স্বামী পরমানন্দ (গুরু মহারাজ) ঠিক কেমন ছিলেন ? – না এখনো কেউ সরাসরি এমন জিজ্ঞাসা আমাকে কোনদিন করে নি ! কেন করেনি – তার একটা কারণও আমরা ধারণা করতে পেরেছি ! আর সেটা হলো আমার চারপাশের পরিচিত মানুষজনেরা প্রায় সকলেই মনে মনে ধরে নিয়েছে যে স্বামী পরমানন্দ সাক্ষাৎ হরির অবতার ছিলেন অর্থাৎ তিনি ছিলেন ভাগবতী তনু ধারণকারী স্বয়ং ভগবান ! কিন্তু গুরু মহারাজ নিজের মুখে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে গিয়েছিলেন – ” দেখবি , আমার এই স্থূল শরীর যখন থাকবে না , তখন তোরা যারা থাকবি – তাদের কাছে অনেক মানুষ আসবে ! নতুন নতুন যারা আসবে সেইসব মানুষজনেরা তোদেরকে জিজ্ঞাসা করবে , “কেমন ছিলেন পরমানন্দ ?” আমরা তখন ভাবতাম – সত্যিই কি এমন দিন আসবে – যেদিন গুরুদেব স্বামী পরমানন্দ থাকবেন না , অথচ আমরা থেকে যাব ! আর সত্যিই যদি তেমন কোনো দিন আসে – তাহলে ওই জিজ্ঞাসার উত্তরটা কি হবে ? আমাদের মধ্যে অনেকেই স্বামীজী (বিবেকানন্দ)-র রচনা পড়েছিল – সেখানে পড়েছিল ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে স্বামীজী এক কথায় বলেছিলেন – “ঠাকুর ছিলেন সাক্ষাৎ প্রেমস্বরূপ “, তাই তারাও (আমার পড়াশোনা করা বন্ধুরা) বলতেন যে গুরু মহারাজ শরীরে না থাকাকালীন তাদেরকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে – তাহলে ওরাও বলবে গুরু মহারাজ ছিলেন সাক্ষাৎ “প্রেমস্বরূপ” ! কিন্তু আমরা সাধারণেরা_চিন্তা ভাবনা করে এটাই দেখেছি যে , গুরু মহারাজকে কোন ‘বিশেষণ’ দিয়েই ঠিক ঠিক বোঝানো যায় না ! তিনি সাক্ষাৎ প্রেমস্বরূপ , তিনি সাক্ষাৎ জ্ঞানস্বরূপ , তিনি সাক্ষাৎ ধর্মস্বরূপ , তিনি সাক্ষাৎ কর্মস্বরূপ – ইত্যাদি যে কোনো ‘বিশেষণ’ দিয়েই গুরু মহারাজ কে ব্যাখ্যা করা যাবে না । তাঁকে যতই ‘বিশেষণ’ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে যাওয়া যায় গুরু মহারাজ যেন তার থেকেও বড় হয়ে যান – আর ঐ ‘কথাগুলি’ যেন অনেক ছোট হয়ে যায় ! তবে আমাদের উপর ভগবান পরমানন্দের অশেষ কৃপা এই যে , এখনও কোন ব্যক্তি সরাসরি এই জিজ্ঞাসা আমাদের করে নি ! তাই কথার পৃষ্ঠে কথা চাপিয়ে _আমাদের ব্যাখ্যাও করতে হয় নি! আমরা খুবই খুশি যে আমাদের চারিপাশের লোকেরা ধরেই নিয়েছে যে , তিনি সাক্ষাৎ স্বয়ং ভগবান ছিলেন ! এ ব্যাপারেও আমার একটা গভীর জিজ্ঞাসা মাঝে মাঝেই নিজের ভেতর থেকে উঠে আসে – ” আচ্ছা কি এমন রহস্য ‘পরমানন্দ’ এই নামের মধ্যে রয়েছে যে , ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে থেকে যুবক-যুবতী যারা গুরু মহারাজকে চোখেও একবার দেখল না – তাদের মনে , তাদের প্রাণে , স্বামী পরমানন্দের প্রতি এত প্রেম , এত শ্রদ্ধা , এত ভালোবাসা জন্ম নিল ? কত বেশি বেশি যুগোপযোগী আধ্যাত্মিক শক্তি সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন গুরুদেব স্বামী পরমানন্দ, যে এমনটা সম্ভব হোল!!!!!!! একবার গুরু মহারাজ বলেছিলেন – “ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ যে পরিমাণ আধ্যাত্মিক শক্তি নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন – এবার যদি আমি সেই পরিমান শক্তি নিয়ে আসতাম – তাহলে আশ্রমে আসা-যাওয়া করে এমন মাত্র কয়েকজন ঘোর ‘নেগেটিভ’ শক্তি বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সামলাতেই আমার শক্তি শেষ হয়ে যেতো ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের পর পৃথিবীর সমাজ জীবন এখন অনেক উন্নত হয়েছে , এই গ্রহের মানুষের মানসিকতার উন্নতি ঘটেছে – ফলে এই অবস্থায় যে কোন মহাপুরুষকে সমাজ এ কাজ করতে হলে অনেক বেশি বেশি আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন হতেই হবে ৷ না হলে সমাজের শিক্ষিত যুব সমাজ তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে !” তিনি আরো বলেছিলেন – ” পৃথিবী গ্রহের মানুষ যেহেতু উন্নত হচ্ছে, তাই এরপর(গুরুজীর পর) যাঁরা অবতীর্ণ হবেন – তাঁদেরকে আরও অধিক আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন হয়ে আসতে হবে ৷” তবে উনি এটাও বলেছিলেন যে অবতার পুরুষেরা ১৪ কলায় পূর্ণ ! তাঁদের মধ্যে শক্তি রয়েছেই – শুধুমাত্র যুগপ্রয়োজন যেটুকু দরকার _তাঁরা সেটুকুই ব্যবহার করেন, এইমাত্র ! তাই উনি বলতে চেয়েছিলেন যে, পরবর্তী অবতারগণের শক্তির প্রকাশ অনেক বেশি হবে।তবে একটা কথা আমরা ওনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম – “আপনাকে শতভিষা নক্ষত্র থেকে আধ্যাত্মিক শক্তি নিয়ে আসতে হ’ল কেন ?” এর উত্তরে গুরুমহারাজ আমাদের বলেছিলেন _”ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ স্থুলশরীর ছেড়েছিলেন ১৮৮৬ সালে এবং ১৯০২ সালে স্বামী বিবেকানন্দ! পৃথিবী গ্রহে শরীর নিতে হলে পৃথিবী গ্রহ থেকেই আধ্যাত্মিক শক্তি নিলে ভালো হয়! এই আধ্যাত্মিক শক্তির সঞ্চয় করে সাধুরা! হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ সাধু-সন্ত-যোগী-ভক্ত-নিঃস্বার্থ সেবক ইত্যাদিরা ধ্যান, জপ, পূজা, প্রার্থনা, দান-যজ্ঞাদির দ্বারা পৃথিবীর পরিমন্ডলে তিল তিল করে positivity-র সঞ্চয় করেন। এইজন্য জানবে বনে-মনে-কোনে__যে কোন স্থানে, যে কোন ব্যক্তি, যে কোন অবস্থায় “বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়” কাজ করলে বা প্রার্থনা করলেও পৃথিবীর আধ্যাত্মিক শক্তির ভান্ডার পুষ্ট হয়। যাইহোক, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এবং স্বামী বিবেকানন্দের শরীর ধারণের জন্য এবং তাঁদের আরব্ধ কাজ সম্পন্ন করার জন্য পৃথিবী গ্রহের সঞ্চিত আধ্যাত্মিক শক্তির ভান্ডার প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছিল! পৃথিবীতে আমার স্থুলশরীর গ্রহনের যখন প্রস্তুতি চলছিল [ঠাকুর এবং স্বামীজীর শরীর ছাড়ার মাত্র ৪০-৫০ বছরের মধ্যেই এবং শরীর ধারণ করতে আরো কয়েক বছর লেগেছিল । তবে এই প্রস্তুতি চলছিল হিমালয়ের কোন দূর্গম স্থানে, যেখানে সাতজন ঋষি ঊর্ধ্ববাহু হয়ে আকুলভাবে আহ্বান করেছিলেন _”হে প্রভু! এস_এস_এস! এই ধরনীর ধুলায় আগমন করে _মানুষকে ত্রিতাপ জ্বালা থেকে মুক্ত করো, জগতের গ্লানি দূর করো, সাধুদের পরিত্রাণ করো, দুষ্কৃতীদের বিনাশ করো প্রভু!” তাঁদের সেই আহ্বান যেন জ্যোতির ধারার ন্যায় ঊর্ধ্বলোকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে ছিল। সেই ধারা ধরেই গুরুমহারাজের কারনশরীরে বা সুক্ষশরীরে আগমন ঘটেছিল পৃথিবীর আবহমন্ডলে! উনি উপর থেকেই প্রথম দেখেছিলেন এই নীল-সবুজ এই গ্রহটিকে! তারপর দেখেছিলেন হিমালয়, গঙ্গা এবং গঙ্গার ধারা ধরে ধরে এসে কালনার কাছে কৃষ্ণদেবপুরে দেখলেন ওনার গর্ভধারিনী জননী নিভারানী কে! এরপর এক বিশেষ কৌশলে মায়ের গর্ভে প্রবেশ করেছিলেন!] _তখন যেহেতু পৃথিবীর পজিটিভ ফিল্ড প্রায় শুন্য হয়ে গিয়েছিল _তাই আমার এই শরীরের কাজ সম্পন্ন করার জন্য শতভিষা নক্ষত্র থেকে আধ্যাত্মিক শক্তি গ্রহণ করতে হয়েছিল!”(ক্রমশঃ) [এই আলোচনাটি আরো চলবে]