গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ একবার বলেছিলেন – ” আমাকে আমার চারপাশের অনেককেই আয়ু দান করতে হয়েছে ।” স্বামী পরমানন্দের নিজের জীবনে যে ভাবে উনি বহু মানুষদের কৃপা করতেন , শক্তি transfer করতেন – সেই প্রসঙ্গেই আলোচনা হচ্ছিল ! আর সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এখনকার উপস্থাপনা ! সত্যি সত্যিই আমরা তখন প্রায়ই শুনতাম অমুক বাবু, অমুক মা-র ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া হয়েছিল , Survive করার কোন উপায় ছিল না – তখন গুরু মহারাজ তাঁর আয়ু থেকে আয়ু দান করে তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন ! আরও পরে শুনেছিলাম গুরু মহারাজ এইরকম দু-একজন নয় বহু মানুষকে আয়ু দান করেছেন।
সিটিংয়ে এ বসে আমরা শুনতাম উনি হয়তো কোন ভক্ত কে উদ্দেশ্য করে বলছেন , ” তোর তো এখন এক্সটেনশন পিরিয়ড চলছে! এই সময়টা কাজে লাগা ! ঈশ্বরীয় চিন্তায় বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবি – বিষয় চিন্তা , সাংসারিক ব্যাপারে চিন্তা একদম করবি না ! তুই তো মরেই গেছিলি ! ঈশ্বরের ইচ্ছায় বেঁচে আছিস! সত্যিই যদি মরে যেতিস – তখন কি এসব চিন্তা তোর মধ্যে আসতো ? এই বিচারটা সব সময় মনের মধ্যে রাখবি – তাহলে দেখবি তোর ঈশ্বর চিন্তায় কোন ব্যাঘাত ঘটবে না ! আমার কথার অন্যথা করলে অহেতুক কষ্ট পাবি ৷” আমরা নিজের চোখে দেখেছিলাম – মাকরার (সাতগেছিয়ার কাছেই একটি গ্রাম) মাস্টারমশাই , বুলবুলিতলার ওদিককার সুদেব কর্মকার , মুখার্জি বাড়ির মেজো কাকা , সিঙ্গুরের সব্যসাচী মান্না আরও অনেকের ক্ষেত্রে গুরু মহারাজ আয়ু দান করে তাদের জীবনের Life-period-কে extention করে দিয়েছিলেন! অনেক সময় (হয়তো সব ক্ষেত্রেই) দেখতাম ওইসব বিশেষ বিশেষ লোকগুলির জীবনের এ বিশেষ ঘটনার (শক্তি সঞ্চার বা আয়ু সঞ্চার) পর-ই গুরুমহারাজের শরীর খারাপ হ’ত _ ভীষণ শরীর খারাপ হোত ! মাকরার মাস্টারমশাই গোপীবাবুর দুটো কিডনি ড্যামেজ হয়ে গিয়েছিল – গুরু মহারাজ কে ওনাদের বাড়ির সমস্ত family member-রা এসে চোখের জলে আবেদন নিবেদন করেছিল ৷ গোপীবাবু সত্বর সুস্থ হয়ে গেছিলেন কিন্তু সাময়িক ভাবে গুরু মহারাজের কিডনির অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছিল – অনেকদিন ধরে ওনাকে তেল মসলা ছাড়া খাবার এবং কুলত্থ কলাই বাটা বা তার জুস্ খেতে দেখেছিলাম ।
আমার হাওড়ার বন্ধু চিনু (চিন্ময় গোস্বামী)-র একবার সাতগেছিয়া অথবা পাহাড়হাটী ঢোকার মুখে বাসে অ্যাক্সিডেন্ট__ প্রায় হয়ে গেছিল! কিন্তু হঠাৎ করে বাসটি রাস্তার পাশে থাকা একটি গাছে মৃদু ধাক্কা মেরে থেমে যায়! জাবুইডাঙায় নেমে ও হাঁটতে হাঁটতে আশ্রমে এসে দেখে যে ওর অ্যাক্সিডেন্টের ব্যাপারটা ওর দিদিমারা (ওনারা সকলেই তখন আশ্রমে এসেছিলেন) সকলেই জানে , কারণ গুরু মহারাজ ওনার সামনে বসে থাকা চিনুর দিদিমাকে বলেছিলেন(প্রায় এক ঘণ্টা আগে, যখন অ্যাক্সিডেন্টটা হতে যাচ্ছিল) – ” এই মুহুর্তে তোমার নাতির একটা অ্যাক্সিডেন্ট ঘটতে যাচ্ছিল , ড্রাইভার নার্ভাস হয়ে ব্রেক ধরতে ভুলে যাচ্ছিল – ফলে আমাকেই জোরসে ব্রেকটা চাপতে হলো! স্টিয়ারিং টা এত জোরে ঘুরিয়েছি – দেখো , আমার কব্জিতে ব্যথা বোধ হচ্ছে !”
চিনুর দিদিমা এই ঘটনাটা আমাকে বলেছিলেন – উনি তারপর বললেন – “এখন আর চিনু , টুকু (চিনুর দিদি) এদের নিয়ে আমি চিন্তা করি না – বাবাঠাকুর (গুরু মহারাজ) যখন ওদের ভার নিয়েছেন তখন আমার আর কি চিন্তা !”
আমাদের যে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল __উপরোক্ত কথাগুলি অবশ্য ঠিক ঠিক সেই প্রসঙ্গের নয় __কারণ ওখানে বলা হচ্ছিল আধ্যাত্মিক শক্তি সঞ্চারের কথা! ঐগুলি আধ্যাত্মিক শক্তির সঞ্চার কিনা ঠিক জানি না _তবু বলা হোল! তবে এগুলি ওনার কৃপার প্রকাশ তো বটেই! ভক্তজনেদের রক্ষা করা অথবা তাদের আকুল প্রার্থনায় সাড়া দেওয়া _এগুলোও তো ভগবানেরই কাজ!! এই মন্তব্যটা অবশ্য করলাম _মহাপুরুষদের জীবন পর্যালোচনা করে! নাহলে ভগবানের কি কাজ আর কি কাজ নয় _তার বিচারের সাধ্য কার আছে!
তবে গুরুমহারাজকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল _’কোন মহাপুরুষ ইচ্ছামাত্রই যখন মুমূর্ষু, মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকে জীবন দান করতে পারেন _তাহলে শতশত, হাজার হাজার মানুষকে বাঁচান না কেন?”
এর উত্তরে গুরুমহারাজ বলেছিলেন _”মহাপুরুষগন কি ঐ কাজটি করতেই শরীর ধারণ করেন? ওঁদের অন্য কাজ থাকে। মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচানোর জন্য ডাক্তার, হাসপাতাল এসব রয়েছে তো!
তোর চোখে হয়তো একটা মুমূর্ষুকে বাঁচিয়ে তোলাই জগতের শ্রেষ্ঠ মানবকল্যানমূলক কাজ–তাইতো? কিন্তু যদি ঐ আজকের মুমূর্ষু ছেলেটিই সুস্থ হয়ে _বড় হয়ে_ বহু মানুষের ক্লেশের কারন বা জীবননাশের কারণ হয়ে ওঠে!! তখন তুই কি বলবি??
তোর বুদ্ধিতে জগৎ সংসার চলবে কি? এই জগৎ সংসার চলে মা জগদম্বার ইচ্ছায়! আর তাঁর ইচ্ছাতেই মহাপুরুষগন শরীর ধারণ করেন! সুতরাং মহাপুরুষগনের সমস্ত কাজকর্ম, এমনকি তাঁদের প্রতিটি footstep-ই মা জগদম্বার ইচ্ছায় হয়ে থাকে। তাঁদের কোন স্বাধীন ইচ্ছা কাজই করে না!
তবে আমার কথা যদি বলিস__সেখানে আমি বলব, আমার মা জগদম্বার কাছে permission নেওয়া আছে! সেইজন্য আমার ব্যাপার স্যাপার একটু আলাদা! আমি প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়েও অনেক কিছু করতে পারি! ”
করেছিলেন ও!! গুরুমহারাজ আমাদের (তাঁর ভক্তদের)-ই চোখের সামনে এই ধরনের কতকিছু করেছিলেন _সেগুলির মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে আমি আর কতটুকু জানি!! গুরুমহারাজের কাছে কাছে যারা সবসময় থাকতেন, গুরুমহারাজের সাথে বিভিন্ন স্থানে(এরাজ্যের নানা স্থান ছাড়াও উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত) যেতেন (যেমন তপিমা) _তাঁরা আরও কত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন!!
যাইহোক, আজকে এইরকম আরো দু-একটা ঘটনার উল্লেখ করব মনে করেছিলাম, কিন্তু প্রতিদিনের ‘লেখার যে space’ _সেটা পূর্ণ হয়ে গেছে, পেনের কালি ফুরোতে বসেছে, হাতের আঙুলে চিনচিনে ব্যাথা শুরু হয়েছে! তাই আজ এই পর্যন্তই থাক্! আগামী দিনে ঐ প্রসঙ্গগুলি আলোচনা হবে। প্রার্থনা করি_ সকলেই গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কৃপা প্রাপ্ত হন!!
জয় গুরুমহারাজ!!! জয় স্বামী পরমানন্দ!!! (ক্রমশঃ)