গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ ভগবান বুদ্ধ বিষয়ক যেসব কথা বিভিন্ন সিটিংয়ে আলোচনা করতেন – সেগুলির কিছু অংশ এখানে পরিবেশন করা হচ্ছিল । গুরু মহারাজের সাথে একজন উচ্চপদ-প্রাপ্ত বৌদ্ধ শ্রমনের –বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘ কথাবার্ত্তা হয়েছিল ৷ সেই শ্রমন খুব দুঃখ করে বলেছিলেন যে, বর্তমানে বিভিন্ন সংঘারামগুলিকে চালাবার মতো উপযুক্ত আর লোক পাওয়া যাচ্ছে না ! ভারত-বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি দেশগুলির Young generation – আর বৌদ্ধসংঘগুলিতে যোগদান করে ত্যাগী সন্ন্যাসী হতে চাইছে না ! ফলে এখন অন্যান্য দেশের বা ভিন্ন ভিন্ন স্থানের ‘লোক’ দিয়ে আশ্রমগুলিকে কোনোক্রমে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে ! অনেক স্থানের অনেক বৌদ্ধসংঘ বন্ধ হয়ে গিয়েছে !
গুরু মহারাজ এই আলোচনার রেশ ধরে বলেছিলেন – “তবু দ্যাখো, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগেকার – ভগবান বুদ্ধের শিক্ষার ধারা সমাজে চলে আসছে । এই মতাদর্শে বিশ্বাসী না হয়েও বহু মানুষ বুদ্ধের শিক্ষাকে জীবনে গ্রহণ করে ধন্য হয়েছে ! সনাতনধর্মীয়-রা বুদ্ধকে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে নিয়েছে এবং দশাবতারের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে | গোরক্ষনাথ পরম্পরা ছাড়া বৌদ্ধ পরম্পরাতেই অধিক সংখ্যায় সাধক নির্বিকল্প (বোধিপ্রাপ্ত, বুদ্ধত্ব বা অর্হত্ব) স্থিতি লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল ৷ সুতরাং আজ এই আড়াই হাজার বছর পরে যদি এই ধর্মমতটিতে ত্যাগী সন্ন্যাসীর সংখ্যা কমে যায় – তাতে বিচিত্রতা কিছুই নাই । কারণ এই সুদীর্ঘ সময়ের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে শত শত মহামানবগণ শরীর নিয়েছেন – তাঁরাও যুগোপযোগী করে তাঁদের নিজ নিজ ও মতাদর্শকে প্রচার করেছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন ৷ এইভাবে পৃথিবীতে ‘নানা মুনি – নানা মতে’-র সৃষ্টি হয়েছে ৷
এশিয়ার অন্তর্গত প্রদেশে আজ থেকে 2000 বছর আগে ভগবান যীশু শরীর নিয়েছিলেন, তাঁর প্রচারিত ধর্মমত প্রায় সমগ্র ইউরোপকে ছেয়ে ফেলেছিল এবং আমেরিকা ও আফ্রিকা মহাদেশকেও প্লাবিত করেছিল । এরপর আর এক মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ, তিনিও এশিয়া মহাদেশের-ই লোক – তাঁর প্রচারিত ধর্মমত যখন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরাও গ্রহন করতে শুরু করল, তখন লাগলো যুদ্ধ যা ইতিহাসে “ক্রুশেড” নামে পরিচিত ! কয়েকশো বছর ধরে চলল সেই যুদ্ধ (প্রকৃতপক্ষে আজও চলছে) ,– যার ফল হিসাবে বহু দেশ ইসলাম রাষ্ট্র হয়ে গেল এবং বহু দেশ হল খ্রিষ্টান রাষ্ট্র !!
মাত্র কিছুদিন আগে ইউরোপের এক মনিষী কার্লমার্কস ,তার মতামত সম্বলিত কিছু( দর্শন)শাস্ত্র লিখল ৷ সেই মতবাদের প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বা রূপ দিতে গিয়ে রাশিয়া-চীনসহ পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু দেশ আবার খ্রিষ্টানদের বহু গির্জা এবং ইসলামীয়দের শত শত মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে শুয়োরের খামার বানিয়ে দিল । আলবিনিয়া সম্পূর্ণরূপে একটি মুসলিম রাষ্ট্র ছিল – সেই দেশটিরও সমস্ত মসজিদ-মাদ্রাসা-কবরস্থান গুলি ভেঙে দিয়ে সেই জায়গাগুলিতে হয় চাষবাস করা হল অথবা গরু বা শুয়োরের খামার বানানো হল ৷ চীনে তো সমস্ত কবরস্থান নষ্ট করে ফেলে সেখানে চাষের জমি বানানো হয়েছে এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সহ সমস্ত শ্রেণীর মানুষের মৃতদেহ ইলেকট্রিক চুল্লিতে পুড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷
এভাবে একটা একটা সমাজ আন্দোলন, ধর্ম আন্দোলনের ঢেউ পৃথিবীর বুকে আছড়ে পরে, আর পৃথিবীর সমাজব্যবস্থার নানান পরিবর্তন হয় – বিবর্তন হয় ! বেশিরভাগ মানুষ-ই মনে মনে ভাবে – সে যেটা বুঝছে সেটাই ঠিক – বাকিরা ভুল ! কিন্তু তাই কি হয় ? এইজন্যেই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন – ” সবাই ভাবছে নিজের ঘড়িটাই ঠিক চলছে – অপরের ঘড়ি ভুল ! কিন্তু তা নয় – এইজন্যেই মাঝে মাঝে সূর্য ঘড়ির সাথে নিজের ঘড়িটা মিলিয়ে নিতে হয় ।” এখানে ‘সূর্যঘড়ি’ মানে হচ্ছে “চিরন্তন সত্য”– যা নিত্য – শাশ্বত ।
মহাপ্রকৃতির নিয়মেই যতকিছু পরিবর্তন সংঘটিত হয়ে থাকে । সেইটা ধরতে হবে, সেইটাকেই আগে ভালো করে বুঝে নিতে হবে – তাহলেই মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংকীর্ণতাবাদ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে ৷ অন্যথায় সবাই এক একটা ‘কুয়োর ব্যাঙ’- হয়ে সংকীর্ণ চিন্তার মধ্যে নিজেকে সীমায়িত রেখে – নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে, নিজেদের মধ্যেই মারামারি করে রক্তাক্ত হতে হবে ৷
এই ধরনের রক্তপাতের-ই বিরোধিতা করে গিয়েছিলেন ভগবান বুদ্ধ আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে ৷ কিন্তু কজন -ই বা শুনেছিল তাঁর কথা ! পৃথিবীতে রাজনৈতিক সংঘাতে যত না লোক মারা পড়েছে – তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা পড়েছে ধর্মনৈতিক সংঘাতে ! কিন্তু বুদ্ধের শিক্ষা যদি মানুষ গ্রহণ করতো – তাহলে কি এই দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো ? – হতো না !
এই সব প্রসঙ্গ থাক্ | আমরা আমাদের মূল আলোচনায় ফিরে আসি | গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ওনার ছোটবেলায় বুদ্ধগয়ায় ভ্রমণকালীন একটি ঘটনার কথা ! উনি গয়াতেও গিয়েছিলেন – দুটো ঘটনাই এখানে উল্লেখ করব !
” একদিন ঘুরতে ঘুরতে আমি বুদ্ধগয়ায় বোধিবৃক্ষের নিচে এসে উপস্থিত হয়েছিলাম । তখন আমি হেঁটে হেঁটে ঘুরছিলাম – আমার তখন বেশ কয়েকদিন অনাহারও চলছিল, তাছাড়া তখন গ্রীষ্মকাল ছিল – তাই ক্ষুধায়-তৃষ্ণায়-ক্লান্তিতে আমার তখন সত্যি সত্যিই শ্রান্ত-বিধ্বস্ত অবস্থা ! তাই ওই বোধিবৃক্ষের সুশীতল ছায়ায় বসে আমি একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলাম ৷ ক্ষুধা আর ক্লান্তি ভুলতে আমার মনটাকে একাগ্র করে শরীর থেকে তোলার সবে চেষ্টা করছি – এমন সময় হঠাৎ আমার শরীরটা কেমন যেন হালকা হয়ে গেল – আমার চোখের সামনে জগৎটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল – আর আমি কোন সুদূর অতীতে পৌছে গেলাম । সেই মুহূর্তেই আমি শুনতে পেলাম জলদগম্ভীর স্বরে কেউ যেন বলছে – “ধ্যান করো”, “ধ্যান করো”, “ধ্যান করো” ! আমি ওই কথার উৎস অনুসন্ধান করার চেষ্টা করতেই শুনতে পেলাম_ যেন প্রাচীন বৌদ্ধাচার্য্যরা ভগবান বুদ্ধের শিক্ষাগুলি তাদের ছাত্রদের বা শিষ্যদেরকে বলছেন ! আর আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এটাই যে, আমার তখনকার অবস্থার সঙ্গে ওনাদের উপদেশাবলী একদম ঠিক ঠিক মিলে যাচ্ছিল । যেমন ওই গাছতলায় বসে আমি দূরের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম __ অনেকটা দূরে রাখাল ছেলেরা গরুগুলি চরাচ্ছে, আরো দূরে গাছের সারি – এগুলো দেখতে আমার বেশ ভালো লাগছিল ৷ ঠিক সেই সময়েই ওখানকার বাতাবরণ থেকে উত্থিত সেই জলদগম্ভীর স্বর বলে উঠলো – “তুমি সুন্দর দৃশ্যাবলী দেখো না, ওতে মারে-র (বৌদ্ধ ধর্মমতে মতে সাধনার বিঘ্নকারী শক্তিকে বলা হয় ‘মার’!) হাত আছে । তুমি অন্তরে দৃষ্টি দাও,ধ্যান করো- ধ্যান করো-ধ্যান করো ৷৷” … [ক্রমশঃ]
গুরু মহারাজ এই আলোচনার রেশ ধরে বলেছিলেন – “তবু দ্যাখো, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগেকার – ভগবান বুদ্ধের শিক্ষার ধারা সমাজে চলে আসছে । এই মতাদর্শে বিশ্বাসী না হয়েও বহু মানুষ বুদ্ধের শিক্ষাকে জীবনে গ্রহণ করে ধন্য হয়েছে ! সনাতনধর্মীয়-রা বুদ্ধকে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে নিয়েছে এবং দশাবতারের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে | গোরক্ষনাথ পরম্পরা ছাড়া বৌদ্ধ পরম্পরাতেই অধিক সংখ্যায় সাধক নির্বিকল্প (বোধিপ্রাপ্ত, বুদ্ধত্ব বা অর্হত্ব) স্থিতি লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল ৷ সুতরাং আজ এই আড়াই হাজার বছর পরে যদি এই ধর্মমতটিতে ত্যাগী সন্ন্যাসীর সংখ্যা কমে যায় – তাতে বিচিত্রতা কিছুই নাই । কারণ এই সুদীর্ঘ সময়ের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে শত শত মহামানবগণ শরীর নিয়েছেন – তাঁরাও যুগোপযোগী করে তাঁদের নিজ নিজ ও মতাদর্শকে প্রচার করেছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন ৷ এইভাবে পৃথিবীতে ‘নানা মুনি – নানা মতে’-র সৃষ্টি হয়েছে ৷
এশিয়ার অন্তর্গত প্রদেশে আজ থেকে 2000 বছর আগে ভগবান যীশু শরীর নিয়েছিলেন, তাঁর প্রচারিত ধর্মমত প্রায় সমগ্র ইউরোপকে ছেয়ে ফেলেছিল এবং আমেরিকা ও আফ্রিকা মহাদেশকেও প্লাবিত করেছিল । এরপর আর এক মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ, তিনিও এশিয়া মহাদেশের-ই লোক – তাঁর প্রচারিত ধর্মমত যখন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরাও গ্রহন করতে শুরু করল, তখন লাগলো যুদ্ধ যা ইতিহাসে “ক্রুশেড” নামে পরিচিত ! কয়েকশো বছর ধরে চলল সেই যুদ্ধ (প্রকৃতপক্ষে আজও চলছে) ,– যার ফল হিসাবে বহু দেশ ইসলাম রাষ্ট্র হয়ে গেল এবং বহু দেশ হল খ্রিষ্টান রাষ্ট্র !!
মাত্র কিছুদিন আগে ইউরোপের এক মনিষী কার্লমার্কস ,তার মতামত সম্বলিত কিছু( দর্শন)শাস্ত্র লিখল ৷ সেই মতবাদের প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বা রূপ দিতে গিয়ে রাশিয়া-চীনসহ পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু দেশ আবার খ্রিষ্টানদের বহু গির্জা এবং ইসলামীয়দের শত শত মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে শুয়োরের খামার বানিয়ে দিল । আলবিনিয়া সম্পূর্ণরূপে একটি মুসলিম রাষ্ট্র ছিল – সেই দেশটিরও সমস্ত মসজিদ-মাদ্রাসা-কবরস্থান গুলি ভেঙে দিয়ে সেই জায়গাগুলিতে হয় চাষবাস করা হল অথবা গরু বা শুয়োরের খামার বানানো হল ৷ চীনে তো সমস্ত কবরস্থান নষ্ট করে ফেলে সেখানে চাষের জমি বানানো হয়েছে এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সহ সমস্ত শ্রেণীর মানুষের মৃতদেহ ইলেকট্রিক চুল্লিতে পুড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷
এভাবে একটা একটা সমাজ আন্দোলন, ধর্ম আন্দোলনের ঢেউ পৃথিবীর বুকে আছড়ে পরে, আর পৃথিবীর সমাজব্যবস্থার নানান পরিবর্তন হয় – বিবর্তন হয় ! বেশিরভাগ মানুষ-ই মনে মনে ভাবে – সে যেটা বুঝছে সেটাই ঠিক – বাকিরা ভুল ! কিন্তু তাই কি হয় ? এইজন্যেই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন – ” সবাই ভাবছে নিজের ঘড়িটাই ঠিক চলছে – অপরের ঘড়ি ভুল ! কিন্তু তা নয় – এইজন্যেই মাঝে মাঝে সূর্য ঘড়ির সাথে নিজের ঘড়িটা মিলিয়ে নিতে হয় ।” এখানে ‘সূর্যঘড়ি’ মানে হচ্ছে “চিরন্তন সত্য”– যা নিত্য – শাশ্বত ।
মহাপ্রকৃতির নিয়মেই যতকিছু পরিবর্তন সংঘটিত হয়ে থাকে । সেইটা ধরতে হবে, সেইটাকেই আগে ভালো করে বুঝে নিতে হবে – তাহলেই মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংকীর্ণতাবাদ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে ৷ অন্যথায় সবাই এক একটা ‘কুয়োর ব্যাঙ’- হয়ে সংকীর্ণ চিন্তার মধ্যে নিজেকে সীমায়িত রেখে – নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে, নিজেদের মধ্যেই মারামারি করে রক্তাক্ত হতে হবে ৷
এই ধরনের রক্তপাতের-ই বিরোধিতা করে গিয়েছিলেন ভগবান বুদ্ধ আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে ৷ কিন্তু কজন -ই বা শুনেছিল তাঁর কথা ! পৃথিবীতে রাজনৈতিক সংঘাতে যত না লোক মারা পড়েছে – তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা পড়েছে ধর্মনৈতিক সংঘাতে ! কিন্তু বুদ্ধের শিক্ষা যদি মানুষ গ্রহণ করতো – তাহলে কি এই দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো ? – হতো না !
এই সব প্রসঙ্গ থাক্ | আমরা আমাদের মূল আলোচনায় ফিরে আসি | গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ওনার ছোটবেলায় বুদ্ধগয়ায় ভ্রমণকালীন একটি ঘটনার কথা ! উনি গয়াতেও গিয়েছিলেন – দুটো ঘটনাই এখানে উল্লেখ করব !
” একদিন ঘুরতে ঘুরতে আমি বুদ্ধগয়ায় বোধিবৃক্ষের নিচে এসে উপস্থিত হয়েছিলাম । তখন আমি হেঁটে হেঁটে ঘুরছিলাম – আমার তখন বেশ কয়েকদিন অনাহারও চলছিল, তাছাড়া তখন গ্রীষ্মকাল ছিল – তাই ক্ষুধায়-তৃষ্ণায়-ক্লান্তিতে আমার তখন সত্যি সত্যিই শ্রান্ত-বিধ্বস্ত অবস্থা ! তাই ওই বোধিবৃক্ষের সুশীতল ছায়ায় বসে আমি একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলাম ৷ ক্ষুধা আর ক্লান্তি ভুলতে আমার মনটাকে একাগ্র করে শরীর থেকে তোলার সবে চেষ্টা করছি – এমন সময় হঠাৎ আমার শরীরটা কেমন যেন হালকা হয়ে গেল – আমার চোখের সামনে জগৎটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল – আর আমি কোন সুদূর অতীতে পৌছে গেলাম । সেই মুহূর্তেই আমি শুনতে পেলাম জলদগম্ভীর স্বরে কেউ যেন বলছে – “ধ্যান করো”, “ধ্যান করো”, “ধ্যান করো” ! আমি ওই কথার উৎস অনুসন্ধান করার চেষ্টা করতেই শুনতে পেলাম_ যেন প্রাচীন বৌদ্ধাচার্য্যরা ভগবান বুদ্ধের শিক্ষাগুলি তাদের ছাত্রদের বা শিষ্যদেরকে বলছেন ! আর আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এটাই যে, আমার তখনকার অবস্থার সঙ্গে ওনাদের উপদেশাবলী একদম ঠিক ঠিক মিলে যাচ্ছিল । যেমন ওই গাছতলায় বসে আমি দূরের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম __ অনেকটা দূরে রাখাল ছেলেরা গরুগুলি চরাচ্ছে, আরো দূরে গাছের সারি – এগুলো দেখতে আমার বেশ ভালো লাগছিল ৷ ঠিক সেই সময়েই ওখানকার বাতাবরণ থেকে উত্থিত সেই জলদগম্ভীর স্বর বলে উঠলো – “তুমি সুন্দর দৃশ্যাবলী দেখো না, ওতে মারে-র (বৌদ্ধ ধর্মমতে মতে সাধনার বিঘ্নকারী শক্তিকে বলা হয় ‘মার’!) হাত আছে । তুমি অন্তরে দৃষ্টি দাও,ধ্যান করো- ধ্যান করো-ধ্যান করো ৷৷” … [ক্রমশঃ]