গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের আলোচনা থেকে কিছু অংশ এখানে বলা হচ্ছিল । উনি বলেছিলেন – জগতে বৈচিত্র আছে এবং বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে ঐক্য ! সেই ঐক্যের সুরটিকে খুঁজে পাওয়ার জন্যই সাধনা! যিনি সেই মূল সুরটি খুঁজে পান – তিনিই পৃথিবীতে উন্নত মানুষ ! আর আমরা বাকিরা অনুন্নত – সত্যি সত্যিই অনুন্নত ! উন্নত মানুষদের কোন আলাদা জাত-ধর্ম-বর্ণ হয় না ! তাঁরা উন্নত মানুষ –এটাই তাঁদের পরিচয়! তাঁরা সকল মানুষকেই ‘আপনার’ বলে জানেন , সকলের মঙ্গলের জন্য কাজ করেন , সকলের কল্যাণের জন্য সদা-সর্বদা প্রার্থনা করেন – প্রয়োজনে নিজের জীবনকেই উৎসর্গ করেন ! তাঁদের কাছে _”বসুধৈব কুটুম্বকম্”।
গুরু মহারাজ বলেছিলেন সাধারণ মানুষেরা কোন মহাপুরুষের বা সদ্-গুরুর মূল্যায়ন কখনই করতে পারে না ! ‘বাবা’ না হলে যেমন পিতৃত্বের মর্যাদা বোঝা যায় না – তেমনই ‘গুরু’ না হলে গুরুর মূল্য বোঝা যায় না ।”
প্রকৃত ব্যাপারটিই হচ্ছে বোধে বোধ ! গুরু মহারাজের আলোচনা থেকে এটাও বোঝা যাচ্ছে যে , এই জন্মের শরীরের বয়স দিয়ে উন্নত মানুষদের মূল্যায়ন হয় না! পুরাণে রয়েছে ধ্রুব যখন বালক বয়সেই নারায়ণের সাক্ষাৎ লাভ করেছিল – তখন নারদ ভগবান নারায়ন কে এই জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে , ” বহু সাধু – মহাত্মা – জ্ঞানী – যোগীরা কত হাজার বছর ধরে সাধনা করেও তোমার দর্শন পায় না কিন্তু এই বালক ধ্রুব কি করে তোমাকে লাভ করল ?” তখন ভগবান নারদ কে দেখিয়েছিলেন — একটি কঙ্কালের পাহাড় ! বলেছিলেন – ” ওই যে পাহাড়প্রমাণ কঙ্কাল দেখছো , এগুলি সবই ধ্রুবের এক একটি জন্মের শরীরের কঙ্কাল ! শতশত কংকাল জমা হয়ে হয়ে এই পাহাড়ের রূপ ধারণ করেছে । পূর্ব পূর্ব শরীরে ওর প্রায় পূর্ণতা হয়েই ছিল – একটুখানি বাকি ছিল , সেটা এই শরীরে লাভ হল”।
এই রকম বহু উদাহরণ দেওয়া যায় ! কিন্তু আমরা গুরু মহারাজ কে প্রত্যক্ষ করলাম এবং এই সব কথার , এইসব পৌরাণিক ঘটনার বাস্তব উদাহরণ দেখলাম ! গুরু মহারাজকে আমি যখন প্রথম দেখেছিলাম (১৯৮৩/৮৪ সালে) , তখন ওনার পার্থিব শরীর এর বয়স কত হবে – এই ধরুন ২৯/৩o বছর বয়স ! একেবারে তরতাজা তরুণ সন্ন্যাসী!
কিন্তু বনগ্রাম আশ্রমে সিটিং-এ অনেক বয়োবৃদ্ধ বা বৃদ্ধারা আসত এবং তারা খুবই ভক্তি ভরে গুরু মহারাজ কে প্রণাম করত ! এই নিয়ে একজন একদিন গুরু মহারাজকে জিজ্ঞাসা করেই বসলো – ” আচ্ছা গুরু মহারাজ ! আপনার তো অল্প বয়স _এই বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাদের প্রণাম নিতে আপনার অস্বস্তি লাগে না !”
একথা শুনে গুরু মহারাজের মুখটা কেমন যেন হয়ে গেল, তারপর উনি বললেন – ” দ্যাখো, তোমরা ওদেরকে বয়সে বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা দেখলেও আমি তাদেরকে দেখি শিশু ! মানসিকতায় শিশু , চেতনায় শিশু ! সেই অর্থে গোটা পৃথিবী গ্রহটাই তো এখনো শিশু অবস্থাতেই রয়েছে!”
গুরু মহারাজ এবং যেকোন মহাপুরুষেরা শরীর ধারণ করে আমাদেরকে ‘বড়’ করতেই চান , ‘বড়’ অর্থাৎ উন্নত দেখতেই চান !! আর গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ আমাদেরকে শুধু ‘বড়’ বা ‘উন্নত’-ই নয় – সবচাইতে ‘বড়’ সবচাইতে ‘উন্নত’ দেখতে চেয়েছেন ! তাই তিনি কতবার বলেছেন – ” তোরা এক-একটা ‘পরমানন্দ’ হয়ে ওঠ্ দেখি । সেটাই আমার আসার সার্থকতা হবে !”
কথা হচ্ছিল অবতার পুরুষেরা যাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসেন তাদের প্রসঙ্গে ! তারা যেন ready-made ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ স্বামী বিবেকানন্দের কথা বলেছিলেন – ঊর্ধ্ব লোকের সপ্তর্ষিমণ্ডলের তেজঃপুঞ্জের মধ্যে সাতজন ঋষি ধ্যানস্থ হয়ে বসে আছেন । এক দেবশিশু ওদের একজনের গলা জড়িয়ে ধরে বলে – ” আমি যাচ্ছি , তুমিও এসো !” – নরেন্দ্রনাথ সেই সপ্তর্ষিমণ্ডলের ঋষি ! রাখাল মহারাজ কে বলেছিলেন – ব্রজের (বৃন্দাবনের) রাখাল ! শ্রীম-কে (মহেন্দ্র গুপ্ত) বলেছিলেন – “তোমাকে চৈতন্যের দলে দেখেছিলুম ৷”
সুতরাং এটা বোঝা যাচ্ছে যে, লীলাময় লীলা করতে যখনই আসেন, তখন লীলা সঙ্গীদের সঙ্গে করে নিয়ে আসেন! সারদা মা একবার বলেছিলেন – লীলাসঙ্গীরা যেন কলমীর লতা! যে কোন একটা লতাকে ধরে টান মারলেই অনেকটা জায়গা জুড়ে লতারা জড়ো হতে শুরু করে! তখন বোঝা যায় সবার সাথে সবার একটা সম্পর্ক রয়েছে!
এ ব্যাপারেও আমাদের একেবারে practical অভিজ্ঞতা রয়েছে। গুরুমহারাজ শরীরে থাকাকালীন সময়ে তো বটেই _পরবর্ত্তীতেও দেখেছি, একজন গুরুভাই বা গুরুবোনের সাথে দেখা হোলে__সে কি আনন্দ! নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের থেকেও গুরু ভাই-বোনেরা কত আপন! যেন আত্মার আত্মীয়!! এটা কি করে সম্ভব _যদি না পূর্ব পূর্ব জন্মের সম্পর্ক থাকে!!
তবে আজকে এখানে আমাদের মতো সাধারণের কথা হচ্ছে না _কথা হচ্ছিল অবতার পুরুষের লীলাসঙ্গী নিয়ে! তাঁরা সকলেই প্রকৃত অর্থেই উন্নত মানব! তাঁরা এই মরজগতে শরীর নিয়ে ভগবানের কাজের সহায়তা করে থাকেন। এঁরা সবাই যে _ভগবানের কাছে কাছে থেকেই কাজ করেন, তা সবসময় নাও হতে পারে! হয়তো তাঁর কাছ থেকে দূরবর্তী স্থানে থেকেও কেউ কেউ তাঁর কাজ করতে পারেন। এই কাজ করতে গিয়ে যদি তাদের কোন কর্মবিপাক-ও ঘটে _তারজন্যে তাঁদের নতুন কোন কর্মফল সৃষ্টি বা সঞ্চয় হয় না! এই শরীরেই ভোগ-ভোগান্তির দ্বারা ফলভোগ হয়ে যায়! তাঁদের সব দায়িত্বই ভগবানের! তাঁদেরকে সঙ্গে করে নিয়ে আসা এবং আবার যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব-ও তাঁর! এঁরাই ঠিক ঠিক ‘রাজার ব্যাটা’, এঁরা যেখানেই থাকুন না কেন _ঠিক ‘মাসোহারা'(ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কথা অনুযায়ী) তাঁদের কাছে পৌঁছে যায়। জীবন পথে চলতে কোন অসুবিধাই এঁদের হয় না!
এসব কথা গুরুমহারাজ-ই বলেছিলেন _ রাজার ছদ্মবেশে রাজ্যভ্রমনের গল্পের আকারে ! সারাদিন ছদ্মবেশে রাজ্য পরিভ্রমন এবং প্রজাদের সঙ্গে আলাপন সেরে, দিনের শেষে রাজধানীতে ফিরে যাওয়ার সময়– তাঁর সঙ্গে আসা রাজকর্মচারীদেরকেও ডেকে নেন তিনি _সঙ্গীরা ভুলে গেলেও রাজাই মনে পাড়িয়ে দেন _তাঁদের কর্তব্যকর্মের কথা! (ক্রমশঃ)
গুরু মহারাজ বলেছিলেন সাধারণ মানুষেরা কোন মহাপুরুষের বা সদ্-গুরুর মূল্যায়ন কখনই করতে পারে না ! ‘বাবা’ না হলে যেমন পিতৃত্বের মর্যাদা বোঝা যায় না – তেমনই ‘গুরু’ না হলে গুরুর মূল্য বোঝা যায় না ।”
প্রকৃত ব্যাপারটিই হচ্ছে বোধে বোধ ! গুরু মহারাজের আলোচনা থেকে এটাও বোঝা যাচ্ছে যে , এই জন্মের শরীরের বয়স দিয়ে উন্নত মানুষদের মূল্যায়ন হয় না! পুরাণে রয়েছে ধ্রুব যখন বালক বয়সেই নারায়ণের সাক্ষাৎ লাভ করেছিল – তখন নারদ ভগবান নারায়ন কে এই জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে , ” বহু সাধু – মহাত্মা – জ্ঞানী – যোগীরা কত হাজার বছর ধরে সাধনা করেও তোমার দর্শন পায় না কিন্তু এই বালক ধ্রুব কি করে তোমাকে লাভ করল ?” তখন ভগবান নারদ কে দেখিয়েছিলেন — একটি কঙ্কালের পাহাড় ! বলেছিলেন – ” ওই যে পাহাড়প্রমাণ কঙ্কাল দেখছো , এগুলি সবই ধ্রুবের এক একটি জন্মের শরীরের কঙ্কাল ! শতশত কংকাল জমা হয়ে হয়ে এই পাহাড়ের রূপ ধারণ করেছে । পূর্ব পূর্ব শরীরে ওর প্রায় পূর্ণতা হয়েই ছিল – একটুখানি বাকি ছিল , সেটা এই শরীরে লাভ হল”।
এই রকম বহু উদাহরণ দেওয়া যায় ! কিন্তু আমরা গুরু মহারাজ কে প্রত্যক্ষ করলাম এবং এই সব কথার , এইসব পৌরাণিক ঘটনার বাস্তব উদাহরণ দেখলাম ! গুরু মহারাজকে আমি যখন প্রথম দেখেছিলাম (১৯৮৩/৮৪ সালে) , তখন ওনার পার্থিব শরীর এর বয়স কত হবে – এই ধরুন ২৯/৩o বছর বয়স ! একেবারে তরতাজা তরুণ সন্ন্যাসী!
কিন্তু বনগ্রাম আশ্রমে সিটিং-এ অনেক বয়োবৃদ্ধ বা বৃদ্ধারা আসত এবং তারা খুবই ভক্তি ভরে গুরু মহারাজ কে প্রণাম করত ! এই নিয়ে একজন একদিন গুরু মহারাজকে জিজ্ঞাসা করেই বসলো – ” আচ্ছা গুরু মহারাজ ! আপনার তো অল্প বয়স _এই বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাদের প্রণাম নিতে আপনার অস্বস্তি লাগে না !”
একথা শুনে গুরু মহারাজের মুখটা কেমন যেন হয়ে গেল, তারপর উনি বললেন – ” দ্যাখো, তোমরা ওদেরকে বয়সে বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা দেখলেও আমি তাদেরকে দেখি শিশু ! মানসিকতায় শিশু , চেতনায় শিশু ! সেই অর্থে গোটা পৃথিবী গ্রহটাই তো এখনো শিশু অবস্থাতেই রয়েছে!”
গুরু মহারাজ এবং যেকোন মহাপুরুষেরা শরীর ধারণ করে আমাদেরকে ‘বড়’ করতেই চান , ‘বড়’ অর্থাৎ উন্নত দেখতেই চান !! আর গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ আমাদেরকে শুধু ‘বড়’ বা ‘উন্নত’-ই নয় – সবচাইতে ‘বড়’ সবচাইতে ‘উন্নত’ দেখতে চেয়েছেন ! তাই তিনি কতবার বলেছেন – ” তোরা এক-একটা ‘পরমানন্দ’ হয়ে ওঠ্ দেখি । সেটাই আমার আসার সার্থকতা হবে !”
কথা হচ্ছিল অবতার পুরুষেরা যাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসেন তাদের প্রসঙ্গে ! তারা যেন ready-made ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ স্বামী বিবেকানন্দের কথা বলেছিলেন – ঊর্ধ্ব লোকের সপ্তর্ষিমণ্ডলের তেজঃপুঞ্জের মধ্যে সাতজন ঋষি ধ্যানস্থ হয়ে বসে আছেন । এক দেবশিশু ওদের একজনের গলা জড়িয়ে ধরে বলে – ” আমি যাচ্ছি , তুমিও এসো !” – নরেন্দ্রনাথ সেই সপ্তর্ষিমণ্ডলের ঋষি ! রাখাল মহারাজ কে বলেছিলেন – ব্রজের (বৃন্দাবনের) রাখাল ! শ্রীম-কে (মহেন্দ্র গুপ্ত) বলেছিলেন – “তোমাকে চৈতন্যের দলে দেখেছিলুম ৷”
সুতরাং এটা বোঝা যাচ্ছে যে, লীলাময় লীলা করতে যখনই আসেন, তখন লীলা সঙ্গীদের সঙ্গে করে নিয়ে আসেন! সারদা মা একবার বলেছিলেন – লীলাসঙ্গীরা যেন কলমীর লতা! যে কোন একটা লতাকে ধরে টান মারলেই অনেকটা জায়গা জুড়ে লতারা জড়ো হতে শুরু করে! তখন বোঝা যায় সবার সাথে সবার একটা সম্পর্ক রয়েছে!
এ ব্যাপারেও আমাদের একেবারে practical অভিজ্ঞতা রয়েছে। গুরুমহারাজ শরীরে থাকাকালীন সময়ে তো বটেই _পরবর্ত্তীতেও দেখেছি, একজন গুরুভাই বা গুরুবোনের সাথে দেখা হোলে__সে কি আনন্দ! নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের থেকেও গুরু ভাই-বোনেরা কত আপন! যেন আত্মার আত্মীয়!! এটা কি করে সম্ভব _যদি না পূর্ব পূর্ব জন্মের সম্পর্ক থাকে!!
তবে আজকে এখানে আমাদের মতো সাধারণের কথা হচ্ছে না _কথা হচ্ছিল অবতার পুরুষের লীলাসঙ্গী নিয়ে! তাঁরা সকলেই প্রকৃত অর্থেই উন্নত মানব! তাঁরা এই মরজগতে শরীর নিয়ে ভগবানের কাজের সহায়তা করে থাকেন। এঁরা সবাই যে _ভগবানের কাছে কাছে থেকেই কাজ করেন, তা সবসময় নাও হতে পারে! হয়তো তাঁর কাছ থেকে দূরবর্তী স্থানে থেকেও কেউ কেউ তাঁর কাজ করতে পারেন। এই কাজ করতে গিয়ে যদি তাদের কোন কর্মবিপাক-ও ঘটে _তারজন্যে তাঁদের নতুন কোন কর্মফল সৃষ্টি বা সঞ্চয় হয় না! এই শরীরেই ভোগ-ভোগান্তির দ্বারা ফলভোগ হয়ে যায়! তাঁদের সব দায়িত্বই ভগবানের! তাঁদেরকে সঙ্গে করে নিয়ে আসা এবং আবার যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব-ও তাঁর! এঁরাই ঠিক ঠিক ‘রাজার ব্যাটা’, এঁরা যেখানেই থাকুন না কেন _ঠিক ‘মাসোহারা'(ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কথা অনুযায়ী) তাঁদের কাছে পৌঁছে যায়। জীবন পথে চলতে কোন অসুবিধাই এঁদের হয় না!
এসব কথা গুরুমহারাজ-ই বলেছিলেন _ রাজার ছদ্মবেশে রাজ্যভ্রমনের গল্পের আকারে ! সারাদিন ছদ্মবেশে রাজ্য পরিভ্রমন এবং প্রজাদের সঙ্গে আলাপন সেরে, দিনের শেষে রাজধানীতে ফিরে যাওয়ার সময়– তাঁর সঙ্গে আসা রাজকর্মচারীদেরকেও ডেকে নেন তিনি _সঙ্গীরা ভুলে গেলেও রাজাই মনে পাড়িয়ে দেন _তাঁদের কর্তব্যকর্মের কথা! (ক্রমশঃ)