তায় পেতিস বলে রোজই তো ঐসব খেতিস!!”(ক্রমশঃ)