গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের বলা কথা নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছিল । এখন আলোচনা হচ্ছিল যুদ্ধ নিয়ে ৷ এর আগে একবার এই প্রসঙ্গে সামান্য আলোচনা হয়েছিল – সেই সময় বলা হয়েছিল ভগবান বুদ্ধকে একবার তাঁর শিষ্যরা যখন জিজ্ঞাসা করেছিলেন – ” পৃথিবী থেকে যুদ্ধ কখন বন্ধ হবে ?” ভগবান উত্তর দিয়েছিলেন – ” যখন পৃথিবী থেকে সব কসাইখানা বন্ধ হয়ে যাবে।” এই কথাগুলির ব্যাখ্যাটা ঠিক কিরকম হবে ? – সেদিকে একবার চোখ বোলানো যাক্ ।
ভগবান বুদ্ধের প্রধান শিক্ষা ছিল অহিংসা ! কোন এক বাঙালি কবি সেই সময়কার ক্ষত্রিয়দের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিল, ” সকল অস্ত্র হইল সেদিন কাষ্ঠের তরবারি ৷” প্রকৃতপক্ষেই এটা হয়েছিল । ভারতবর্ষের উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তের বেশিরভাগ রাজারা তখন বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিল, বৌদ্ধ প্লাবনে ভেসে গিয়েছিল ভারতের পূর্বপ্রান্তও ! কারণ গুরু মহারাজ বলেছিলেন – উড়িষ্যার জগন্নাথদেব আগে বৌদ্ধ ধর্মের আরাধ্য ছিল এবং উনি এও বলেছিলেন বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা শশাঙ্কের (যিনি শৈব নৃপতি ছিলেন) আগে বাংলাতেও বৌদ্ধ প্লাবন বেশ ভালোমতনই বয়ে গিয়েছিল । খোদ শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণতেও বেশ বড়োসড়ো বৌদ্ধ সংঘারাম ছিল ৷ আর এও শোনা যায় যে, বাংলাকে বৌদ্ধ প্লাবন থেকে রক্ষা করার জন্য এবং শৈবধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য রাজা শশাঙ্ক অন্য স্থানের বৌদ্ধস্তুপ বা সংঘ ছাড়াও ওই সংঘারামটিকেও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল, এর ফলে শত শত বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনীর প্রাণ গিয়েছিল । এও কথিত রয়েছে যে, শশাঙ্ক নাকি যখন ওই ধ্বংস হয়ে যাওয়া সঙ্ঘারামে প্রবেশ করে তখন তার পা রক্তে ভিজে গিয়েছিল !
দেখেছেন – মূল বিষয় থেকে আবার আমরা সরে যাচ্ছি, তাই যা বলছিলাম সেখানেই ফিরে আসি ! বৌদ্ধ প্লাবনে এবং মহাবীর জৈনের জৈন ধর্মের প্রভাবে ভারতবর্ষের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম এবং পশ্চিম প্রান্তের ক্ষত্রিয়কূল অহিংসাকে জীবনে গ্রহণ করতে গিয়ে – একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছিল । এর ফলস্বরূপেই সীমান্তের ওপারের লুটেরা বা দস্যুবৃত্তি করা কিছু যাযাবর জাতি ভারতবর্ষের ঐ সব প্রান্ত দিয়ে ঢুকে একেবারে গেড়ে বসতে সুযোগ পেয়েছিল। যারা পরে দেশটাকেই দখল করে নিয়ে দেশের রাজা হয়ে বসলো এবং ভারতবর্ষের প্রাচীন সভ্যতা-সংস্কৃতি-রীতিনীতি অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে ভারতের সনাতন, শাশ্বত সবকিছু-ই বদলে দিল !
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ভগবান বুদ্ধের শিক্ষায় কিন্তু অহিংসা এমনটা ছিল না। ভগবান কাউকে বলেন নি ইস্পাতের তরবারি ছেড়ে কাঠের তরবারি রাখতে, বরং বলতে গেলে জৈন ধর্মের শিক্ষায় তবুও এই ধরনের কিছু ধ্যান ধারণা ছিল । কারণ আজও ওদের মধ্যে “খাটমল সেবা” করতে দেখা যায়, অর্থাৎ কিছুক্ষণ ছারপোকাযুক্ত স্থানে বসে তাদেরকে রক্ত খাওয়ার সুযোগ করে দিতে হয় ! মাথা থেকে উকুন পড়ে গেলে – আবার তাকে যত্ন করে মাথায় তুলে দিতে হয় – এই সব শিক্ষাই তৎকালীন ক্ষাত্রশক্তির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিল ।
যাইহোক, এসব ইতিহাসের কথা থাক। আমরা যেখানে শুরু করেছিলাম অর্থাৎ কসাইখানা বন্ধের ব্যাপারটায় ফিরে যাই ! ভগবান বুদ্ধ স্বয়ং ছিলেন ঈশ্বরের অবতার ৷ তাই তিনি জীবনচক্রের ব্যাপারটা জানতেন না – এটা তো হতে পারে না ! তিনি ভালোই জানতেন যে জীবের প্রাণশক্তি অন্য কোন না কোন জীবের প্রাণশক্তির উপরেই নির্ভরশীল। উন্নত প্রজাতির জীব তার থেকে নিচের প্রজাতির জীবের উপরেই নির্ভরশীল ! প্রকৃতির পাঠশালা থেকে এই শিক্ষা যে কেউ পেতে পারে । সুতরাং ‘কসাইখানা বন্ধ’-মানে জীবজগতের স্বাভাবিক অবস্থার উন্নততর প্রাণীদের __নিম্নতর প্রাণীকে হত্যা বন্ধ নয় । ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক যা কিছু, সেটা সবসময় একটা ব্যালেন্স Maintain করে, তাই সেটাকে অক্ষুন্ন রাখাটাই যে জীবধর্ম তা ঈশ্বরাবতার ভগবান বুদ্ধের চাইতে আর বেশি ভালো কে জানে ? কিন্তু ‘কসাইখানা’ – হ’ল man-made ! সেখানে শুধুমাত্র মানুষের রসনাতৃপ্তির জন্য জীবহত্যা করা হয়, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয় ।
মানুষের খাদ্যবস্তু তো প্রকৃতিতে প্রচুর রয়েছে । তাছাড়া প্রাকৃতিকভাবে মানুষ নিরামিষাশী । গুরুমহারাজ বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে মানুষ নিরামিষাশী । উনি উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন_ জীববিজ্ঞানের বিবর্তনের সুত্র অনুযায়ী মানুষের পূর্ববর্তী প্রজাতি অর্থাৎ হনুমান-বানর-ওরাংওটাং-বেবুন-গরিলা ইত্যাদি সকল প্রজাতিই নিরামিষাশী । শুধুমাত্র পৃথিবীর কোন কোন স্থানের দু-একটি প্রজাতির বানর ছোট ছোট খরগোশ বা হরিণ ইত্যাদির বাচ্চা ধরে ধরে খায় ৷ এগুলোও শুরু হয়েছিল কোনো না কোনো বিশেষ স্থানে – বিশেষ সময়ে অর্থাৎ এমন কোন সময়ে যখন সেই স্থানের নিরামিষ জাতীয় খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছিল। ওই প্রজাতির বানরদেরকে তার ফলে কিছুদিনের জন্য বাধ্য হয়ে আমিষ খাবার খেতে হয়েছিল ! পরবর্তীতে সেটাই অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে – তাই তারা সুযোগ পেলে এখনও ছোটখাটো পশু শিকার করে খায় ।
মানুষের ক্ষেত্রেও এইরকমটাই হয়েছে – নিরামিষ খাবারের অভাবে অথবা কোন কোন প্রোটিন-ভিটামিন-খনিজের প্রয়োজনে কোন সুপ্রাচীন কালে মানুষ আমিষ খাবার গ্রহণ করতে শুরু করেছিল ৷ সেই আদতটাই এখনও রয়ে গেছে।
কিন্তু অকারণে পশু মেরে খেতে হবে অথবা আনন্দ অনুষ্ঠান করার জন্য পাঁঠা বলি বা গরু জবাই করতে হবে – এটা কোন সুস্থ সামাজিক বিধান হতে পারে না । প্রাকৃতিক নিয়মে যে সব খাদ্য __যে যে প্রাণীর ‘বাঁচা ও বাড়া’-র জন্য প্রয়োজন – সেই সেই প্রাণী, সেই সকল খাবার অবশ্যই খাবে, কিন্তু অকারণে প্রাণী হত্যা করে খাবে কেন ?
এই ‘অকারণে হত্যা’ ব্যাপারটা মানুষের মনোজগতে থাকা ‘লালসা’-র জন্যই হয়। আমরা যাদেরকে হিংস্র বন্যপ্রাণী বলি, তাদের যদি পেট ভরা থাকে _তাহলে তারা কখনই কোন অন্য প্রানীদের হত্যা করে না। গুরুমহারাজ বলেছিলেন _প্রাকৃতিক ভাবেই বাঘ বা সিংহ অনেকটা বয়স না হোলে তারা জননক্ষম হয় না (‘সিংহ বারো বছরে একবার রমন করে’_বলে যে কথাটা চালু আছে, এটার সঠিক ব্যাখ্যা এটাই! ) এবং এদের সন্তান জন্মানোর জন্মহার ও অপেক্ষাকৃত কম। অপরপক্ষে তৃণভোজী প্রানীরা অর্থাৎ হরিন বা ওয়াইল্ড গরু ইত্যাদিরা অল্প বয়সেই বাচ্চা দিতে শুরু করে এবং এদের জন্মহারও অনেক বেশি। প্রকৃতিই এটা করে জীবজগতের ব্যালান্স রাখার জন্য _যেহেতু একটা বাঘ বা সিংহ সারাজীবনে অনেক সংখ্যায় তৃণভোজীদের হত্যা করে _তাই এই ব্যবস্থা!!
মানুষ কিন্তু এইসব প্রাকৃতিক নিয়মের তোয়াক্কাই করে না। তারা তাদের মনোজগতে থাকা হিংস্রতা, লালসা, লোভ, কামনা-বাসনা জাতীয় ইচ্ছাগুলিকে মেটানোর জন্যই অকারণে পশু হত্যা করে। সেই জন্যেই ভগবান বুদ্ধ বলেছিলেন পৃথিবী থেকে ‘কসাইখানা’ _বন্ধ হোলেই যুদ্ধও বন্ধ হয়ে যাবে অর্থাৎ মানুষের মন থেকে ক্রোধ-লোভ-লালসা-হিংসা-ক্রুঢ়তা-নীচতা ইত্যাদি যাবতীয় অবগুন যতদিন না নষ্ট হবে ততদিন যুদ্ধ বন্ধ হবে কি করে!!! ।। (ক্রমশঃ)
ভগবান বুদ্ধের প্রধান শিক্ষা ছিল অহিংসা ! কোন এক বাঙালি কবি সেই সময়কার ক্ষত্রিয়দের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিল, ” সকল অস্ত্র হইল সেদিন কাষ্ঠের তরবারি ৷” প্রকৃতপক্ষেই এটা হয়েছিল । ভারতবর্ষের উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তের বেশিরভাগ রাজারা তখন বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিল, বৌদ্ধ প্লাবনে ভেসে গিয়েছিল ভারতের পূর্বপ্রান্তও ! কারণ গুরু মহারাজ বলেছিলেন – উড়িষ্যার জগন্নাথদেব আগে বৌদ্ধ ধর্মের আরাধ্য ছিল এবং উনি এও বলেছিলেন বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা শশাঙ্কের (যিনি শৈব নৃপতি ছিলেন) আগে বাংলাতেও বৌদ্ধ প্লাবন বেশ ভালোমতনই বয়ে গিয়েছিল । খোদ শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণতেও বেশ বড়োসড়ো বৌদ্ধ সংঘারাম ছিল ৷ আর এও শোনা যায় যে, বাংলাকে বৌদ্ধ প্লাবন থেকে রক্ষা করার জন্য এবং শৈবধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য রাজা শশাঙ্ক অন্য স্থানের বৌদ্ধস্তুপ বা সংঘ ছাড়াও ওই সংঘারামটিকেও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল, এর ফলে শত শত বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনীর প্রাণ গিয়েছিল । এও কথিত রয়েছে যে, শশাঙ্ক নাকি যখন ওই ধ্বংস হয়ে যাওয়া সঙ্ঘারামে প্রবেশ করে তখন তার পা রক্তে ভিজে গিয়েছিল !
দেখেছেন – মূল বিষয় থেকে আবার আমরা সরে যাচ্ছি, তাই যা বলছিলাম সেখানেই ফিরে আসি ! বৌদ্ধ প্লাবনে এবং মহাবীর জৈনের জৈন ধর্মের প্রভাবে ভারতবর্ষের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম এবং পশ্চিম প্রান্তের ক্ষত্রিয়কূল অহিংসাকে জীবনে গ্রহণ করতে গিয়ে – একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছিল । এর ফলস্বরূপেই সীমান্তের ওপারের লুটেরা বা দস্যুবৃত্তি করা কিছু যাযাবর জাতি ভারতবর্ষের ঐ সব প্রান্ত দিয়ে ঢুকে একেবারে গেড়ে বসতে সুযোগ পেয়েছিল। যারা পরে দেশটাকেই দখল করে নিয়ে দেশের রাজা হয়ে বসলো এবং ভারতবর্ষের প্রাচীন সভ্যতা-সংস্কৃতি-রীতিনীতি অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে ভারতের সনাতন, শাশ্বত সবকিছু-ই বদলে দিল !
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ভগবান বুদ্ধের শিক্ষায় কিন্তু অহিংসা এমনটা ছিল না। ভগবান কাউকে বলেন নি ইস্পাতের তরবারি ছেড়ে কাঠের তরবারি রাখতে, বরং বলতে গেলে জৈন ধর্মের শিক্ষায় তবুও এই ধরনের কিছু ধ্যান ধারণা ছিল । কারণ আজও ওদের মধ্যে “খাটমল সেবা” করতে দেখা যায়, অর্থাৎ কিছুক্ষণ ছারপোকাযুক্ত স্থানে বসে তাদেরকে রক্ত খাওয়ার সুযোগ করে দিতে হয় ! মাথা থেকে উকুন পড়ে গেলে – আবার তাকে যত্ন করে মাথায় তুলে দিতে হয় – এই সব শিক্ষাই তৎকালীন ক্ষাত্রশক্তির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিল ।
যাইহোক, এসব ইতিহাসের কথা থাক। আমরা যেখানে শুরু করেছিলাম অর্থাৎ কসাইখানা বন্ধের ব্যাপারটায় ফিরে যাই ! ভগবান বুদ্ধ স্বয়ং ছিলেন ঈশ্বরের অবতার ৷ তাই তিনি জীবনচক্রের ব্যাপারটা জানতেন না – এটা তো হতে পারে না ! তিনি ভালোই জানতেন যে জীবের প্রাণশক্তি অন্য কোন না কোন জীবের প্রাণশক্তির উপরেই নির্ভরশীল। উন্নত প্রজাতির জীব তার থেকে নিচের প্রজাতির জীবের উপরেই নির্ভরশীল ! প্রকৃতির পাঠশালা থেকে এই শিক্ষা যে কেউ পেতে পারে । সুতরাং ‘কসাইখানা বন্ধ’-মানে জীবজগতের স্বাভাবিক অবস্থার উন্নততর প্রাণীদের __নিম্নতর প্রাণীকে হত্যা বন্ধ নয় । ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক যা কিছু, সেটা সবসময় একটা ব্যালেন্স Maintain করে, তাই সেটাকে অক্ষুন্ন রাখাটাই যে জীবধর্ম তা ঈশ্বরাবতার ভগবান বুদ্ধের চাইতে আর বেশি ভালো কে জানে ? কিন্তু ‘কসাইখানা’ – হ’ল man-made ! সেখানে শুধুমাত্র মানুষের রসনাতৃপ্তির জন্য জীবহত্যা করা হয়, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয় ।
মানুষের খাদ্যবস্তু তো প্রকৃতিতে প্রচুর রয়েছে । তাছাড়া প্রাকৃতিকভাবে মানুষ নিরামিষাশী । গুরুমহারাজ বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে মানুষ নিরামিষাশী । উনি উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন_ জীববিজ্ঞানের বিবর্তনের সুত্র অনুযায়ী মানুষের পূর্ববর্তী প্রজাতি অর্থাৎ হনুমান-বানর-ওরাংওটাং-বেবুন-গরিলা ইত্যাদি সকল প্রজাতিই নিরামিষাশী । শুধুমাত্র পৃথিবীর কোন কোন স্থানের দু-একটি প্রজাতির বানর ছোট ছোট খরগোশ বা হরিণ ইত্যাদির বাচ্চা ধরে ধরে খায় ৷ এগুলোও শুরু হয়েছিল কোনো না কোনো বিশেষ স্থানে – বিশেষ সময়ে অর্থাৎ এমন কোন সময়ে যখন সেই স্থানের নিরামিষ জাতীয় খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছিল। ওই প্রজাতির বানরদেরকে তার ফলে কিছুদিনের জন্য বাধ্য হয়ে আমিষ খাবার খেতে হয়েছিল ! পরবর্তীতে সেটাই অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে – তাই তারা সুযোগ পেলে এখনও ছোটখাটো পশু শিকার করে খায় ।
মানুষের ক্ষেত্রেও এইরকমটাই হয়েছে – নিরামিষ খাবারের অভাবে অথবা কোন কোন প্রোটিন-ভিটামিন-খনিজের প্রয়োজনে কোন সুপ্রাচীন কালে মানুষ আমিষ খাবার গ্রহণ করতে শুরু করেছিল ৷ সেই আদতটাই এখনও রয়ে গেছে।
কিন্তু অকারণে পশু মেরে খেতে হবে অথবা আনন্দ অনুষ্ঠান করার জন্য পাঁঠা বলি বা গরু জবাই করতে হবে – এটা কোন সুস্থ সামাজিক বিধান হতে পারে না । প্রাকৃতিক নিয়মে যে সব খাদ্য __যে যে প্রাণীর ‘বাঁচা ও বাড়া’-র জন্য প্রয়োজন – সেই সেই প্রাণী, সেই সকল খাবার অবশ্যই খাবে, কিন্তু অকারণে প্রাণী হত্যা করে খাবে কেন ?
এই ‘অকারণে হত্যা’ ব্যাপারটা মানুষের মনোজগতে থাকা ‘লালসা’-র জন্যই হয়। আমরা যাদেরকে হিংস্র বন্যপ্রাণী বলি, তাদের যদি পেট ভরা থাকে _তাহলে তারা কখনই কোন অন্য প্রানীদের হত্যা করে না। গুরুমহারাজ বলেছিলেন _প্রাকৃতিক ভাবেই বাঘ বা সিংহ অনেকটা বয়স না হোলে তারা জননক্ষম হয় না (‘সিংহ বারো বছরে একবার রমন করে’_বলে যে কথাটা চালু আছে, এটার সঠিক ব্যাখ্যা এটাই! ) এবং এদের সন্তান জন্মানোর জন্মহার ও অপেক্ষাকৃত কম। অপরপক্ষে তৃণভোজী প্রানীরা অর্থাৎ হরিন বা ওয়াইল্ড গরু ইত্যাদিরা অল্প বয়সেই বাচ্চা দিতে শুরু করে এবং এদের জন্মহারও অনেক বেশি। প্রকৃতিই এটা করে জীবজগতের ব্যালান্স রাখার জন্য _যেহেতু একটা বাঘ বা সিংহ সারাজীবনে অনেক সংখ্যায় তৃণভোজীদের হত্যা করে _তাই এই ব্যবস্থা!!
মানুষ কিন্তু এইসব প্রাকৃতিক নিয়মের তোয়াক্কাই করে না। তারা তাদের মনোজগতে থাকা হিংস্রতা, লালসা, লোভ, কামনা-বাসনা জাতীয় ইচ্ছাগুলিকে মেটানোর জন্যই অকারণে পশু হত্যা করে। সেই জন্যেই ভগবান বুদ্ধ বলেছিলেন পৃথিবী থেকে ‘কসাইখানা’ _বন্ধ হোলেই যুদ্ধও বন্ধ হয়ে যাবে অর্থাৎ মানুষের মন থেকে ক্রোধ-লোভ-লালসা-হিংসা-ক্রুঢ়তা-নীচতা ইত্যাদি যাবতীয় অবগুন যতদিন না নষ্ট হবে ততদিন যুদ্ধ বন্ধ হবে কি করে!!! ।। (ক্রমশঃ)