শ্রী শ্রী গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের বনগ্রাম আশ্রমের সিটিং-এ বলা কথাগুলি এখানে আলোচনা করা হচ্ছিল । স্বামী পরমানন্দ ভগবান – স্বয়ং ভগবান ! গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ নিজেই বলেছিলেন যে ভগবান স্বয়ং যখন যখন অবতীর্ণ হ’ন, তখনই_ একমাত্র তখনই অর্থাৎ সেই অবতারিত পুরুষেরাই পারেন তাঁর সান্নিধ্যে আসা যে কোন মানুষের যে কোনো জিজ্ঞাসাই শুধু নয়, তাদের জীবন-জিজ্ঞাসার সমাধান করে দিতে ! তিনি নিজেই সাধারণ মানুষের কাছে কাছে গিয়ে – তাদেরকে সুযোগ করে দেন তাঁর কাছে আসার এবং সুযোগ করে দেন তাদের মনে জন্ম-জন্মান্তর ধরে জমে থাকা জিজ্ঞাসা সমূহের সঠিক উত্তর দিয়ে তাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান করার ! এই অত্যাশ্চর্য ক্ষমতার অধিকারী স্বয়ং ভগবান ছাড়া আর কারো হবার কোন ক্ষমতা থাকে না ৷ অনেক উন্নত মহাত্মারা মানবকল্যাণের নিমিত্ত শরীর ধারণ করেন – তাঁরাও মানুষের ভালোর জন্য অনেক কাজ করেন, অনেক কথা বলে যান, অনেকের অনেক জিজ্ঞাসার উত্তরও দেন – কিন্তু সেগুলি স্থান-কাল-পাত্রে সীমাবদ্ধ, কালের গন্ডীকে ছাপিয়ে যেতে পারে না ৷ কালের গণ্ডী – দেশের গণ্ডী ছাড়িয়ে মহাকালের বুকে স্থান করে নিতে পারে একমাত্র ভগবানের কথা ৷
ঋষিদের উপলব্ধ সত্য – যা বেদ বা উপনিষদ নামে পরিচিত, সেগুলিও শাশ্বত-চিরন্তন অধ্যাত্ম শাস্ত্র । শাশ্বত-চিরন্তন অর্থে যা আগেও ছিল, এখনও রয়েছে এবং পরেও থাকবে । আবার ভগবানের বা অবতারগনের সব কথাও শাশ্বত, চিরন্তন!! কিন্তু অবতার পুরুষদের যে কথা তা নিতান্ত সাধারণ মানুষের জীবন-জিজ্ঞাসার উত্তর অথবা সেইসব সাধারণ মানুষদেরকে চরম অজ্ঞান-অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসার, অচেতন বা হতচেতন মানুষের চেতনাকে উন্নীত করার ঐকান্তিক প্রয়াস ! গুরু মহারাজকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল – ” ঈশ্বরের অবতারকে বারবার পৃথিবীর মানুষ মেরে ফেলেছে, তাঁদেরকে নানাভাবে অত্যাচার করেছে, তবু তাঁরা ফিরে ফিরে আসেন কেন ? ” এই জিজ্ঞাসার উত্তরে গুরু মহারাজ একটি গল্পের অবতারণা করেছিলেন – সেইটা বলা যাক্ !
একদেশে এক রাজা ছিল । রাজার রাজত্বে প্রজারা খুবই সুখে-শান্তিতে বাস করতো কারণ রাজা খুবই প্রজানুরঞ্জক ছিল। এইসব সত্ত্বেও রাজা এবং প্রজাগণ – সবার মনে চরম অশান্তি কারণ রাজার কোন পুত্রসন্তান নাই ! অবশেষে সুসংবাদ পাওয়া গেল রাজার ছেলে হবে ৷ দিনে দিনে রানী আসন্নপ্রসবা হল । প্রজাদের আর আনন্দের সীমা নাই – রাজামশাই-এর তো কথাই নাই ! সবার আনন্দ-কে মর্যাদা দিয়ে রাজা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে রাজধানীর পাশ দিয়ে যে নদী বয়ে গেছে – রানীর সন্তান হবার দিনে সেই নদীর উপর দুটি বজরা ভাসানো হবে, তার একটায় রাজামশাই মন্ত্রী-সেনাপতি-সভাসদদের নিয়ে থাকবেন এবং সেটির সংলগ্ন বজরায় রানী এবং ডাক্তার-নার্সরা থাকবে! যাতে সন্তান হবার সাথে সাথে রাজামশাই নিজে এবং রাজ্যবাসীও রাজপুত্রকে দেখার সৌভাগ্য লাভ করতে পারে ।
রাজার আদেশে সেইরকমই সব ব্যবস্থা হলো। প্রসব যন্ত্রণা ওঠার অপেক্ষায় বজরায় রাজা উৎকন্ঠিত হয়ে পায়চারি করছেন – তাই দেখে রাজ্যের জনগণও নদীর দু’পাড়ে জমা হয়ে অধীর হয়ে প্রার্থনা করতে লাগল ৷ ঠিক সেইসময় শব্দ ” ট্যাঁ – ট্যাঁ !”, “রাজামশাই-এর পুত্র সন্তান হয়েছে !”_ঐ বজরা থেকে এক নার্স খবর দিল। রাজামশাই এই কথা শুনে আর স্থির থাকতে পারলো না ! ছুটে চলে গেল পাশের বজরায় ৷ সদ্যোজাত শিশুর তখন সবে সবে নাড়ী কাটা হয়েছে, সেই অবস্থায় ধাত্রীমাতার কাছ থেকে শিশুর গায়ে ন্যাকড়া জড়িয়ে রাজামশাই ছেলেকে তুলে নিলেন কোলে, তারপর বাইরে বেরিয়ে এসে দুটি বজরার ধারে এসে শিশুপুত্রকে উঁচুতে তুলে দুই পাড়ে থাকা রাজ্যবাসীকে দেখাতে থাকলো! এদিকে সদ্যোজাত শিশুর রাজার হাতে কিলবিল করতে থাকায় হঠাৎ করে পিছলে পড়ে গেল জলে ! এই দৃশ্য দেখে নদীর দুপারে উপস্থিত সকলে “হায়-হায়” করতে লাগল । কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাজা মুহূর্তের মধ্যে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিশুকে উদ্ধার করে আনলো !
এখানে একটা জিজ্ঞাসা আসতেই পারে – যেখানে রাজার বাছা-বাছা দেহরক্ষীরা উপস্থিত, মন্ত্রী-সেনাপতি সহ অন্য সভাসদরা উপস্থিত – তবু নিজের জীবন বিপন্ন করে তৎক্ষণাৎ রাজা জলে ঝাঁপিয়ে পরলো কেন ? এর উত্তর একটাই – #প্রেমে ! সন্তানের প্রতি ঐকান্তিক প্রেমের ফলে রাজা কাউকে আদেশ দেওয়া – নির্দেশ দেওয়ার অবসরটুকুও দিলো না – ঘটনাটা কেউ বুঝে ‘ কি করা উচিত ‘ – এই ভাবনাটুকুর ফাঁকে-ই রাজা স্বয়ং লাফিয়ে পড়লেন জলে !
ঈশ্বরও এটাই করেন । জগতে যখন জীবের চরম হাহাকার, কান্না, আর্তনাদ ওঠে – তখন পরম করুণায় আর অপার্থিব প্রেমের প্রকাশে – অবতরণ হয় ! ভাগবতী তনু ধারণ করে তিনি হ’ন ভগবান _যেমন ভগবান বুদ্ধ, ভগবান শ্রীচৈতন্য, ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ !
আমরা আগের দিন বলেছিলাম যে, ভগবান বুদ্ধের সময়কালীন একটা যুদ্ধের ঘটনা আলোচনা করব, কিন্তু উপক্রমণিকাটাই এত বড় হয়ে গেল যে ওই ঘটনাটা লিখতে গেলে পুরো ঘটনাটার একটা অতি সংক্ষিপ্ত রূপ লিখতে হবে – তাই ওটা পরেরদিন হবে ! যেহেতু একটু জায়গা রয়েছে তাই এখন গুরুমহারাজের বলা আরও দু-একটা জীবনমুখী – কথা বলা যাক !
এই যে ‘জীবনমুখী’ কথাটা বর্তমানে খুব চলছে, তাই গুরুমহারাজকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল – ” আচ্ছা গুরুজী ! জীবনমুখী গান বলতে ঠিক কী বোঝায় ?” উত্তরে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” ঠিক ঠিক জীবনমুখী গান হচ্ছে মহাজনদের লেখা বাউল গান । বিভিন্ন দেহতত্ত্বের গান এবং যেসব গানের ছত্রে মানুষকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে মনে পড়ায় সেগুলিই জীবনমুখী গান।” যৌবনের উচ্ছলতায় ঝমাঝম্ বাজনা এবং গমাগম্ সংগীত ভালো লাগে __কিন্তু সেগুলি স্থায়ী হয় না। এইসব গান জীবন বিরোধী, কারন এগুলি মানুষকে উশৃঙ্খল করে তোলে এবং তাতে করে মানুষের জীবনীশক্তির হানি হয়। অপরদিকে বাউলগান জমানুষকে দেহতত্বের শিক্ষা দেয়, দেহের ক্ষয় রোধ করতে শেখায়, প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে মানুষকে শৃঙ্খলাপরায়ন হোতে সাহায্য করে।।
সাধন করলে কি পাওয়া যায় _সে কথাও বলে। এইভাবে মানুষের জীবনে বাউল গান প্রত্যেক্ষ প্রভাব ফেলে। তাই বাজারে “জীবনমুখী গান” বলে যেগুলি চলছে _তার বেশিরভাগই জীবনবিরোধী গান, অপরপক্ষে বাউলগান-ই ঠিক ঠিক জীবনমুখী গান। “(ক্রমশঃ)
ঋষিদের উপলব্ধ সত্য – যা বেদ বা উপনিষদ নামে পরিচিত, সেগুলিও শাশ্বত-চিরন্তন অধ্যাত্ম শাস্ত্র । শাশ্বত-চিরন্তন অর্থে যা আগেও ছিল, এখনও রয়েছে এবং পরেও থাকবে । আবার ভগবানের বা অবতারগনের সব কথাও শাশ্বত, চিরন্তন!! কিন্তু অবতার পুরুষদের যে কথা তা নিতান্ত সাধারণ মানুষের জীবন-জিজ্ঞাসার উত্তর অথবা সেইসব সাধারণ মানুষদেরকে চরম অজ্ঞান-অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসার, অচেতন বা হতচেতন মানুষের চেতনাকে উন্নীত করার ঐকান্তিক প্রয়াস ! গুরু মহারাজকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল – ” ঈশ্বরের অবতারকে বারবার পৃথিবীর মানুষ মেরে ফেলেছে, তাঁদেরকে নানাভাবে অত্যাচার করেছে, তবু তাঁরা ফিরে ফিরে আসেন কেন ? ” এই জিজ্ঞাসার উত্তরে গুরু মহারাজ একটি গল্পের অবতারণা করেছিলেন – সেইটা বলা যাক্ !
একদেশে এক রাজা ছিল । রাজার রাজত্বে প্রজারা খুবই সুখে-শান্তিতে বাস করতো কারণ রাজা খুবই প্রজানুরঞ্জক ছিল। এইসব সত্ত্বেও রাজা এবং প্রজাগণ – সবার মনে চরম অশান্তি কারণ রাজার কোন পুত্রসন্তান নাই ! অবশেষে সুসংবাদ পাওয়া গেল রাজার ছেলে হবে ৷ দিনে দিনে রানী আসন্নপ্রসবা হল । প্রজাদের আর আনন্দের সীমা নাই – রাজামশাই-এর তো কথাই নাই ! সবার আনন্দ-কে মর্যাদা দিয়ে রাজা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে রাজধানীর পাশ দিয়ে যে নদী বয়ে গেছে – রানীর সন্তান হবার দিনে সেই নদীর উপর দুটি বজরা ভাসানো হবে, তার একটায় রাজামশাই মন্ত্রী-সেনাপতি-সভাসদদের নিয়ে থাকবেন এবং সেটির সংলগ্ন বজরায় রানী এবং ডাক্তার-নার্সরা থাকবে! যাতে সন্তান হবার সাথে সাথে রাজামশাই নিজে এবং রাজ্যবাসীও রাজপুত্রকে দেখার সৌভাগ্য লাভ করতে পারে ।
রাজার আদেশে সেইরকমই সব ব্যবস্থা হলো। প্রসব যন্ত্রণা ওঠার অপেক্ষায় বজরায় রাজা উৎকন্ঠিত হয়ে পায়চারি করছেন – তাই দেখে রাজ্যের জনগণও নদীর দু’পাড়ে জমা হয়ে অধীর হয়ে প্রার্থনা করতে লাগল ৷ ঠিক সেইসময় শব্দ ” ট্যাঁ – ট্যাঁ !”, “রাজামশাই-এর পুত্র সন্তান হয়েছে !”_ঐ বজরা থেকে এক নার্স খবর দিল। রাজামশাই এই কথা শুনে আর স্থির থাকতে পারলো না ! ছুটে চলে গেল পাশের বজরায় ৷ সদ্যোজাত শিশুর তখন সবে সবে নাড়ী কাটা হয়েছে, সেই অবস্থায় ধাত্রীমাতার কাছ থেকে শিশুর গায়ে ন্যাকড়া জড়িয়ে রাজামশাই ছেলেকে তুলে নিলেন কোলে, তারপর বাইরে বেরিয়ে এসে দুটি বজরার ধারে এসে শিশুপুত্রকে উঁচুতে তুলে দুই পাড়ে থাকা রাজ্যবাসীকে দেখাতে থাকলো! এদিকে সদ্যোজাত শিশুর রাজার হাতে কিলবিল করতে থাকায় হঠাৎ করে পিছলে পড়ে গেল জলে ! এই দৃশ্য দেখে নদীর দুপারে উপস্থিত সকলে “হায়-হায়” করতে লাগল । কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাজা মুহূর্তের মধ্যে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিশুকে উদ্ধার করে আনলো !
এখানে একটা জিজ্ঞাসা আসতেই পারে – যেখানে রাজার বাছা-বাছা দেহরক্ষীরা উপস্থিত, মন্ত্রী-সেনাপতি সহ অন্য সভাসদরা উপস্থিত – তবু নিজের জীবন বিপন্ন করে তৎক্ষণাৎ রাজা জলে ঝাঁপিয়ে পরলো কেন ? এর উত্তর একটাই – #প্রেমে ! সন্তানের প্রতি ঐকান্তিক প্রেমের ফলে রাজা কাউকে আদেশ দেওয়া – নির্দেশ দেওয়ার অবসরটুকুও দিলো না – ঘটনাটা কেউ বুঝে ‘ কি করা উচিত ‘ – এই ভাবনাটুকুর ফাঁকে-ই রাজা স্বয়ং লাফিয়ে পড়লেন জলে !
ঈশ্বরও এটাই করেন । জগতে যখন জীবের চরম হাহাকার, কান্না, আর্তনাদ ওঠে – তখন পরম করুণায় আর অপার্থিব প্রেমের প্রকাশে – অবতরণ হয় ! ভাগবতী তনু ধারণ করে তিনি হ’ন ভগবান _যেমন ভগবান বুদ্ধ, ভগবান শ্রীচৈতন্য, ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ !
আমরা আগের দিন বলেছিলাম যে, ভগবান বুদ্ধের সময়কালীন একটা যুদ্ধের ঘটনা আলোচনা করব, কিন্তু উপক্রমণিকাটাই এত বড় হয়ে গেল যে ওই ঘটনাটা লিখতে গেলে পুরো ঘটনাটার একটা অতি সংক্ষিপ্ত রূপ লিখতে হবে – তাই ওটা পরেরদিন হবে ! যেহেতু একটু জায়গা রয়েছে তাই এখন গুরুমহারাজের বলা আরও দু-একটা জীবনমুখী – কথা বলা যাক !
এই যে ‘জীবনমুখী’ কথাটা বর্তমানে খুব চলছে, তাই গুরুমহারাজকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল – ” আচ্ছা গুরুজী ! জীবনমুখী গান বলতে ঠিক কী বোঝায় ?” উত্তরে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” ঠিক ঠিক জীবনমুখী গান হচ্ছে মহাজনদের লেখা বাউল গান । বিভিন্ন দেহতত্ত্বের গান এবং যেসব গানের ছত্রে মানুষকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে মনে পড়ায় সেগুলিই জীবনমুখী গান।” যৌবনের উচ্ছলতায় ঝমাঝম্ বাজনা এবং গমাগম্ সংগীত ভালো লাগে __কিন্তু সেগুলি স্থায়ী হয় না। এইসব গান জীবন বিরোধী, কারন এগুলি মানুষকে উশৃঙ্খল করে তোলে এবং তাতে করে মানুষের জীবনীশক্তির হানি হয়। অপরদিকে বাউলগান জমানুষকে দেহতত্বের শিক্ষা দেয়, দেহের ক্ষয় রোধ করতে শেখায়, প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে মানুষকে শৃঙ্খলাপরায়ন হোতে সাহায্য করে।।
সাধন করলে কি পাওয়া যায় _সে কথাও বলে। এইভাবে মানুষের জীবনে বাউল গান প্রত্যেক্ষ প্রভাব ফেলে। তাই বাজারে “জীবনমুখী গান” বলে যেগুলি চলছে _তার বেশিরভাগই জীবনবিরোধী গান, অপরপক্ষে বাউলগান-ই ঠিক ঠিক জীবনমুখী গান। “(ক্রমশঃ)