গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ ওনার নিজের হাতে লেখা গ্রন্থ “বাউলের মর্মকথা”-য় বাউল-বৈষ্ণব সাধনার দুটি ধারার বিস্তৃত আলোচনা করেছেন ! প্রথমটি “নারীবর্জিত সাধন” ও দ্বিতীয়টি “নারী নিয়ে সাধন” ! “নারীবর্জিত সাধন”-এর পথ যারা গ্রহণ করেন তারা বিশুদ্ধ বাউল বা উদাস বাউল ! শংকরাচার্য প্রতিষ্ঠিত দশনামী সম্প্রদায়ের সাধক হলে এইরূপ life style গ্রহণকারীদেরকে ‘সন্ন্যাসী’ বলা হয় ৷
‘সাধু’ কথাটি বর্তমানে ‘সন্ন্যাসী’-র সমার্থক হয়ে গেছে – এখানে কিন্তু গুরুমহারাজ স্পষ্ট পার্থক্য করে গেছেন । উনি বলেছিলেন সমাজের অনেকেই ‘সাধু’ হতে পারে – সৎ বিবেকবান ব্যক্তিকেই সাধারণত ‘সাধু’ বলা হয়। ওই ধরনের ব্যক্তিরা যে কোন বৃত্তি বা পেশার সাথে যুক্ত থাকুক না কেন – তিনি ‘সাধু’ পদবাচ্য ! যেমন_ ‘সাধু ব্যবসাদার’ বলা হয় তাকে, যিনি খরিদ্দারের সাথে ভালো ব্যবহার করেন , ন্যায্যমূল্যে ‘মাল’ বিক্রি করেন , খরিদ্দারকে অযথা ঠকান না ৷ আবার কোন বিশিষ্ট ভদ্রলোককে বলা হয় “ওনার সাধু স্বভাব” বা “ওনার সাধু সুলভ আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে !” সমাজের অনেকের পদবী বা টাইটেল রয়েছে ‘সাধু’ ৷ সুতরাং ‘সাধু’ আর ‘সন্ন্যাসী’ সমার্থক শব্দ নয় !
সন্ন্যাসী একটা Life Style ! বৈদিক নিয়মে ছিল চতুরাশ্রম – ব্রহ্মচর্য , গার্হস্থ্য , বাণপ্রস্থ , সন্ন্যাস ! ছোটবেলাটা গৃহে কাটিয়ে আট বছর বয়সের পর থেকে দ্বাদশ বর্ষ(আরো ১২ বছর) গুরুগৃহে বাস কালীন সময়টাকেই বলা হতো ব্রহ্মচর্য ! একুশ বছর বয়স থেকে উনপঞ্চাশ বছর পর্যন্ত কাল গার্হস্থ্য ! তারপর একটা কথা ছিল “পঞ্চাশোর্ধে বনং ব্রজেৎ” ! অর্থাৎ ৫o বছর বয়স হয়ে গেলেই তার পর যে কোন সময়ে পুত্র কন্যার হাতে সংসারের ভার দিয়ে গৃহস্বামী, গৃহকর্ত্রীকে নিয়ে বনে চলে যেতেন । ‘বনে’ অর্থাৎ জঙ্গলে নয় – কোন না কোন মুনি বা ঋষির তপোবনে অথবা আশ্রমে!
বৈদিক যুগে বিদ্যাশিক্ষার institution-গুলি ছিল লোকালয়ের বাইরে কোন নদীর ধারে , পাহাড়ের গায়ে__ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে। সেখানে তাঁরা সাধন-ভজন, তপস্যা করতেন, সেই অর্থে ঐ স্থানকে বলা হোত তপোবন !
গুরু মহারাজ ‘বন’ আর ‘জঙ্গলের’ও পার্থক্য আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ৷ উনি বলেছিলেন – “মানুষ কোন স্থানে অনেক গাছ লাগিয়ে যখন একটি অরণ্যের মতো সৃষ্টি করে , সেটি-ই ‘বন’। এইজন্যেই দেখবে অনেকগুলি তালগাছ যেখানে আছে সেই স্থানকে বলে ‘তালবন’ , কোন পুকুরের চারিপাশে অনেক তাল গাছ লাগানো হলে পুকুরটির নাম-ই হয়ে যায় ‘তালবোনা’ ৷ এই ভাবেই কুঞ্জবন , ফুলবন , তপোবন কথাগুলি এসেছে!
আর ‘জঙ্গল’ হলো প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট ! সুন্দরবনের জঙ্গল, বা যে কোন প্রাকৃতিক জঙ্গল এর উদাহরণ ৷”
যাইহোক, আবার পূর্বের কথায় ফিরে আসা যাক । বৈদিক পঞ্চ শাখার মধ্যে বৈষ্ণব এবং শাক্ত মতকে যথাক্রমে ‘নিগম’ ও ‘আগম’ বলা হয়েছে ! উভয় মতেই “নারী নিয়ে সাধন” পদ্ধতি চালু রয়েছে ! কিন্তু উভয়ের সাধন-পদ্ধতি , আচার-অনুষ্ঠান , উপাচারের পার্থক্য রয়েছে । কোন কোন পদ্ধতি আবার সম্পূর্ণ বিপরীত । নারী নিয়ে সাধনে বৈষ্ণব পদ্ধতিতে সামনা সামনি আসনে বসে ক্রিয়া করতে হয় , কিন্তু তন্ত্রে একজনের কোলে অন্যজনকে বসে সাধন করতে হয়, এইরকম উপাচারের ক্ষেত্রেও চরম ভিন্নতা রয়েছে !
তবে গুরু মহারাজ বলেছিলেন – মত বা পথ যাই হোক না কেন – যে কোনো সাধকের সাধন সঙ্গিনী নির্বাচন একটা অন্যতম বড় ব্যাপার । বাউল মতে রয়েছে – “রমণী বাছিয়া লবে”। সাধারনত এইসব সাধনায় গুরু-ই সঙ্গিনী নির্দিষ্ট করে দেন! ঠিক ঠিক ‘নায়িকা’ না হলে – সমস্ত সাধন-ভজনের ফল ‘o’ (শুন্য) হয়ে যেতে পারে ! আর শুধু ‘o’ নয় ফলের মান নেগেটিভও হতে পারে! ফলে সাধককে আবার নতুন করে সাধনকার্য সম্পন্ন করে উঠে আসতে হয়!
উপযুক্ত নারী একজন সাধককেই শুধু নয়, অনেককেই মুক্তির পথ দেখাতে পারে! তন্ত্রসাধনাতেও একজন ভৈরবী একসাথে অনেক তান্ত্রিক বা কাপালিকের সিদ্ধির কারন হোতে পারেন। গুরুমহারাজ আমাদের আশ্রমের একজন ব্রহ্মচারীনীকে এই গুনসম্পন্ন নারী হিসাবে চিহ্নিত করে গিয়েছিলেন!
গুরুমহারাজ একবার বলেছিলেন মানবশরীরের সহস্রার বা penial gland থেকে নিসৃতঃ এক আশ্চর্য রসের কথা! যার নাম উনি বলেছিলেন – “চন্দ্রবারুনী সুধা”! এটি মস্তিষ্কের উপরিভাগ থেকে নিসৃতঃ হয়ে বড় জোর মুখ বা কন্ঠ পর্যন্ত নেমে আসে! সাধারণ মানুষের রেতঃস্খলনের সময় যেটুকু শিহরন বা সাময়িক আনন্দ হয় _তাতেই অন্য ইন্দ্রিয়গুলি ক্রিয়াশীলতা হারায়! রেতঃ বা বীর্য কিন্তু শরীরে সঞ্চিত থাকে না, তাৎক্ষণিক তৈরি হয় _শুক্রাশয় ব্যবচ্ছেদ করে বীর্য পাওয়া যায় না–সেখানে শুধু শুক্রানুরা থাকে। ejaculation-এর just আগে শরীরের বিভিন্ন endocrine gland থেকে নিসৃতঃ হরমোন, রস শুক্রানুদের সাথে একজায়গায় মিশে তৈরি হয় বীর্য। ঐ রসগুলির মধ্যে যেটি মস্তিষ্কের উপরিভাগ থেকে আসে _তাতেই ঐ শিহরন! ঐটির ক্ষরনই potential energy-র ক্ষয়!
মানবশরীর খাদ্যের মাধ্যমে পায় kinetic energy _যার দ্বারা মানুষ সমস্ত ক্রিয়াদি করে থাকে! কিন্তু potential energy পৈতৃক ভাবে বংশপরম্পরায় পাওয়া যায়! তাই বীর্য কে “পিতৃধন” – ও বলা হয়।
ব্রহ্মচর্য্য সাধনে শরীরের সমস্ত শক্তি নিম্নাভিমুখী না হয়ে ঊর্ধাভিমুখী হয়! সাধনার একটা নির্দিষ্ট level – এ পৌঁছালে শক্তির নিম্নাভিমুখী গতি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়! আর এটা হোলেই তখন খুলে যায় _”চন্দ্রবারুনী সুধার ভান্ডার”! এই অবস্থায় ঐ যোগীর মনে সামান্য আনন্দের প্রকাশ ঘটে গেলেই ক্ষরিত হতে থাকে” চন্দ্রবারুনী সুধা”! এটির প্রভাবে শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কমে যায়, শরীরের ক্ষয়পুরন হয়ে যায়! এর ক্ষরনের ফলে শরীরে ও মনে এক অপূর্ব অনাস্বাদিত আনন্দের প্লাবন হয়ে যায় _যা প্রতিমুহূর্তে প্রতি রোমকূপে রমনের আনন্দের সঙ্গে সমান! শরীরের তখন টালমাটাল অবস্থা! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের প্রায়ই এইরকম অবস্থা হোত! উনি সাধক রামপ্রসাদের যে গানটি গাইতেন, তাতে বলা হয়েছে_ “সুরাপান করি না আমি সুধা খাই ‘জয়কালী’ বলে!”
বনগ্রাম আশ্রমে গুরুমহারাজকেও আমরা প্রায়ই দেখতাম_ একটু উচ্চ আলোচনা শুরু হোলেই ওনার কথা বলা বন্ধ হয়ে যেতো এবং ওনার মুখমন্ডল এক উজ্জ্বল জ্যোতি তে ভরে উঠত!! সেই মুহুর্তেই দেখতাম _উনি ইঙ্গিতে তপিমাকে এক গ্লাস জল দিতে বলতেন অথবা পকেট হাতড়ে হাতড়ে সিগারেট বের করে ধরাতেন!
পরে আমাদের বলতেন _”ঐ আনন্দঘন অবস্থাতে আমার শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয় ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছিল! তাই জল চাইলাম!”
এই অবস্থায় কোন স্থুল কিছু গ্রহন করলে সুধা ক্ষরন বন্ধ হয়ে যায়, এবং শরীর স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে! এই ক্ষরনে শরীরের potential energy-র কোন ক্ষয় হয় না। এটা যেন সমুদ্রের সাথে ড্রেন কাটা ডোবা!! দেখতে ডোবা হলেও সেখানে সবসময় জোয়ার ভাটা খেলে!!তাই শক্তির কোন হানি হয় না _কোন কারণে খরচ হলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই তা আবার পুরন হয়ে যায়!!! (ক্রমশঃ)
‘সাধু’ কথাটি বর্তমানে ‘সন্ন্যাসী’-র সমার্থক হয়ে গেছে – এখানে কিন্তু গুরুমহারাজ স্পষ্ট পার্থক্য করে গেছেন । উনি বলেছিলেন সমাজের অনেকেই ‘সাধু’ হতে পারে – সৎ বিবেকবান ব্যক্তিকেই সাধারণত ‘সাধু’ বলা হয়। ওই ধরনের ব্যক্তিরা যে কোন বৃত্তি বা পেশার সাথে যুক্ত থাকুক না কেন – তিনি ‘সাধু’ পদবাচ্য ! যেমন_ ‘সাধু ব্যবসাদার’ বলা হয় তাকে, যিনি খরিদ্দারের সাথে ভালো ব্যবহার করেন , ন্যায্যমূল্যে ‘মাল’ বিক্রি করেন , খরিদ্দারকে অযথা ঠকান না ৷ আবার কোন বিশিষ্ট ভদ্রলোককে বলা হয় “ওনার সাধু স্বভাব” বা “ওনার সাধু সুলভ আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে !” সমাজের অনেকের পদবী বা টাইটেল রয়েছে ‘সাধু’ ৷ সুতরাং ‘সাধু’ আর ‘সন্ন্যাসী’ সমার্থক শব্দ নয় !
সন্ন্যাসী একটা Life Style ! বৈদিক নিয়মে ছিল চতুরাশ্রম – ব্রহ্মচর্য , গার্হস্থ্য , বাণপ্রস্থ , সন্ন্যাস ! ছোটবেলাটা গৃহে কাটিয়ে আট বছর বয়সের পর থেকে দ্বাদশ বর্ষ(আরো ১২ বছর) গুরুগৃহে বাস কালীন সময়টাকেই বলা হতো ব্রহ্মচর্য ! একুশ বছর বয়স থেকে উনপঞ্চাশ বছর পর্যন্ত কাল গার্হস্থ্য ! তারপর একটা কথা ছিল “পঞ্চাশোর্ধে বনং ব্রজেৎ” ! অর্থাৎ ৫o বছর বয়স হয়ে গেলেই তার পর যে কোন সময়ে পুত্র কন্যার হাতে সংসারের ভার দিয়ে গৃহস্বামী, গৃহকর্ত্রীকে নিয়ে বনে চলে যেতেন । ‘বনে’ অর্থাৎ জঙ্গলে নয় – কোন না কোন মুনি বা ঋষির তপোবনে অথবা আশ্রমে!
বৈদিক যুগে বিদ্যাশিক্ষার institution-গুলি ছিল লোকালয়ের বাইরে কোন নদীর ধারে , পাহাড়ের গায়ে__ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে। সেখানে তাঁরা সাধন-ভজন, তপস্যা করতেন, সেই অর্থে ঐ স্থানকে বলা হোত তপোবন !
গুরু মহারাজ ‘বন’ আর ‘জঙ্গলের’ও পার্থক্য আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ৷ উনি বলেছিলেন – “মানুষ কোন স্থানে অনেক গাছ লাগিয়ে যখন একটি অরণ্যের মতো সৃষ্টি করে , সেটি-ই ‘বন’। এইজন্যেই দেখবে অনেকগুলি তালগাছ যেখানে আছে সেই স্থানকে বলে ‘তালবন’ , কোন পুকুরের চারিপাশে অনেক তাল গাছ লাগানো হলে পুকুরটির নাম-ই হয়ে যায় ‘তালবোনা’ ৷ এই ভাবেই কুঞ্জবন , ফুলবন , তপোবন কথাগুলি এসেছে!
আর ‘জঙ্গল’ হলো প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট ! সুন্দরবনের জঙ্গল, বা যে কোন প্রাকৃতিক জঙ্গল এর উদাহরণ ৷”
যাইহোক, আবার পূর্বের কথায় ফিরে আসা যাক । বৈদিক পঞ্চ শাখার মধ্যে বৈষ্ণব এবং শাক্ত মতকে যথাক্রমে ‘নিগম’ ও ‘আগম’ বলা হয়েছে ! উভয় মতেই “নারী নিয়ে সাধন” পদ্ধতি চালু রয়েছে ! কিন্তু উভয়ের সাধন-পদ্ধতি , আচার-অনুষ্ঠান , উপাচারের পার্থক্য রয়েছে । কোন কোন পদ্ধতি আবার সম্পূর্ণ বিপরীত । নারী নিয়ে সাধনে বৈষ্ণব পদ্ধতিতে সামনা সামনি আসনে বসে ক্রিয়া করতে হয় , কিন্তু তন্ত্রে একজনের কোলে অন্যজনকে বসে সাধন করতে হয়, এইরকম উপাচারের ক্ষেত্রেও চরম ভিন্নতা রয়েছে !
তবে গুরু মহারাজ বলেছিলেন – মত বা পথ যাই হোক না কেন – যে কোনো সাধকের সাধন সঙ্গিনী নির্বাচন একটা অন্যতম বড় ব্যাপার । বাউল মতে রয়েছে – “রমণী বাছিয়া লবে”। সাধারনত এইসব সাধনায় গুরু-ই সঙ্গিনী নির্দিষ্ট করে দেন! ঠিক ঠিক ‘নায়িকা’ না হলে – সমস্ত সাধন-ভজনের ফল ‘o’ (শুন্য) হয়ে যেতে পারে ! আর শুধু ‘o’ নয় ফলের মান নেগেটিভও হতে পারে! ফলে সাধককে আবার নতুন করে সাধনকার্য সম্পন্ন করে উঠে আসতে হয়!
উপযুক্ত নারী একজন সাধককেই শুধু নয়, অনেককেই মুক্তির পথ দেখাতে পারে! তন্ত্রসাধনাতেও একজন ভৈরবী একসাথে অনেক তান্ত্রিক বা কাপালিকের সিদ্ধির কারন হোতে পারেন। গুরুমহারাজ আমাদের আশ্রমের একজন ব্রহ্মচারীনীকে এই গুনসম্পন্ন নারী হিসাবে চিহ্নিত করে গিয়েছিলেন!
গুরুমহারাজ একবার বলেছিলেন মানবশরীরের সহস্রার বা penial gland থেকে নিসৃতঃ এক আশ্চর্য রসের কথা! যার নাম উনি বলেছিলেন – “চন্দ্রবারুনী সুধা”! এটি মস্তিষ্কের উপরিভাগ থেকে নিসৃতঃ হয়ে বড় জোর মুখ বা কন্ঠ পর্যন্ত নেমে আসে! সাধারণ মানুষের রেতঃস্খলনের সময় যেটুকু শিহরন বা সাময়িক আনন্দ হয় _তাতেই অন্য ইন্দ্রিয়গুলি ক্রিয়াশীলতা হারায়! রেতঃ বা বীর্য কিন্তু শরীরে সঞ্চিত থাকে না, তাৎক্ষণিক তৈরি হয় _শুক্রাশয় ব্যবচ্ছেদ করে বীর্য পাওয়া যায় না–সেখানে শুধু শুক্রানুরা থাকে। ejaculation-এর just আগে শরীরের বিভিন্ন endocrine gland থেকে নিসৃতঃ হরমোন, রস শুক্রানুদের সাথে একজায়গায় মিশে তৈরি হয় বীর্য। ঐ রসগুলির মধ্যে যেটি মস্তিষ্কের উপরিভাগ থেকে আসে _তাতেই ঐ শিহরন! ঐটির ক্ষরনই potential energy-র ক্ষয়!
মানবশরীর খাদ্যের মাধ্যমে পায় kinetic energy _যার দ্বারা মানুষ সমস্ত ক্রিয়াদি করে থাকে! কিন্তু potential energy পৈতৃক ভাবে বংশপরম্পরায় পাওয়া যায়! তাই বীর্য কে “পিতৃধন” – ও বলা হয়।
ব্রহ্মচর্য্য সাধনে শরীরের সমস্ত শক্তি নিম্নাভিমুখী না হয়ে ঊর্ধাভিমুখী হয়! সাধনার একটা নির্দিষ্ট level – এ পৌঁছালে শক্তির নিম্নাভিমুখী গতি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়! আর এটা হোলেই তখন খুলে যায় _”চন্দ্রবারুনী সুধার ভান্ডার”! এই অবস্থায় ঐ যোগীর মনে সামান্য আনন্দের প্রকাশ ঘটে গেলেই ক্ষরিত হতে থাকে” চন্দ্রবারুনী সুধা”! এটির প্রভাবে শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কমে যায়, শরীরের ক্ষয়পুরন হয়ে যায়! এর ক্ষরনের ফলে শরীরে ও মনে এক অপূর্ব অনাস্বাদিত আনন্দের প্লাবন হয়ে যায় _যা প্রতিমুহূর্তে প্রতি রোমকূপে রমনের আনন্দের সঙ্গে সমান! শরীরের তখন টালমাটাল অবস্থা! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের প্রায়ই এইরকম অবস্থা হোত! উনি সাধক রামপ্রসাদের যে গানটি গাইতেন, তাতে বলা হয়েছে_ “সুরাপান করি না আমি সুধা খাই ‘জয়কালী’ বলে!”
বনগ্রাম আশ্রমে গুরুমহারাজকেও আমরা প্রায়ই দেখতাম_ একটু উচ্চ আলোচনা শুরু হোলেই ওনার কথা বলা বন্ধ হয়ে যেতো এবং ওনার মুখমন্ডল এক উজ্জ্বল জ্যোতি তে ভরে উঠত!! সেই মুহুর্তেই দেখতাম _উনি ইঙ্গিতে তপিমাকে এক গ্লাস জল দিতে বলতেন অথবা পকেট হাতড়ে হাতড়ে সিগারেট বের করে ধরাতেন!
পরে আমাদের বলতেন _”ঐ আনন্দঘন অবস্থাতে আমার শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয় ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছিল! তাই জল চাইলাম!”
এই অবস্থায় কোন স্থুল কিছু গ্রহন করলে সুধা ক্ষরন বন্ধ হয়ে যায়, এবং শরীর স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে! এই ক্ষরনে শরীরের potential energy-র কোন ক্ষয় হয় না। এটা যেন সমুদ্রের সাথে ড্রেন কাটা ডোবা!! দেখতে ডোবা হলেও সেখানে সবসময় জোয়ার ভাটা খেলে!!তাই শক্তির কোন হানি হয় না _কোন কারণে খরচ হলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই তা আবার পুরন হয়ে যায়!!! (ক্রমশঃ)