গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের বলা কথা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল । ওনার বলা তিথি-নক্ষত্র বিষয়ক আলোচনাগুলি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে ! স্বামী পরমানন্দকে তো কোন কিছুতে সীমাবদ্ধ করা যায় না ! আমরা দেখেছি স্থান-কাল-পাত্র ভেদে তিনি তাঁর বক্তব্য পাল্টেছেন, আবার কোন কারণ ছাড়াই অর্থাৎ অকারনেও তিনি নিজের বক্তব্যকে নিজেই ভেঙেছেন, খন্ডন করেছেন ! আর এটা যখন করেছেন _তখন তার পিছনেও নানা অকাট্য যুক্তি খাড়া করেছেন । নজরুল কবি ঠিকই লিখেছিলেন — ” ভাঙ্গিছ গড়িছ নিতি আনমনে ৷” এক্ষেত্রেও তাই, একদিকে গুরুমহারাজ হাঁচি-টিকটিকি-তাবিজ-কবচ, পাথর-রত্নের চরম বিরোধ করেছেন – আবার কোন কোন সময়, কোন কোন ক্ষেত্রে উনি এগুলির বিজ্ঞানও বুঝিয়ে দিয়েছেন ! কিন্তু বলেছেন – এগুলি Partial Science, Complete নয় ৷ একমাত্র আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান-ই Complete Science, বাকি সবই আংশিক !
আসলে সাদা-কালো, ভালো-মন্দ, সাধু-অসাধু সকল লোকের জন্যই তো স্বামী পরমানন্দ! সকলকে নিয়েই তাঁকে চলতে হোত – সকলের মঙ্গল বিধান তাঁকে করতে হতো! তাই ব্যক্তিভেদে তাকে Soft হতেই হোত – কোন কোন বিষয়ে নিত্যস্থিত হয়েও তাঁকে অনিত্যের ব্যাপারে আপোস করতে হোত !
যাইহোক, আগের দিন বলা হয়েছিল যে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য দোল-পূর্ণিমার দিন দলবদ্ধভাবে বা সংঘবদ্ধভাবে কাজীদলনের জন্য দিন স্থির করেছিলেন । গুরু মহারাজ বললেন – ” দলবদ্ধভাবে কোন কিছুর প্রতিবাদ, প্রতিবিধানের জন্য আজো এই দিনটিই প্রশস্থ ! যেকোনো অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য প্রতিবাদ মিছিল এই দিনে এই তিথিতে শুরু করলে তা অবশ্যই সাকসেসফুল হবে ৷”
বারবেলা-কালবেলা সম্বন্ধে কথা উঠলে গুরু মহারাজ স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিতেন ৷ বেশিরভাগ সময়েই বলতেন – সবদিনেই তো সূর্য ওঠে, দিন হয়, আবার সূর্যাস্তের পরে রাত্রি হয়, সব দিনেই লক্ষ-লক্ষ কোটি-কোটি মানুষ অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের প্রয়োজনের তাগিদে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে, চাষীরা চাষ করে-ফসল ফলায়, শ্রমিকেরা পাথর ভাঙ্গে – খনির অন্ধকারে কাজ করে, তাদের কি বারবেলা-কালবেলা মানলে চলবে ?
হাঁচি-টিকটিকি-হোঁচট খাওয়া, রাস্তায় বিড়াল ডিঙানো – এইসব নিয়ে কথা উঠলেও উনি একইরকমভাবে বীরব্যঞ্জক ভাব নিয়ে খণ্ডন করতেন ৷ কিন্তু কোন কোন সময় এগুলোকে Support করেও কথা বলেছেন । একবার বললেন – ” তা মানলেই বা ক্ষতি কি ! যদি কোথাও শুভ কাজে বেরোনোর সময় হঠাৎ করে হোঁচট লাগে বা হাঁচি-টিকটিকি পড়ে – এমন ঘটলে অনেক সময়েই দেখা গেছে কোনো না কোনো বিপদ হয় ৷ সব সময় না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় ! তাহলে এইগুলিকে একটা Warning হিসাবে নিলেই বা ক্ষতি কি ! যদি কারো এসব ক্ষেত্রে মন খুঁতখুঁত করে তাহলে তার ‘মুহূর্তকাল’ সময় অপেক্ষা করে আবার রওনা হওয়া উচিত । ‘এক মুহূর্তকাল’ বলতে গুরুমহারাজ বলেছিলেন ২১মিনিট সময় ! এই সময়কালটি অতিক্রান্ত হয়ে গেলেই যাত্রার সময় যে বিঘ্ন হতে পারতো, তা কেটে যায় ।
এই প্রসঙ্গে যে সময় আলোচনাটা হয়েছিল তার কিছুদিন আগেই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আততায়ীর হাতে মৃত্যু হয়েছিল । সেই প্রসঙ্গ টেনে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” যে স্থানটিতে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু হয়েছিল, ওই স্থানটিতে, ওই সময়ে বা ক্ষণে যে ব্যক্তিই আসতো – সেই মরতো ! এক সেকেন্ডের এদিক ওদিক হয়ে গেলেই হয়তো ইন্দিরাজীর আপ্তসহায়ক ‘ধাওয়ান’জী-ই মারা যেতো (ঐ ব্যক্তি ইন্দিরা গান্ধীর ঠিক পিছনেই ছিল) !” এই প্রসঙ্গেই উনি বলেছিলেন – ” হয়তো কোথাও ট্রেন দুর্ঘটনা হ’ল ! দেখা গেল ৫o জন মারা গেছে, ১৫০ জন গুরুতর জখম, ২০০ জন অল্প অল্প আহত এবং বাকীদের হয়তো কিছুই হয়নি ! এগুলো সবই পূর্বনির্ধারিত ! যে সমস্ত মানুষগুলি মারা গেছে, দেখা গেছে তারা বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ঠিক ঐ ট্রেনটির একটি নির্দিষ্ট কামরাতেই উঠেছিল – যে কামরাটি সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।” সেই অর্থে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – “প্রকৃতপক্ষে দুর্ঘটনা বলে কিছু হয় না – সবই পূর্বনির্ধারিত ! অজ্ঞতাবশতঃ কোন ঘটনাকে আমরা মনে করি ‘দুর্ঘটনা’৷”
তবে বারবেলা-কালবেলা -অশ্লেষা-মঘা সম্বন্ধে একটা সুন্দর গল্প গুরুমহারাজকে শোনানো হয়েছিল , যেটা শুনে গুরুমহারাজ খুবই আনন্দ পেয়েছিলেন, মজা করেছিলেন ! সেই গল্পটি আপনাদেরকেওবলছি ।
এক দেশে দুজন সওদাগর ছিল, তাদের দুজনেরই জাহাজ ছিল এবং পাশাপাশি বন্দর থেকে তারা আলাদা আলাদাভাবে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করতো ৷ কিন্তু কিছুদিন হল ওদের মধ্যে একজন সওদাগরের ব্যবসায় মন্দা দেখা চলছিল । সে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বস্তু সওদা করল এবং লাভের আশায় সেগুলি বাইরে নিয়ে গিয়ে রপ্তানি করল, কিন্তু সেবারেও লোকসান ! পন্ডিত ডেকে বার-নক্ষত্র-তিথি মেনে পূজা-পাঠ করে আবার নতুন মাল নিয়ে যাত্রা করল — কিন্তু আবার লোকসান ! ব্যাপারটা হচ্ছে কি ! সওদাগর লাভের জন্য মরিয়া হয়ে উঠল । এদিকে সে দেখছে তার পাশের সওদাগর পাঁজি-পুঁথি না মেনে দিনদিন লাভের টাকায় ফুলে-ফেঁপে উঠছে – কিন্তু পাঁজি-পুঁথি দেখে, তিথি-নক্ষত্র মেনে বেড়িয়েও এই সওদাগরের শুধুই লোকসান !
তাই এই সওদাগর সিদ্ধান্ত নিল __নাঃ, আর পাঁজি-পুঁথি নয়, তিথি-নক্ষত্রের মান্যতা দান নয় _ পাশের সওদাগর যে দিনে-যে সময়ে জাহাজ ছাড়বে __ঠিক সেইদিনই সে-ও বেরোবে। তাই সে তার অনুচরদের পাশের সওদাগরের সবরকম কাজের ব্যাপারে নজর রাখতে বলে দিল। ফলে পাশের সওদাগর রপ্তানির জন্য যে যে মাল কিনলো_এই সওদাগরের লোকেরাও সেই একই মাল কিনলো! একসাথেই জাহাজ ভর্তি হোল_একসাথেই জাহাজ ছাড়া হোল, আগের জাহাজটি follow করে বহুদূরের কোন একটি বন্দরে যেইমাত্র অন্য সওদাগর টির জাহাজ নোঙর করল _অমনি এই সওদাগর নাবিকদের আদেশ দিল যেন ঠিক ঐ জাহাজের পাশেই এর জাহাজও নোঙর করা হয়।
সেইমতোই ঠিকঠাক সব কিছুই চলছিল। কিন্তু গোল বাধলো জাহাজ নোঙর করার সময়! আগের জাহাজটির ঠিক পাশেই নাবিকেরা যেই না নোঙর করার তোড়জোড় শুরু করেছে __ঠিক তখনই দেখা গেল দুটি বিরাট চেহারার বিভৎস-দর্শন পুরুষ, বড় বড় খাঁড়া হাতে নিয়ে আস্ফালন করে বলছে_”আয়, কে নামবি চলে আয়! যে নামবি, তাকেই কেটে ফেলব!”
সওদাগর এই ভয়ঙ্কর ব্যাপার-স্যাপার দেখে ভয় তো পেলোই কিন্তু অবাক না হয়েও পারলো না! জাহাজ থেকেই ঐ বিশাল মূর্তিদের দিকে তাকিয়ে জোড়হাতে নিবেদন করল_” হুজুর! কে বাবা আপনারা?? আর আমার বেলা-তেই বা আপনারা এমন করছেন কেন? ঐ তো পাশের সওদাগর আমার সাথেই, আমার পাশেই নোঙর করল _তার বেলা তো আপনারা কিছু বললেন না! আমি কি এমন অপরাধ করেছি_যে আমার প্রতি আপনারা এত নির্দয়!!
ঐ বিভৎস মূর্তিদ্বয় তখন নিজের পরিচয় দিয়ে বলল_”আমি অশ্লেষা, আর ও মঘা! তুই যখন জাহাজ ছেড়েছিলি তখন পাঁজি-পুঁথি না দেখে ছাড়লি কেন_তখন যে যাত্রা নিষিদ্ধ ছিল, তুই অশ্লেষা ও মঘা নক্ষত্রে বের হয়েছিস_তাই তোকে যাত্রা পাল্টে আসতে হবে! নাহলে তোর নিস্তার নাই!”
এই সওদাগর সব শুনে ভয়ার্তকন্ঠে বলল_” কিন্তু প্রভূ! একটা নিবেদন _আমি তো আমার পাশের সওদাগরকে follow করেছি মাত্র, ওই ব্যক্তি যে সময়ে জাহাজ ছেড়েছে, সেই সময়েই তো আমিও জাহাজ ছেড়েছি_তাহলে ওকে তো কিছু করলেন না??”
এই কথা শুনে সেই বিরাট মূর্তিরা বলল _”আমরা ঐ সওদাগরের কোন ক্ষতি করতে পারব না _কারণ ও তো আমাদেরকে মানে না! তবে তোর ক্ষতি হবে, তুই যে মানিস!!”(ক্রমশঃ)
আসলে সাদা-কালো, ভালো-মন্দ, সাধু-অসাধু সকল লোকের জন্যই তো স্বামী পরমানন্দ! সকলকে নিয়েই তাঁকে চলতে হোত – সকলের মঙ্গল বিধান তাঁকে করতে হতো! তাই ব্যক্তিভেদে তাকে Soft হতেই হোত – কোন কোন বিষয়ে নিত্যস্থিত হয়েও তাঁকে অনিত্যের ব্যাপারে আপোস করতে হোত !
যাইহোক, আগের দিন বলা হয়েছিল যে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য দোল-পূর্ণিমার দিন দলবদ্ধভাবে বা সংঘবদ্ধভাবে কাজীদলনের জন্য দিন স্থির করেছিলেন । গুরু মহারাজ বললেন – ” দলবদ্ধভাবে কোন কিছুর প্রতিবাদ, প্রতিবিধানের জন্য আজো এই দিনটিই প্রশস্থ ! যেকোনো অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য প্রতিবাদ মিছিল এই দিনে এই তিথিতে শুরু করলে তা অবশ্যই সাকসেসফুল হবে ৷”
বারবেলা-কালবেলা সম্বন্ধে কথা উঠলে গুরু মহারাজ স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিতেন ৷ বেশিরভাগ সময়েই বলতেন – সবদিনেই তো সূর্য ওঠে, দিন হয়, আবার সূর্যাস্তের পরে রাত্রি হয়, সব দিনেই লক্ষ-লক্ষ কোটি-কোটি মানুষ অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের প্রয়োজনের তাগিদে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে, চাষীরা চাষ করে-ফসল ফলায়, শ্রমিকেরা পাথর ভাঙ্গে – খনির অন্ধকারে কাজ করে, তাদের কি বারবেলা-কালবেলা মানলে চলবে ?
হাঁচি-টিকটিকি-হোঁচট খাওয়া, রাস্তায় বিড়াল ডিঙানো – এইসব নিয়ে কথা উঠলেও উনি একইরকমভাবে বীরব্যঞ্জক ভাব নিয়ে খণ্ডন করতেন ৷ কিন্তু কোন কোন সময় এগুলোকে Support করেও কথা বলেছেন । একবার বললেন – ” তা মানলেই বা ক্ষতি কি ! যদি কোথাও শুভ কাজে বেরোনোর সময় হঠাৎ করে হোঁচট লাগে বা হাঁচি-টিকটিকি পড়ে – এমন ঘটলে অনেক সময়েই দেখা গেছে কোনো না কোনো বিপদ হয় ৷ সব সময় না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় ! তাহলে এইগুলিকে একটা Warning হিসাবে নিলেই বা ক্ষতি কি ! যদি কারো এসব ক্ষেত্রে মন খুঁতখুঁত করে তাহলে তার ‘মুহূর্তকাল’ সময় অপেক্ষা করে আবার রওনা হওয়া উচিত । ‘এক মুহূর্তকাল’ বলতে গুরুমহারাজ বলেছিলেন ২১মিনিট সময় ! এই সময়কালটি অতিক্রান্ত হয়ে গেলেই যাত্রার সময় যে বিঘ্ন হতে পারতো, তা কেটে যায় ।
এই প্রসঙ্গে যে সময় আলোচনাটা হয়েছিল তার কিছুদিন আগেই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আততায়ীর হাতে মৃত্যু হয়েছিল । সেই প্রসঙ্গ টেনে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” যে স্থানটিতে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু হয়েছিল, ওই স্থানটিতে, ওই সময়ে বা ক্ষণে যে ব্যক্তিই আসতো – সেই মরতো ! এক সেকেন্ডের এদিক ওদিক হয়ে গেলেই হয়তো ইন্দিরাজীর আপ্তসহায়ক ‘ধাওয়ান’জী-ই মারা যেতো (ঐ ব্যক্তি ইন্দিরা গান্ধীর ঠিক পিছনেই ছিল) !” এই প্রসঙ্গেই উনি বলেছিলেন – ” হয়তো কোথাও ট্রেন দুর্ঘটনা হ’ল ! দেখা গেল ৫o জন মারা গেছে, ১৫০ জন গুরুতর জখম, ২০০ জন অল্প অল্প আহত এবং বাকীদের হয়তো কিছুই হয়নি ! এগুলো সবই পূর্বনির্ধারিত ! যে সমস্ত মানুষগুলি মারা গেছে, দেখা গেছে তারা বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ঠিক ঐ ট্রেনটির একটি নির্দিষ্ট কামরাতেই উঠেছিল – যে কামরাটি সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।” সেই অর্থে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – “প্রকৃতপক্ষে দুর্ঘটনা বলে কিছু হয় না – সবই পূর্বনির্ধারিত ! অজ্ঞতাবশতঃ কোন ঘটনাকে আমরা মনে করি ‘দুর্ঘটনা’৷”
তবে বারবেলা-কালবেলা -অশ্লেষা-মঘা সম্বন্ধে একটা সুন্দর গল্প গুরুমহারাজকে শোনানো হয়েছিল , যেটা শুনে গুরুমহারাজ খুবই আনন্দ পেয়েছিলেন, মজা করেছিলেন ! সেই গল্পটি আপনাদেরকেওবলছি ।
এক দেশে দুজন সওদাগর ছিল, তাদের দুজনেরই জাহাজ ছিল এবং পাশাপাশি বন্দর থেকে তারা আলাদা আলাদাভাবে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করতো ৷ কিন্তু কিছুদিন হল ওদের মধ্যে একজন সওদাগরের ব্যবসায় মন্দা দেখা চলছিল । সে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বস্তু সওদা করল এবং লাভের আশায় সেগুলি বাইরে নিয়ে গিয়ে রপ্তানি করল, কিন্তু সেবারেও লোকসান ! পন্ডিত ডেকে বার-নক্ষত্র-তিথি মেনে পূজা-পাঠ করে আবার নতুন মাল নিয়ে যাত্রা করল — কিন্তু আবার লোকসান ! ব্যাপারটা হচ্ছে কি ! সওদাগর লাভের জন্য মরিয়া হয়ে উঠল । এদিকে সে দেখছে তার পাশের সওদাগর পাঁজি-পুঁথি না মেনে দিনদিন লাভের টাকায় ফুলে-ফেঁপে উঠছে – কিন্তু পাঁজি-পুঁথি দেখে, তিথি-নক্ষত্র মেনে বেড়িয়েও এই সওদাগরের শুধুই লোকসান !
তাই এই সওদাগর সিদ্ধান্ত নিল __নাঃ, আর পাঁজি-পুঁথি নয়, তিথি-নক্ষত্রের মান্যতা দান নয় _ পাশের সওদাগর যে দিনে-যে সময়ে জাহাজ ছাড়বে __ঠিক সেইদিনই সে-ও বেরোবে। তাই সে তার অনুচরদের পাশের সওদাগরের সবরকম কাজের ব্যাপারে নজর রাখতে বলে দিল। ফলে পাশের সওদাগর রপ্তানির জন্য যে যে মাল কিনলো_এই সওদাগরের লোকেরাও সেই একই মাল কিনলো! একসাথেই জাহাজ ভর্তি হোল_একসাথেই জাহাজ ছাড়া হোল, আগের জাহাজটি follow করে বহুদূরের কোন একটি বন্দরে যেইমাত্র অন্য সওদাগর টির জাহাজ নোঙর করল _অমনি এই সওদাগর নাবিকদের আদেশ দিল যেন ঠিক ঐ জাহাজের পাশেই এর জাহাজও নোঙর করা হয়।
সেইমতোই ঠিকঠাক সব কিছুই চলছিল। কিন্তু গোল বাধলো জাহাজ নোঙর করার সময়! আগের জাহাজটির ঠিক পাশেই নাবিকেরা যেই না নোঙর করার তোড়জোড় শুরু করেছে __ঠিক তখনই দেখা গেল দুটি বিরাট চেহারার বিভৎস-দর্শন পুরুষ, বড় বড় খাঁড়া হাতে নিয়ে আস্ফালন করে বলছে_”আয়, কে নামবি চলে আয়! যে নামবি, তাকেই কেটে ফেলব!”
সওদাগর এই ভয়ঙ্কর ব্যাপার-স্যাপার দেখে ভয় তো পেলোই কিন্তু অবাক না হয়েও পারলো না! জাহাজ থেকেই ঐ বিশাল মূর্তিদের দিকে তাকিয়ে জোড়হাতে নিবেদন করল_” হুজুর! কে বাবা আপনারা?? আর আমার বেলা-তেই বা আপনারা এমন করছেন কেন? ঐ তো পাশের সওদাগর আমার সাথেই, আমার পাশেই নোঙর করল _তার বেলা তো আপনারা কিছু বললেন না! আমি কি এমন অপরাধ করেছি_যে আমার প্রতি আপনারা এত নির্দয়!!
ঐ বিভৎস মূর্তিদ্বয় তখন নিজের পরিচয় দিয়ে বলল_”আমি অশ্লেষা, আর ও মঘা! তুই যখন জাহাজ ছেড়েছিলি তখন পাঁজি-পুঁথি না দেখে ছাড়লি কেন_তখন যে যাত্রা নিষিদ্ধ ছিল, তুই অশ্লেষা ও মঘা নক্ষত্রে বের হয়েছিস_তাই তোকে যাত্রা পাল্টে আসতে হবে! নাহলে তোর নিস্তার নাই!”
এই সওদাগর সব শুনে ভয়ার্তকন্ঠে বলল_” কিন্তু প্রভূ! একটা নিবেদন _আমি তো আমার পাশের সওদাগরকে follow করেছি মাত্র, ওই ব্যক্তি যে সময়ে জাহাজ ছেড়েছে, সেই সময়েই তো আমিও জাহাজ ছেড়েছি_তাহলে ওকে তো কিছু করলেন না??”
এই কথা শুনে সেই বিরাট মূর্তিরা বলল _”আমরা ঐ সওদাগরের কোন ক্ষতি করতে পারব না _কারণ ও তো আমাদেরকে মানে না! তবে তোর ক্ষতি হবে, তুই যে মানিস!!”(ক্রমশঃ)