গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের বলা কথা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছিল ! আগের দিনই আমরা বলেছি যে, গুরুমহারাজ যখন যে কোন মহাপুরুষ সম্পর্কে কথা বলতেন – তখন ওনার মধ্যে সেই মহাপুরুষের ভাব প্রকাশ পেতো ৷ এছাড়া তাঁর শরীরের মধ্যেও সেই মহাপুরুষের প্রভাব প্রকটিত হতো (বিশেষ বিশেষ তিথি-নক্ষত্রেও এই প্রভাব পরিলক্ষিত হতো)! এই যে কথাটা বললাম – এর স্বপক্ষে আপনারা প্রমাণ পাবেন – যদি আপনারা গুরু মহারাজের বিভিন্ন ফটোগ্রাফগুলি ভালো করে নিরীক্ষণ করেন ! সেখানে দেখবেন যে প্রতিটি ছবি – অন্যটির থেকে আলাদা আলাদা ! তাছাড়া আপনারা এটাও লক্ষ্য করবেন যে, স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী ওনার ফটোগ্রাফ বদলে যেতো ! ওনার বিভিন্ন ফটো দেখে আপনাদের বিভিন্ন মহাপুরুষের সঙ্গে সাদৃশ্য যুক্ত বলে মনে হবে ! গুরুমহারাজ নিজেই একদিন একথা বলেছিলেন – ” মহাপুরুষদের (ঈশ্বরের অবতারদের) এইটি একটি অন্যতম লক্ষণ যে তাঁর কোন ফটোই অন্যটির সাথে মেলে না ।” জয়দেব মুখোপাধ্যায়ের “ক্ষ্যাপা খুঁজে ফেরে” -প্রথম খন্ড বইটিতে লেখক একজন মহাত্মার কাছ থেকে এই ধরনের কথা শুনেছিলেন এবং সেই কথাগুলি ওই বইটিতে লিপিবদ্ধ করেছেন ! একদিন বনগ্রামে গুরু মহারাজ সিটিং-এ বসে রয়েছেন – এমন সময় আশ্রমেরই কোন ভক্ত ওই বইটি নিয়ে এসে (আশ্রমের লাইব্রেরীতেই বইটি রয়েছে) গুরু মহারাজকে বইয়ের ওই নির্দিষ্ট অংশটি দেখালো ! গুরু মহারাজ বইটি নিজের কাছে সেদিন রেখে দিয়েছিলেন ৷
পরদিন সকালের সিটিংয়ে গুরুমহারাজ লেখকের ভূয়সী প্রশংসা করলেন এবং বললেন লেখকের প্রতি বিভিন্ন মহাত্মা কৃপা করে কিছু কিছু কথা বলেছেন বলেই সে সেগুলি লিপিবদ্ধ করেছে – অন্যথায় এই সব রহস্য সাধারণের জানার কথা নয় (‘তপভূমি নর্মদা’- বইটির লেখক শৈলজানন্দ ঘোষাল শাস্ত্রী সম্বন্ধেও গুরুমহারাজ এই ধরনের কিছু কথা বলেছিলেন – পরে কোন সময় আলোচনা করা যাবে।) যেমন – ঐ বইটিতে (ক্ষ্যাপা খুঁজে ফেরে) রয়েছে – ‘ কৈলাশে শিবের (সদাশিব বা ভগবান শংকর) ব্যবহৃত জিনিসসমূহ যেমন ত্রিশূল, খড়ম, কমন্ডলু – ইত্যাদি আরো বেশ কিছু জিনিস ওখানে একটি গুহায় সংরক্ষিত রয়েছে ৷ গুরুমহারাজ ঐ কথাগুলির সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন উনিও ওই গুহায় গিয়ে ওই সব সামগ্রী স্বচক্ষে দেখে এসেছেন । উনি আরও বলেছিলেন যে – স্থানটি এতটাই দুর্গম যে খুব উচ্চকোটির সাধক ছাড়া কেউ সেখানে পৌঁছাতেই পারে না । সুতরাং ওই লেখক ঐ স্থানে যেতে পারেনি কোন মহাত্মার মুখে এই কথা শুনেছিল ৷ হিমালয়ে ঘোরার সময় কোন মহাত্মার সাক্ষাৎ পাওয়া বা তাঁর সঙ্গ করাটাও কম সৌভাগ্যের ব্যাপার নয় ! বইটিতে রয়েছে লেখকের সাথে আমাদের পরম গুরুদেব রামানন্দ অবধূতের-ও দেখা হয়েছিল ৷ তবে ঐ সময় ছোট রামানন্দ এবং বড় রামানন্দ নামে দুজন রামানন্দ ছিলেন । পরম গুরুদেবের শরীর তো আমরা ফটোয় দেখেছি – কিন্তু অন্য স্বামী রামানন্দ ছিলেন খুবই ভারী চেহারার সন্ন্যাসী ! ঐ বইয়ের লেখক অবশ্য এই দুইজনের শরীর বর্ণনায় একটু গোলমাল করে ফেলেছিল ।
যাইহোক, আমরা প্রসঙ্গান্তরে চলে আসছিলাম, তাই আবার ফিরে যাই আমাদের পূর্বের আলোচনায় ৷ আমরা ছিলাম ভগবান বুদ্ধ বিষয়ক আলোচনায় । এবার আমরা বলছিলাম তৎকালীন যুগের একজন নরপিশাচ অঙ্গুলিমালের কথা । যে অঙ্গুলিমালের ভয়ে পাশাপাশি দুটি রাজ্যের রাজাদের সৈন্যরা সিঁটিয়ে থাকতো – সেই অঙ্গুলিমালের সম্বন্ধে সব কথা শোনার পরও ভগবান বুদ্ধ শান্ত এবং দৃঢ় পদক্ষেপে সেই জঙ্গলের দিকেই পা বাড়ালেন – যে জঙ্গলে ওই নরপিশাচ অঙ্গুলিমালের আস্তানা ৷ তাছাড়া তখন সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে আর জঙ্গলে এমনিতেই সন্ধ্যা তাড়াতাড়ি নামে – তাই ভগবানের চলার পথ দ্রুত অন্ধকারে ঢেকে গেল । কিন্তু ভগবানের আবার দিন বা রাত্রি ! ওসব তো আমাদের জন্য – তাঁর কাছে সবকিছুই পরিষ্কার, সবই আলো – কালোকিছুই নাই !
ওসব কথা থাক্ – আমরা এখন ফিরে যাই অঙ্গুলিমালের সাথে ভগবান বুদ্ধের সাক্ষাৎকারের ঘটনায় ! সেখানে সেই গভীর জঙ্গলের মধ্যে সাক্ষী তো আর কেউ ছিল না – তবু ওই ঘটনার বর্ণনা নিশ্চয়ই কোন না কোন গ্রন্থে রয়েছে ৷ কিন্তু আমরা সেসব ঘটনার কথা জানি না – জানতে চাইও না ! স্বয়ং গুরুমহারাজ, বুদ্ধরূপী পরমানন্দ স্বামী আমাদের সেদিনকার সাক্ষাৎকার সম্বন্ধে যা বলেছিলেন তাই বলছি ! ভগবান বুদ্ধ সেদিন গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করতেই – রে রে করে দৌড়ে এসেছিল অঙ্গুলিমাল ! ভগবান বুদ্ধকে জঙ্গলের মধ্যে একাকী দেখে – সে কি অট্টহাসি ওই পিশাচের ! তার বহুদিনের মনোবাঞ্ছা পূরণ হতে চলেছে – তার সাধনার ফল ফলতে চলেছে – এক হাজার নরহত্যা হতে মাত্র একটাই ‘নর’ বা মানুষ হত্যার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তার ভয়ে বেশ কিছুদিন হলো – ওই জঙ্গলে আর কোন মানুষ যাতায়াত-ই করছিল না, তাই তার আর ওই শেষের একটি মানুষকে হত্যা করে তার পিশাচ-সাধন সম্পন্ন করতে পারছিল না ! আর আজকে – তার সেই ঈপ্সিত বলি নিজেই হাঁটতে হাঁটতে তার সামনে এসে হাজির ! এইটা দেখেই সেই পিশাচের এমন অট্টহাসি – যা শুনে গাছের ঘুমন্ত পক্ষীশাবকেরা চমকে উঠেছিল ৷
চমকালেন না শুধু চির-অভয় ভগবান বুদ্ধ ! সেই ভয়ঙ্কর নরপিশাচের উদ্যত খড়গ-এর সামনে দাঁড়িয়েও তিনি শান্ত-স্থির-মুখে স্মিত হাসি, শুধু একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছেন অঙ্গুলিমালের দিকে ! উৎকট সাধনাকারী, ভয়ংকর সেই নরপিশাচ ঐ শান্ত কিন্তু গভীর অন্তর্ভেদী দৃষ্টি – সে সহ্য করতে পারছিল না ৷ চিৎকার করে উঠল সে – বলল, ” তুমি তোমার চোখ সরিয়ে নাও – নাহলে আমি অন্ধ হয়ে যাবো ! ভগবান বুদ্ধ তবু চোখ সরালেন না – চেয়ে রইলেন ! ক্রোধে উন্মত্ত অঙ্গুলিমাল উদ্যোগ খড়গ নিয়ে ছুটে এল বুদ্ধকে আঘাত করবে বলে, কিন্তু কখন এবং কিভাবে যে সে খড়্গ ছুড়ে ফেলে দিয়ে বুদ্ধের চরণতলে পতিত হয়ে কাঁদতে লেগেছে – তা সে নিজেই জানে না ! তার সম্বিত ফিরল যখন ভগবান তাকে হাত ধরে তোলার চেষ্টা করছেন – তখন ! বুদ্ধের স্পর্শে তার চোখের সামনে পূর্ব পূর্ব জন্মের দৃশ্যাবলী সব প্রকট হয়ে গেল – সে ভুলে গেল এই জন্মের তার পিশাচ সাধনার কথা ! অঙ্গুলিমাল বুদ্ধকে চিনতে পারল – তার ইহকাল পরকালের পরিত্রাতা রূপে । তাই সে নতজানু অবস্থাতেই বুদ্ধের কাছে দীক্ষা প্রার্থনা করল ! ভগবান তাকে জঙ্গলে অবস্থিত পাশের সরোবরে স্নান করে আসতে বললেন – তারপর তারই ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে ওই পিশাচের বড় বড় জটার মতো নোংরামাখা চুল কেটে তাকে মুণ্ডিত-মস্তক করে দিলেন ৷ এরপর যথাবিহিত নিয়মে – সেই নির্জন অরণ্যে ওই পিশাচের সন্ন্যাস দীক্ষার সমস্ত ক্রিয়াদি সম্পন্ন করলেন ভগবান বুদ্ধ ! দাবানলের আগুন দিয়ে জ্বলেছিল হোমানল । সমস্ত ক্রিয়া সম্পন্ন হতে ভোর হয়ে গেল ।
বুদ্ধের সহচররা এবং রাজ্যের জনগণসহ রাজার সৈন্যরা যখন জঙ্গলে ঢোকার জন্য Ready হচ্ছে – ঠিক তখনই দূর থেকে ভেসে আসা ত্রিশরণ মন্ত্রের অস্ফুট উচ্চারণ শুনতে পেয়ে সবাই সেইদিকেই চেয়ে দেখে – আগে আগে শান্তভাবে হেঁটে আসছেন ভগবান বুদ্ধ এবং পিছনে পিছনে ত্রিশরণ মন্ত্রোচ্চারণে বেরিয়ে আসছে অঙ্গুলীমাল !! … [ক্রমশঃ]
পরদিন সকালের সিটিংয়ে গুরুমহারাজ লেখকের ভূয়সী প্রশংসা করলেন এবং বললেন লেখকের প্রতি বিভিন্ন মহাত্মা কৃপা করে কিছু কিছু কথা বলেছেন বলেই সে সেগুলি লিপিবদ্ধ করেছে – অন্যথায় এই সব রহস্য সাধারণের জানার কথা নয় (‘তপভূমি নর্মদা’- বইটির লেখক শৈলজানন্দ ঘোষাল শাস্ত্রী সম্বন্ধেও গুরুমহারাজ এই ধরনের কিছু কথা বলেছিলেন – পরে কোন সময় আলোচনা করা যাবে।) যেমন – ঐ বইটিতে (ক্ষ্যাপা খুঁজে ফেরে) রয়েছে – ‘ কৈলাশে শিবের (সদাশিব বা ভগবান শংকর) ব্যবহৃত জিনিসসমূহ যেমন ত্রিশূল, খড়ম, কমন্ডলু – ইত্যাদি আরো বেশ কিছু জিনিস ওখানে একটি গুহায় সংরক্ষিত রয়েছে ৷ গুরুমহারাজ ঐ কথাগুলির সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন উনিও ওই গুহায় গিয়ে ওই সব সামগ্রী স্বচক্ষে দেখে এসেছেন । উনি আরও বলেছিলেন যে – স্থানটি এতটাই দুর্গম যে খুব উচ্চকোটির সাধক ছাড়া কেউ সেখানে পৌঁছাতেই পারে না । সুতরাং ওই লেখক ঐ স্থানে যেতে পারেনি কোন মহাত্মার মুখে এই কথা শুনেছিল ৷ হিমালয়ে ঘোরার সময় কোন মহাত্মার সাক্ষাৎ পাওয়া বা তাঁর সঙ্গ করাটাও কম সৌভাগ্যের ব্যাপার নয় ! বইটিতে রয়েছে লেখকের সাথে আমাদের পরম গুরুদেব রামানন্দ অবধূতের-ও দেখা হয়েছিল ৷ তবে ঐ সময় ছোট রামানন্দ এবং বড় রামানন্দ নামে দুজন রামানন্দ ছিলেন । পরম গুরুদেবের শরীর তো আমরা ফটোয় দেখেছি – কিন্তু অন্য স্বামী রামানন্দ ছিলেন খুবই ভারী চেহারার সন্ন্যাসী ! ঐ বইয়ের লেখক অবশ্য এই দুইজনের শরীর বর্ণনায় একটু গোলমাল করে ফেলেছিল ।
যাইহোক, আমরা প্রসঙ্গান্তরে চলে আসছিলাম, তাই আবার ফিরে যাই আমাদের পূর্বের আলোচনায় ৷ আমরা ছিলাম ভগবান বুদ্ধ বিষয়ক আলোচনায় । এবার আমরা বলছিলাম তৎকালীন যুগের একজন নরপিশাচ অঙ্গুলিমালের কথা । যে অঙ্গুলিমালের ভয়ে পাশাপাশি দুটি রাজ্যের রাজাদের সৈন্যরা সিঁটিয়ে থাকতো – সেই অঙ্গুলিমালের সম্বন্ধে সব কথা শোনার পরও ভগবান বুদ্ধ শান্ত এবং দৃঢ় পদক্ষেপে সেই জঙ্গলের দিকেই পা বাড়ালেন – যে জঙ্গলে ওই নরপিশাচ অঙ্গুলিমালের আস্তানা ৷ তাছাড়া তখন সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে আর জঙ্গলে এমনিতেই সন্ধ্যা তাড়াতাড়ি নামে – তাই ভগবানের চলার পথ দ্রুত অন্ধকারে ঢেকে গেল । কিন্তু ভগবানের আবার দিন বা রাত্রি ! ওসব তো আমাদের জন্য – তাঁর কাছে সবকিছুই পরিষ্কার, সবই আলো – কালোকিছুই নাই !
ওসব কথা থাক্ – আমরা এখন ফিরে যাই অঙ্গুলিমালের সাথে ভগবান বুদ্ধের সাক্ষাৎকারের ঘটনায় ! সেখানে সেই গভীর জঙ্গলের মধ্যে সাক্ষী তো আর কেউ ছিল না – তবু ওই ঘটনার বর্ণনা নিশ্চয়ই কোন না কোন গ্রন্থে রয়েছে ৷ কিন্তু আমরা সেসব ঘটনার কথা জানি না – জানতে চাইও না ! স্বয়ং গুরুমহারাজ, বুদ্ধরূপী পরমানন্দ স্বামী আমাদের সেদিনকার সাক্ষাৎকার সম্বন্ধে যা বলেছিলেন তাই বলছি ! ভগবান বুদ্ধ সেদিন গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করতেই – রে রে করে দৌড়ে এসেছিল অঙ্গুলিমাল ! ভগবান বুদ্ধকে জঙ্গলের মধ্যে একাকী দেখে – সে কি অট্টহাসি ওই পিশাচের ! তার বহুদিনের মনোবাঞ্ছা পূরণ হতে চলেছে – তার সাধনার ফল ফলতে চলেছে – এক হাজার নরহত্যা হতে মাত্র একটাই ‘নর’ বা মানুষ হত্যার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তার ভয়ে বেশ কিছুদিন হলো – ওই জঙ্গলে আর কোন মানুষ যাতায়াত-ই করছিল না, তাই তার আর ওই শেষের একটি মানুষকে হত্যা করে তার পিশাচ-সাধন সম্পন্ন করতে পারছিল না ! আর আজকে – তার সেই ঈপ্সিত বলি নিজেই হাঁটতে হাঁটতে তার সামনে এসে হাজির ! এইটা দেখেই সেই পিশাচের এমন অট্টহাসি – যা শুনে গাছের ঘুমন্ত পক্ষীশাবকেরা চমকে উঠেছিল ৷
চমকালেন না শুধু চির-অভয় ভগবান বুদ্ধ ! সেই ভয়ঙ্কর নরপিশাচের উদ্যত খড়গ-এর সামনে দাঁড়িয়েও তিনি শান্ত-স্থির-মুখে স্মিত হাসি, শুধু একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছেন অঙ্গুলিমালের দিকে ! উৎকট সাধনাকারী, ভয়ংকর সেই নরপিশাচ ঐ শান্ত কিন্তু গভীর অন্তর্ভেদী দৃষ্টি – সে সহ্য করতে পারছিল না ৷ চিৎকার করে উঠল সে – বলল, ” তুমি তোমার চোখ সরিয়ে নাও – নাহলে আমি অন্ধ হয়ে যাবো ! ভগবান বুদ্ধ তবু চোখ সরালেন না – চেয়ে রইলেন ! ক্রোধে উন্মত্ত অঙ্গুলিমাল উদ্যোগ খড়গ নিয়ে ছুটে এল বুদ্ধকে আঘাত করবে বলে, কিন্তু কখন এবং কিভাবে যে সে খড়্গ ছুড়ে ফেলে দিয়ে বুদ্ধের চরণতলে পতিত হয়ে কাঁদতে লেগেছে – তা সে নিজেই জানে না ! তার সম্বিত ফিরল যখন ভগবান তাকে হাত ধরে তোলার চেষ্টা করছেন – তখন ! বুদ্ধের স্পর্শে তার চোখের সামনে পূর্ব পূর্ব জন্মের দৃশ্যাবলী সব প্রকট হয়ে গেল – সে ভুলে গেল এই জন্মের তার পিশাচ সাধনার কথা ! অঙ্গুলিমাল বুদ্ধকে চিনতে পারল – তার ইহকাল পরকালের পরিত্রাতা রূপে । তাই সে নতজানু অবস্থাতেই বুদ্ধের কাছে দীক্ষা প্রার্থনা করল ! ভগবান তাকে জঙ্গলে অবস্থিত পাশের সরোবরে স্নান করে আসতে বললেন – তারপর তারই ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে ওই পিশাচের বড় বড় জটার মতো নোংরামাখা চুল কেটে তাকে মুণ্ডিত-মস্তক করে দিলেন ৷ এরপর যথাবিহিত নিয়মে – সেই নির্জন অরণ্যে ওই পিশাচের সন্ন্যাস দীক্ষার সমস্ত ক্রিয়াদি সম্পন্ন করলেন ভগবান বুদ্ধ ! দাবানলের আগুন দিয়ে জ্বলেছিল হোমানল । সমস্ত ক্রিয়া সম্পন্ন হতে ভোর হয়ে গেল ।
বুদ্ধের সহচররা এবং রাজ্যের জনগণসহ রাজার সৈন্যরা যখন জঙ্গলে ঢোকার জন্য Ready হচ্ছে – ঠিক তখনই দূর থেকে ভেসে আসা ত্রিশরণ মন্ত্রের অস্ফুট উচ্চারণ শুনতে পেয়ে সবাই সেইদিকেই চেয়ে দেখে – আগে আগে শান্তভাবে হেঁটে আসছেন ভগবান বুদ্ধ এবং পিছনে পিছনে ত্রিশরণ মন্ত্রোচ্চারণে বেরিয়ে আসছে অঙ্গুলীমাল !! … [ক্রমশঃ]