গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের কাছ থেকে একদিন বনগ্রাম আশ্রমে আমরা ‘নারী নিয়ে সাধন’ – সংক্রান্ত নানা অজানা তথ্য শুনছিলাম । সেদিন উনি বাউল সাধনা , সহজিয়া বৈষ্ণব সাধনা , যুগল সাধনা , কিশোরী ভজনা ইত্যাদি নানান বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন – কিন্তু সেসব কথা সাধারন ভাবে তুলে ধরা উচিত হবে না , তাই কাটছাঁট করে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে !
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আচন্ডালে প্রেম বিতরণের রেশ তৎকালীন বৈষ্ণব সমাজে খুবই পড়েছিল ৷ নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর ছেলে বীরচন্দ্রের পর থেকে যখন ন্যাড়া-নেড়ি সম্প্রদায় বা কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হল – তারপর থেকে বাংলাদেশে যুগল সাধনার খুবই প্লাবন বয়ে গিয়েছিল! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে এই সম্প্রদায়ের সাধন রীতি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে উনি এই পথটিকে অস্বীকার করেন নি । তবে ত্যাগী ভক্তরা যাতে ওই পথ গ্রহণ না করে তাই বলেছিলেন – ” ওটাও একটা বাড়ির অন্দরে যাবার পথ – তবে যেন পায়খানার দরজা , দুর্গন্ধ মেখে ভিতরে ঢুকতে হয় !”
আসলে ‘নারী নিয়ে সাধন’- পথ খুবই পিচ্ছিল ! প্রতি পদে পদস্খলনের ভয় ! শুধু বাউল বা বৈষ্ণব মতে নয় , শাক্ত মতেও ভৈরবী নিয়ে সাধন করতে হয় ! আর সে পথও খুবই পিচ্ছিল!!
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ‘বীর’ এবং ‘ধীর’-ই পারে এই দুর্গম ও পিচ্ছিল পথ পার হতে । উনি সুত্রাকারে সাধন রহস্যের কিছু কথা বলেছিলেন – “রমণীর সঙ্গে থাকে না করে রমণ – সাপের মাথায় ভেকেরে নাচায় না করে ভক্ষন !”
একদিন রাত্রে, ন’কাকাদের বাড়ীতে উনি একান্ত আলোচনায় কিছু কিছু রহস্য খুলেছিলেন! উনি বলেছিলেন – যুগল সাধনের পূর্বে সাধককে সঙ্গিনী বেছে নিতে হয় – উপযুক্ত সঙ্গিনী না হলে , পুরুষদের পতন অনিবার্য ! পরকীয়ার ব্যাপারটি এখান থেকেই এসেছে ! সহধর্মিনী বা বিবাহিত স্ত্রী সব সময় উপযুক্ত সাধনসঙ্গিনী নাও হতে পারে – তখনই প্রয়োজন হয় পরকীয়ার অর্থাৎ উপযুক্ত কোন পর রমণীর !
পাত্রী উপযুক্ত হলে এবং উপযুক্ত গুরুর নির্দেশিত অবলম্বন করলে _যুগল সাধনা শুরুর সাথে সাথে উভয়ের মধ্যেই প্রবল আনন্দের স্রোত বয়ে যেতে থাকে! উভয়েরই কুলকুণ্ডলিনীর জাগরণ ঘ’টে দ্রুত ঊর্ধ্বগতি লাভ হতে থাকে !
গুরু মহারাজ যা বলেছিলেন তাতে আমরা এটাই বুঝেছিলাম যে , ক্রিয়াটি প্রধানত প্রাণায়াম কেন্দ্রিক! সাধকের শ্বাস বইবে ইড়া থেকে পিঙ্গলায় এবং সাধিকার তার বিপরীত – এই ভাবেই দুটি শরীরে একটি শরীরের ন্যায় ক্রিয়া হবে এবং তা বর্তুলাকারে প্রবাহিত হয়ে একটি Circuit তৈরি করবে ৷ এরপরের যে ক্রিয়াটি সেটি সম্পূর্ণ বলা যাবে না শুধু এইটুকু বলা যায় যে , মানুষের দুটি lungs (ফুসফুস) এবং নাসা মূল (আজ্ঞা চক্র) নিয়ে একটি ঊর্ধ্বাকার ত্রিভুজ বা ‘ঊর্ধ্ব ত্রিমাত্রিকা’ তৈরি হয় – মানুষ সাধারণত যে কোন কাজে (এমনকি সাধন-ভজনের সময়তেও) শ্বাস-প্রশ্বাস নেবার (প্রানায়াম সহ) সময় এইটুকু স্থানের মধ্যেই প্রাণের ক্রিয়া হয়। এছাড়াও শরীরে দুটি কিডনি এবং মূলাধার (লিঙ্গ মূল)-কে নিয়ে আর একটি নিম্নাভিমুখী ত্রিভুজ বা অধঃত্রিমাত্রা উৎপন্ন হয়! যুগল সাধনা শুরু করার আগে ওই অধঃমুখী ত্রিমাত্রিকায় প্রাণায়াম সিদ্ধ হতে হয় । ওই স্থানের আকুঞ্চন-প্রসারণের সাথে সাথে শ্বাস-প্রশ্বাসের কন্ট্রোল এসে গেলে তখন লিঙ্গনাল দ্বারা বাতাস বা যে কোন তরল পদার্থ টেনে শরীরের অভ্যন্তরে ঢুকিয়ে নেওয়া যায় ! এটি কন্দর্প গ্রন্থির ক্রিয়া ! এই ক্রিয়ায় সিদ্ধরা কাম-কলা সিদ্ধ হতে পারে !
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই কলার (Art) প্রয়োগ দেখিয়েছিলেন ! শুধু যে সূক্ষ্মে বা কারণ জগতেই ব্রজলীলা বা রাসলীলা হয়েছিল তাই নয় , স্থূলেও সবকিছুই হয়েছিল ! সত্যি সত্যিই ওনার অনেকগুলি স্ত্রী ছিল এবং বৃন্দাবনেও একসাথে অনেক গোপীদের উনি আনন্দ দিয়েছিলেন!
আধুনিককালের একজনের নাম করেছিলেন গুরু মহারাজ – তিনি হলেন ‘রজনীশ’ । যাকে বলা হত ‘ভগবান রজনীশ’ ! সম্ভবত ওনাকে ‘ওশো’-ও বলা হতো । গুরু মহারাজ বলেছিলেন রজনীশও কাম-কলা সিদ্ধ ছিলেন । ফলে উনিও নিজে একসাথে অনেক রমণীকে আনন্দ দান করতে পারতেন ! শুধু এই একটা গুনের জন্যই পাশ্চাত্যের নারীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তার সংঘে যোগদানের জন্য ! আমেরিকায় ‘রজনীশপুরম’ নামে একটি শহর বা Municipality চালাতেন উনি ! এইটা দেখেই বোঝা যায় ও দেশে ওনার জনপ্রিয়তা ছিল কতখানি !
গুরুমহারাজ কিন্তু সেইসময়েই বলে দিয়েছিলেন _”রজনীশ-কে followers-রা ভগবান বানিয়েছে_প্রকৃতপক্ষে ও একটা বিশেষ কলায় সিদ্ধ সাধক, কোন প্লাস ওয়ার্ল্ডের লোক নয়! ফলে ও সিদ্ধির যত বেশি প্রয়োগ ঘটাবে ততই তার ক্ষয় হবে! ক্ষয়পূরনের কায়দা ওর জানা নাই! দেখবে একটা দিন এমন আসবে, যেদিন ওর শক্তি ফুরিয়ে যাবে এবং ও ফতুর হয়ে যাবে!” সেদিন গুরুমহারাজ এক বিদেশী ভক্তের জিজ্ঞাসার উত্তরে বলেছিলেন “মহাপ্রকৃতি এগুলি সহ্য করেন না!” তারপর তিনি একটা forecast করেছিলেন(যেটা উনি সাধারণত করতেন না) _” I am telling you that he(Rajanish) will die a common man’s death!” আর আমরা পরবর্ত্তীতে দেখেছিলাম _সেটাই কিন্তু ঘটেছিল!
যাইহোক, ব্যক্তি আলোচনা না করে আমরা আবার পূর্বের কথায় ফিরে আসি! বাউল-বৈষ্ণবদের যে যুগল-সাধনা, তাকে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ খুব একটা পাত্তা দেননি কিন্তু এই পদ্ধতিতেও যে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় _তা অস্বীকারও করেননি!
গুরুমহারাজ এই ব্যাপারে নিজের সম্বন্ধে কিছু বলেননি _কিন্তু ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কথা বলেছিলেন! অমাবস্যার এক গভীর নিশীথে নির্জন পঞ্চবটীতে, ভৈরবী ব্রাহ্মণীর নির্দেশে তাঁকেও এক ষোড়শী চন্ডালকন্যার সাথে তন্ত্রের এক বিশেষ ক্রিয়া করতে হয়েছিল!
কিন্তু এটা ঠিকই যে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বা যে কোন মহাপুরুষের সাথে সাধারণ মানুষের তুলনা চলে না! তুলনা করা উচিত ও নয়। তবু গুরুমহারাজ উল্লেখ করেছিলেন বলে _বলা হোল।
স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতীর কথাও বলেছিলেন গুরুমহারাজ! যিনি অল্পবয়সী সুন্দরী স্ত্রীবিয়োগের পর পাগলের মতো তার স্ত্রীকে আরো একবার দেখবার জন্য ঘর ছেড়েছিলেন (তাঁর স্ত্রী মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই সুক্ষশরীরে নলিনীকান্তের( পরবর্তীকালের নিগমানন্দ সরস্বতী) কর্মস্থলে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করেছিলেন! ফলে ওনার মনে হয়েছিল যে মৃত্যুর পরেও সুক্ষশরীরকে দেখা যায় ! স্ংকল্পসিদ্ধির জন্য প্রথমেই ঘুরতে ঘুরতে উনি গিয়েছিলেন তারাপীঠে বামেদেবের কাছে। বামদেব ওনার স্ত্রীকে দেখিয়েছিলেন! মৃতা স্ত্রীকে পুনর্বার দেখতে পেয়ে কৌতুহলী নলিনীকান্ত এই ঘটনার রহস্য জানতে এবং শিখতে চাইলেন! কিন্তু বামদেব প্রাথমিক ক্রিয়া শিখিয়ে দিয়ে ওনাকে পরবর্তী গুরুর সন্ধানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ।
এরপর থেকে পরপর উনি আসামে সুমের দাস বাবাজীর কাছে যোগশিক্ষা করেন, আরও পরে হিমালয়ের সচ্চিদানন্দ পরমহংস (যিনি আমাদের পরমগুরুদেব রামানন্দ অবধূতজীর গুরুভ্রাতা ছিলেন)-এর কাছে জ্ঞান দীক্ষা নিয়ে সাধনায় সিদ্ধ হয়ে প্রায় সাধনজগতের সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত হন!
কিন্তু _’শেষ হয়েও হয় না তো শেষ’! প্রেমলাভ না হলে যে চূড়ান্ত হয় না!! প্রেমসাধনার জন্য প্রেমিকগুরু হিসাবে এবারে নিগমানন্দের জীবনে এসেছিলেন গৌরী মা!
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন _ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদার গৌরী মা! ঠাকুরের শরীরত্যাগের পর যিনি স্বামী বিবেকানন্দের just আগে আগে ভারতবর্ষ পরিক্রমা করেছিলেন! স্বামীজী যেখানেই পৌঁছেছেন_গিয়ে শুনেছেন একজন অপূর্ব রুপলাবন্যময়ী এবং অলৌকিক গুনসম্পন্না মা তাদেরকে বলেছেন _কিছুদিনের মধ্যেই তোমাদের এখানে একজন মহাযোগী, মহাপুরুষ আসবেন! গৌরী মা নিগমানন্দকে মধূর ভাবের সাধনা দিয়ে পূর্ণ করেছিলেন! গুরুমহারাজ বলেছিলেন _”ascending – এর চূড়ান্ত রূপ স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতী! কোন সাধক সাধনা করে এর থেকে বেশি উচ্চতায় যেতে পারেন না !!”
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আচন্ডালে প্রেম বিতরণের রেশ তৎকালীন বৈষ্ণব সমাজে খুবই পড়েছিল ৷ নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর ছেলে বীরচন্দ্রের পর থেকে যখন ন্যাড়া-নেড়ি সম্প্রদায় বা কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হল – তারপর থেকে বাংলাদেশে যুগল সাধনার খুবই প্লাবন বয়ে গিয়েছিল! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে এই সম্প্রদায়ের সাধন রীতি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে উনি এই পথটিকে অস্বীকার করেন নি । তবে ত্যাগী ভক্তরা যাতে ওই পথ গ্রহণ না করে তাই বলেছিলেন – ” ওটাও একটা বাড়ির অন্দরে যাবার পথ – তবে যেন পায়খানার দরজা , দুর্গন্ধ মেখে ভিতরে ঢুকতে হয় !”
আসলে ‘নারী নিয়ে সাধন’- পথ খুবই পিচ্ছিল ! প্রতি পদে পদস্খলনের ভয় ! শুধু বাউল বা বৈষ্ণব মতে নয় , শাক্ত মতেও ভৈরবী নিয়ে সাধন করতে হয় ! আর সে পথও খুবই পিচ্ছিল!!
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ‘বীর’ এবং ‘ধীর’-ই পারে এই দুর্গম ও পিচ্ছিল পথ পার হতে । উনি সুত্রাকারে সাধন রহস্যের কিছু কথা বলেছিলেন – “রমণীর সঙ্গে থাকে না করে রমণ – সাপের মাথায় ভেকেরে নাচায় না করে ভক্ষন !”
একদিন রাত্রে, ন’কাকাদের বাড়ীতে উনি একান্ত আলোচনায় কিছু কিছু রহস্য খুলেছিলেন! উনি বলেছিলেন – যুগল সাধনের পূর্বে সাধককে সঙ্গিনী বেছে নিতে হয় – উপযুক্ত সঙ্গিনী না হলে , পুরুষদের পতন অনিবার্য ! পরকীয়ার ব্যাপারটি এখান থেকেই এসেছে ! সহধর্মিনী বা বিবাহিত স্ত্রী সব সময় উপযুক্ত সাধনসঙ্গিনী নাও হতে পারে – তখনই প্রয়োজন হয় পরকীয়ার অর্থাৎ উপযুক্ত কোন পর রমণীর !
পাত্রী উপযুক্ত হলে এবং উপযুক্ত গুরুর নির্দেশিত অবলম্বন করলে _যুগল সাধনা শুরুর সাথে সাথে উভয়ের মধ্যেই প্রবল আনন্দের স্রোত বয়ে যেতে থাকে! উভয়েরই কুলকুণ্ডলিনীর জাগরণ ঘ’টে দ্রুত ঊর্ধ্বগতি লাভ হতে থাকে !
গুরু মহারাজ যা বলেছিলেন তাতে আমরা এটাই বুঝেছিলাম যে , ক্রিয়াটি প্রধানত প্রাণায়াম কেন্দ্রিক! সাধকের শ্বাস বইবে ইড়া থেকে পিঙ্গলায় এবং সাধিকার তার বিপরীত – এই ভাবেই দুটি শরীরে একটি শরীরের ন্যায় ক্রিয়া হবে এবং তা বর্তুলাকারে প্রবাহিত হয়ে একটি Circuit তৈরি করবে ৷ এরপরের যে ক্রিয়াটি সেটি সম্পূর্ণ বলা যাবে না শুধু এইটুকু বলা যায় যে , মানুষের দুটি lungs (ফুসফুস) এবং নাসা মূল (আজ্ঞা চক্র) নিয়ে একটি ঊর্ধ্বাকার ত্রিভুজ বা ‘ঊর্ধ্ব ত্রিমাত্রিকা’ তৈরি হয় – মানুষ সাধারণত যে কোন কাজে (এমনকি সাধন-ভজনের সময়তেও) শ্বাস-প্রশ্বাস নেবার (প্রানায়াম সহ) সময় এইটুকু স্থানের মধ্যেই প্রাণের ক্রিয়া হয়। এছাড়াও শরীরে দুটি কিডনি এবং মূলাধার (লিঙ্গ মূল)-কে নিয়ে আর একটি নিম্নাভিমুখী ত্রিভুজ বা অধঃত্রিমাত্রা উৎপন্ন হয়! যুগল সাধনা শুরু করার আগে ওই অধঃমুখী ত্রিমাত্রিকায় প্রাণায়াম সিদ্ধ হতে হয় । ওই স্থানের আকুঞ্চন-প্রসারণের সাথে সাথে শ্বাস-প্রশ্বাসের কন্ট্রোল এসে গেলে তখন লিঙ্গনাল দ্বারা বাতাস বা যে কোন তরল পদার্থ টেনে শরীরের অভ্যন্তরে ঢুকিয়ে নেওয়া যায় ! এটি কন্দর্প গ্রন্থির ক্রিয়া ! এই ক্রিয়ায় সিদ্ধরা কাম-কলা সিদ্ধ হতে পারে !
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই কলার (Art) প্রয়োগ দেখিয়েছিলেন ! শুধু যে সূক্ষ্মে বা কারণ জগতেই ব্রজলীলা বা রাসলীলা হয়েছিল তাই নয় , স্থূলেও সবকিছুই হয়েছিল ! সত্যি সত্যিই ওনার অনেকগুলি স্ত্রী ছিল এবং বৃন্দাবনেও একসাথে অনেক গোপীদের উনি আনন্দ দিয়েছিলেন!
আধুনিককালের একজনের নাম করেছিলেন গুরু মহারাজ – তিনি হলেন ‘রজনীশ’ । যাকে বলা হত ‘ভগবান রজনীশ’ ! সম্ভবত ওনাকে ‘ওশো’-ও বলা হতো । গুরু মহারাজ বলেছিলেন রজনীশও কাম-কলা সিদ্ধ ছিলেন । ফলে উনিও নিজে একসাথে অনেক রমণীকে আনন্দ দান করতে পারতেন ! শুধু এই একটা গুনের জন্যই পাশ্চাত্যের নারীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তার সংঘে যোগদানের জন্য ! আমেরিকায় ‘রজনীশপুরম’ নামে একটি শহর বা Municipality চালাতেন উনি ! এইটা দেখেই বোঝা যায় ও দেশে ওনার জনপ্রিয়তা ছিল কতখানি !
গুরুমহারাজ কিন্তু সেইসময়েই বলে দিয়েছিলেন _”রজনীশ-কে followers-রা ভগবান বানিয়েছে_প্রকৃতপক্ষে ও একটা বিশেষ কলায় সিদ্ধ সাধক, কোন প্লাস ওয়ার্ল্ডের লোক নয়! ফলে ও সিদ্ধির যত বেশি প্রয়োগ ঘটাবে ততই তার ক্ষয় হবে! ক্ষয়পূরনের কায়দা ওর জানা নাই! দেখবে একটা দিন এমন আসবে, যেদিন ওর শক্তি ফুরিয়ে যাবে এবং ও ফতুর হয়ে যাবে!” সেদিন গুরুমহারাজ এক বিদেশী ভক্তের জিজ্ঞাসার উত্তরে বলেছিলেন “মহাপ্রকৃতি এগুলি সহ্য করেন না!” তারপর তিনি একটা forecast করেছিলেন(যেটা উনি সাধারণত করতেন না) _” I am telling you that he(Rajanish) will die a common man’s death!” আর আমরা পরবর্ত্তীতে দেখেছিলাম _সেটাই কিন্তু ঘটেছিল!
যাইহোক, ব্যক্তি আলোচনা না করে আমরা আবার পূর্বের কথায় ফিরে আসি! বাউল-বৈষ্ণবদের যে যুগল-সাধনা, তাকে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ খুব একটা পাত্তা দেননি কিন্তু এই পদ্ধতিতেও যে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় _তা অস্বীকারও করেননি!
গুরুমহারাজ এই ব্যাপারে নিজের সম্বন্ধে কিছু বলেননি _কিন্তু ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কথা বলেছিলেন! অমাবস্যার এক গভীর নিশীথে নির্জন পঞ্চবটীতে, ভৈরবী ব্রাহ্মণীর নির্দেশে তাঁকেও এক ষোড়শী চন্ডালকন্যার সাথে তন্ত্রের এক বিশেষ ক্রিয়া করতে হয়েছিল!
কিন্তু এটা ঠিকই যে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বা যে কোন মহাপুরুষের সাথে সাধারণ মানুষের তুলনা চলে না! তুলনা করা উচিত ও নয়। তবু গুরুমহারাজ উল্লেখ করেছিলেন বলে _বলা হোল।
স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতীর কথাও বলেছিলেন গুরুমহারাজ! যিনি অল্পবয়সী সুন্দরী স্ত্রীবিয়োগের পর পাগলের মতো তার স্ত্রীকে আরো একবার দেখবার জন্য ঘর ছেড়েছিলেন (তাঁর স্ত্রী মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই সুক্ষশরীরে নলিনীকান্তের( পরবর্তীকালের নিগমানন্দ সরস্বতী) কর্মস্থলে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করেছিলেন! ফলে ওনার মনে হয়েছিল যে মৃত্যুর পরেও সুক্ষশরীরকে দেখা যায় ! স্ংকল্পসিদ্ধির জন্য প্রথমেই ঘুরতে ঘুরতে উনি গিয়েছিলেন তারাপীঠে বামেদেবের কাছে। বামদেব ওনার স্ত্রীকে দেখিয়েছিলেন! মৃতা স্ত্রীকে পুনর্বার দেখতে পেয়ে কৌতুহলী নলিনীকান্ত এই ঘটনার রহস্য জানতে এবং শিখতে চাইলেন! কিন্তু বামদেব প্রাথমিক ক্রিয়া শিখিয়ে দিয়ে ওনাকে পরবর্তী গুরুর সন্ধানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ।
এরপর থেকে পরপর উনি আসামে সুমের দাস বাবাজীর কাছে যোগশিক্ষা করেন, আরও পরে হিমালয়ের সচ্চিদানন্দ পরমহংস (যিনি আমাদের পরমগুরুদেব রামানন্দ অবধূতজীর গুরুভ্রাতা ছিলেন)-এর কাছে জ্ঞান দীক্ষা নিয়ে সাধনায় সিদ্ধ হয়ে প্রায় সাধনজগতের সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত হন!
কিন্তু _’শেষ হয়েও হয় না তো শেষ’! প্রেমলাভ না হলে যে চূড়ান্ত হয় না!! প্রেমসাধনার জন্য প্রেমিকগুরু হিসাবে এবারে নিগমানন্দের জীবনে এসেছিলেন গৌরী মা!
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন _ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদার গৌরী মা! ঠাকুরের শরীরত্যাগের পর যিনি স্বামী বিবেকানন্দের just আগে আগে ভারতবর্ষ পরিক্রমা করেছিলেন! স্বামীজী যেখানেই পৌঁছেছেন_গিয়ে শুনেছেন একজন অপূর্ব রুপলাবন্যময়ী এবং অলৌকিক গুনসম্পন্না মা তাদেরকে বলেছেন _কিছুদিনের মধ্যেই তোমাদের এখানে একজন মহাযোগী, মহাপুরুষ আসবেন! গৌরী মা নিগমানন্দকে মধূর ভাবের সাধনা দিয়ে পূর্ণ করেছিলেন! গুরুমহারাজ বলেছিলেন _”ascending – এর চূড়ান্ত রূপ স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতী! কোন সাধক সাধনা করে এর থেকে বেশি উচ্চতায় যেতে পারেন না !!”