গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে সকাল এবং বিকেলে ওনার কুটিয়ার বাইরে বসে বিভিন্ন আলোচনা করতেন উপস্থিত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসার উত্তর দিতেন ৷ আর উপস্থিত মানুষজনেরা কখন যেন তন্ময়তার গভীরে ঢুকে যেতো – তারা তখনই বাস্তবে ফিরে আসত যখন গুরু মহারাজ তাঁর শ্রীমুখের বাণীর নির্ঝরিনীর ধারা বন্ধ করতেন ! আমরা নিজেরাই দেখেছি গুরু মহারাজের সিটিং থেকে বাইরে বেরোনোর সময় মাথা ঝাঁঝাঁ করছে , জগতের কোন কিছুতেই যেন কোন আকর্ষণ অনুভূত হ’ত না – কোন এক অজানা জগতে উনি আমাদের নিয়ে চলে যেতেন – সেখান থেকে ফিরে আসতে মনই চাইতো না ! আমরা দেখেছি যারা (পুরুষেরা) স্মোকার ছিল , তারা আশ্রমের বটতলার ছায়াটায় বসে বসে দুটো তিনটে বিড়ি বা সিগারেট খেয়ে তবে খানিকটা ধাতস্থ হয়ে বাস্তবের মাটিতে ফিরে আসতো ! এই যে কথাগুলো লিখছি – এগুলি যাদের যাদের অভিজ্ঞতায় রয়েছে , তারা-ই উপলব্ধি করতে পারছেন – অন্যরা অন্ততঃ বোঝার চেষ্টা করুন !
প্রত্যেকটি সিটিং-এ স্বয়ং ভগবান তার আরব্ধ কাজ সম্পন্ন করতেন – তিনি ওই সিটিং-এর মানুষজনের তাঁর শ্রীকণ্ঠের ঋক্ উচ্চারণের মাধ্যমে চেতনার উত্তরন ঘটাতেন , বিবেকের জাগরণ ঘটাতেন , সর্বোপরি এই জনমেই কত জন্ম-জন্মান্তর ঘটিয়ে নিয়ে তাদেরকে নিয়ে যেতেন বর্তমান থেকে কত শত আলোকবর্ষ দূরে।৷
একদিন গুরু মহারাজ আলোচনা করছিলেন – ” জগতে হারায় না তো কিছু !” – সেদিন ওনার আলোচনা শুনে মনটা কেমন যেন হয়ে গেছিলো ! কি যে ভালোলাগা বোধ কাজ করছিল – তা তো প্রমাণ করতে পারবো না – তবু আপনাদের সাথে ওনার কথাগুলি শেয়ার করার চেষ্টা করছি ৷ সেদিন কথা শুরু হয়েছিল যা নিয়ে , তা হোল – আশ্রমের অনেকে খাবার সময় ভাত নষ্ট করে অর্থাৎ অকারণে তারা অতিরিক্ত খাবার নিয়ে নেয় – পরে না খেতে পেরে সেগুলিকে বাইরে ফেলে দেয় বা পুকুরে ফেলে দেয় !! গুরু মহারাজ প্রথমটায় এই কথাগুলি শুনে বিরক্তি প্রকাশ করলেন , বললেন – ” সে কী রে ! এত কষ্ট করে জোগাড় করা খাবার_ওরা নষ্ট করে ? আশ্রমিক রাও করে ? মা লক্ষ্মীর করুণা থেকে বঞ্চিত হবে ওরা! অকারনে খাদ্য নষ্ট করলে – কোন না কোন সময় অন্নাভাব সহ্য করতে হবে ! এটা করতে নেই – তোমার যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু নাও – অতিরিক্ত খাবার নিয়ে সেগুলোকে ফেলে দেওয়া কোন কাজের কথা নয় ! আমাদের আশ্রমের রান্নাঘরের খাবার অতিরিক্ত হলে আমাদের গোয়ালে গরুদের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয় ! তাছাড়া আশ্রমের পুকুরে মাছ রয়েছে – ওদের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে ৷ অনেক সময় দিনের বেলার অতিরিক্ত ভাত, রাতের বেলায় ছেলেরা খেয়েও নেয় – সুতরাং অকারণ নষ্ট করা ভালো নয় ৷”
এরপর গুরু মহারাজ বলতে শুরু করলেন – ” তবে জানো, আমি দেখেছি এই জগতে কোন কিছুই নষ্ট হয় না – কোন কিছুই হারায় না ! সবকিছুরই কার্যকারিতা রয়েছে , সমস্ত কিছুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে! যে কোন কার্যের ‘কারণ’ রয়েছে এবং তা পরবর্তীতে কোন না কোন ‘ফল’ প্রসব করে থাকে !
এই জগত সংসার এক বিচিত্র জায়গা । তোমার দৃষ্টিভঙ্গি যেমন – তুমি এই জগৎকে তেমন দেখো – দৃষ্টিভঙ্গি বদলালেই জগৎটা এবং এই জগৎ-এর বিষয় সমূহ বদলে বদলে যাবে ! এই যে__ এই মাত্র বললে ‘ভাত নষ্ট করছে’ – সেটাকেও ঠিক ‘নষ্ট করা’- বলা যায় না ! যেখানেই ফেলো__ তা পাখিতে খাবে , কীটপতঙ্গে খাবে ! জানো, এক দানা ভাতে এগারোটা ছোট পিঁপড়ের পেট ভরে! তাহলে বলো – জগৎ-এর কোন কিছুই কি নষ্ট হয় ? হয় না , কোন কিছুই অপ্রয়োজনীয় নয় ৷ এই যে অনেক খাদ্য পচে যাচ্ছে – তাও তো ভাইরাস , ব্যাকটেরিয়া , ফাংগাস ইত্যাদি’র জন্যই ! পচে যাওয়ার পর সেগুলিতে আবার বিভিন্ন কীট বাসা বাঁধে , ডিম বা বাচ্চা পারে ৷ সেগুলি ওই গলিত পচা বস্তুতেই বড় হয় ৷”
এরপর গুরুমহারাজ এক চমকপ্রদ ঘটনার উপস্থাপনা করলেন, যা তিনি নিজের মুখে না বললে জগতের মানুষ কখনোই জানতে পারতো না! উনি বললেন _”জানো! আমি যখন সারারাত শ্মশানে কাটাতাম, সেইসময় দেখেছি চিতার আগুনে যখনই কোন মৃতদেহকে তুলে দেওয়া হয় তখন সঙ্গে সঙ্গে কোথা হতে কিছু বিরাট বিরাট বিভৎস মুখ ভাসমান অবস্থায় ঐ শ্মশানের পরিমন্ডলে এসে হাজির হয়! তারপর তারা ঐ জ্বলন্ত চিতায় পুড়তে থাকা মৃতদেহটি থেকে নির্গত গ্যাসীয় পদার্থগুলি (ধোঁয়ার সাথে মিশ্রিত) হাঁ করে গিলতে থাকে!
ভাবো একবার! জ্বলন্ত জীবদেহ থেকে নির্গত ঐ গ্যাসীয় পদার্থগুলোই ওদের আহার্য্য! ঐগুলো খেয়েই ওরা জীবন ধারণ করে রয়েছে! তাহলে বলো তো _জগতে তুচ্ছ, অপ্রয়োজনীয় বলে কি কিছু রয়েছে?
গুরুমহারাজ সেদিন আলোচনাটা আরও আগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। উনি বললেন _পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া যে কোন ঘটনা __তা যত তুচ্ছাতিতুচ্ছই হোক বা বৃহৎ, প্রকৃতির বাতাবরনে তার একটা impression পড়ে যায় । সেই বাতাবরনের সুক্ষাতিসুক্ষ impression বা ‘ছাপে’-র সঙ্গে বাইরের জগতে ঘটে যাওয়া ঘটনার মিল হয়ে গেলে একটা tuning হয়ে যায় _যার ফলে প্রকৃতিতে একটা সাম্যাবস্থা বজায় থাকে। কিন্তু কোন কারণে বহুকাল থেকে চলে আসা কোন অঞ্চলের বাতাবরনের impression-এর সাথে যদি বর্তমানের বহির্জগতের ক্রিয়াকর্মের তাল-মিল না থাকে, তাহলে ঐ অঞ্চলে নানারকম অভ্যুপাত বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে! উদাহরণ হিসেবে সেদিন উনি অনেক কথা বলেছিলেন!
বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে সাথে বহির্জগতের প্রভূত পরিবর্তন হয়েছে _এতে হয়েছে কি, প্রকৃতির বাতাবরনের বহুকাল ধরে থেকে যাওয়া সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম impression – গুলির সাথে বর্তমানের ক্রিয়াকর্মের impression -এর tuning হচ্ছে না! এরপর উনি বলেছিলেন যে বর্তমানের এই impression টাও প্রকৃতি গ্রহণ করবে _কিন্তু একটু সময় লাগবে!
[পরের পরের এপিসোডে ইথিওপিয়ার কথা! রাম, কৃষ্ণ, যীশু, হজরত মুহাম্মদের বলে যাওয়া কথা এখনও বাতাবরনে রয়েছে _সেই সব কথা!!!!] (ক্রমশঃ)
প্রত্যেকটি সিটিং-এ স্বয়ং ভগবান তার আরব্ধ কাজ সম্পন্ন করতেন – তিনি ওই সিটিং-এর মানুষজনের তাঁর শ্রীকণ্ঠের ঋক্ উচ্চারণের মাধ্যমে চেতনার উত্তরন ঘটাতেন , বিবেকের জাগরণ ঘটাতেন , সর্বোপরি এই জনমেই কত জন্ম-জন্মান্তর ঘটিয়ে নিয়ে তাদেরকে নিয়ে যেতেন বর্তমান থেকে কত শত আলোকবর্ষ দূরে।৷
একদিন গুরু মহারাজ আলোচনা করছিলেন – ” জগতে হারায় না তো কিছু !” – সেদিন ওনার আলোচনা শুনে মনটা কেমন যেন হয়ে গেছিলো ! কি যে ভালোলাগা বোধ কাজ করছিল – তা তো প্রমাণ করতে পারবো না – তবু আপনাদের সাথে ওনার কথাগুলি শেয়ার করার চেষ্টা করছি ৷ সেদিন কথা শুরু হয়েছিল যা নিয়ে , তা হোল – আশ্রমের অনেকে খাবার সময় ভাত নষ্ট করে অর্থাৎ অকারণে তারা অতিরিক্ত খাবার নিয়ে নেয় – পরে না খেতে পেরে সেগুলিকে বাইরে ফেলে দেয় বা পুকুরে ফেলে দেয় !! গুরু মহারাজ প্রথমটায় এই কথাগুলি শুনে বিরক্তি প্রকাশ করলেন , বললেন – ” সে কী রে ! এত কষ্ট করে জোগাড় করা খাবার_ওরা নষ্ট করে ? আশ্রমিক রাও করে ? মা লক্ষ্মীর করুণা থেকে বঞ্চিত হবে ওরা! অকারনে খাদ্য নষ্ট করলে – কোন না কোন সময় অন্নাভাব সহ্য করতে হবে ! এটা করতে নেই – তোমার যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু নাও – অতিরিক্ত খাবার নিয়ে সেগুলোকে ফেলে দেওয়া কোন কাজের কথা নয় ! আমাদের আশ্রমের রান্নাঘরের খাবার অতিরিক্ত হলে আমাদের গোয়ালে গরুদের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয় ! তাছাড়া আশ্রমের পুকুরে মাছ রয়েছে – ওদের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে ৷ অনেক সময় দিনের বেলার অতিরিক্ত ভাত, রাতের বেলায় ছেলেরা খেয়েও নেয় – সুতরাং অকারণ নষ্ট করা ভালো নয় ৷”
এরপর গুরু মহারাজ বলতে শুরু করলেন – ” তবে জানো, আমি দেখেছি এই জগতে কোন কিছুই নষ্ট হয় না – কোন কিছুই হারায় না ! সবকিছুরই কার্যকারিতা রয়েছে , সমস্ত কিছুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে! যে কোন কার্যের ‘কারণ’ রয়েছে এবং তা পরবর্তীতে কোন না কোন ‘ফল’ প্রসব করে থাকে !
এই জগত সংসার এক বিচিত্র জায়গা । তোমার দৃষ্টিভঙ্গি যেমন – তুমি এই জগৎকে তেমন দেখো – দৃষ্টিভঙ্গি বদলালেই জগৎটা এবং এই জগৎ-এর বিষয় সমূহ বদলে বদলে যাবে ! এই যে__ এই মাত্র বললে ‘ভাত নষ্ট করছে’ – সেটাকেও ঠিক ‘নষ্ট করা’- বলা যায় না ! যেখানেই ফেলো__ তা পাখিতে খাবে , কীটপতঙ্গে খাবে ! জানো, এক দানা ভাতে এগারোটা ছোট পিঁপড়ের পেট ভরে! তাহলে বলো – জগৎ-এর কোন কিছুই কি নষ্ট হয় ? হয় না , কোন কিছুই অপ্রয়োজনীয় নয় ৷ এই যে অনেক খাদ্য পচে যাচ্ছে – তাও তো ভাইরাস , ব্যাকটেরিয়া , ফাংগাস ইত্যাদি’র জন্যই ! পচে যাওয়ার পর সেগুলিতে আবার বিভিন্ন কীট বাসা বাঁধে , ডিম বা বাচ্চা পারে ৷ সেগুলি ওই গলিত পচা বস্তুতেই বড় হয় ৷”
এরপর গুরুমহারাজ এক চমকপ্রদ ঘটনার উপস্থাপনা করলেন, যা তিনি নিজের মুখে না বললে জগতের মানুষ কখনোই জানতে পারতো না! উনি বললেন _”জানো! আমি যখন সারারাত শ্মশানে কাটাতাম, সেইসময় দেখেছি চিতার আগুনে যখনই কোন মৃতদেহকে তুলে দেওয়া হয় তখন সঙ্গে সঙ্গে কোথা হতে কিছু বিরাট বিরাট বিভৎস মুখ ভাসমান অবস্থায় ঐ শ্মশানের পরিমন্ডলে এসে হাজির হয়! তারপর তারা ঐ জ্বলন্ত চিতায় পুড়তে থাকা মৃতদেহটি থেকে নির্গত গ্যাসীয় পদার্থগুলি (ধোঁয়ার সাথে মিশ্রিত) হাঁ করে গিলতে থাকে!
ভাবো একবার! জ্বলন্ত জীবদেহ থেকে নির্গত ঐ গ্যাসীয় পদার্থগুলোই ওদের আহার্য্য! ঐগুলো খেয়েই ওরা জীবন ধারণ করে রয়েছে! তাহলে বলো তো _জগতে তুচ্ছ, অপ্রয়োজনীয় বলে কি কিছু রয়েছে?
গুরুমহারাজ সেদিন আলোচনাটা আরও আগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। উনি বললেন _পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া যে কোন ঘটনা __তা যত তুচ্ছাতিতুচ্ছই হোক বা বৃহৎ, প্রকৃতির বাতাবরনে তার একটা impression পড়ে যায় । সেই বাতাবরনের সুক্ষাতিসুক্ষ impression বা ‘ছাপে’-র সঙ্গে বাইরের জগতে ঘটে যাওয়া ঘটনার মিল হয়ে গেলে একটা tuning হয়ে যায় _যার ফলে প্রকৃতিতে একটা সাম্যাবস্থা বজায় থাকে। কিন্তু কোন কারণে বহুকাল থেকে চলে আসা কোন অঞ্চলের বাতাবরনের impression-এর সাথে যদি বর্তমানের বহির্জগতের ক্রিয়াকর্মের তাল-মিল না থাকে, তাহলে ঐ অঞ্চলে নানারকম অভ্যুপাত বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে! উদাহরণ হিসেবে সেদিন উনি অনেক কথা বলেছিলেন!
বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে সাথে বহির্জগতের প্রভূত পরিবর্তন হয়েছে _এতে হয়েছে কি, প্রকৃতির বাতাবরনের বহুকাল ধরে থেকে যাওয়া সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম impression – গুলির সাথে বর্তমানের ক্রিয়াকর্মের impression -এর tuning হচ্ছে না! এরপর উনি বলেছিলেন যে বর্তমানের এই impression টাও প্রকৃতি গ্রহণ করবে _কিন্তু একটু সময় লাগবে!
[পরের পরের এপিসোডে ইথিওপিয়ার কথা! রাম, কৃষ্ণ, যীশু, হজরত মুহাম্মদের বলে যাওয়া কথা এখনও বাতাবরনে রয়েছে _সেই সব কথা!!!!] (ক্রমশঃ)