গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ বলেছিলেন – যখন কোথাও কোন ব্রহ্মবিদ ব্রহ্মবাক্য বলেন _তখন যিনি বলেন তাঁর জিহ্বা হয় লিঙ্গ , আর যে বা যারা শ্রবণ করে তার/তাদের কর্ণ হয় যোনী ! ইউরোপে ভ্রমণকালীন সময়ে গুরু মহারাজকে যখন একটি তরুণী সরাসরি মিলনের আকাঙ্ক্ষার কথা জানায় তখন গুরু মহারাজ এই কথাগুলিই মেয়েটিকে বলেছিলেন ! ইতালির ঐ মেয়েটি সেদিনই প্রথম ধ্যানের গভীরে ঢোকার শিক্ষা লাভ করেছিল এবং অতি অবশ্যই স্বামী পরমানন্দের কৃপায় জীবনে প্রথম নিজের মধ্যেই ‘পরমানন্দের আস্বাদ’ গ্রহণ করেছিল !
গ্রীস দেশের সাথে ভারতবর্ষের বহু প্রাচীনকাল থেকেই নিবিড় যোগাযোগের কথা গুরু মহারাজ বলেছিলেন ৷ ম্যাকিডনিয়া বা ম্যাসিডন থেকে আলেকজান্ডার স্থলপথে মেসোপটেমিয়া , পারস্য (ইরান ও ইরাক) , গান্ধার (আফগানিস্থান) হয়ে তৎকালীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের পান্জাব অবধি ঢুকেছিলেন । গুরু মহারাজ ছোটবেলাতেই পায়ে হেঁটে একদল নাঙ্গা সাধুর সাথে ওই সমগ্র পথটি ভ্রমণ করেছিলেন ! উনি বলেছিলেন সিল্ক রুট ধরে ওনারা গিয়েছিলেন এবং স্থলপথে যতদূর যাওয়া যায় – ততদূর গিয়েছিলেন(অর্থাৎ ওনারা ম্যাসিডন অতিক্রম করে, আরো এগিয়ে সমুদ্রতীর পর্যন্ত গিয়েছিলেন ! সে যাইহোক , আলেকজান্ডার ভারতে আসার আগে থাকতেই অর্থাৎ ২৩০০ বছরেরও আগে থাকতে, গ্রীসের সাথে ভারতের যোগাযোগ যে ছিল_সে কথা আলেকজান্ডারের মাস্টারমশাই অ্যারিস্টটলের কথায় জানা যায় । গুরু মহারাজের মুখে আমরা শুনেছিলাম – ছোটবেলায় আলেকজান্ডার ওনার শিক্ষাগুরুর (অ্যারিস্টটল) অগাধ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য দেখে বিস্মিত হয়ে একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলেন – “হে গুরুদেব , এত বিশাল জ্ঞানরাজি আপনি কোথা থেকে পেয়েছেন ?” অ্যারিস্টটল তার শিষ্যকে ভারতবর্ষের কথা বলেন ৷ তিনি বলেছিলেন – তাঁর যাবতীয় জ্ঞান ভারতবর্ষ নামক দেশটি থেকে পাওয়া ! আলেকজান্ডার তখনই গুরুকে বলেছিলেন – “যে দেশ থেকে আপনি এত জ্ঞান লাভ করেছেন , আমি বড় হয়ে সেই দেশে যাব ! হে গুরুদেব ! সেই দেশের কিছু বিবরণ যদি আপনি দেন – কিভাবে সেখানে যেতে হয় !” গুরুদেব অ্যারিস্টটল বলেছিলেন – “আমি কখনো সেই দেশে যাইনি – সেই দেশ থেকে প্রাপ্ত পুঁথিপত্রের জ্ঞান-ই আমাদের দেশের সমস্ত পন্ডিতমহলের জ্ঞানের উৎস ! তবে সেই দেশটি পূর্বদিকে অবস্থিত এবং সেখানে গুরু – গীতা এবং গঙ্গা রয়েছে ৷”
আলেকজান্ডার রাজা হবার পর তার ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ভারতবর্ষ অভিমুখে অভিযান করেছিলেন । পথে যেসব রাজ্যে পড়েছিল সেগুলি উনি স্বীয় ক্ষমতাবলে অধিকার করে – নিজের মনোমত একজন করে প্রতিনিধি নিযুক্ত করে এগিয়ে চলেছিলেন ভারতবর্ষের দিকে ! ভারতবর্ষ-ই যে তার destination ছিল – তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায় ম্যাসিডন থেকে ভারতবর্ষ পর্যন্ত তার যাত্রাপথের ম্যাপ দেখলে ! একটা সময় উনি এশিয়া মাইনর থেকে ইজিপ্টের দিকে চলে গিয়েছিলেন – কিন্তু পরে আবার যাত্রাপথ বদল করে ওই পথেই ফিরে ভারতবর্ষ অভিমুখে যাত্রাপথের মোড় ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন ! গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ভারতবর্ষের শিক্ষা বহু প্রাচীনকাল থেকেই স্থলপথে পারস্য , মেসোপটেমিয়া হয়ে ঐসব দেশে পৌঁছায় ! আরও পরবর্তীতে গ্রীস থেকে সেইসব শিক্ষা ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে !
মহাভারতের যুগে এই সমস্ত দেশের সাথে ভারতবর্ষের যে যোগ ছিল তার অনেক উল্লেখ রয়েছে ‘মহাভারত’ গ্রন্থে ! গ্রীস দেশের প্রায় সমস্ত দেব দেবীর-ই ভারতীয় দেব-দেবীর সাথে সাংঘাতিক রকমের মিল রয়েছে ! মহাভারতে বা অন্যান্য পুরাণে বর্ণিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দাদা (অগ্রজ) বলরামের উল্লেখ পাওয়া যায় , যিনি অসম্ভব বলশালী পুরুষ ছিলেন এবং সাথে সব সময় ‘হল’ অর্থাৎ লাঙল জাতীয় একটা অস্ত্র হাতে রেখে দিতেন। এই জন্য ওনাকে হলধারীও বলা হোত ! মহাভারতে উল্লেখ রয়েছে যে বলরামকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কৌশল করে ভারতবর্ষের পশ্চিম দিকে তীর্থদর্শনে বা অন্য কোন কারণে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ৷ ওই সমস্ত অঞ্চলের যে দেশগুলি তৎকালে ছিল তারা প্রায় সকলেই হস্তিনাপুরের রাজাকে মান্য কোরতো । পরে কুরু-পান্ডবের যুদ্ধ শুরু হলে কেউ কৌরব-পক্ষে , কেউ পাণ্ডব-পক্ষে যোগদান করেছিল । বলরাম যখন ঐ সমস্ত অঞ্চলে যান তখন তিনি ওখানে বিভিন্ন রাজ্যের রাজার কাছে খুবই উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বংশকে ‘বৃষ্ণি’ বংশ বলা হোত আবার হরিবংশ-ও বলা হোত । সেই হিসাবে ‘হরিকুলে’-র রাজবংশের বড়ভ্রাতা , তাই “হরিকুলেশ” ৷
এই `হরিকুলেশ’_বলরাম যথন বর্তমান গ্রীসদেশে(তখন হয়তো অন্য নাম ছিল) গিয়েছিলেন, তখন তিনি তাঁর অসাধারণ শারীরিক সামর্থ্যের অনেক পরীক্ষা দিয়ে উর্ত্তীর্ন হয়েছিলেন এবং সেই সাথে চমৎকারি এমন কিছু কৌশল প্রদর্শন করেছিলেন যে, সেগুলি ওদেশে কাহিনীতে রুপ নেয়! পরবর্তীতে গ্রীসদেশের মানুষের মুখে মুখে ঐ কাহিনীগুলি প্রচারিত হতে হতে লোকগাথায় পরিনত হয়েছে! যেখানে ‘হরিকুলেশ’ বলরাম হয়ে গেছে ” হারকিউলিস”! যিনি গ্রীকদের শক্তির দেবতারুপে পরিগণিত হয়ে আসছেন! গুরুমহারাজ আমাদেরকে গ্রীসদেশের অন্যান্য দেবদেবীর কথাও বলেছিলেন যাদের সাথে ভারতীয় দেবদেবীর অসম্ভব সাদৃশ্য রয়েছে। সেগুলি পরের সংখ্যায়! (ক্রমশঃ)