গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ যখন ইউরোপের জার্মানীর বিভিন্ন শহরে ঘুরছিলেন , তখন তাকে ওখানকার অনেকগুলি নামকরা ইউনিভার্সিটি’তে বক্তব্য রাখতে হয়েছিল ! এখন আমরা এইসব আলোচনাতেই রয়েছি ! জার্মানীর বিভিন্নস্থানে (শহরে) ওখানকার ভক্তদের উৎসাহে গুরু মহারাজের সিটিং-ও হতো ৷ সেখানেও বহু মানুষ ওনার আলোচনা সভায় যোগ দিতে আসতো – আর যখন উনি বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে বক্তব্য রাখতে শুরু করলেন , বিশেষত জিজ্ঞাসা উত্তর এর আসর শুরু করলেন – তখন ওইসব স্থানের শিক্ষিত মহলে “স্বামী পরমানন্দ”- এই নামটি খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল !
এর আগে আগেও গুরুমহারাজ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেই সব দেশের ইউনিভার্সিটিতেও বক্তব্য রেখেছেন, Indian philosophy , Western .philosophy নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং মানব জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি , Art of life , Art of Living নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন । ফলে জার্মানীর পন্ডিত মহলে বা শিক্ষিত মহলে “স্বামী পরমানন্দ”- নামটি বেশ পরিচিত ছিলই – আবার এই দেশের বিভিন্ন আলোচনা সভায় ওনার কথা শুনে ওখানকার প্রফেসরেরা , পণ্ডিতেরা অভিভূত হয়ে পড়েছিল !
. কিন্তু এই ব্যাপারটাই গুরু মহারাজ কে একটা কঠিন পরীক্ষার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল – এখন সেই ব্যাপারটাই বলি ! ইউরোপের দেশ গুলির নানারকম Union রয়েছে – তার মধ্যে ওদের পৃথক পৃথক দেশের ইউনিভার্সিটি গুলির Course -এর মধ্যে বা অন্যান্য ব্যাপারেও একটা বন্ধন রয়েছে! ফলে এক দেশের ইউনিভার্সিটির যে কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা অন্যদেশের ইউনিভার্সিটি জানে এবং যে কোন প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশের ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধিরা এক জায়গায় হয়ে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করে ।
গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের সাথেও এই ঘটনা ঘটেছিল ! ৪-৫ টি দেশের বিভিন্ন নামকরা ইউনিভার্সিটির পণ্ডিতদের একটা বিরাট দল জার্মানীর হাইজেনবার্গ ইউনিভার্সিটি’তে এক জায়গায় হয়ে গুরু মহারাজকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়েছিল ।
প্রথমে যেদিন ওদের তরফ থেকে আমন্ত্রণ পত্রটা গুরুমহারাজের কাছে এসেছিল , সেইদিন তৎক্ষণাৎ ওনার ইউরোপীয় ভক্তরা গুরু মহারাজকে ওখানে যেতে নিষেধ করেছিল ! ওরা বলেছিল – “গুরুমহারাজ ! এরা সব ইউরোপের একটা বিশেষ পন্ডিত গোষ্ঠী , যাদের কাজই হলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জ্ঞানী-গুণী-পন্ডিত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করে ওদের নির্দিষ্ট ‘ঠেকে’ নিয়ে যাওয়া এবং তার যা কিছু বিদ্যা-বুদ্ধি তা কায়দা করে উজাড় করে নিয়ে – তাকে Stupid বানিয়ে , কিছু পয়সা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া ! আপনি ওদের পাতা ফাঁদে পা দেবেন না !” কিন্তু গুরুমহারাজ সংকল্পে অটল ছিলেন – যাবেন বলেছেন তো যাবেন-ই !
উনি হাইজেনবার্গ ইউনিভার্সিটির সেই নির্দিষ্ট কক্ষে গেছিলেন যেখানে ২০/২৫ জন ইউরোপের বিদগ্ধ পণ্ডিতেরা প্রত্যেকেই এক একটি কম্পিউটার (ল্যাপটপ) নিয়ে বসেছিল [যদিও তখন (১৯৯০-৯১) আমাদের এখানে (ভারতবর্ষে) প্রত্যেক প্রফেসরের কাছে কম্পিউটার রাখার চল ছিল না !] !
গুরুমহারাজ আমাদেরকে বলেছিলেন – ” জানিস তো , সত্যিই ওরা প্রচন্ড Intellectual এবং ওদের অনেকে মনস্তত্ত্ব বিশারদ ! I.B. বা C.B.I -এর অফিসারেরা যেমন কোন অপরাধীকে মাঝখানে বসিয়ে চতুর্দিক থেকে এমন চোখা চোখা প্রশ্ন ছুঁড়তে থাকে যে , ওই অপরাধী কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘাবড়ে গিয়ে – সব সত্যি কথা হড়হড় করে বলে দেয়_ব্যপারটা সেরকমই ছিল !”
আসলে ওই বুদ্ধিমান লোকগুলির বিভিন্ন ট্রেনিং রয়েছে – সেখানে এই ধরনের কৌশলগুলি শেখানো হয় – কি করে কোন মানুষের মস্তিষ্কে বা মনোজগতে Pressure সৃষ্টি করে – তাকে Confused করা যায় এবং সে তার নিজস্বতা হারিয়ে ফেলে! হয় সে কাঁদতে থাকবে না হয় সে ঘাবড়ে গিয়ে তার জীবনের সমস্ত গোপনীয় সত্যি কথাগুলি বলে দিতে থাকবে । ওই ইউনিভার্সিটিতেও সেদিন এইরকমই একটা ‘কমিশন’ মতো বসেছিল !
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ” ওরা প্রথমে নিজেদের পরিচয় দিল , আমার পরিচয় নিল এবং সেগুলি সব কম্পিউটারে Load করল। এরপর শুরু হ’ল আমাকে জিজ্ঞাসা পর্ব ! ওদের এমন সুন্দর Training যে ওরা শুরুতে খুব ধীরে , শান্ত গলায় আমাকে একজন একজন করে ছোট ছোট জিজ্ঞাসা করতে লাগল ৷ এরপর speed বাড়াতে থাকল এবং খানিক পরে ঘরের এপ্রান্ত – ওপ্রান্ত অর্থাৎ সব প্রান্ত থেকে সবাই মিলে আমাকে সাঁড়াশি আক্রমণ করতে শুরু করল!
এমন এমন ভাবে জিজ্ঞাসা করছে , চাপ সৃষ্টি করছে , কথার মারপ্যাঁচ করছে যে , যেকোন মানুষ কিছুক্ষণের মধ্যেই Confused হয়ে যাবে ! আমি দু-চার মিনিটের মধ্যেই ব্যাপারটা বুঝে গিয়ে একটু slow হয়ে গেলাম এবং চারপাশ থেকে আসা ওদের বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নবানকে উপেক্ষা করে যেতে শুরু করলাম। শুধুমাত্র একটা একটা করে ওদের জিজ্ঞাসার অতি সংক্ষিপ্ত কিন্তু to the point উত্তর দিচ্ছিলাম।
এইভাবে ২০/২৫ মিনিট চলতে থাকার পর দেখলাম ওরা নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে পড়ল, নিস্তেজ হয়ে পড়ল। ওদের যখন এইরকম একটা অবস্থা হোল__তখন আমি কথা শুরু করলাম। দেড় থেকে দু ঘন্টা সেদিন ঐ ইউনিভার্সিটির একটা হলঘরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বাঘা বাঘা পন্ডিতদের সামনে একটানা আলোচনা হয়েছিল। সেদিন সেই আলোচনায় ভারতবর্ষের পরম্পরাগত ঋষিকুলের শিক্ষা ও শিক্ষাপদ্ধতি, তাঁদের ত্যাগ ও সাধনা, মানবজীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য ইত্যাদি নানা বিষয় উঠে এসেছিল। ঐ পন্ডিতদের দল _যারা এতদিন শুধু অপরের কাছে নিজেদের পান্ডিত্য জাহির করে এসেছে, অযথা তর্কবিতর্ক করে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করে এসেছে __তারা সেইদিনই জীবনে প্রথম নির্বাক শ্রোতা হয়ে অতক্ষন ধরে চুপটি করে বসে ছিল!” (ক্রমশঃ)
এর আগে আগেও গুরুমহারাজ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেই সব দেশের ইউনিভার্সিটিতেও বক্তব্য রেখেছেন, Indian philosophy , Western .philosophy নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং মানব জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি , Art of life , Art of Living নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন । ফলে জার্মানীর পন্ডিত মহলে বা শিক্ষিত মহলে “স্বামী পরমানন্দ”- নামটি বেশ পরিচিত ছিলই – আবার এই দেশের বিভিন্ন আলোচনা সভায় ওনার কথা শুনে ওখানকার প্রফেসরেরা , পণ্ডিতেরা অভিভূত হয়ে পড়েছিল !
. কিন্তু এই ব্যাপারটাই গুরু মহারাজ কে একটা কঠিন পরীক্ষার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল – এখন সেই ব্যাপারটাই বলি ! ইউরোপের দেশ গুলির নানারকম Union রয়েছে – তার মধ্যে ওদের পৃথক পৃথক দেশের ইউনিভার্সিটি গুলির Course -এর মধ্যে বা অন্যান্য ব্যাপারেও একটা বন্ধন রয়েছে! ফলে এক দেশের ইউনিভার্সিটির যে কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা অন্যদেশের ইউনিভার্সিটি জানে এবং যে কোন প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশের ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধিরা এক জায়গায় হয়ে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করে ।
গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের সাথেও এই ঘটনা ঘটেছিল ! ৪-৫ টি দেশের বিভিন্ন নামকরা ইউনিভার্সিটির পণ্ডিতদের একটা বিরাট দল জার্মানীর হাইজেনবার্গ ইউনিভার্সিটি’তে এক জায়গায় হয়ে গুরু মহারাজকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়েছিল ।
প্রথমে যেদিন ওদের তরফ থেকে আমন্ত্রণ পত্রটা গুরুমহারাজের কাছে এসেছিল , সেইদিন তৎক্ষণাৎ ওনার ইউরোপীয় ভক্তরা গুরু মহারাজকে ওখানে যেতে নিষেধ করেছিল ! ওরা বলেছিল – “গুরুমহারাজ ! এরা সব ইউরোপের একটা বিশেষ পন্ডিত গোষ্ঠী , যাদের কাজই হলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জ্ঞানী-গুণী-পন্ডিত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করে ওদের নির্দিষ্ট ‘ঠেকে’ নিয়ে যাওয়া এবং তার যা কিছু বিদ্যা-বুদ্ধি তা কায়দা করে উজাড় করে নিয়ে – তাকে Stupid বানিয়ে , কিছু পয়সা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া ! আপনি ওদের পাতা ফাঁদে পা দেবেন না !” কিন্তু গুরুমহারাজ সংকল্পে অটল ছিলেন – যাবেন বলেছেন তো যাবেন-ই !
উনি হাইজেনবার্গ ইউনিভার্সিটির সেই নির্দিষ্ট কক্ষে গেছিলেন যেখানে ২০/২৫ জন ইউরোপের বিদগ্ধ পণ্ডিতেরা প্রত্যেকেই এক একটি কম্পিউটার (ল্যাপটপ) নিয়ে বসেছিল [যদিও তখন (১৯৯০-৯১) আমাদের এখানে (ভারতবর্ষে) প্রত্যেক প্রফেসরের কাছে কম্পিউটার রাখার চল ছিল না !] !
গুরুমহারাজ আমাদেরকে বলেছিলেন – ” জানিস তো , সত্যিই ওরা প্রচন্ড Intellectual এবং ওদের অনেকে মনস্তত্ত্ব বিশারদ ! I.B. বা C.B.I -এর অফিসারেরা যেমন কোন অপরাধীকে মাঝখানে বসিয়ে চতুর্দিক থেকে এমন চোখা চোখা প্রশ্ন ছুঁড়তে থাকে যে , ওই অপরাধী কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘাবড়ে গিয়ে – সব সত্যি কথা হড়হড় করে বলে দেয়_ব্যপারটা সেরকমই ছিল !”
আসলে ওই বুদ্ধিমান লোকগুলির বিভিন্ন ট্রেনিং রয়েছে – সেখানে এই ধরনের কৌশলগুলি শেখানো হয় – কি করে কোন মানুষের মস্তিষ্কে বা মনোজগতে Pressure সৃষ্টি করে – তাকে Confused করা যায় এবং সে তার নিজস্বতা হারিয়ে ফেলে! হয় সে কাঁদতে থাকবে না হয় সে ঘাবড়ে গিয়ে তার জীবনের সমস্ত গোপনীয় সত্যি কথাগুলি বলে দিতে থাকবে । ওই ইউনিভার্সিটিতেও সেদিন এইরকমই একটা ‘কমিশন’ মতো বসেছিল !
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ” ওরা প্রথমে নিজেদের পরিচয় দিল , আমার পরিচয় নিল এবং সেগুলি সব কম্পিউটারে Load করল। এরপর শুরু হ’ল আমাকে জিজ্ঞাসা পর্ব ! ওদের এমন সুন্দর Training যে ওরা শুরুতে খুব ধীরে , শান্ত গলায় আমাকে একজন একজন করে ছোট ছোট জিজ্ঞাসা করতে লাগল ৷ এরপর speed বাড়াতে থাকল এবং খানিক পরে ঘরের এপ্রান্ত – ওপ্রান্ত অর্থাৎ সব প্রান্ত থেকে সবাই মিলে আমাকে সাঁড়াশি আক্রমণ করতে শুরু করল!
এমন এমন ভাবে জিজ্ঞাসা করছে , চাপ সৃষ্টি করছে , কথার মারপ্যাঁচ করছে যে , যেকোন মানুষ কিছুক্ষণের মধ্যেই Confused হয়ে যাবে ! আমি দু-চার মিনিটের মধ্যেই ব্যাপারটা বুঝে গিয়ে একটু slow হয়ে গেলাম এবং চারপাশ থেকে আসা ওদের বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নবানকে উপেক্ষা করে যেতে শুরু করলাম। শুধুমাত্র একটা একটা করে ওদের জিজ্ঞাসার অতি সংক্ষিপ্ত কিন্তু to the point উত্তর দিচ্ছিলাম।
এইভাবে ২০/২৫ মিনিট চলতে থাকার পর দেখলাম ওরা নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে পড়ল, নিস্তেজ হয়ে পড়ল। ওদের যখন এইরকম একটা অবস্থা হোল__তখন আমি কথা শুরু করলাম। দেড় থেকে দু ঘন্টা সেদিন ঐ ইউনিভার্সিটির একটা হলঘরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বাঘা বাঘা পন্ডিতদের সামনে একটানা আলোচনা হয়েছিল। সেদিন সেই আলোচনায় ভারতবর্ষের পরম্পরাগত ঋষিকুলের শিক্ষা ও শিক্ষাপদ্ধতি, তাঁদের ত্যাগ ও সাধনা, মানবজীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য ইত্যাদি নানা বিষয় উঠে এসেছিল। ঐ পন্ডিতদের দল _যারা এতদিন শুধু অপরের কাছে নিজেদের পান্ডিত্য জাহির করে এসেছে, অযথা তর্কবিতর্ক করে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করে এসেছে __তারা সেইদিনই জীবনে প্রথম নির্বাক শ্রোতা হয়ে অতক্ষন ধরে চুপটি করে বসে ছিল!” (ক্রমশঃ)