গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ যখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরছিলেন তখনকার কথা হচ্ছিল ৷ উনি যখন ইতালির _’কারারা’_ -তে কিছুদিন ছিলেন এবং ওখানকার ভক্তদের সাথে সৎসঙ্গ করছিলেন , তেমনি কোন এক দিনে এক ব্যক্তি যার নাম _অ্যালবার্তো_- সে ওই সিটিংয়ে এসে হাজির ! সে এসেই গুরু মহারাজকে দেখেই বলে উঠলো – ” আরে , ইনিই তো ভগবান যীশু ! এনাকেই তো আমি দেখেছিলাম ! মৃত্যুর ঘোর অন্ধকার থেকে আমাকে জীবনের আলোয় এনে দিয়েছিলেন তো ইনিই !” _অ্যালবার্তোর_ জীবনে খনির দুর্ঘটনা ঘটে ছিল অনেক বছর আগে । কিন্তু তখন থেকেই _অ্যালবার্তোর_ কানে ভগবান যীশুর সেই কথাটি কানে ভাসতো – ” আমি এখন এইভাবে (অর্থাৎ এই শরীরে) রয়েছি “! ওর মনে পড়তো – গভীর অন্ধকারে ঢুকে যেতে যেতে , হঠাৎ স্নিগ্ধ আলোর স্পর্শে ওর গতি থেমে যায় এবং ও ওর আরাধ্য ও ইষ্ট প্রভু যীশুকে দেখতে পায় এবং দেখে তিনি একজন ভারতীয় সন্ন্যাসীর শরীরে একীভূত হয়ে গেলেন !! প্রকৃতপক্ষে ও তিনজনকে দেখেছিল – যীশুর ছিল সাদা পোশাক , ভারতীয় সন্ন্যাসীর ছিল গেরুয়া পোশাক এবং ইউরোপীয় সাধুটির ছিল নীল রংয়ের পোশাক ! যীশু যখন গেরুয়া পড়া সন্ন্যাসীর শরীরে একীভূত হয়ে গেলেন এবং ওকে বলে গেলেন যে , ” তুমি এখন ফিরে যাও – এখনো তোমার কিছু কাজ বাকি রয়েছে “– এবং এরপর ওই ঐ জ্যোতির্ময় মূর্তির অন্তর্ধান ঘটে এবং সঙ্গে সঙ্গে _অ্যালবার্তোর_ শরীরে যন্ত্রণার অনুভূতি জন্মায় ! এরপরের ইতিহাস তো সবার জানা !
এই ঘটনাটা গুরু মহারাজ বেশ কয়েকবার বিভিন্ন সময়ে বলেছিলেন – আর গুরু মহারাজের একটা বিশেষত্ব ছিল এই যে , উনি একই ঘটনা যদি বারবারও বলতেন – তবু মনে হতো যেন নতুন কোন ঘটনা শুনছি , আগে শোনা থাকলেও তার সঙ্গে নতুন কিছু সংযোজন করতেন – নতুন আঙ্গিকে সেটিকে পরিবেশন করতেন ! এই ব্যাপারটা আমরা তখন বহুবার প্রত্যক্ষ করেছিলাম ! সেইজন্য গুরু মহারাজের বলা একই কথা যদি পাঁচজনে লেখার মাধ্যমে পরিবেশন করে – তাহলে সেগুলি পাঁচরকম হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবেই থাকবে ! আমরা আগে এর প্রমাণও পেয়েছি – চরৈবেতি কার্যালয় থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখকের বিভিন্ন পুস্তকে গুরু মহারাজের বলা একই ঘটনার বর্ণনার অনেক ক্ষেত্রেই সামান্য সামান্য বিচ্যুতি দেখা যায় । এই নিয়ে আমাদেরকে অনেক সময়েই অনেকের অনেক জিজ্ঞাসার সম্মুখীনও হতে হয় । আমরা যারা গুরু মহারাজের সিটিং দীর্ঘদিন ধরে শুনেছি – তারা এই রহস্যটা জানেন – কিন্তু এর বাইরের ব্যক্তিদের মনে সংশয় থাকা তো স্বাভাবিক ! তবে সাল-তারিখ সংক্রান্ত কিছু তথ্য সেগুলি বিভিন্ন পুস্তকে বিভিন্ন রকম হয়ে আছে – সেগুলি চরৈবেতি কার্যালয়ের কর্তৃপক্ষের উচিত স্বীয় ক্ষমতা খাটিয়ে ঠিক করে নেওয়া , কারণ গুরু মহারাজের পরে first generation -এ যাঁরা আশ্রমের বিভিন্ন কাজের দায়িত্বে রয়েছেন – তাঁরা যদি এই Confusion-গুলি দূর না করে যান , তাহলে পরবর্তী generation-এর আশ্রমিকদের খুবই অসুবিধায় পড়তে হবে – এবং এটা একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয় !
এসব কথা এখন থাক্ – আমরা ফিরে যাই আমাদের পুরনো প্রসঙ্গে ৷ আমরা ন’কাকা (শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়)-র কাছে শুনেছিলাম যে , আশ্রম তৈরীর একেবারে প্রথম দিকে যখন আশ্রমে খুব কম লোকজন আসা-যাওয়া করতো – তখন একদিন গুরু মহারাজ ন’কাকার বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে (সেই সময় বসে বসেই গুরু মহারাজ প্রায়শই সমাধিস্থ হয়ে যেতেন ! অনেক সময় ভাবস্থ অবস্থায় অনেক কথা বলতেন – যেগুলো উপস্থিত লোকেরা ঠিক বুঝতে পারত না !) আপন মনে অস্ফুট স্বরে বলতে থাকেন – ” যাঃ ! পা-টা কেটে বাদ দিল ! না দিলেও তো চলতো – তবু বাদ দিল ?” গুরু মহারাজ যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন তখন ন’কাকা জিজ্ঞাসা করেছিলেন – ” ভাবস্থ অবস্থায় কার পা কেটে বাদ দেবার কথা বলছিলে ?” গুরু মহারাজ উত্তর দিয়েছিলেন – ” এখন তার কথা বললে তোমরা বুঝতে পারবে না – ও যখন বনগ্রামে আসবে তখন তোমরা তাকে দেখতে পাবে ।”
নরওয়ের সেই ছেলেটি যার নাম অ্যাসগর , সে বনগ্রামে এসেছিলো গুরু মহারাজের সেদিন সন্ধ্যায় ভাবস্থ অবস্থায় পা বাদ দেবার যে কথা বলেছিলেন , তার থেকে অন্তত ৫/৭ বছর পর ! অ্যাসগর এসেছিল একটা পা কাটা নিয়েই ! কৃত্রিম পা-এর প্রচলন তখনও আমাদের এখানে ব্যাপকভাবে প্রচলন ছিল না – অ্যাসগরের ঐরকম পা আমরা প্রথম দেখেছিলাম ! মাঝে মাঝে অবশ্য সে ক্রাচ্ নিয়েও হাঁটাচলা করতো ৷ এই প্রসঙ্গে বলে রাখি , আমি কিন্তু বনগ্রাম আশ্রমে কোন এক সময় শুনেছিলাম যে , গুরু মহারাজ ইতালির _আলবার্তোর_ দুর্ঘটনার সময়কালীন সময়েও হঠাৎ করে (যদিও উনি তখন India-তেই ছিলেন , খুব সম্ভবত উত্তর ভারতের কোন ভক্তের বাড়িতে সিটিং করছিলেন) _কথা বলতে বলতে থেমে যান এবং কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলেন _”যাক ছেলেটিকে বাঁচানো গেল!”
কিন্তু অ্যাসগর বনগ্রামে প্রথমবার আসার পর খুব বেশিদিন বাঁচেনি। হয়তো মোট ২/৩-বার সে বনগ্রাম আশ্রমে যাতায়াত করেছিল! শেষবারে বনগ্রামে এসে ছাদে ধ্যান করতে করতে ভাবস্থ অবস্থায় নিচে পড়ে যায় এবং মারা যায় (তখন সবেমাত্র মুরারী মহারাজের অফিস ঘরের ছাদটিই ছিল!)! একজন foreigner – এর এদেশে এসে মৃত্যু _তাও আবার অপঘাতে মৃত্যু!! এটা যে কি সাংঘাতিক ঝামেলার ব্যাপার _তা সেই সময় যারা ব্যাপারটিকে handling করেছিলেন (তৃষান মহারাজ, মুরারী মহারাজ প্রমুখ) _তাঁরা মর্মে মর্মে তা উপলব্ধি করেছিলেন! পুলিশের ঝামেলা, নরওয়ে দুতাবাসের ঝামেলা, স্থানীয় মানুষের কৈফিয়ৎ, পোষ্টমর্টেম ইত্যাদি সবকিছু মিটিয়ে আবার ওর মৃতদেহটিকে বিমানে করে নরওয়েতে পাঠিয়ে দেওয়া __মানে এক কথায় বলতে গেলে সদ্য গড়ে ওঠা একটা আশ্রমের ক্ষেত্রে এটা ছিল একটা চরম ঝঞ্ঝাটের ব্যাপার! নেহাত তখন স্বয়ং ভগবান পরমানন্দ সশরীরে ছিলেন _তাই তৃষান মহারাজের পক্ষে একাহাতে ঐ অসাধ্য সাধন সক্ষম হয়েছিল!! (ক্রমশঃ)
এই ঘটনাটা গুরু মহারাজ বেশ কয়েকবার বিভিন্ন সময়ে বলেছিলেন – আর গুরু মহারাজের একটা বিশেষত্ব ছিল এই যে , উনি একই ঘটনা যদি বারবারও বলতেন – তবু মনে হতো যেন নতুন কোন ঘটনা শুনছি , আগে শোনা থাকলেও তার সঙ্গে নতুন কিছু সংযোজন করতেন – নতুন আঙ্গিকে সেটিকে পরিবেশন করতেন ! এই ব্যাপারটা আমরা তখন বহুবার প্রত্যক্ষ করেছিলাম ! সেইজন্য গুরু মহারাজের বলা একই কথা যদি পাঁচজনে লেখার মাধ্যমে পরিবেশন করে – তাহলে সেগুলি পাঁচরকম হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবেই থাকবে ! আমরা আগে এর প্রমাণও পেয়েছি – চরৈবেতি কার্যালয় থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখকের বিভিন্ন পুস্তকে গুরু মহারাজের বলা একই ঘটনার বর্ণনার অনেক ক্ষেত্রেই সামান্য সামান্য বিচ্যুতি দেখা যায় । এই নিয়ে আমাদেরকে অনেক সময়েই অনেকের অনেক জিজ্ঞাসার সম্মুখীনও হতে হয় । আমরা যারা গুরু মহারাজের সিটিং দীর্ঘদিন ধরে শুনেছি – তারা এই রহস্যটা জানেন – কিন্তু এর বাইরের ব্যক্তিদের মনে সংশয় থাকা তো স্বাভাবিক ! তবে সাল-তারিখ সংক্রান্ত কিছু তথ্য সেগুলি বিভিন্ন পুস্তকে বিভিন্ন রকম হয়ে আছে – সেগুলি চরৈবেতি কার্যালয়ের কর্তৃপক্ষের উচিত স্বীয় ক্ষমতা খাটিয়ে ঠিক করে নেওয়া , কারণ গুরু মহারাজের পরে first generation -এ যাঁরা আশ্রমের বিভিন্ন কাজের দায়িত্বে রয়েছেন – তাঁরা যদি এই Confusion-গুলি দূর না করে যান , তাহলে পরবর্তী generation-এর আশ্রমিকদের খুবই অসুবিধায় পড়তে হবে – এবং এটা একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয় !
এসব কথা এখন থাক্ – আমরা ফিরে যাই আমাদের পুরনো প্রসঙ্গে ৷ আমরা ন’কাকা (শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়)-র কাছে শুনেছিলাম যে , আশ্রম তৈরীর একেবারে প্রথম দিকে যখন আশ্রমে খুব কম লোকজন আসা-যাওয়া করতো – তখন একদিন গুরু মহারাজ ন’কাকার বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে (সেই সময় বসে বসেই গুরু মহারাজ প্রায়শই সমাধিস্থ হয়ে যেতেন ! অনেক সময় ভাবস্থ অবস্থায় অনেক কথা বলতেন – যেগুলো উপস্থিত লোকেরা ঠিক বুঝতে পারত না !) আপন মনে অস্ফুট স্বরে বলতে থাকেন – ” যাঃ ! পা-টা কেটে বাদ দিল ! না দিলেও তো চলতো – তবু বাদ দিল ?” গুরু মহারাজ যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন তখন ন’কাকা জিজ্ঞাসা করেছিলেন – ” ভাবস্থ অবস্থায় কার পা কেটে বাদ দেবার কথা বলছিলে ?” গুরু মহারাজ উত্তর দিয়েছিলেন – ” এখন তার কথা বললে তোমরা বুঝতে পারবে না – ও যখন বনগ্রামে আসবে তখন তোমরা তাকে দেখতে পাবে ।”
নরওয়ের সেই ছেলেটি যার নাম অ্যাসগর , সে বনগ্রামে এসেছিলো গুরু মহারাজের সেদিন সন্ধ্যায় ভাবস্থ অবস্থায় পা বাদ দেবার যে কথা বলেছিলেন , তার থেকে অন্তত ৫/৭ বছর পর ! অ্যাসগর এসেছিল একটা পা কাটা নিয়েই ! কৃত্রিম পা-এর প্রচলন তখনও আমাদের এখানে ব্যাপকভাবে প্রচলন ছিল না – অ্যাসগরের ঐরকম পা আমরা প্রথম দেখেছিলাম ! মাঝে মাঝে অবশ্য সে ক্রাচ্ নিয়েও হাঁটাচলা করতো ৷ এই প্রসঙ্গে বলে রাখি , আমি কিন্তু বনগ্রাম আশ্রমে কোন এক সময় শুনেছিলাম যে , গুরু মহারাজ ইতালির _আলবার্তোর_ দুর্ঘটনার সময়কালীন সময়েও হঠাৎ করে (যদিও উনি তখন India-তেই ছিলেন , খুব সম্ভবত উত্তর ভারতের কোন ভক্তের বাড়িতে সিটিং করছিলেন) _কথা বলতে বলতে থেমে যান এবং কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলেন _”যাক ছেলেটিকে বাঁচানো গেল!”
কিন্তু অ্যাসগর বনগ্রামে প্রথমবার আসার পর খুব বেশিদিন বাঁচেনি। হয়তো মোট ২/৩-বার সে বনগ্রাম আশ্রমে যাতায়াত করেছিল! শেষবারে বনগ্রামে এসে ছাদে ধ্যান করতে করতে ভাবস্থ অবস্থায় নিচে পড়ে যায় এবং মারা যায় (তখন সবেমাত্র মুরারী মহারাজের অফিস ঘরের ছাদটিই ছিল!)! একজন foreigner – এর এদেশে এসে মৃত্যু _তাও আবার অপঘাতে মৃত্যু!! এটা যে কি সাংঘাতিক ঝামেলার ব্যাপার _তা সেই সময় যারা ব্যাপারটিকে handling করেছিলেন (তৃষান মহারাজ, মুরারী মহারাজ প্রমুখ) _তাঁরা মর্মে মর্মে তা উপলব্ধি করেছিলেন! পুলিশের ঝামেলা, নরওয়ে দুতাবাসের ঝামেলা, স্থানীয় মানুষের কৈফিয়ৎ, পোষ্টমর্টেম ইত্যাদি সবকিছু মিটিয়ে আবার ওর মৃতদেহটিকে বিমানে করে নরওয়েতে পাঠিয়ে দেওয়া __মানে এক কথায় বলতে গেলে সদ্য গড়ে ওঠা একটা আশ্রমের ক্ষেত্রে এটা ছিল একটা চরম ঝঞ্ঝাটের ব্যাপার! নেহাত তখন স্বয়ং ভগবান পরমানন্দ সশরীরে ছিলেন _তাই তৃষান মহারাজের পক্ষে একাহাতে ঐ অসাধ্য সাধন সক্ষম হয়েছিল!! (ক্রমশঃ)