গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথা নিয়ে ব্যাখ্যা হচ্ছিল এবং তাঁর বলা কথার কিছু উদাহরণ হিসাবে আমি যাদেরকে চোখের সামনে দেখেছি , যাদের মুখ থেকে তার জীবনের উত্থানের কাহিনী শুনেছি – সেগুলি এখানে উপস্থাপনা করার চেষ্টা করছিলাম । কথা হচ্ছিল কৃষ্ণনগরের (করিমপুর নয় , উনি গুরু মহারাজের নির্দেশে বেশ কিছুদিন করিমপুর আশ্রমে ছিলেন) পঙ্কজ বক্সীকে নিয়ে ৷ রোগ-যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য উনি অন্তর্মুখী হয়ে ধীরে ধীরে ধ্যানের গভীরতায় ঢুকে পড়েছিলেন এবং তুলে আনছিলেন মণি-মাণিক্য সমান বিভিন্ন সিদ্ধি ! আজ ওনার কাছ থেকে যেমন যেমন শুনেছিলাম , তেমন তেমন পরিবেশনের চেষ্টা করব ৷ উনি একদিন আদিত্যপুর আশ্রমে ওনার ঘরে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন – (তখন ন’কাকার সাথে আমরা ওই আশ্রমেই ছিলাম) আমি যাবার পর উনি আমাকে বললেন – ওনার কিছু কথা বলার আছে , সেগুলি আমাকে শুনতে হবে এবং ওনার কিছু writtings-ও আছে , সেগুলি আমাকে দেখতে হবে । ঐ লেখাগুলি উনি লিখেছিলেন সেই সময় , যে সময় উনি সাধনার গভীরে প্রবেশ করেছিলেন এবং ওনার অন্তর্জগতে নানান দর্শন , নানা উপলব্ধি হচ্ছিল !
তারপরের Stage-এ উন্নীত হয়ে ওনার মনোজগৎ থেকে লেখার ইচ্ছা চলে যায় – ফলে আর লেখেন নি ! একথা শুনে লেখাগুলো দেখার কৌতুহল আমারও কম হলো না – ঠিক হলো দুপুরের আহারাদির পর সবাই যখন বিশ্রাম করবে সেই সময় আমি একান্তে ওনার ঘরে যাব !
সেই রকমই হলো – আমি যাবার পর প্রথমেই উনি মোটা মোটা গোটাতিনেক ডায়েরী আমার হাতে দিয়ে বললেন – “এগুলো পড়ো ! এগুলো আমার আর কোন কাজে আসবে না , যদি চরৈবেতি কার্যালয়ের কোন কাজে আসে বা তোমার মনে হয় এগুলো থেকে মানুষের কোন কল্যাণ হবে অথবা অন্তত তাদের ভালো লাগবে – তাহলে এগুলো তুমি নিয়ে যাও এবং প্রকাশযোগ্য করে নিয়ে (Correction করার কথা বলেছিলেন) যেকোনো কোথাও ছাপিয়ে দিও।” আমি সবচাইতে মোটা ডায়েরীটা নিয়ে খুলে দেখলাম – পরিষ্কার ঝকঝকে Handwriting (যোগীর সবকিছু এইরকমই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়) – আর ছোট ছোট কবিতার আকারে ওনার যোগলব্ধ বিভিন্ন উপলব্ধির কথা , অনুভূতির কথা লেখা আছে ! কবিতা গুলির ছন্দ হয়তো ঠিকমতো নাই – কোথাও কোথাও অতিরিক্ত শব্দ সংযোজন করে জোর করে মিল করতে হয়েছে – কিন্তু বিষয়বস্তু চমৎকার ! আমি বললাম – ” দেখুন ! এ তো অমুল্য সম্পদ ! সাধারণ মানুষের হয়তো এই লেখাগুলি কাজে লাগবে না , কিন্তু যারা সাধক বা আশ্রমের ব্রহ্মচারী – তাদের কাছে তো আপনার এই ডায়েরীর কথাগুলি ‘জীবন পথের পাথেয়’ !”
উনি বললেন – ” তাহলে এগুলি তুমি সঙ্গে করে নিয়ে যাও – আমাকে ভারমুক্ত করো !” আমি বললাম – ” ঠিক আছে ! আমি এখন একটা ডায়েরী নিয়ে যাচ্ছি – এটিকে দু-চারজন সম্পাদককে দেখাই , তারপর বাকিগুলি নেব ।” এই ঘটনার পর উনি খুব বেশিদিন শরীরে ছিলেন না – ইতিমধ্যে আমি স্বামী স্বরূপানন্দ এবং অট্টহাস সতীপীঠ থেকে প্রকাশিত “অধরা” পত্রিকার সম্পাদক প্রমুখের সাথে কথা বলছিলাম – কিন্তু সবাই বলেছিল – কবিতাগুলিকে আগে নির্দিষ্ট ছন্দে এনে__ তারপর প্রকাশ করতে হবে! আমি ওনার লেখার উপর কলম চালাতে চাইছিলাম না বলেই দেরি হচ্ছিল – ইতিমধ্যে উনি শরীর ছাড়লেন – আমি ডায়েরীটা আদিত্যপুর আশ্রমে ফেরত দিয়ে দিলাম !
যাইহোক , এবার উনি যে কথাগুলি বলেছিলেন সেই সম্বন্ধে আসি ! উনি বলেছিলেন – ” জানো শ্রীধর ! আমার মতো অশক্ত , অসমর্থ্য মানুষের মধ্যে যে নতুন করে কোনো ক্ষমতা বা Power আসতে পারে সেটা আমি কখনও কল্পনাও করিনি ! ধ্যানের গভীরতায় , অন্তর্লীন অবস্থায় আমার বহুক্ষণ থাকতে ভালো লাগতো , চরম আনন্দের অনুভূতি হোত, সারা শরীরে শিহরণের পর শিহরণের ঢেউ বয়ে যেতো _সে যে কি আনন্দ _কি আনন্দ _তা তো বলে বোঝানো যায় না! তখন শুধু মনে হোত_আমার চারপাশের মানুষজনেরা কি বোকা! তাদের অন্তর্জগতে এত আনন্দের ভান্ডার লুকিয়ে রয়েছে _ তার প্রকাশ না ঘটিয়ে কেন এখানে ওখানে আনন্দ অন্বেষণ করছে? আমার মনে হোত _সবাইকে ধরে ধরে বলি_”ওরে! কেন অন্য কিছু করছিস? ধ্যানের গভীরে ডুবে যা_দ্যাখ্ না কত অরূপরতন খুঁজে পাবি!”
তারপর উনি আরও বলেছিলেন _” জানো শ্রীধর! আমার মধ্যে যে একটা power এসে যাচ্ছে _সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম কিন্তু বাইরে প্রথম প্রকাশ করেছিল আমার সহকর্মীরা (ওনার সহযোগী টিচার রা)! ওদেরকে কখন কি বলে বসতাম _আর সেগুলি ফলে যেতো! যাকে যা করতে নিষেধ করতাম _বারন না শুনে সেটা করতে গিয়ে সে সমস্যায় পড়তো! সেই শুরু হয়ে গেল!
এইগুলো যে আমি ইচ্ছা করে করতাম তা নয় _এমনি এমনিই আমার মুখ থেকে বেরিয়ে যেতো এবং সেগুলি ফলেও যেতো!
আসলে সেইসময় আমি কাউকে দেখেই বুঝতে পারতাম _”ওকে কিছু বলা প্রয়োজন”__তাই বলতাম! কিছুদিনের মধ্যেই দেখলাম আমার সহযোগী শিক্ষকেরা আমাকে বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়ে দিল।
এরপর শুরু হোল ভালবাসার অত্যাচার! ওদের নিজেদের সমস্যার সমাধানের পর _ওদের relative – দের সমস্যা সমাধানের জন্য একে একে দাবি জানাতে শুরু করল__তাদেরকে ধরে নিয়ে এসে আমার কাছে হাজির করতে থাকল!
আমি পড়লাম মহা সমস্যায়! কি আর করি!! তখন গুরুমহারাজ আর শরীরে নাই _কাকে জিজ্ঞাসা করি! তখন নিজের অন্তর্জগতেই আকুল প্রার্থনা জানাতে থাকলাম _”হে মা জগদম্বা! এইগুলি যদি সাধনার শক্তি হয় _তাহলে তোমার এই শক্তি তুমি ফিরিয়ে নাও মা ! এটা তো চরম পাওয়া নয _এটা অগ্রগতির বাধাস্বরূপ, তাই এটা তুমি ফিরিয়ে নাও মা!”
প্রার্থনায় কাজ হোল_ মা আমার মধ্যে থেকে ঐ শক্তি তুলে নিলেন! আকুল প্রার্থনার কিছুদিন পর থেকে, আর কাউকে দেখে দুমদাম কিছু বলতে মনই হোত না!
এই ব্যাপারটা চলে গেল _কিন্তু এবার এসে হাজির হল অন্য এক উৎপাত! মুখে কিছু বলতে হোত না _চিন্তা করতে থাকলেই তা ঘটে যেতো, একেবারে হাতে হাতে প্রমাণ পেতে থাকলাম!! (ক্রমশঃ)
তারপরের Stage-এ উন্নীত হয়ে ওনার মনোজগৎ থেকে লেখার ইচ্ছা চলে যায় – ফলে আর লেখেন নি ! একথা শুনে লেখাগুলো দেখার কৌতুহল আমারও কম হলো না – ঠিক হলো দুপুরের আহারাদির পর সবাই যখন বিশ্রাম করবে সেই সময় আমি একান্তে ওনার ঘরে যাব !
সেই রকমই হলো – আমি যাবার পর প্রথমেই উনি মোটা মোটা গোটাতিনেক ডায়েরী আমার হাতে দিয়ে বললেন – “এগুলো পড়ো ! এগুলো আমার আর কোন কাজে আসবে না , যদি চরৈবেতি কার্যালয়ের কোন কাজে আসে বা তোমার মনে হয় এগুলো থেকে মানুষের কোন কল্যাণ হবে অথবা অন্তত তাদের ভালো লাগবে – তাহলে এগুলো তুমি নিয়ে যাও এবং প্রকাশযোগ্য করে নিয়ে (Correction করার কথা বলেছিলেন) যেকোনো কোথাও ছাপিয়ে দিও।” আমি সবচাইতে মোটা ডায়েরীটা নিয়ে খুলে দেখলাম – পরিষ্কার ঝকঝকে Handwriting (যোগীর সবকিছু এইরকমই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়) – আর ছোট ছোট কবিতার আকারে ওনার যোগলব্ধ বিভিন্ন উপলব্ধির কথা , অনুভূতির কথা লেখা আছে ! কবিতা গুলির ছন্দ হয়তো ঠিকমতো নাই – কোথাও কোথাও অতিরিক্ত শব্দ সংযোজন করে জোর করে মিল করতে হয়েছে – কিন্তু বিষয়বস্তু চমৎকার ! আমি বললাম – ” দেখুন ! এ তো অমুল্য সম্পদ ! সাধারণ মানুষের হয়তো এই লেখাগুলি কাজে লাগবে না , কিন্তু যারা সাধক বা আশ্রমের ব্রহ্মচারী – তাদের কাছে তো আপনার এই ডায়েরীর কথাগুলি ‘জীবন পথের পাথেয়’ !”
উনি বললেন – ” তাহলে এগুলি তুমি সঙ্গে করে নিয়ে যাও – আমাকে ভারমুক্ত করো !” আমি বললাম – ” ঠিক আছে ! আমি এখন একটা ডায়েরী নিয়ে যাচ্ছি – এটিকে দু-চারজন সম্পাদককে দেখাই , তারপর বাকিগুলি নেব ।” এই ঘটনার পর উনি খুব বেশিদিন শরীরে ছিলেন না – ইতিমধ্যে আমি স্বামী স্বরূপানন্দ এবং অট্টহাস সতীপীঠ থেকে প্রকাশিত “অধরা” পত্রিকার সম্পাদক প্রমুখের সাথে কথা বলছিলাম – কিন্তু সবাই বলেছিল – কবিতাগুলিকে আগে নির্দিষ্ট ছন্দে এনে__ তারপর প্রকাশ করতে হবে! আমি ওনার লেখার উপর কলম চালাতে চাইছিলাম না বলেই দেরি হচ্ছিল – ইতিমধ্যে উনি শরীর ছাড়লেন – আমি ডায়েরীটা আদিত্যপুর আশ্রমে ফেরত দিয়ে দিলাম !
যাইহোক , এবার উনি যে কথাগুলি বলেছিলেন সেই সম্বন্ধে আসি ! উনি বলেছিলেন – ” জানো শ্রীধর ! আমার মতো অশক্ত , অসমর্থ্য মানুষের মধ্যে যে নতুন করে কোনো ক্ষমতা বা Power আসতে পারে সেটা আমি কখনও কল্পনাও করিনি ! ধ্যানের গভীরতায় , অন্তর্লীন অবস্থায় আমার বহুক্ষণ থাকতে ভালো লাগতো , চরম আনন্দের অনুভূতি হোত, সারা শরীরে শিহরণের পর শিহরণের ঢেউ বয়ে যেতো _সে যে কি আনন্দ _কি আনন্দ _তা তো বলে বোঝানো যায় না! তখন শুধু মনে হোত_আমার চারপাশের মানুষজনেরা কি বোকা! তাদের অন্তর্জগতে এত আনন্দের ভান্ডার লুকিয়ে রয়েছে _ তার প্রকাশ না ঘটিয়ে কেন এখানে ওখানে আনন্দ অন্বেষণ করছে? আমার মনে হোত _সবাইকে ধরে ধরে বলি_”ওরে! কেন অন্য কিছু করছিস? ধ্যানের গভীরে ডুবে যা_দ্যাখ্ না কত অরূপরতন খুঁজে পাবি!”
তারপর উনি আরও বলেছিলেন _” জানো শ্রীধর! আমার মধ্যে যে একটা power এসে যাচ্ছে _সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম কিন্তু বাইরে প্রথম প্রকাশ করেছিল আমার সহকর্মীরা (ওনার সহযোগী টিচার রা)! ওদেরকে কখন কি বলে বসতাম _আর সেগুলি ফলে যেতো! যাকে যা করতে নিষেধ করতাম _বারন না শুনে সেটা করতে গিয়ে সে সমস্যায় পড়তো! সেই শুরু হয়ে গেল!
এইগুলো যে আমি ইচ্ছা করে করতাম তা নয় _এমনি এমনিই আমার মুখ থেকে বেরিয়ে যেতো এবং সেগুলি ফলেও যেতো!
আসলে সেইসময় আমি কাউকে দেখেই বুঝতে পারতাম _”ওকে কিছু বলা প্রয়োজন”__তাই বলতাম! কিছুদিনের মধ্যেই দেখলাম আমার সহযোগী শিক্ষকেরা আমাকে বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়ে দিল।
এরপর শুরু হোল ভালবাসার অত্যাচার! ওদের নিজেদের সমস্যার সমাধানের পর _ওদের relative – দের সমস্যা সমাধানের জন্য একে একে দাবি জানাতে শুরু করল__তাদেরকে ধরে নিয়ে এসে আমার কাছে হাজির করতে থাকল!
আমি পড়লাম মহা সমস্যায়! কি আর করি!! তখন গুরুমহারাজ আর শরীরে নাই _কাকে জিজ্ঞাসা করি! তখন নিজের অন্তর্জগতেই আকুল প্রার্থনা জানাতে থাকলাম _”হে মা জগদম্বা! এইগুলি যদি সাধনার শক্তি হয় _তাহলে তোমার এই শক্তি তুমি ফিরিয়ে নাও মা ! এটা তো চরম পাওয়া নয _এটা অগ্রগতির বাধাস্বরূপ, তাই এটা তুমি ফিরিয়ে নাও মা!”
প্রার্থনায় কাজ হোল_ মা আমার মধ্যে থেকে ঐ শক্তি তুলে নিলেন! আকুল প্রার্থনার কিছুদিন পর থেকে, আর কাউকে দেখে দুমদাম কিছু বলতে মনই হোত না!
এই ব্যাপারটা চলে গেল _কিন্তু এবার এসে হাজির হল অন্য এক উৎপাত! মুখে কিছু বলতে হোত না _চিন্তা করতে থাকলেই তা ঘটে যেতো, একেবারে হাতে হাতে প্রমাণ পেতে থাকলাম!! (ক্রমশঃ)