গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ বলেছিলেন জগতে মনুষ্য সমাজে Senior-Junior রয়েছে , কিন্তু সেটি আধ্যাত্নিক বিচারে! জন্ম-জন্মান্তরের অভিজ্ঞতা পুষ্ট হয়ে অনেক মানুষ চেতনায় উন্নত হন – এরপর এঁরা যখন সাধনার গভীরে ঢুকে বিবেকের জাগরণ এবং আত্মিক উত্তরণ ঘটাতে সমর্থ হন – তখন তাদেরকেই বলা হয় প্রকৃত “উন্নত মানব” ! কোন মানুষ লেখাপড়ায় পন্ডিত , অর্থে-বিত্তে সমৃদ্ধ , শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে প্রথিতযশা হলেও যে তিনি ‘প্রকৃত উন্নত’ হবেন – তা কিন্তু নয় ! যতক্ষণ পর্যন্ত না তার বিবেকের জাগরণ এবং আত্মিক উত্তরণ হচ্ছে – ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে ‘উন্নত’ বলা যাবে না ৷ আধ্যাত্মিক ভাবে এগিয়ে যাবার জন্য পৃথিবীতে মত বহু রয়েছে – কিন্তু পথ একটাই , আর সেটি হল মধ্যম পন্থা বা শরীরের মধ্যভাগে অবস্থিত সুষুম্নাকাণ্ড বরাবর ! সুপ্ত কুলকুণ্ডলিনীর ঘুম ভাঙিয়ে একটা একটা করে চক্র ভেদ করতে করতে ঐ শক্তি যতক্ষণ না আজ্ঞা চক্রে স্থিত হচ্ছে ততক্ষণ সাধক সিদ্ধ হচ্ছে না ! গুরু মহারাজ বললেন – ” চানা (ছোলা) যেমন সেদ্ধ করলে আর অঙ্কুরিত হয় না তেমনি আজ্ঞাচক্রে স্থিত সাধকের আর কামনা-বাসনার মোহ সৃষ্টি হয় না !” উনি বলেছিলেন – ” চানা (ছোলা) ভাজলেও আর অঙ্কুরিত হয় না – এর অর্থ আজ্ঞা চক্রে জ্ঞানাগ্নিতে পুড়ে সাধকের জন্ম-জন্মান্তরের সংস্কারাদি ভস্মীভূত হয়ে যায় ! এরপর আজ্ঞা চক্র থেকে সহস্রার ! সে অন্য যাত্রা — সেখানে অন্য নিয়ম , পার্থিব কোন কিছু দিয়ে সেই যাত্রাপথের বর্ণনা দেওয়া যাবে না !”
যাই হোক এই ভাবে সাধনায় সিদ্ধ-রাই উন্নত মানব! আর মধ্যমপন্থা (সুষুম্নামার্গ) অবলম্বন কারীরা যারা যতটা উঠেছেন – তারা ততটাই উন্নত ! যে কথাটা আগে বলা হচ্ছিল যে কোন ব্যক্তির শিক্ষার মাপ বা সংস্কৃতির মাপ দিয়ে কিন্তু যথার্থ উন্নত মানব বোঝানো যাবে না । গুরু মহারাজ এক কথায় বলে ছিলেন – ” সুন্দর সেই মানুষই , যার স্বভাব সুন্দর ৷”
এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো (গুরু মহারাজ আলোচনা করেছিলেন) , এইযে উচ্চবর্ণ – নিম্নবর্ণভেদ , ছোঁয়াছুঁয়ি বা অস্পৃশ্যতা – এগুলি ও আধ্যাত্মিক উন্নত মানুষের অনুকরণ করতে গিয়েই সমাজে সৃষ্টি হয়েছিল! ব্যাপারটা খুলে বলা যাক – প্রকৃতপক্ষেই যারা সাধক , যারা যোগী – তাদের ‘একান্তে’ থাকার দরকার হয় , আহারের সংযমের প্রয়োজন হয় , অপরের সংস্পর্শে থাকা বা অপরের ছোঁয়া-নাড়া খাবারে শরীরে বা মনের উপর প্রভাব পড়ে – এগুলি সত্যি কথা । যেকোনো সাধক বা সাধিকা নিষ্ঠাভরে যোগভ্যাস কিছুদিন করলেই – এই কথাগুলি সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন ৷ কিন্তু মুশকিল হল — মধ্যযুগের ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র আর রাজতন্ত্রের যখন একটা আপোস হয়েছিল , সেই সময় সমাজের ব্রাহ্মণশ্রেণীর অধিকাংশই আধ্যাত্মিকতার প্রকৃত তাৎপর্য হারিয়ে ফেলে – শুধু তাদের পূর্বসূরীদের জীবনযাত্রার অনুকরণ (অনুসরণ নয়) করতে যায়। আর এইটা করতে গিয়েই সর্বনাশটা ডেকে আনে! তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল সমাজের ভয়ানক ব্যাধি__ অস্পৃশ্যতা , বর্ণভেদ ইত্যাদি!
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন – “দই নির্জনে পাততে হয় ।” ” সাধন ভজন করবে মনে – বনে – কোণে ৷” ” মাঝে মাঝে একটু নির্জন বাস করতে হয় ।” — ইত্যাদি অনেক কথা! গুরু মহারাজও বললেন যে , যারা প্রকৃতপক্ষে-ই সাধন-ভজন করে উন্নত হতে চায় – তাদেরই খাদ্যাখাদ্য বিচার , পাত্রাপাত্র বিচার , নির্জন বাস এগুলির প্রয়োজন – কিন্তু যারা ভন্ড , মন-মুখ এক নয় – তাদের এগুলির কি প্রয়োজন ?
যাইহোক, আবার আমরা মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে আসছি !গুরুমহারাজের করা আলোচনার অনুসরনে আমরা বলছিলাম যে_মনুষ্য সমাজে Senior-Junior রয়েছে , অভিজ্ঞতা পুষ্ট বিবেকবান বুদ্ধিমানরা রয়েছে , আবার প্রকৃত বৈরাগ্যবানেরাও রয়েছে – এরা Senior ! আর একেবারে সাধারণ মানুষ যারা সব সময় বিষয় ভোগ নিয়ে মত্ত , লোভ-লালসা হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি Negative গুনগুলিকেই জীবনে প্রাধান্য দিয়ে বসে আছে – তারা Junior ! এখানে দোষের কিছু নেই — দ্বিতীয় দলের লোকেরা বিবর্তনে খুব বেশিদিন মনুষ্যরূপে আসেনি ! অথবা হয়তো অনেকদিনই এসেছে কিন্তু এখনো ‘মুমুক্ষুত্ব’ জাগেনি ! হয়তো ‘মুমুক্ষুত্ব’ জেগেছে_ কিন্তু এখনো মহাপুরুষের সংসর্গ লাভ ঘটেনি !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _”এইজন্য সাধারণ মানুষ কোন অপরাধ করলে কখনই কোন মহাপুরুষ তার দোষ দেখেন না বা তার সমালোচনা করেন না! ওটা সাধারণ মানুষ করে! মহাপুরুষগন তাকে ‘করুনা’ করেন! তাঁর সান্নিধ্যে ঐ ধরনের’ কিছু দোষ করে ফেলেছে’ _এমন কোন ব্যক্তি এলে তিনি তাকে কিভাবে দোষমুক্ত হোতে হয় _তার পথ বাৎলে দেন।”
তারপর গুরুমহারাজ আরও বললেন _” আমি যদি তোদের দোষ দেখি _তাহলে তো তোরা কেউই এই স্থানে আসার উপযুক্ত হবি না! এই যে, আমার সামনে তোরা সবাই সকালে স্নান করে, কাচা কাপড় পড়ে ধোপদুরস্ত হয়ে জায়গাটা আলো করে বসে আছিস, কিন্তু তোদের ভিতরটা অর্থাৎ অন্তঃকরন তো অতটা পরিস্কার নয়! ভেতরটা তো কালোয় ভরা! এই মুহুর্তে আমি তোদের অন্তঃকরন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ওই দেখেছ! সবাই মাথা নিচু করে ফেলল! ”
পাঠকদের মধ্যে যারা গুরুমহারাজকে দেখেন নি বলে আফসোস করেন _তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ঐ স্বচ্ছাতিস্বচ্ছ আয়নার(গুরুমহারাজ) সামনে মুখোমুখি দাঁড়ানোটাও কিন্তু কম সাধনার ব্যাপার ছিল না! ভুক্তভোগীজনেরা _পুরোনো কথা মনে পড়ে যাওয়ায়, ব্যাপারটা হাড়ে হাড়ে বুঝছেন!!
আসলে কি হয় জানেন ___দেখুন! আমি আমার জীবনের কালোগুলো লোকের কাছে আড়াল করতে পারি_কিন্তু নিজের কাছে আড়াল করব কি করে? আর _’আমার’ কাছে আড়াল করতে পারলেও ওনার কাছে আড়াল কি করা যায় ! উনি যে আয়না! অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অপরাধ হয়তো ক্ষনিক ভুলে কখনো করে ফেলেছিলাম _এখন হয়তো তা বিস্মূতির অতলে চলেও গিয়েছিল _কিন্তু যেই ওনার সামনে আসতাম__অমনি তরলের তলদেশ থেকে ‘ফুট’ করে বুদ্বুদ ওঠার মতো সেইগুলি একেবারে সামনে চলে আসতো!
তখন সত্যি সত্যিই লজ্জা পেতাম _খুবই খারাপ লাগতো! মনে মনে বলতাম _’তুমি আমার অন্তস্থলের খবর রাখো–জেনে প্রভূ আমি লাজে মরি’!
কিন্তু তিনি তো করুনাময়! তিনি কারো কোন দোষ বা অপরাধ নেন না, সকলের লাজ রক্ষা করেন। তাই তো তাঁর কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষদের মধ্যে অনেকেই একটু-আধটু স্থান পায়!
তবে ভগবান যখন যখনই শরীরধারণ করেন _তখন তিনি কিছু নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতেই আসেন! আর সেই কাজের সহযোগী হিসাবে কিছু মানুষকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন এবং কিছু মানুষকে এখান থেকেই টেনে নেন! যাঁরা সঙ্গে আসেন _তাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়! কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে তাঁরা কর্মবিপাকে পড়লেও তাঁদের কোন কর্মফল সঞ্চয় হয় না _কারন তাঁদের কাজ এবং কাজের ফল তো ‘কৃষ্ণার্পনমস্তু’!
কিন্তু ভগবানের কাজে এখানকার যে সমস্ত মানুষেরা অংশগ্রহণ করেন _তারা তো দোষে-গুনে মানুষ, তাই তাদের কাজের কর্মফল হয়। ভালো কাজের – ভালো ফল, মন্দ কাজের – মন্দ ফল! তবে যেহেতু তারা ভগবানের কাজ করে _তাই ভগবৎ কৃপায় তাদের ধীরে ধীরে চেতনার উত্তরণ এবং বিবেকের জাগরণ হয় বই কি! চরৈবেতি- চরৈবেতি করতে করতে তারাও একদিন পৌঁছে যায় অন্তিম লক্ষ্যে ! (ক্রমশঃ)
যাই হোক এই ভাবে সাধনায় সিদ্ধ-রাই উন্নত মানব! আর মধ্যমপন্থা (সুষুম্নামার্গ) অবলম্বন কারীরা যারা যতটা উঠেছেন – তারা ততটাই উন্নত ! যে কথাটা আগে বলা হচ্ছিল যে কোন ব্যক্তির শিক্ষার মাপ বা সংস্কৃতির মাপ দিয়ে কিন্তু যথার্থ উন্নত মানব বোঝানো যাবে না । গুরু মহারাজ এক কথায় বলে ছিলেন – ” সুন্দর সেই মানুষই , যার স্বভাব সুন্দর ৷”
এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো (গুরু মহারাজ আলোচনা করেছিলেন) , এইযে উচ্চবর্ণ – নিম্নবর্ণভেদ , ছোঁয়াছুঁয়ি বা অস্পৃশ্যতা – এগুলি ও আধ্যাত্মিক উন্নত মানুষের অনুকরণ করতে গিয়েই সমাজে সৃষ্টি হয়েছিল! ব্যাপারটা খুলে বলা যাক – প্রকৃতপক্ষেই যারা সাধক , যারা যোগী – তাদের ‘একান্তে’ থাকার দরকার হয় , আহারের সংযমের প্রয়োজন হয় , অপরের সংস্পর্শে থাকা বা অপরের ছোঁয়া-নাড়া খাবারে শরীরে বা মনের উপর প্রভাব পড়ে – এগুলি সত্যি কথা । যেকোনো সাধক বা সাধিকা নিষ্ঠাভরে যোগভ্যাস কিছুদিন করলেই – এই কথাগুলি সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন ৷ কিন্তু মুশকিল হল — মধ্যযুগের ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র আর রাজতন্ত্রের যখন একটা আপোস হয়েছিল , সেই সময় সমাজের ব্রাহ্মণশ্রেণীর অধিকাংশই আধ্যাত্মিকতার প্রকৃত তাৎপর্য হারিয়ে ফেলে – শুধু তাদের পূর্বসূরীদের জীবনযাত্রার অনুকরণ (অনুসরণ নয়) করতে যায়। আর এইটা করতে গিয়েই সর্বনাশটা ডেকে আনে! তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল সমাজের ভয়ানক ব্যাধি__ অস্পৃশ্যতা , বর্ণভেদ ইত্যাদি!
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন – “দই নির্জনে পাততে হয় ।” ” সাধন ভজন করবে মনে – বনে – কোণে ৷” ” মাঝে মাঝে একটু নির্জন বাস করতে হয় ।” — ইত্যাদি অনেক কথা! গুরু মহারাজও বললেন যে , যারা প্রকৃতপক্ষে-ই সাধন-ভজন করে উন্নত হতে চায় – তাদেরই খাদ্যাখাদ্য বিচার , পাত্রাপাত্র বিচার , নির্জন বাস এগুলির প্রয়োজন – কিন্তু যারা ভন্ড , মন-মুখ এক নয় – তাদের এগুলির কি প্রয়োজন ?
যাইহোক, আবার আমরা মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে আসছি !গুরুমহারাজের করা আলোচনার অনুসরনে আমরা বলছিলাম যে_মনুষ্য সমাজে Senior-Junior রয়েছে , অভিজ্ঞতা পুষ্ট বিবেকবান বুদ্ধিমানরা রয়েছে , আবার প্রকৃত বৈরাগ্যবানেরাও রয়েছে – এরা Senior ! আর একেবারে সাধারণ মানুষ যারা সব সময় বিষয় ভোগ নিয়ে মত্ত , লোভ-লালসা হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি Negative গুনগুলিকেই জীবনে প্রাধান্য দিয়ে বসে আছে – তারা Junior ! এখানে দোষের কিছু নেই — দ্বিতীয় দলের লোকেরা বিবর্তনে খুব বেশিদিন মনুষ্যরূপে আসেনি ! অথবা হয়তো অনেকদিনই এসেছে কিন্তু এখনো ‘মুমুক্ষুত্ব’ জাগেনি ! হয়তো ‘মুমুক্ষুত্ব’ জেগেছে_ কিন্তু এখনো মহাপুরুষের সংসর্গ লাভ ঘটেনি !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _”এইজন্য সাধারণ মানুষ কোন অপরাধ করলে কখনই কোন মহাপুরুষ তার দোষ দেখেন না বা তার সমালোচনা করেন না! ওটা সাধারণ মানুষ করে! মহাপুরুষগন তাকে ‘করুনা’ করেন! তাঁর সান্নিধ্যে ঐ ধরনের’ কিছু দোষ করে ফেলেছে’ _এমন কোন ব্যক্তি এলে তিনি তাকে কিভাবে দোষমুক্ত হোতে হয় _তার পথ বাৎলে দেন।”
তারপর গুরুমহারাজ আরও বললেন _” আমি যদি তোদের দোষ দেখি _তাহলে তো তোরা কেউই এই স্থানে আসার উপযুক্ত হবি না! এই যে, আমার সামনে তোরা সবাই সকালে স্নান করে, কাচা কাপড় পড়ে ধোপদুরস্ত হয়ে জায়গাটা আলো করে বসে আছিস, কিন্তু তোদের ভিতরটা অর্থাৎ অন্তঃকরন তো অতটা পরিস্কার নয়! ভেতরটা তো কালোয় ভরা! এই মুহুর্তে আমি তোদের অন্তঃকরন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ওই দেখেছ! সবাই মাথা নিচু করে ফেলল! ”
পাঠকদের মধ্যে যারা গুরুমহারাজকে দেখেন নি বলে আফসোস করেন _তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ঐ স্বচ্ছাতিস্বচ্ছ আয়নার(গুরুমহারাজ) সামনে মুখোমুখি দাঁড়ানোটাও কিন্তু কম সাধনার ব্যাপার ছিল না! ভুক্তভোগীজনেরা _পুরোনো কথা মনে পড়ে যাওয়ায়, ব্যাপারটা হাড়ে হাড়ে বুঝছেন!!
আসলে কি হয় জানেন ___দেখুন! আমি আমার জীবনের কালোগুলো লোকের কাছে আড়াল করতে পারি_কিন্তু নিজের কাছে আড়াল করব কি করে? আর _’আমার’ কাছে আড়াল করতে পারলেও ওনার কাছে আড়াল কি করা যায় ! উনি যে আয়না! অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অপরাধ হয়তো ক্ষনিক ভুলে কখনো করে ফেলেছিলাম _এখন হয়তো তা বিস্মূতির অতলে চলেও গিয়েছিল _কিন্তু যেই ওনার সামনে আসতাম__অমনি তরলের তলদেশ থেকে ‘ফুট’ করে বুদ্বুদ ওঠার মতো সেইগুলি একেবারে সামনে চলে আসতো!
তখন সত্যি সত্যিই লজ্জা পেতাম _খুবই খারাপ লাগতো! মনে মনে বলতাম _’তুমি আমার অন্তস্থলের খবর রাখো–জেনে প্রভূ আমি লাজে মরি’!
কিন্তু তিনি তো করুনাময়! তিনি কারো কোন দোষ বা অপরাধ নেন না, সকলের লাজ রক্ষা করেন। তাই তো তাঁর কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষদের মধ্যে অনেকেই একটু-আধটু স্থান পায়!
তবে ভগবান যখন যখনই শরীরধারণ করেন _তখন তিনি কিছু নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতেই আসেন! আর সেই কাজের সহযোগী হিসাবে কিছু মানুষকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন এবং কিছু মানুষকে এখান থেকেই টেনে নেন! যাঁরা সঙ্গে আসেন _তাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়! কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে তাঁরা কর্মবিপাকে পড়লেও তাঁদের কোন কর্মফল সঞ্চয় হয় না _কারন তাঁদের কাজ এবং কাজের ফল তো ‘কৃষ্ণার্পনমস্তু’!
কিন্তু ভগবানের কাজে এখানকার যে সমস্ত মানুষেরা অংশগ্রহণ করেন _তারা তো দোষে-গুনে মানুষ, তাই তাদের কাজের কর্মফল হয়। ভালো কাজের – ভালো ফল, মন্দ কাজের – মন্দ ফল! তবে যেহেতু তারা ভগবানের কাজ করে _তাই ভগবৎ কৃপায় তাদের ধীরে ধীরে চেতনার উত্তরণ এবং বিবেকের জাগরণ হয় বই কি! চরৈবেতি- চরৈবেতি করতে করতে তারাও একদিন পৌঁছে যায় অন্তিম লক্ষ্যে ! (ক্রমশঃ)