গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ সিটিং-এ বিভিন্ন প্রসঙ্গ উপস্থাপনা করতেন । কত অজানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন – তার ইয়ত্তা নেই ! আমি ব্যক্তিগতভাবে আর ওনার শ্রীমুখের বাণী কি এমন বেশি শুনেছি – উনি তো প্রতিদিন সকাল-বিকাল মানুষজনের সামনে ঝরনার ধারার মতো অবিরত কথা বলতেন ! আমি প্রথম প্রথম দেখতাম ওনার যে কোন প্রসঙ্গের আলোচনা শেষকালে গিয়ে ব্রহ্মে বা ব্রহ্মতত্ত্বে গিয়ে মিশে যেতো ! এটা ছিল ওনার এক অত্যাশ্চর্য Style ! কি অনায়াস ভঙ্গিতে এটা উনি করতেন যে তখন মনে হোত – এ তো খুবই Simple ব্যাপার ! ‘ব্রহ্মময় জগৎ’ – ফলে সবকিছুই তো ব্রহ্মেই রয়েছে ! তাই চেষ্টা করলে ঐরকম আলোচনা করতে আমরাও পারবো । কিন্তু হায়! চাঁদের সঙ্গে কি মানুষের কোন অঙ্গের মিল করে বললে – সেই দুটি এক হয়ে যায় !!
আমরাও পারি নি – গুরু মহারাজের বলা কথা অনেকেই পরিবেশন করেছেন বা এখনো করে যাচ্ছেন , কিন্তু যে কোনো আলোচনাকে নিয়ে গিয়ে তার অন্তিমরূপ যে ব্রহ্মলীন হওয়া__ সেটা আমরা কেউই যথাযথ ভাবে পাঠকের কাছে তুলে ধরতে পারিনি ! এটা আমাদের ব্যর্থতা বললে ব্যর্থতা , আর যদি বলেন ‘এটাই তো স্বাভাবিক’ – ভগবান তো দুটো হয় না – তিনি একজনই ! তাই তাঁর কথা তেমন ভাবে বলার সাধ্য আর কার আছে ! সব সময় ব্রহ্মে স্থিত ব্যক্তিই সবকিছুকে ব্রহ্মে লীন করতে পারেন – এটাই তাঁর সহজতা !
যাইহোক , আমরা প্রথম দিকে আশ্রমে যাবার সময় গুরু মহারাজের ঐরকম আলোচনার স্টাইলটা লক্ষ্য করেছিলাম ! কিন্তু গুরু মহারাজ ছিলেন Modern মানুষ – Modern বললেও ভুল বলা হয় ৷ Ultra – Ultra – Ultra Modern ! উনি পরিবেশ-পরিস্থিতি-স্থান-কাল-পাত্র পরিবর্তন হলেই নিজেকে ঠিক সেইভাবে অ্যাডজাস্ট করে নিতেন ! আমরা যে তাঁর কত রূপ দেখেছি – কত ভাব , কত স্টাইল – তা বলে আর শেষ করা যাবে না ! কখনো উনি লম্বা নাভি পর্যন্ত দাড়ি রাখলেন , কখনো কম দাড়ি, কখনো দাড়ি কামানো পরিষ্কার মুখ , কখনো পিঠ পর্যন্ত লম্বা চুল , কখনো ঘাড় পর্যন্ত , আবার কখনো সাধারণভাবে চুল কাটা , কখনো মুণ্ডিত-মস্তক !
কখনও কখনও মনে হতো ওনার গায়ের রঙ যেন কাঁচা সোনার মত , কখনও মনে হতো উনি শুভ্র , কখনও মনে হতো ওনার গায়ের রংটা কেমন যেন তামাটে |
কখনও ওনাকে দেখে মনে হতো বেশ মোটাসোটা , কখনো দোহারা চেহারা – কখনও বেশ রোগা ! কখনও ওনাকে দেখে মনে হতো – উনি অনেকটা লম্বা , কখনও মনে হতো মধ্যমাকৃতির , আবার কখনও মনে হতো উনি মাথায় বেশ খাটো !
এগুলি বললাম – বাহ্যিক রূপের ব্যাপারে , ঠিক তেমনি ওনার আভ্যন্তরীণ রূপ ! ওনার আলোচনা , ওনার ভঙ্গিমা – পরিবেশ , পরিস্থিতি বদলে গেলেই – এই সবকিছু বদলে বদলে যেতো। যেমন বিভিন্ন তিথি নক্ষত্রের পরিবর্তন-ও ওনার শরীরে প্রভাব ফেলতো ! যেকোনো পূর্ণিমা তিথি বা কোন বিশেষ পুণ্য তিথিতে ওনার শারীরিক ভাষা পালটে যেতো ৷ সকালের সিটিং-এ যখনই এসে উনি ওনার নির্দিষ্ট আসনটিতে এসে বসতেন – তখন ওনার মুখের দিকে চেয়ে আমরা অবাক হয়ে দেখতাম – মুখমণ্ডল কেমন একটা অপার্থিব জ্যোতিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে ! ওনার চোখ দুটো উজ্জ্বলতর হয়ে উঠেছে – মুখে একটা প্রশান্তি মাখা মৃদু হাসির মত ভাব ফুটে উঠেছে !
অবশ্য প্রতিদিনই সকালের সিটিং-এ বসার পর উনি সবার প্রতি প্রসন্ন দৃষ্টিতে চোখ বোলাতেন – আর কেউ প্রণাম করে উঠলে তার হাতে কোনো না কোনো প্রসাদ (সাধারণত কোন শুকনো মিষ্টি) ধরিয়ে দিতেন। এবার কাউকে যদি উনি বলতেন – ” কি রে ! কখন এলি ? ” অথবা ” কিরে ভালো আছিস ?” – ব্যস! তাহলেই হয়ে গেল !!
ঐ উদ্দিষ্ট ব্যক্তির বা ব্যক্তিগনের জীবনে সেই দিনটা স্মরণীয় হয়ে গেল! তার মনে হোত যেন তার সারা জীবনের আনন্দ _ঐ একটা দিনের একটা সম্বোধনে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেল! ওই ঘটনাটা সে চিৎকার করে সবাইকে জানাতে চাইতো__” জানো! আজ গুরুমহারাজ আমার নাম ধরে ডেকেছেন, গুরুমহারাজ আমার কুশল জানতে চেয়েছেন!” সেই ব্যক্তির তখন আনন্দ-আনন্দ আর আনন্দ!! তাই তো গুরুমহারাজ #পরমানন্দ।।
পরমানন্দের কথা কে বলতে পারে! পরমানন্দের কথা তার মতন করে কেউ কখনই বলতে পারবে না! হ্যাঁ, বলতে পারবে_যখন এই শরীরের পরমানন্দ, যখন কোন নতুন শরীরে আবার লীলা করতে আসবেন _তখন তিনি বলবেন!!
এখন আমরা তাঁর সম্বন্ধে যা বলছি বা বলার চেষ্টা করছি _তখন তিনি (নতুন শরীরে তিনি) সেগুলো দেখে, শুনে বা পড়ে_ হাসবেন!! আবার তিনি ‘করূনাময়’ বলে _সেগুলিকেই একটু-আধটু correction করে যাতে সবার মঙ্গল হয় এমনভাবে চালিয়ে দেবেন!
মানুষের কল্যাণ, জীবজগতের কল্যাণ ই যে ওনার ব্রত!! বারবার শরীর ধারণ করে _শত অত্যাচার, লাঞ্ছনা, কষ্টভোগ, শাস্তিভোগ করে চলেছেন তিনি __শুধুমাত্র অজ্ঞানতার অন্ধকারে পড়ে থাকা, স্বার্থমগ্ন, মায়া এবং মোহজালে আটকে পড়া মানুষগুলোকে একটু আলোর সন্ধান দেবার জন্য, তাদেরকে এই ত্রিতাপ ক্লেশ(আদিভৌতিক, আদিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক) থেকে মুক্ত করার জন্য__পূর্ণের-ই অপূর্ণতার জ্বালা বুকে নিয়ে পূর্ণত্বের দিকে ছুটে চলার গতিকে ত্বরান্বিত করার জন্য, মহামায়ার জগতে লীলা বজায় রাখার জন্য !
তাইতো গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ বলেছিলেন _”আমার সন্ন্যাস নিজের মুক্তি বা মোক্ষের জন্য নয় _মানুষকে ভালোবাসার জন্য।”
হে মহান! হে পরম মানবদরদী পরমপ্রেমিক করূনাময় ভগবান পরমানন্দ! তুমি আমাদের সবার সশ্রদ্ধ আভূমিলুন্ঠিত প্রনাম গ্রহণ করো ঠাকুর!! (ক্রমশঃ)
আমরাও পারি নি – গুরু মহারাজের বলা কথা অনেকেই পরিবেশন করেছেন বা এখনো করে যাচ্ছেন , কিন্তু যে কোনো আলোচনাকে নিয়ে গিয়ে তার অন্তিমরূপ যে ব্রহ্মলীন হওয়া__ সেটা আমরা কেউই যথাযথ ভাবে পাঠকের কাছে তুলে ধরতে পারিনি ! এটা আমাদের ব্যর্থতা বললে ব্যর্থতা , আর যদি বলেন ‘এটাই তো স্বাভাবিক’ – ভগবান তো দুটো হয় না – তিনি একজনই ! তাই তাঁর কথা তেমন ভাবে বলার সাধ্য আর কার আছে ! সব সময় ব্রহ্মে স্থিত ব্যক্তিই সবকিছুকে ব্রহ্মে লীন করতে পারেন – এটাই তাঁর সহজতা !
যাইহোক , আমরা প্রথম দিকে আশ্রমে যাবার সময় গুরু মহারাজের ঐরকম আলোচনার স্টাইলটা লক্ষ্য করেছিলাম ! কিন্তু গুরু মহারাজ ছিলেন Modern মানুষ – Modern বললেও ভুল বলা হয় ৷ Ultra – Ultra – Ultra Modern ! উনি পরিবেশ-পরিস্থিতি-স্থান-কাল-পাত্র পরিবর্তন হলেই নিজেকে ঠিক সেইভাবে অ্যাডজাস্ট করে নিতেন ! আমরা যে তাঁর কত রূপ দেখেছি – কত ভাব , কত স্টাইল – তা বলে আর শেষ করা যাবে না ! কখনো উনি লম্বা নাভি পর্যন্ত দাড়ি রাখলেন , কখনো কম দাড়ি, কখনো দাড়ি কামানো পরিষ্কার মুখ , কখনো পিঠ পর্যন্ত লম্বা চুল , কখনো ঘাড় পর্যন্ত , আবার কখনো সাধারণভাবে চুল কাটা , কখনো মুণ্ডিত-মস্তক !
কখনও কখনও মনে হতো ওনার গায়ের রঙ যেন কাঁচা সোনার মত , কখনও মনে হতো উনি শুভ্র , কখনও মনে হতো ওনার গায়ের রংটা কেমন যেন তামাটে |
কখনও ওনাকে দেখে মনে হতো বেশ মোটাসোটা , কখনো দোহারা চেহারা – কখনও বেশ রোগা ! কখনও ওনাকে দেখে মনে হতো – উনি অনেকটা লম্বা , কখনও মনে হতো মধ্যমাকৃতির , আবার কখনও মনে হতো উনি মাথায় বেশ খাটো !
এগুলি বললাম – বাহ্যিক রূপের ব্যাপারে , ঠিক তেমনি ওনার আভ্যন্তরীণ রূপ ! ওনার আলোচনা , ওনার ভঙ্গিমা – পরিবেশ , পরিস্থিতি বদলে গেলেই – এই সবকিছু বদলে বদলে যেতো। যেমন বিভিন্ন তিথি নক্ষত্রের পরিবর্তন-ও ওনার শরীরে প্রভাব ফেলতো ! যেকোনো পূর্ণিমা তিথি বা কোন বিশেষ পুণ্য তিথিতে ওনার শারীরিক ভাষা পালটে যেতো ৷ সকালের সিটিং-এ যখনই এসে উনি ওনার নির্দিষ্ট আসনটিতে এসে বসতেন – তখন ওনার মুখের দিকে চেয়ে আমরা অবাক হয়ে দেখতাম – মুখমণ্ডল কেমন একটা অপার্থিব জ্যোতিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে ! ওনার চোখ দুটো উজ্জ্বলতর হয়ে উঠেছে – মুখে একটা প্রশান্তি মাখা মৃদু হাসির মত ভাব ফুটে উঠেছে !
অবশ্য প্রতিদিনই সকালের সিটিং-এ বসার পর উনি সবার প্রতি প্রসন্ন দৃষ্টিতে চোখ বোলাতেন – আর কেউ প্রণাম করে উঠলে তার হাতে কোনো না কোনো প্রসাদ (সাধারণত কোন শুকনো মিষ্টি) ধরিয়ে দিতেন। এবার কাউকে যদি উনি বলতেন – ” কি রে ! কখন এলি ? ” অথবা ” কিরে ভালো আছিস ?” – ব্যস! তাহলেই হয়ে গেল !!
ঐ উদ্দিষ্ট ব্যক্তির বা ব্যক্তিগনের জীবনে সেই দিনটা স্মরণীয় হয়ে গেল! তার মনে হোত যেন তার সারা জীবনের আনন্দ _ঐ একটা দিনের একটা সম্বোধনে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেল! ওই ঘটনাটা সে চিৎকার করে সবাইকে জানাতে চাইতো__” জানো! আজ গুরুমহারাজ আমার নাম ধরে ডেকেছেন, গুরুমহারাজ আমার কুশল জানতে চেয়েছেন!” সেই ব্যক্তির তখন আনন্দ-আনন্দ আর আনন্দ!! তাই তো গুরুমহারাজ #পরমানন্দ।।
পরমানন্দের কথা কে বলতে পারে! পরমানন্দের কথা তার মতন করে কেউ কখনই বলতে পারবে না! হ্যাঁ, বলতে পারবে_যখন এই শরীরের পরমানন্দ, যখন কোন নতুন শরীরে আবার লীলা করতে আসবেন _তখন তিনি বলবেন!!
এখন আমরা তাঁর সম্বন্ধে যা বলছি বা বলার চেষ্টা করছি _তখন তিনি (নতুন শরীরে তিনি) সেগুলো দেখে, শুনে বা পড়ে_ হাসবেন!! আবার তিনি ‘করূনাময়’ বলে _সেগুলিকেই একটু-আধটু correction করে যাতে সবার মঙ্গল হয় এমনভাবে চালিয়ে দেবেন!
মানুষের কল্যাণ, জীবজগতের কল্যাণ ই যে ওনার ব্রত!! বারবার শরীর ধারণ করে _শত অত্যাচার, লাঞ্ছনা, কষ্টভোগ, শাস্তিভোগ করে চলেছেন তিনি __শুধুমাত্র অজ্ঞানতার অন্ধকারে পড়ে থাকা, স্বার্থমগ্ন, মায়া এবং মোহজালে আটকে পড়া মানুষগুলোকে একটু আলোর সন্ধান দেবার জন্য, তাদেরকে এই ত্রিতাপ ক্লেশ(আদিভৌতিক, আদিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক) থেকে মুক্ত করার জন্য__পূর্ণের-ই অপূর্ণতার জ্বালা বুকে নিয়ে পূর্ণত্বের দিকে ছুটে চলার গতিকে ত্বরান্বিত করার জন্য, মহামায়ার জগতে লীলা বজায় রাখার জন্য !
তাইতো গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ বলেছিলেন _”আমার সন্ন্যাস নিজের মুক্তি বা মোক্ষের জন্য নয় _মানুষকে ভালোবাসার জন্য।”
হে মহান! হে পরম মানবদরদী পরমপ্রেমিক করূনাময় ভগবান পরমানন্দ! তুমি আমাদের সবার সশ্রদ্ধ আভূমিলুন্ঠিত প্রনাম গ্রহণ করো ঠাকুর!! (ক্রমশঃ)