গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের বলা নানা কথা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল । এখন যে বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে – তা হ’ল প্রকৃত ধর্মাচার্য্য, ধার্মিক ব্যক্তি অথবা ধর্মগুরু যদি কোন ধর্মমত প্রচার করেন – তাহলে মানবসমাজ স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ করে , সেই ধর্মমতকে ভালোবেসে – ভক্তি সহকারে গ্রহণ করে ! ফলে সেই ধর্মাবলম্বীরা reactionist হয় না। তাদের ধর্মাচরন __ত্যাগ, বৈরাগ্য, সেবা, সাধনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে! ভারতবর্ষের সনাতন ধর্ম, এই দলে পড়ে। এখানে অপরের উপর কোন experiment নয় _সাধক নিজের জীবনের পরতে পরতে experiment কোরে চেতনার উত্তরণ ঘটায়! কিন্তু যদি ক্ষত্রিয় শ্রেণী বা বৈশ্য শ্রেণী নিজ নিজ স্বার্থ-সিদ্ধির জন্য (রাজত্ব কায়েম করা অথবা দীর্ঘদিন সুখে-শন্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করে দেশটির সম্পদ লুঠ করা) তাদের নিজ নিজ ধর্মমত অপর কোন ধর্মাচরণকারীদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয় – তাহলে শ্রদ্ধা-ভক্তি-ভাব না থেকে আসে একপ্রকারের Reaction ! প্রতিহিংসা , প্রতিশোধ-এর প্রতিক্রিয়া !
বিশ্বের কোণায় কোণায় যে খ্রীষ্ট্রিয় ধর্মমত ছড়িয়ে গেছে এটাও সবক্ষেত্রে খ্রীষ্ট্রিয় আধ্যাত্মিক ধর্মগুরুদের দ্বারা হয়নি ! ফলে খ্রীষ্টের ষোলআনা শিক্ষা সাধারণের কাছে একেবারেই পৌঁছায়নি!
গুরু মহারাজ বলেছিলেন — ইতালিতে থাকার সময় ওনার সাথে এক আর্চ-বিশপের সাক্ষাৎ হয়েছিল ৷ গুরু মহারাজ উপনিষদের বিভিন্ন শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করছিলেন – এইটা শুনে ঐ আর্চ-বিশপ অবাক হয়ে ওনাকে একান্তে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন – ” আপনি এইসব কথা কি করে জানতে পারলেন ? এইসব কথা তো ভ্যাটিক্যান সিটির লাইব্রেরীতে সযত্নে রাখা ‘যীশুর বাণী’ বা প্রকৃত বাইবেলে রয়েছে ! যেগুলি সাধারণ মানুষকে কখনও বলাই হয় না!”
গুরু মহারাজ আমাদেরকে ঘটনাটা উল্লেখ করে বললেন – “ঐ আর্চ-বিশপ পূর্বে ভ্যাটিক্যান সিটির লাইব্রেরীর দায়িত্বে ছিলেন ৷ সেইসময় তিনি ওখানকার লাইব্রেরীতে থাকা বিভিন্ন হাতে লেখা প্রাচীন পুঁথি-পত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতেন ও পড়াশুনা করতেন৷ একদিন তিনি এইরকম একটি হাতে লেখা প্রাচীন বাইবেলের পুঁথিতে ‘আত্মতত্ত্বে’-র উপর কিছু জিজ্ঞাসা-উত্তর পড়েছিলেন । সেমেটিক (খ্রীষ্ট্রিয় , ইসলামীয়) চিন্তাধারায় ‘ঈশ্বর তত্ত্ব’ রয়েছে কিন্তু ‘আত্মতত্ত্বে’-র কোন জায়গা নেই ৷ তাই আশ্চর্য্য হয়ে ঐ আর্চ-বিশপ, মহামান্য পোপ (তখন ছিলেন দ্বিতীয় জন পল)-কে জিজ্ঞাসা করেন – ‘ব্যাপারটা কি ?’ পোপ ঐ অার্চ-বিশপকে উত্তর দিয়েছিলেন – ‘ হ্যাঁ , আমি এসব জানি , এগুলি বাইবেলের জ্ঞান অংশ ! এগুলি আমাদের (যারা ভ্যাটিক্যান সিটিতে থাকে এবং যারা বর্তমান খ্রীষ্টধর্মের বিশ্বব্যাপী নিয়ামক!) জন্য – সাধারণ খ্রীষ্টানদের জন্য নয়! সাধারণ মানুষ এইসব কথা জানলে কখনই আর ‘গড’ বা ‘খ্রীষ্ট’ কে তেমন করে মানবে না ৷ তাই এগুলি প্রচার করা হয় না !’
এরপর গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ‘ ইসলামীয় পরম্পরাতেও রয়েছে যে , কোরাণের ⅓অংশ প্রকাশিত হয়েছে, আর বাকি ⅔অংশ গুরু-স্থানীয়দের কাছে আছে , তা সাধারণের জন্য নয় !’ এরফলে কি হচ্ছে – সাধারণ মানুষ এই ধর্মমতগুলির পুরোপুরি সত্যটা জানতেই পারছে না ৷ জানলে দেখা যেতো কোন বিরোধই নেই! তাহলে বুঝতে পারছো ব্যাপারটা ! ধর্মজগতের কি অবস্থা দেখেছ ! সমগ্র জগৎ-সংসারে এমনটাই চলছে! বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ‘শিব’ তৈরী করতে গিয়ে ‘বাঁদর’ তৈরী হয়েছে । যেকোন ধর্মমতের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য ৷ ভারতবর্ষের ‘সনাতন’ ধর্মের-ই বা কি অবস্থা ! শত শত খন্ডে বিভক্ত হয়ে – নিজ নিজ মতের স্বপক্ষে মানুষেরা গলা ফাটাচ্ছে ! ধর্মের মূলসুরটিকে তারাই বা ধরতে পারছে কই ?একমাত্র বাউল পরম্পরার সাধকরাই বলতে পারল_’আমি মরছি খুঁজে সেই শহরের সহজ ঠিকানা
যেথা আল্লা হরি রাম কালী গড
একথালাতে খায় খানা।।’
প্রাচীন ভারতে এই পরম্পরা ছিল। ভারতবর্ষের সেই বিশেষত্বের একটা উদাহরণ দিচ্ছি –– যে কোন গৃহস্থ বাড়িতে পূজার বেদীতে হয়তো কালী , কৃষ্ণ , শিব , গণেশ , লক্ষ্মী , সরস্বতীর মূর্ত্তি বা ফোটো পাশাপাশি রয়েছে – বাড়ীর মা সবাইকেই ফুল , জল দিচ্ছেন, বাড়ীর কর্ত্তা হয়তো গণেশ ও লক্ষ্মীর উপাসক – সে গিয়ে ঐ দুজনকে উদ্দেশ্য করে স্তোত্র আউরে পূজা করে চলে এল! বাড়ীর মেয়েটি শিব এবং কৃষ্ণকে ভালবাসে , সে গিয়ে শিবের এবং কৃষ্ণের পূজা করল! ছেলেটি শিবের ভক্ত তাছাড়া মা সরস্বতীরও ভক্ত , কারণ সে হয়তো Student ! সে গিয়ে ‘মা বিদ্যা দাও’ বলে নমস্কার করে চলে এল –– এটাই হওয়া উচিত ! বৈচিত্র্য রয়েছে কিন্তু বিরোধ নাই।
প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ ধর্মমত মানুক_তার মধ্যে দিয়েই নিজের আত্মিক উন্নতি করুক_বিরোধ করবে কেন? অথবা কেনই বা অপরকে স্বমতে আনার চেষ্টা করবে? _এই চেষ্টা করতে গিয়েই তো যত সমস্যা!”
গুরুমহারাজ বারবার বলতেন _”মনুষ্যসমাজ এখনও চেতনায় খুবই অনুন্নত, তাই এতো বিরোধ_এত হানাহানি _এত রক্তপাত!! মানুষের চেতনা যত উন্নত হয়ে উঠবে _অর্থাৎ মানুষ নিজেকে হিন্দু – মুসলিম – খ্রীষ্টান-জৈন-বৌদ্ধ-ধনী-শিক্ষিত_উচ্চ জাতি _গায়ের রঙ সাদা__ ইত্যাদি পরিচয় না দিয়ে, যখন নিজেকে শুধু ‘মানুষ’ হিসাবে পরিচয় দেবে _তখন মনুষ্যসমাজ ঐগুলি থেকে মুক্ত হবে।”
উনি উদাহরণ টেনে বলেছিলেন _” আগেকার কোন ঋষি আশ্রমে গেলে দেখা যেত যেন শান্তির বাতাবরন! চারিদিকে গাছপালা – লতা-বিতানে ঘেরা _অথচ আশ্রম প্রাঙ্গণ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন!! গাছে গাছে ফুল – ফলে ভরে রয়েছে, শাখায় শাখায় পাখিরা ডাকাডাকি করছে, নিচে ছোট ছোট আশ্রম বালক-বালিকারা আনন্দে বেদভ্যাস করছে অথবা খেলা করছে! আশ্রমের শিশুরা সকলেই নধরকান্তি, আশ্রমকন্যারা সকলেই লাবন্যময়ী, তপঃপ্রভাবে বয়োঃবৃদ্ধদের সকলের মুখমন্ডল উজ্জ্বল! আশ্রমে অনেক লোক রয়েছে, প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্মে ব্যাপৃত, কারো সাথে কারও কোন বিরোধ নাই, পরস্পর পরস্পরের সহযোগিতায় কাজগুলি সম্পন্ন করছে! কোন সমস্যা হোলে, আচার্য্যের(আশ্রমের সবচাইতে প্রবীণ ও সবচাইতে জ্ঞানী -এবং সন্মানীয় ব্যক্তি।) _কাছে গিয়ে. তাঁর উপদেশ শুনে সমস্যার সমাধান করে নিতো আশ্রমিকরা!!
ঐ সব আশ্রমে বিভিন্ন প্রজাতির পোষমানা পশুরাও যেমন থাকতো, তেমনি দেখা যেত _জঙ্গলের মা সিংহী তার শিশুগুলিকেও ঐ ঋষি আশ্রমে রেখে দিয়ে শিকারে বেড়িয়ে যেতো। হিংস্র প্রানীরাও জানতো যে, এই স্থানটি শিশুদের জন্য নিরাপদ!! ফলে সারাদিন আশ্রমে হরিনশিশু, ছাগশিশুর সাথে সিংহশিশুও খেলা করে বেড়াতো!!যে স্থানে কেবল উচ্চচিন্তা হয়, ধ্যান-জপ হয়, যেখানে কোন মানুষেরই মনে হিংসা কাজ করে না _সেখানকার বাতাবরন এইরূপ ই হয়। ”
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _”মনুষ্য সমাজও একদিন এইরূপ হবে। মানুষের চেতনার যত উন্নতি ঘটবে, _ততই মানুষের মন থেকে হিংসা – দ্বেষ-লোভ-লালসা ইত্যাদি negative ভাবসমুহ চলে গিয়ে _এগুলির জায়গায় স্থান করে নেবে প্রেম-ভালোবাসা – শ্রদ্ধা – সহানুভূতি ইত্যাদি পজিটিভ ভাবসমুহ!!”(ক্রমশঃ)
বিশ্বের কোণায় কোণায় যে খ্রীষ্ট্রিয় ধর্মমত ছড়িয়ে গেছে এটাও সবক্ষেত্রে খ্রীষ্ট্রিয় আধ্যাত্মিক ধর্মগুরুদের দ্বারা হয়নি ! ফলে খ্রীষ্টের ষোলআনা শিক্ষা সাধারণের কাছে একেবারেই পৌঁছায়নি!
গুরু মহারাজ বলেছিলেন — ইতালিতে থাকার সময় ওনার সাথে এক আর্চ-বিশপের সাক্ষাৎ হয়েছিল ৷ গুরু মহারাজ উপনিষদের বিভিন্ন শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করছিলেন – এইটা শুনে ঐ আর্চ-বিশপ অবাক হয়ে ওনাকে একান্তে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন – ” আপনি এইসব কথা কি করে জানতে পারলেন ? এইসব কথা তো ভ্যাটিক্যান সিটির লাইব্রেরীতে সযত্নে রাখা ‘যীশুর বাণী’ বা প্রকৃত বাইবেলে রয়েছে ! যেগুলি সাধারণ মানুষকে কখনও বলাই হয় না!”
গুরু মহারাজ আমাদেরকে ঘটনাটা উল্লেখ করে বললেন – “ঐ আর্চ-বিশপ পূর্বে ভ্যাটিক্যান সিটির লাইব্রেরীর দায়িত্বে ছিলেন ৷ সেইসময় তিনি ওখানকার লাইব্রেরীতে থাকা বিভিন্ন হাতে লেখা প্রাচীন পুঁথি-পত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতেন ও পড়াশুনা করতেন৷ একদিন তিনি এইরকম একটি হাতে লেখা প্রাচীন বাইবেলের পুঁথিতে ‘আত্মতত্ত্বে’-র উপর কিছু জিজ্ঞাসা-উত্তর পড়েছিলেন । সেমেটিক (খ্রীষ্ট্রিয় , ইসলামীয়) চিন্তাধারায় ‘ঈশ্বর তত্ত্ব’ রয়েছে কিন্তু ‘আত্মতত্ত্বে’-র কোন জায়গা নেই ৷ তাই আশ্চর্য্য হয়ে ঐ আর্চ-বিশপ, মহামান্য পোপ (তখন ছিলেন দ্বিতীয় জন পল)-কে জিজ্ঞাসা করেন – ‘ব্যাপারটা কি ?’ পোপ ঐ অার্চ-বিশপকে উত্তর দিয়েছিলেন – ‘ হ্যাঁ , আমি এসব জানি , এগুলি বাইবেলের জ্ঞান অংশ ! এগুলি আমাদের (যারা ভ্যাটিক্যান সিটিতে থাকে এবং যারা বর্তমান খ্রীষ্টধর্মের বিশ্বব্যাপী নিয়ামক!) জন্য – সাধারণ খ্রীষ্টানদের জন্য নয়! সাধারণ মানুষ এইসব কথা জানলে কখনই আর ‘গড’ বা ‘খ্রীষ্ট’ কে তেমন করে মানবে না ৷ তাই এগুলি প্রচার করা হয় না !’
এরপর গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ‘ ইসলামীয় পরম্পরাতেও রয়েছে যে , কোরাণের ⅓অংশ প্রকাশিত হয়েছে, আর বাকি ⅔অংশ গুরু-স্থানীয়দের কাছে আছে , তা সাধারণের জন্য নয় !’ এরফলে কি হচ্ছে – সাধারণ মানুষ এই ধর্মমতগুলির পুরোপুরি সত্যটা জানতেই পারছে না ৷ জানলে দেখা যেতো কোন বিরোধই নেই! তাহলে বুঝতে পারছো ব্যাপারটা ! ধর্মজগতের কি অবস্থা দেখেছ ! সমগ্র জগৎ-সংসারে এমনটাই চলছে! বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ‘শিব’ তৈরী করতে গিয়ে ‘বাঁদর’ তৈরী হয়েছে । যেকোন ধর্মমতের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য ৷ ভারতবর্ষের ‘সনাতন’ ধর্মের-ই বা কি অবস্থা ! শত শত খন্ডে বিভক্ত হয়ে – নিজ নিজ মতের স্বপক্ষে মানুষেরা গলা ফাটাচ্ছে ! ধর্মের মূলসুরটিকে তারাই বা ধরতে পারছে কই ?একমাত্র বাউল পরম্পরার সাধকরাই বলতে পারল_’আমি মরছি খুঁজে সেই শহরের সহজ ঠিকানা
যেথা আল্লা হরি রাম কালী গড
একথালাতে খায় খানা।।’
প্রাচীন ভারতে এই পরম্পরা ছিল। ভারতবর্ষের সেই বিশেষত্বের একটা উদাহরণ দিচ্ছি –– যে কোন গৃহস্থ বাড়িতে পূজার বেদীতে হয়তো কালী , কৃষ্ণ , শিব , গণেশ , লক্ষ্মী , সরস্বতীর মূর্ত্তি বা ফোটো পাশাপাশি রয়েছে – বাড়ীর মা সবাইকেই ফুল , জল দিচ্ছেন, বাড়ীর কর্ত্তা হয়তো গণেশ ও লক্ষ্মীর উপাসক – সে গিয়ে ঐ দুজনকে উদ্দেশ্য করে স্তোত্র আউরে পূজা করে চলে এল! বাড়ীর মেয়েটি শিব এবং কৃষ্ণকে ভালবাসে , সে গিয়ে শিবের এবং কৃষ্ণের পূজা করল! ছেলেটি শিবের ভক্ত তাছাড়া মা সরস্বতীরও ভক্ত , কারণ সে হয়তো Student ! সে গিয়ে ‘মা বিদ্যা দাও’ বলে নমস্কার করে চলে এল –– এটাই হওয়া উচিত ! বৈচিত্র্য রয়েছে কিন্তু বিরোধ নাই।
প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ ধর্মমত মানুক_তার মধ্যে দিয়েই নিজের আত্মিক উন্নতি করুক_বিরোধ করবে কেন? অথবা কেনই বা অপরকে স্বমতে আনার চেষ্টা করবে? _এই চেষ্টা করতে গিয়েই তো যত সমস্যা!”
গুরুমহারাজ বারবার বলতেন _”মনুষ্যসমাজ এখনও চেতনায় খুবই অনুন্নত, তাই এতো বিরোধ_এত হানাহানি _এত রক্তপাত!! মানুষের চেতনা যত উন্নত হয়ে উঠবে _অর্থাৎ মানুষ নিজেকে হিন্দু – মুসলিম – খ্রীষ্টান-জৈন-বৌদ্ধ-ধনী-শিক্ষিত_উচ্চ জাতি _গায়ের রঙ সাদা__ ইত্যাদি পরিচয় না দিয়ে, যখন নিজেকে শুধু ‘মানুষ’ হিসাবে পরিচয় দেবে _তখন মনুষ্যসমাজ ঐগুলি থেকে মুক্ত হবে।”
উনি উদাহরণ টেনে বলেছিলেন _” আগেকার কোন ঋষি আশ্রমে গেলে দেখা যেত যেন শান্তির বাতাবরন! চারিদিকে গাছপালা – লতা-বিতানে ঘেরা _অথচ আশ্রম প্রাঙ্গণ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন!! গাছে গাছে ফুল – ফলে ভরে রয়েছে, শাখায় শাখায় পাখিরা ডাকাডাকি করছে, নিচে ছোট ছোট আশ্রম বালক-বালিকারা আনন্দে বেদভ্যাস করছে অথবা খেলা করছে! আশ্রমের শিশুরা সকলেই নধরকান্তি, আশ্রমকন্যারা সকলেই লাবন্যময়ী, তপঃপ্রভাবে বয়োঃবৃদ্ধদের সকলের মুখমন্ডল উজ্জ্বল! আশ্রমে অনেক লোক রয়েছে, প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্মে ব্যাপৃত, কারো সাথে কারও কোন বিরোধ নাই, পরস্পর পরস্পরের সহযোগিতায় কাজগুলি সম্পন্ন করছে! কোন সমস্যা হোলে, আচার্য্যের(আশ্রমের সবচাইতে প্রবীণ ও সবচাইতে জ্ঞানী -এবং সন্মানীয় ব্যক্তি।) _কাছে গিয়ে. তাঁর উপদেশ শুনে সমস্যার সমাধান করে নিতো আশ্রমিকরা!!
ঐ সব আশ্রমে বিভিন্ন প্রজাতির পোষমানা পশুরাও যেমন থাকতো, তেমনি দেখা যেত _জঙ্গলের মা সিংহী তার শিশুগুলিকেও ঐ ঋষি আশ্রমে রেখে দিয়ে শিকারে বেড়িয়ে যেতো। হিংস্র প্রানীরাও জানতো যে, এই স্থানটি শিশুদের জন্য নিরাপদ!! ফলে সারাদিন আশ্রমে হরিনশিশু, ছাগশিশুর সাথে সিংহশিশুও খেলা করে বেড়াতো!!যে স্থানে কেবল উচ্চচিন্তা হয়, ধ্যান-জপ হয়, যেখানে কোন মানুষেরই মনে হিংসা কাজ করে না _সেখানকার বাতাবরন এইরূপ ই হয়। ”
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _”মনুষ্য সমাজও একদিন এইরূপ হবে। মানুষের চেতনার যত উন্নতি ঘটবে, _ততই মানুষের মন থেকে হিংসা – দ্বেষ-লোভ-লালসা ইত্যাদি negative ভাবসমুহ চলে গিয়ে _এগুলির জায়গায় স্থান করে নেবে প্রেম-ভালোবাসা – শ্রদ্ধা – সহানুভূতি ইত্যাদি পজিটিভ ভাবসমুহ!!”(ক্রমশঃ)