শ্রী শ্রী গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ কথামৃত নিয়েই এখন চলছিল আমাদের আলোচনা ! আত্মজ্ঞানী বা ব্রহ্মজ্ঞানী মহাপুরুষদের কথা-ই অমৃত কথা বা কথামৃত । কেন__ সেই কথা ‘অমৃত’- কেন ? কারণ – আমরা জানি ‘অমৃত’ মানুষকে মৃত্যু থেকে রেহাই দেয়, আর এই ধরনের পুরুষদের ‘কথা’ মানুষকে মৃত্যুরূপী অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানের আলোয় নিয়ে আসতে সাহায্য করে, মানুষকে জন্ম-মৃত্যুর আবর্ত থেকে মুক্তি দেয় ৷ এঁরাই তো অবতার পুরুষ, এঁরাই যুগপুরুষ’ বা যুগাবতার – এঁদের কাজই হলো সাধারণ মানুষকে এই সংসারের মোহাবর্ত থেকে মুক্তি বা মোক্ষের পথে নিয়ে যাওয়া, তাদের বিবেকের জাগরণ ঘটিয়ে তাদের আত্মিক উত্তরণ ঘটানো !
সেটা কখনো তিনি করেন রাম রূপে, কখনো ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রূপে, কখনো ভগবান বুদ্ধ রূপে, কখনও যীশু – কখনও হযরত – কখনও শ্রীচৈতন্য বা শ্রীরামকৃষ্ণ রূপে । আর এখন লীলা করে গেলেন স্বামী পরমানন্দ রূপে ৷ কেন বারবার আসেন তাঁরা, কেন – “সম্ভবামি যুগে যুগে”? এর ব্যাখ্যাও স্বামী পরমানন্দ আমাদেরকে বলে গেছেন । স্বামী বাউলানন্দ (গুরুমহারাজের শিক্ষাগুরু) -এর উল্লেখ করে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” আমার গুরুদেব স্বামী বাউলানন্দ এই ব্যাপারটা খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছিলেন । বিবর্তনের শেষ ধাপে এসে জীব মানবশরীর পায়, কিন্তু মানব যেহেতু মন প্রধান, তাই মনে জন্ম নেয় কামনা-বাসনা, লোভ, মোহ-আদি নানান বিষয়সমূহ ! আর এইগুলির ফাঁদে পড়ে আটকে যায় মানুষ ! সেই ফাঁদ থেকে এইসবের ফাঁস কাটিয়ে সে আর বেরোতে চাই-ও না তাই বেরোতে পারেও না ! এর ফলে কি হচ্ছে, না – বিবর্তনের ধারায় একটা জ্যামজট তৈরি হয়ে যাচ্ছে ! এককোষী উদ্ভিজ্জ দিয়ে যে প্রাণের বিকাশের ধারা প্রাকৃতিক নিয়মে শুরু হয়েছিল, তা থেকে উদ্ভিদজগৎ এবং প্রাণীর প্রথম রূপ স্বেদজ অর্থাৎ জীবাণু-কীটাণু-বীজাণু হয়ে অন্ডজ হয়ে জরায়ুজ প্রাণীতে রূপ পায় । এই জরায়ুজ বা মেরুদন্ডী প্রাণীরা বিবর্তনে Horizental থেকে উন্নত হয়ে Vertical -এ অর্থাৎ বানর ও নরে (Homo-sapiens) রূপ পরিগ্রহ করে ।
এতদূর পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল – কিন্তু নর বা মানুষে এসে কামনা-বাসনা, লোভ-মোহের আবর্তে আটকে যাওয়ায় বা জ্যাম-জট সৃষ্টি করায় মহাপ্রাকৃতিক নিয়ম লঙ্ঘিত হতে শুরু করে ৷
সেইজন্যেই এই ধারাকে সাবলীল রাখতে (অর্থাৎ যুগপুরুষের শরীর ধারণ করে বেশ কিছু মানুষকে মুক্তির ব্যবস্থা করা)– তাঁদের আসতেই হয় ! তাঁরা এই পৃথিবীতে শরীর ধারণ করে যেভাবে পারেন শত-সহস্র মায়া-মোহের গর্তে আটকে পড়া মানুষকে বের করে নিয়ে যান এবং বিবর্তনের Stagnancy থেকে আবার যেন নতুন flow এনে দেন !
এসব কথা থাক্ – শেষ আলোচনায় আমরা ছিলাম কপিলাবস্তুতে, সাধনায় সিদ্ধ হয়ে ‘বুদ্ধ’ হবার পর শুদ্ধোদন-পুত্র সিদ্ধার্থ, সেদিনই প্রথম তাঁর নিজের বাড়িতে গিয়েছিলেন । পিতার সঙ্গে সাক্ষাতের পর ভগবান বুদ্ধ গেলেন রাজসভা পার হয়ে রাজ-অন্তঃপুরের দিকে । সন্ন্যাসীবেশী পুত্রকে দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এলেন মাতা গৌতমী ! কত আদর করলেন – কত কাঁদলেন – কত অনুযোগ করলেন, কিন্তু ভগবান বুদ্ধ ধীর-স্থির, শান্তভাবে থেকে মায়ের প্রাথমিক সমস্ত ভাবোচ্ছ্বাস প্রশমিত করে দিলেন ! তারপর মা যখন কাঁদতে কাঁদতে বললেন যে তিনি এই বৃদ্ধ বয়সে সন্তান (বুদ্ধ)-কে ছেড়ে থাকতে পারবেন না – তখন ভগবান মা গৌতমীকে বললেন – “তাহলে প্রস্তুত হয়ে নাও ! রাজমাতার পোশাক খুলে ফেল এবং কাষায় পড়ে চলো আমার সাথে ।”
এই বলে তিনি তাঁর কাঁধের ঝোলা থেকে একটি চীরবস্ত্র বের করে মা গৌতমীকে দিয়ে দিলেন ।
পুত্রের কথা শুনে মা তো অবাক ! সে কি কথা – ঘরে রয়েছে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া বধূমাতা যশোধারা, রয়েছে শিশুপুত্র রাহুল ! তাদের কি হবে ? সজল নয়নে চোখ তুলে মা গৌতমী দেখল অদূরেই থামের আড়ালে শিশু রাহুলকে নিয়ে অধোমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যশোধারা । তিনি সব কথাই শুনছিলেন এবং নিজেকে আড়ালে রেখে ‘অর্হত্ত্ব’প্রাপ্ত সন্ন্যাসী-স্বামীকে অপলক নয়নে দেখছিলেন । এবার তিনি(যশোধারা) পুত্র রাহুলকে বললেন – “পুত্র ! ওই দেখো সন্ন্যাসী বেশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তোমার পিতা ! ওঁর কাছে যাও এবং ওনাকে গিয়ে বল ‘ পিতা আমাকে পিতৃধন দাও !’ ”
রাহুল জীবনে প্রথমবার পিতাকে দেখছে (কারণ সিদ্ধার্থ যখন গৃহত্যাগ করেছিলেন, তখন রাহুল নিতান্তই শিশু !) – তাও সন্ন্যাসীবেশী পিতা ! বহুদিন সে মায়ের কাছে আব্দার করতো – ” মা ! আমার সমবয়সী সবার পিতা রয়েছে, কিন্তু আমার পিতা কই ?” মা যশোধারা নীরবে চোখের জল ফেলতেন – কিছু বলতে পারতেন না । সেই মা (যশোধারা) আজ সুযোগ পেয়েছেন – তাই পুত্রকে কানে কানে বলে দিলেন – ” ওই দ্যাখো তোমার পিতা ! যাও ওনার কাছে গিয়ে ‘পিতৃধন’ চেয়ে নাও !” শিশু রাহুল অধীর আগ্রহে ছুটে গেল ভগবান পিতার কাছে, তাঁকে জড়িয়ে ধরে মায়ের শিখিয়ে দেওয়া কথা বারবার বলতে থাকল – ” পিতা ! আমাকে পিতৃধন দাও !”
চির-স্থির, চির-শান্ত, প্রশান্তির প্রতিমূর্তি ভগবান বুদ্ধ আপন ঔরসজাত সন্তানকে এতদিন পর কাছে পেয়েও আমাদের আর পাঁচজনের মতো তাকে সস্নেহে কোলে তুলে নিলেন না – বুকে জড়িয়েও ধরলেন না । তাহলে কি করলেন – তিনি ?? ঝোলা থেকে কিশোর বালকের পড়ার উপযুক্ত মাপের একটি কাষায় বস্ত্র বের করে ওই শিশুকে পড়ে ফেলতে বললেন বুদ্ধ । এই দৃশ্য দেখে আর নিজেকে রেখে-ঢেকে রাখতে পারলেন না যশোধারা ! বুকফাটা আর্তনাদ করতে করতে ছুটে এলেন বুদ্ধের কাছে – তাঁর পায়ের কাছে আছড়ে পড়ে বলে উঠলেন, “লোকে তো তোমাকে ‘ভগবান’ বলে – কিন্তু আমি তো দেখছি তোমার মত নিষ্ঠুর আর কেউ নাই ! না হলে জীবনে স্বামী-সুখ না পাওয়া এক অভাগা মায়ের কোল থেকে তার একমাত্র অবলম্বনকে কেড়ে নিতে চাইছো ?” এইসব বলে ভগবান বুদ্ধকে তীব্র ভৎর্সনা করতে লাগলেন যশোধারা !
বুদ্ধ শান্ত-স্থির-অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যশোধারার সমস্ত ভৎর্সনা, সমস্ত অভিযোগ শুনতে লাগলেন । যশোধারার মনের কোণে জমে থাকা সব গ্লানি যখন বের হয়ে গেল, যখন তার অন্তঃকরণ Vacant হয়ে গেল – তখন ভগবান ঝোলা থেকে আর একটি কাষায় বের করে গোপা(যশোধারা)-র হাতে দিয়ে মা গৌতমীকে উদ্দেশ্য করে বললেন – ” যাও মা ! তুমি, গোপা এবং রাহুল – তোমরা তিনজনে কাষায় পরিধান করে এসো – আমাদের এবার চলে যেতে হবে ।”
এই সবকিছুই চোখের সামনে ঘটতে দেখে পিতা শুদ্ধোদন কাঁদতে লাগলেন,বললেন _”পুত্র ! আমাকেও সঙ্গে নিয়ে চলো । সবাইকে যখন তুমি সঙ্গে করে নিয়েই যাচ্ছো, তাহলে আর কার জন্য-ই বা এই সিংহাসন, এই সংসার, এই রাজ্যপাট ?” পুত্র বুদ্ধদেব পিতাকে সংযত করলেন, প্রজাদের মঙ্গলের জন্য, তাদের পিতা হয়ে আরো কিছুকাল রাজত্ব করার কথা বলে, সকলকে নিয়ে নেমে এলেন রাস্তায় ।। [ক্রমশঃ]
সেটা কখনো তিনি করেন রাম রূপে, কখনো ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রূপে, কখনো ভগবান বুদ্ধ রূপে, কখনও যীশু – কখনও হযরত – কখনও শ্রীচৈতন্য বা শ্রীরামকৃষ্ণ রূপে । আর এখন লীলা করে গেলেন স্বামী পরমানন্দ রূপে ৷ কেন বারবার আসেন তাঁরা, কেন – “সম্ভবামি যুগে যুগে”? এর ব্যাখ্যাও স্বামী পরমানন্দ আমাদেরকে বলে গেছেন । স্বামী বাউলানন্দ (গুরুমহারাজের শিক্ষাগুরু) -এর উল্লেখ করে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ” আমার গুরুদেব স্বামী বাউলানন্দ এই ব্যাপারটা খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছিলেন । বিবর্তনের শেষ ধাপে এসে জীব মানবশরীর পায়, কিন্তু মানব যেহেতু মন প্রধান, তাই মনে জন্ম নেয় কামনা-বাসনা, লোভ, মোহ-আদি নানান বিষয়সমূহ ! আর এইগুলির ফাঁদে পড়ে আটকে যায় মানুষ ! সেই ফাঁদ থেকে এইসবের ফাঁস কাটিয়ে সে আর বেরোতে চাই-ও না তাই বেরোতে পারেও না ! এর ফলে কি হচ্ছে, না – বিবর্তনের ধারায় একটা জ্যামজট তৈরি হয়ে যাচ্ছে ! এককোষী উদ্ভিজ্জ দিয়ে যে প্রাণের বিকাশের ধারা প্রাকৃতিক নিয়মে শুরু হয়েছিল, তা থেকে উদ্ভিদজগৎ এবং প্রাণীর প্রথম রূপ স্বেদজ অর্থাৎ জীবাণু-কীটাণু-বীজাণু হয়ে অন্ডজ হয়ে জরায়ুজ প্রাণীতে রূপ পায় । এই জরায়ুজ বা মেরুদন্ডী প্রাণীরা বিবর্তনে Horizental থেকে উন্নত হয়ে Vertical -এ অর্থাৎ বানর ও নরে (Homo-sapiens) রূপ পরিগ্রহ করে ।
এতদূর পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল – কিন্তু নর বা মানুষে এসে কামনা-বাসনা, লোভ-মোহের আবর্তে আটকে যাওয়ায় বা জ্যাম-জট সৃষ্টি করায় মহাপ্রাকৃতিক নিয়ম লঙ্ঘিত হতে শুরু করে ৷
সেইজন্যেই এই ধারাকে সাবলীল রাখতে (অর্থাৎ যুগপুরুষের শরীর ধারণ করে বেশ কিছু মানুষকে মুক্তির ব্যবস্থা করা)– তাঁদের আসতেই হয় ! তাঁরা এই পৃথিবীতে শরীর ধারণ করে যেভাবে পারেন শত-সহস্র মায়া-মোহের গর্তে আটকে পড়া মানুষকে বের করে নিয়ে যান এবং বিবর্তনের Stagnancy থেকে আবার যেন নতুন flow এনে দেন !
এসব কথা থাক্ – শেষ আলোচনায় আমরা ছিলাম কপিলাবস্তুতে, সাধনায় সিদ্ধ হয়ে ‘বুদ্ধ’ হবার পর শুদ্ধোদন-পুত্র সিদ্ধার্থ, সেদিনই প্রথম তাঁর নিজের বাড়িতে গিয়েছিলেন । পিতার সঙ্গে সাক্ষাতের পর ভগবান বুদ্ধ গেলেন রাজসভা পার হয়ে রাজ-অন্তঃপুরের দিকে । সন্ন্যাসীবেশী পুত্রকে দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এলেন মাতা গৌতমী ! কত আদর করলেন – কত কাঁদলেন – কত অনুযোগ করলেন, কিন্তু ভগবান বুদ্ধ ধীর-স্থির, শান্তভাবে থেকে মায়ের প্রাথমিক সমস্ত ভাবোচ্ছ্বাস প্রশমিত করে দিলেন ! তারপর মা যখন কাঁদতে কাঁদতে বললেন যে তিনি এই বৃদ্ধ বয়সে সন্তান (বুদ্ধ)-কে ছেড়ে থাকতে পারবেন না – তখন ভগবান মা গৌতমীকে বললেন – “তাহলে প্রস্তুত হয়ে নাও ! রাজমাতার পোশাক খুলে ফেল এবং কাষায় পড়ে চলো আমার সাথে ।”
এই বলে তিনি তাঁর কাঁধের ঝোলা থেকে একটি চীরবস্ত্র বের করে মা গৌতমীকে দিয়ে দিলেন ।
পুত্রের কথা শুনে মা তো অবাক ! সে কি কথা – ঘরে রয়েছে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া বধূমাতা যশোধারা, রয়েছে শিশুপুত্র রাহুল ! তাদের কি হবে ? সজল নয়নে চোখ তুলে মা গৌতমী দেখল অদূরেই থামের আড়ালে শিশু রাহুলকে নিয়ে অধোমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যশোধারা । তিনি সব কথাই শুনছিলেন এবং নিজেকে আড়ালে রেখে ‘অর্হত্ত্ব’প্রাপ্ত সন্ন্যাসী-স্বামীকে অপলক নয়নে দেখছিলেন । এবার তিনি(যশোধারা) পুত্র রাহুলকে বললেন – “পুত্র ! ওই দেখো সন্ন্যাসী বেশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তোমার পিতা ! ওঁর কাছে যাও এবং ওনাকে গিয়ে বল ‘ পিতা আমাকে পিতৃধন দাও !’ ”
রাহুল জীবনে প্রথমবার পিতাকে দেখছে (কারণ সিদ্ধার্থ যখন গৃহত্যাগ করেছিলেন, তখন রাহুল নিতান্তই শিশু !) – তাও সন্ন্যাসীবেশী পিতা ! বহুদিন সে মায়ের কাছে আব্দার করতো – ” মা ! আমার সমবয়সী সবার পিতা রয়েছে, কিন্তু আমার পিতা কই ?” মা যশোধারা নীরবে চোখের জল ফেলতেন – কিছু বলতে পারতেন না । সেই মা (যশোধারা) আজ সুযোগ পেয়েছেন – তাই পুত্রকে কানে কানে বলে দিলেন – ” ওই দ্যাখো তোমার পিতা ! যাও ওনার কাছে গিয়ে ‘পিতৃধন’ চেয়ে নাও !” শিশু রাহুল অধীর আগ্রহে ছুটে গেল ভগবান পিতার কাছে, তাঁকে জড়িয়ে ধরে মায়ের শিখিয়ে দেওয়া কথা বারবার বলতে থাকল – ” পিতা ! আমাকে পিতৃধন দাও !”
চির-স্থির, চির-শান্ত, প্রশান্তির প্রতিমূর্তি ভগবান বুদ্ধ আপন ঔরসজাত সন্তানকে এতদিন পর কাছে পেয়েও আমাদের আর পাঁচজনের মতো তাকে সস্নেহে কোলে তুলে নিলেন না – বুকে জড়িয়েও ধরলেন না । তাহলে কি করলেন – তিনি ?? ঝোলা থেকে কিশোর বালকের পড়ার উপযুক্ত মাপের একটি কাষায় বস্ত্র বের করে ওই শিশুকে পড়ে ফেলতে বললেন বুদ্ধ । এই দৃশ্য দেখে আর নিজেকে রেখে-ঢেকে রাখতে পারলেন না যশোধারা ! বুকফাটা আর্তনাদ করতে করতে ছুটে এলেন বুদ্ধের কাছে – তাঁর পায়ের কাছে আছড়ে পড়ে বলে উঠলেন, “লোকে তো তোমাকে ‘ভগবান’ বলে – কিন্তু আমি তো দেখছি তোমার মত নিষ্ঠুর আর কেউ নাই ! না হলে জীবনে স্বামী-সুখ না পাওয়া এক অভাগা মায়ের কোল থেকে তার একমাত্র অবলম্বনকে কেড়ে নিতে চাইছো ?” এইসব বলে ভগবান বুদ্ধকে তীব্র ভৎর্সনা করতে লাগলেন যশোধারা !
বুদ্ধ শান্ত-স্থির-অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যশোধারার সমস্ত ভৎর্সনা, সমস্ত অভিযোগ শুনতে লাগলেন । যশোধারার মনের কোণে জমে থাকা সব গ্লানি যখন বের হয়ে গেল, যখন তার অন্তঃকরণ Vacant হয়ে গেল – তখন ভগবান ঝোলা থেকে আর একটি কাষায় বের করে গোপা(যশোধারা)-র হাতে দিয়ে মা গৌতমীকে উদ্দেশ্য করে বললেন – ” যাও মা ! তুমি, গোপা এবং রাহুল – তোমরা তিনজনে কাষায় পরিধান করে এসো – আমাদের এবার চলে যেতে হবে ।”
এই সবকিছুই চোখের সামনে ঘটতে দেখে পিতা শুদ্ধোদন কাঁদতে লাগলেন,বললেন _”পুত্র ! আমাকেও সঙ্গে নিয়ে চলো । সবাইকে যখন তুমি সঙ্গে করে নিয়েই যাচ্ছো, তাহলে আর কার জন্য-ই বা এই সিংহাসন, এই সংসার, এই রাজ্যপাট ?” পুত্র বুদ্ধদেব পিতাকে সংযত করলেন, প্রজাদের মঙ্গলের জন্য, তাদের পিতা হয়ে আরো কিছুকাল রাজত্ব করার কথা বলে, সকলকে নিয়ে নেমে এলেন রাস্তায় ।। [ক্রমশঃ]