গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ মহারাজ ছিলেন কৌস্তুভ রতন , যার স্পর্শে সাধারণ পাথরও পরশ পাথর হয়ে যায়! পরশ পাথরের স্পর্শে লোহা সোনা হয় ! লোহা ধাতু – তাই একটা ধাতু থেকে অন্য ধাতুতে রূপান্তরিত করা তবুও সহজ কিন্তু সাধারণ পাথরকে পরশমনি করার ক্ষমতা একমাত্র রয়েছে ভগবানের!!! সেইসব কথাই হচ্ছিল – গুরু মহারাজের এক শিষ্য কিভাবে সাধারণ বা অতি সাধারন থেকে নানান সিদ্ধির অধিকারী হয়ে উঠেছিলেন – সেই কাহিনীই বলা হচ্ছে এখানে ।
পঙ্কজ বক্সীর মধ্যে প্রথম সিদ্ধির কথা আগে বলা হয়েছিল, যেটা বিশ্বজনননী মায়ের কাছে প্রার্থনায় চলেও গিয়েছিল ! পঙ্কজ বক্সীর দ্বিতীয় সিদ্ধিটা যেরূপে এসেছিল, এখন সেটা বলি– উনি সেই সময় যা ভাবতেন বা মনে মনে চিন্তা করতেন– তাই হয়ে যেতো !
প্রথম প্রথম উনি ভেবেছিলেন এসব বোধহয় এমনি এমনি হচ্ছে – কিন্তু ধীরে ধীরে ওনার সহকর্মীরা , বাড়ির লোকেরাও যখন ওনার এই বিশেষ ক্ষমতার কথা বুঝতে পারল – তখন উনি বিচলিত হলেন ৷ Experiment করার জন্য সেই সময় উনি ইচ্ছে করে দু-তিনটি সংকল্প প্রকাশ করেছিলেন ! সেগুলোর একটি হলো – উনি ওনার বাড়িতে (সম্ভবত মামার বাড়ি মাধবপুরে) স্কুল থেকে সপ্তাহান্তে শনিবার ফিরতেন আবার সোমবারে চলে যেতেন । সেই রকম এক শনিবার ওনার নির্দিষ্ট তালাবন্ধ ঘরে ঢুকে জানালা খুলতেই একটা ছোট্ট সরু পেয়ারার ডাল – ওনার জানালা ঠেলে ঘরের ভিতরে খানিকটা ঢুকে গেল ! ওনার মনে পরল ওই পেয়ারা গাছটির পেয়ারা উনি আগে কত খেয়েছেন , আর এখন বাড়িতে অনেকগুলি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে – তারাই সব মেরে দেয় (খেয়ে নেয়) । ওনার নিজেরও খুব একটা পেয়ারা খাবার স্পৃহাও হয় না ! তারপর উনি মনে মনে ভাবলেন – ‘ তবে যদি এই ছোট্ট ডালটায় কোন পাকা পেয়ারা থাকতো , তাহলে তিনি সেই পেয়ারাটা নিশ্চয়ই খেতে পারতেন , কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব – কারণ এই ছোট্ট ডালটায় তো একটা কসি পেয়ারাও নাই – পাকা পেয়ারা আসবে কোথা থেকে !’
কিন্তু সকাল হতেই দেখা গেল সেই ডালটায় সত্যি সত্যিই একটা সুপুষ্ট বেশ বড়োসড়ো পাকা পেয়ারা ! উনি সেটা খেয়েছিলেনও ! কিন্তু এই Experiment -টি তেও উনি sure হতে পারেননি(ওনার শক্তি সম্পর্কে) ! সেইজন্য উনি আবার একটা সংকল্প করলেন – ওনার ঘরের পাশেই প্রাচীর ঘেরা একটি বাগান ছিল ওনাদের কোন প্রতিবেশীর ৷ সেই বাগানে একটি জবা গাছ ছিল দীর্ঘদিনের – সেটা বহুকাল থেকে এমন পোকা ধরা ছিল যে – গাছটিতে কোন ফুল ফুটত না ৷ উনি প্রায় প্রতি সপ্তাহেই(যখন বাড়ি যেতেন) ওনার জানালা দিয়ে ওই বেচারা গাছটির দিকে তাকিয়ে থাকতেন এবং মনে মনে গাছটির প্রতি করুণাপরবশ হয়ে পড়তেন ৷ বক্সী বাবু এবার ওনার নতুন ‘সিদ্ধি’টা ওই বিশেষ জবা গাছটার উপর প্রয়োগ করে পরীক্ষা করতে চাইলেন ৷ মনে মনে সংকল্প করলেন – ” কাল সকালে যদি ওই জবা গাছটায় ফুল আসে তাহলে ওনার বিশ্বাস দৃঢ় হবে যে এই শক্তিটা ওনার আছে ! “ফুটল ফুল” – পরের দিন সকালে দেখা গেল , পাতাহীন গাছে এক গাছ ফুল হাসছে !!
এই ঘটনার পর পঙ্কজ বক্সী আর কখনোই এই শক্তির প্রয়োগ ঘটান নি ! এবার আবার উনি নয়ন জলে ভাসতে ভাসতে মা জগদম্বার কাছে ওই সিদ্ধিটাও ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে শুরু করলেন ! উনি আমাকে বলেছিলেন – “জানো শ্রীধর ! দেখেছিলাম যে, শক্তি অর্জন করা যেমন কঠিন , তেমনি যে কোন শক্তি লাভ করে – তাকে ফের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়াটাও খুবই সাধনা বা প্রার্থনার প্রয়োজন হয় ।
এবারও তাই হয়েছিল – মা ওনার এই সিদ্ধিটাও ফিরিয়ে নিয়েছিলেন! কিন্তু এক যায় আর এক আসে ! এরপর যে ‘সিদ্ধি’-টা এসে হাজির হলো তা হল কোন ব্যক্তি , বস্তু বা বিষয়ের সাথে একাত্মবোধ ! উনি বলেছিলেন – “একদিন অন্যান্য শিক্ষকরা আমাকে ধরে ধরে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিল (উনি ওনার স্কুলের খুব কাছেই একটা ঘরে থাকতেন) – শুধু বড় রাস্তা পার হলেই স্কুল ! এমন সময় রাস্তা দিয়ে যাওয়া একজন ঘোড়ার গাড়ির কোচোয়ান তার হাতের লাঠির ডগায় বাঁধা পাকানো শক্ত দড়ির ‘ছোট’ দিয়ে ঘোড়াটার পিঠে ‘সপাং’ করে চাবুকের মতো লাগাল এক ঘা ! দূর থেকে ওই দৃশ্য দেখেই আমি আর্তনাদ করে বসে পড়েছি আমার পিঠে আঘাত নিয়ে ! ওরা স্কুলে গিয়ে আমার জামা খুলে দেখে চাবুকের আঘাতের দাগ আমার পিঠে ! বেশ কয়েকদিন যন্ত্রণাও ছিল ! এইটা বাড়তে বাড়তে এমন হল যে , যার দিকেই দৃষ্টিপাত করি – তাঁরই ব্যথা-বেদনা আমাকে স্পর্শ করতো ! এমন কি – কেউ আমার সামনে ঘাস মাড়ালে , ফুল ছিঁড়লেও আমার তীব্র যন্ত্রণা হত ! এই অবস্থায় যে কদিন ছিলাম , সেই কয়দিন আমার যে কি জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে – তা আমি বলে বোঝাতে পারব না ! পরে আবার মায়ের কাছে আকুল প্রার্থনা আর চোখের জল ফেলে ফেলে এই অবস্থার অবসান ঘটেছিল !
এই অবস্থা পার হতেই আমার মধ্যে ‘বোধ’ শক্তির প্রকাশ ঘটতে থাকলো ! যেকোনো শাস্ত্রোক্ত বিষয় , জাগতিক বিষয় মনে উদয় হলেই আমি তার সারমর্ম বুঝে ফেলতাম ৷ যে কোন বিষয় কেউ জিজ্ঞাসা করলে – তাকে তার মনোমতন করে বুঝিয়ে দিতেও পারতাম। কিন্তু এখন আমি অনেকটা বুঝে গেছিলাম ৷ তাই যেকোনো ‘সিদ্ধি’ বা ‘প্রাপ্তি’ আমার মধ্যে জেগে উঠছে বুঝতে পারলেই আমি মায়ের কাছে সেটা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আকুল হয়ে প্রার্থনা করতাম ৷ এইভাবে চলতে চলতে একদিন এমন একটা অবস্থা হলো যে – আমি বুঝতে পারলাম যে আমি প্রায় শেষের দরজায় পৌঁছে গেছি – শুধু দরজা খোলার অপেক্ষা ! এমন সময় নির্দেশ হলো – তোর এই শরীরে এই পর্যন্তই – বাকিটা হবে পরের শরীরে !” [ক্রমশঃ]
পঙ্কজ বক্সীর মধ্যে প্রথম সিদ্ধির কথা আগে বলা হয়েছিল, যেটা বিশ্বজনননী মায়ের কাছে প্রার্থনায় চলেও গিয়েছিল ! পঙ্কজ বক্সীর দ্বিতীয় সিদ্ধিটা যেরূপে এসেছিল, এখন সেটা বলি– উনি সেই সময় যা ভাবতেন বা মনে মনে চিন্তা করতেন– তাই হয়ে যেতো !
প্রথম প্রথম উনি ভেবেছিলেন এসব বোধহয় এমনি এমনি হচ্ছে – কিন্তু ধীরে ধীরে ওনার সহকর্মীরা , বাড়ির লোকেরাও যখন ওনার এই বিশেষ ক্ষমতার কথা বুঝতে পারল – তখন উনি বিচলিত হলেন ৷ Experiment করার জন্য সেই সময় উনি ইচ্ছে করে দু-তিনটি সংকল্প প্রকাশ করেছিলেন ! সেগুলোর একটি হলো – উনি ওনার বাড়িতে (সম্ভবত মামার বাড়ি মাধবপুরে) স্কুল থেকে সপ্তাহান্তে শনিবার ফিরতেন আবার সোমবারে চলে যেতেন । সেই রকম এক শনিবার ওনার নির্দিষ্ট তালাবন্ধ ঘরে ঢুকে জানালা খুলতেই একটা ছোট্ট সরু পেয়ারার ডাল – ওনার জানালা ঠেলে ঘরের ভিতরে খানিকটা ঢুকে গেল ! ওনার মনে পরল ওই পেয়ারা গাছটির পেয়ারা উনি আগে কত খেয়েছেন , আর এখন বাড়িতে অনেকগুলি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে – তারাই সব মেরে দেয় (খেয়ে নেয়) । ওনার নিজেরও খুব একটা পেয়ারা খাবার স্পৃহাও হয় না ! তারপর উনি মনে মনে ভাবলেন – ‘ তবে যদি এই ছোট্ট ডালটায় কোন পাকা পেয়ারা থাকতো , তাহলে তিনি সেই পেয়ারাটা নিশ্চয়ই খেতে পারতেন , কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব – কারণ এই ছোট্ট ডালটায় তো একটা কসি পেয়ারাও নাই – পাকা পেয়ারা আসবে কোথা থেকে !’
কিন্তু সকাল হতেই দেখা গেল সেই ডালটায় সত্যি সত্যিই একটা সুপুষ্ট বেশ বড়োসড়ো পাকা পেয়ারা ! উনি সেটা খেয়েছিলেনও ! কিন্তু এই Experiment -টি তেও উনি sure হতে পারেননি(ওনার শক্তি সম্পর্কে) ! সেইজন্য উনি আবার একটা সংকল্প করলেন – ওনার ঘরের পাশেই প্রাচীর ঘেরা একটি বাগান ছিল ওনাদের কোন প্রতিবেশীর ৷ সেই বাগানে একটি জবা গাছ ছিল দীর্ঘদিনের – সেটা বহুকাল থেকে এমন পোকা ধরা ছিল যে – গাছটিতে কোন ফুল ফুটত না ৷ উনি প্রায় প্রতি সপ্তাহেই(যখন বাড়ি যেতেন) ওনার জানালা দিয়ে ওই বেচারা গাছটির দিকে তাকিয়ে থাকতেন এবং মনে মনে গাছটির প্রতি করুণাপরবশ হয়ে পড়তেন ৷ বক্সী বাবু এবার ওনার নতুন ‘সিদ্ধি’টা ওই বিশেষ জবা গাছটার উপর প্রয়োগ করে পরীক্ষা করতে চাইলেন ৷ মনে মনে সংকল্প করলেন – ” কাল সকালে যদি ওই জবা গাছটায় ফুল আসে তাহলে ওনার বিশ্বাস দৃঢ় হবে যে এই শক্তিটা ওনার আছে ! “ফুটল ফুল” – পরের দিন সকালে দেখা গেল , পাতাহীন গাছে এক গাছ ফুল হাসছে !!
এই ঘটনার পর পঙ্কজ বক্সী আর কখনোই এই শক্তির প্রয়োগ ঘটান নি ! এবার আবার উনি নয়ন জলে ভাসতে ভাসতে মা জগদম্বার কাছে ওই সিদ্ধিটাও ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে শুরু করলেন ! উনি আমাকে বলেছিলেন – “জানো শ্রীধর ! দেখেছিলাম যে, শক্তি অর্জন করা যেমন কঠিন , তেমনি যে কোন শক্তি লাভ করে – তাকে ফের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়াটাও খুবই সাধনা বা প্রার্থনার প্রয়োজন হয় ।
এবারও তাই হয়েছিল – মা ওনার এই সিদ্ধিটাও ফিরিয়ে নিয়েছিলেন! কিন্তু এক যায় আর এক আসে ! এরপর যে ‘সিদ্ধি’-টা এসে হাজির হলো তা হল কোন ব্যক্তি , বস্তু বা বিষয়ের সাথে একাত্মবোধ ! উনি বলেছিলেন – “একদিন অন্যান্য শিক্ষকরা আমাকে ধরে ধরে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিল (উনি ওনার স্কুলের খুব কাছেই একটা ঘরে থাকতেন) – শুধু বড় রাস্তা পার হলেই স্কুল ! এমন সময় রাস্তা দিয়ে যাওয়া একজন ঘোড়ার গাড়ির কোচোয়ান তার হাতের লাঠির ডগায় বাঁধা পাকানো শক্ত দড়ির ‘ছোট’ দিয়ে ঘোড়াটার পিঠে ‘সপাং’ করে চাবুকের মতো লাগাল এক ঘা ! দূর থেকে ওই দৃশ্য দেখেই আমি আর্তনাদ করে বসে পড়েছি আমার পিঠে আঘাত নিয়ে ! ওরা স্কুলে গিয়ে আমার জামা খুলে দেখে চাবুকের আঘাতের দাগ আমার পিঠে ! বেশ কয়েকদিন যন্ত্রণাও ছিল ! এইটা বাড়তে বাড়তে এমন হল যে , যার দিকেই দৃষ্টিপাত করি – তাঁরই ব্যথা-বেদনা আমাকে স্পর্শ করতো ! এমন কি – কেউ আমার সামনে ঘাস মাড়ালে , ফুল ছিঁড়লেও আমার তীব্র যন্ত্রণা হত ! এই অবস্থায় যে কদিন ছিলাম , সেই কয়দিন আমার যে কি জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে – তা আমি বলে বোঝাতে পারব না ! পরে আবার মায়ের কাছে আকুল প্রার্থনা আর চোখের জল ফেলে ফেলে এই অবস্থার অবসান ঘটেছিল !
এই অবস্থা পার হতেই আমার মধ্যে ‘বোধ’ শক্তির প্রকাশ ঘটতে থাকলো ! যেকোনো শাস্ত্রোক্ত বিষয় , জাগতিক বিষয় মনে উদয় হলেই আমি তার সারমর্ম বুঝে ফেলতাম ৷ যে কোন বিষয় কেউ জিজ্ঞাসা করলে – তাকে তার মনোমতন করে বুঝিয়ে দিতেও পারতাম। কিন্তু এখন আমি অনেকটা বুঝে গেছিলাম ৷ তাই যেকোনো ‘সিদ্ধি’ বা ‘প্রাপ্তি’ আমার মধ্যে জেগে উঠছে বুঝতে পারলেই আমি মায়ের কাছে সেটা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আকুল হয়ে প্রার্থনা করতাম ৷ এইভাবে চলতে চলতে একদিন এমন একটা অবস্থা হলো যে – আমি বুঝতে পারলাম যে আমি প্রায় শেষের দরজায় পৌঁছে গেছি – শুধু দরজা খোলার অপেক্ষা ! এমন সময় নির্দেশ হলো – তোর এই শরীরে এই পর্যন্তই – বাকিটা হবে পরের শরীরে !” [ক্রমশঃ]