গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ একদিন বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে সকালের দিকে সিটিংয়ে বসার পরে পরেই ওনার বিদেশ ভ্রমণকালে বিভিন্ন ঘটনার কথা আলোচনা করছিলেন । যখন উনি জার্মানী ভ্রমণকালে তাঁর নানা experience নিয়ে কথা বলছিলেন – সেইসময় প্রসঙ্গক্রমে জার্মানীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক হিটলারের কথা এসে পড়েছিল ৷ হিটলারের সম্বন্ধে কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ করে গুরু মহারাজ হিটলারের নানান গুণের কথা বলতে শুরু করে দিলেন এবং শেষে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন – ” হিটলার ব্যবহারিক বা পারিবারিক জীবনে ছিলেন ‘পরম বৈষ্ণব’ ।” Family life -এ উনি ছিলেন খুবই স্নেহময় অভিভাবক এবং পিতা-মাতার শ্রদ্ধাবান সন্তান, কিন্তু যখনই উনি দেশনায়কের পোশাক গায়ে জড়াতেন অমনি উনি প্রকৃত অর্থে দেশনায়ক হয়ে যেতেন । সেখানে ওনার শরীরে ও মনে তখন স্বদেশবাসীর আবেগ, তাদের আকাঙ্ক্ষা, তাদের চাহিদার fulfillment-এর রূপ ফুটে উঠতো এবং তখন উনি হয়ে যেতেন যেন অন্য মানুষ – জার্মানজাতির স্বপ্নপূরণের রাজকুমার !
গুরু মহারাজ সেদিন বলেছিলেন, নেতাজি সুভাষের ন্যায় হিটলারেরও Dead-body পাওয়া যায় নি ! ওনার মৃতদেহ নিয়েও ওদেশে নানা Myth-এর জন্ম হয়েছে । সেদিন ওনার আলোচনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়ক প্রসঙ্গে যা উঠে এসেছিল তা শুনলে সেদিনকার ‘আমাদের’ মতো আজকের ‘আপনারাও’ চমকে উঠবেন ! উনি বলেছিলেন – ” নেতাজি সুভাষ, হিটলার প্রমুখেরা মহাপ্রকৃতির ইচ্ছায় শরীর ধারণ করেছিলেন ! পূর্ব পূর্ব শরীরে এরা ছিলেন এক একজন মহাযোগী ! ব্রিটিশ, ফরাসী, পর্তুগিজ, স্পেনীয়ার্ড ইত্যাদি ইউরোপীয় দেশগুলির বণিক সম্প্রদায় যেভাবে গোটা বিশ্বের শত শত দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ছুতোয় প্রবেশ করে – সেখানে উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল এবং সেই সেই উপনিবেশকে কেন্দ্র করে যেভাবে সেখানকার নিরীহ জনগণের ওপর অত্যাচার, শোষণ, লুন্ঠন, চালাচ্ছিল – মানবাত্মার চরম অপমান করছিল যে, মহাপ্রকৃতি ওই জাতিগুলির উপর ক্ষুব্ধ হয়ে গিয়েছিল ! ওদেরকে চরম আঘাত দিয়ে পৃথিবীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলিকে পুনরায় স্বাধীনতা লাভের সুযোগ করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল ! যাতে করে সেইসব দেশগুলি তাদের নিজ নিজ সংস্কৃতি-সভ্যতা-সংস্কার অনুযায়ী আবার নিজেদেরকে বিকশিত করতে পারে ।”
সেদিন গুরু মহারাজের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম –’ ওঃ_আচ্ছা! এইজন্যেই নেতাজি সুভাষ বা আরো একঝাঁক রাষ্ট্রনায়ক, সেনানায়ক সেই সময় শরীর ধারণ করেছিলেন __ সমস্ত পৃথিবীব্যাপী একটা চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সেখান থেকে পুনরায় একটা সুশৃঙ্খল অবস্থায় পৃথিবী কে নিয়ে আসার জন্য !’ কিন্তু এখন হয়তো অনেকেই জিজ্ঞাসা তুলতে পারে – যেমনটা তারা চেয়েছিলেন বর্তমান পৃথিবী ঠিক তেমনটা হলো না তো ?? না – হয়নি ! আর হবেই বা কি করে ? কারণ তাঁরা তাদের কাজ সম্পন্ন করে দিয়ে চলে গেছেন ! এবার যাদের উপর বাকিটা করার দায়িত্ব ছিল – তারা তা ঠিকমত পালন করতে পারল না ! আর তার পারল না বলেই – বর্তমান বিশ্বের অবস্থা যতটা ভালো হবার কথা – তা হয়নি !
গুরু মহারাজ সেদিন এই ব্যাপারটার উপরেই জোর দিয়েছিলেন যে , মানুষের করা মূল্যায়নের কি দাম আছে ? মানুষ কখনও ঈশ্বরের কাজের, মহাজাগতিক বা মহাপ্রকৃতির নিয়মকে মূল্যায়ন করতে পারে ? মানুষের কতটুকু সাধ্য যে সে ইশ্বরের নিয়মের মূল্যায়ন করবে ? পৃথিবীর প্রায় ১০০-র কাছাকাছি দেশ শুধুমাত্র ব্রিটিশ এর অধীনে ছিল – এইসব দেশের জনগণের উপর ব্রিটিশেরা অকথ্য অত্যাচার করেছে, দেশের সমস্ত সম্পদের যতটা পেরেছে লুট করে নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে – দেশটাকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছে ! ভারতবর্ষের বহুমূল্য পুঁথিপত্র-গ্রন্থাদি, সোনা, তামা লুট করেছে – চীনের রুপো, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার হীরা এবং মানবসম্পদ লুট করেছে ! ইউরোপের তৎকালীন (অষ্টাদশ-উনবিংশ শতকে) নৌবিদ্যায় উন্নত দেশগুলি__ আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার কালো চামড়ার অমিত শক্তিশালী মানুষগুলোকে শেকলে বেঁধে জাহাজের খোলে ভরে পণ্যের মতো নিয়ে গিয়ে ওদের দেশের হাটেবাজারে ছাগল-ভেড়া-গরুর মতো বেচে দিতো । সঙ্গতিপন্ন মানুষেরা সেখান থেকে তাদেরকে কিনে নিয়ে যেত,__ তাই ওরা হতো ক্রীতদাস ।
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ইউরোপের শহরগুলি উন্নতির পরিচায়ক যেসব ঝকঝকে রাস্তাঘাট, সুউচ্চ বিল্ডিং-এর সারি বা আরও যে কোনো Construction, সেগুলি সব ওই কালো-দের অবদান ৷ ওরা-ই পাহাড় ফাটিয়ে, জঙ্গল কেটে, অতল খাদ বুঁজিযে ইউরোপের রাস্তাঘাট বানিয়েছে! সত্যি কথা বলতে গেলে ওরা অক্লান্ত পরিশ্রম করতে করতে মরে গেছে – আর তার বিনিময়ে ইউরোপের ওই সব দেশগুলিকে ওরা আধুনিক সভ্যতায় উন্নত করে গড়ে তুলেছে !
এসব কথা বলতে বলতে যে কোনো অসহায় মানুষের প্রতি করুণায় গুরুমহারাজ কেমন যেন হয়ে যেতেন ! উনি এইজন্যেই বলেছিলেন – ” পন্ডিত মানুষেরা যাই ভাবুক না কেন আর যাই মন্তব্য করুক না কেন – আধ্যাত্মিক মানুষেরা জানেন, একটা সুভাষ, একটা হিটলার পৃথিবী গ্রহের কতটা উপকার করে গেছে !” আর ‘কালো মানুষ’-দের প্রসঙ্গ উঠলেই গুরু মহারাজ করুণার্দ্র হয়ে উঠতেন! একবার তো বলেই দিলেন, “আমাকে একবার আফ্রিকায় শরীর নিতে হবে, তোরা সব থাকবি তো আমার সাথে? ”
সিঙ্গুরের “পল্লব”(পেলু) ছিল ঐ সিটিং-এ। সিটিং-এর শেষে ওর সাথে দেখা হোতেই ও আমাকে দূর থেকে চিৎকার করে বলে উঠল _”শ্রীধরদা! Ready হও, আমাদেরকে তো এবার আফ্রিকায় জন্ম নিতে হবে!”(ক্রমশঃ)