গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ গিরি ঋষিকেশের কৈলাস আশ্রমের স্বামী বিদ্যানন্দ গিরির কাছে গুরু রামানন্দ অবধূতের নির্দেশক্রমে সন্ন্যাস সংস্কার করেছিলেন ঠিকই – কিন্তু সন্ন্যাস সংস্কারের কিছুদিনের মধ্যেই কোন একটি ব্যাপারে বিদ্যানন্দ গিরির কথায় সংকীর্ণতার পরিচয় পেয়ে উনি (গুরু মহারাজ) ঐ আশ্রমেই সবার সামনে স্বামী বিদ্যানন্দের ঐ কথার বিরুদ্ধে তীব্র কন্ঠে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ! বিদ্যানন্দ গিরি ওনাকে ‘মানানো’-র চেষ্টা করার জন্য বলেছিলেন – ” তুম্ পরম্পরা কো তো মানো গে (तुम परंपरा को तो मानोगे)!” গুরু মহারাজ বীরদর্পে উত্তর দিয়েছিলেন – মে কোই পরম্পরা কা গুলাম নেহি হুঁ (मैं कोई परंपरा का गुलाम नहीं हूं)!” সুতরাং __এই ঘটনা থেকে আমরা এটা বুঝতে পারলাম যে, উনি ‘গিরি’ – আবার ‘গিরি’ নন ! এক কথায় উনি ‘সবই’ অথবা বলা যায় কোন কিছু দিয়েই ওনাকে বিশেষিত করা যায় না !
যাইহোক, দক্ষিণেশ্বর থেকে বেলুড়ের মধ্যে গঙ্গার তীরে গুরু মহারাজের স্বামী বিবেকানন্দের দর্শন হয়েছিল – সেই সময় ওনাদের মধ্যে কিছু কথোপকথনও হয়েছিল ৷ গুরু মহারাজের পরিব্রাজন জীবনে উনি গেরুয়া কাপড় পড়া সাধু-সন্তদের মধ্যে Perfection -যুক্ত মানুষ দেখতে পাননি ! যে কজনকে পেয়েছিলেন তাঁরা হয় সাদা কাপড়ের সাধু অথবা উলঙ্গ সাধু ছিলেন। এই জন্য সেই সময়ে গুরু মহারাজের মনে গেরুয়ার প্রতি কোন শ্রদ্ধা ছিল না ! কিন্তু ঐ দিন গঙ্গা তীরে স্বামী বিবেকানন্দ প্রকট হয়ে গুরু মহারাজকে বলেছিলেন – ” তুমি যদি গেরুয়ার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করো – তাহলে আগামী দিনের মানুষ আর কোনদিনই গেরুয়া পরা সাধুসন্তদেরকে মেনে নেবে না । তুমি আমাকে (স্বামী বিবেকানন্দকে) দেখো – আমার করা অনেক সংকল্প এখনো সিদ্ধ হয়নি – তুমি তো জানো তোমাকে কি করতে হবে ! তাই আমার অনুরোধ তুমি গেরুয়া কাপড় পড়ো !” স্বামীজি এই কথা কটা বলার পর গুরুমহারাজ দেখেছিলেন যে তাঁর শরীরটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে এবং গেরুয়া সমুদ্র থেকে উঠে আসা স্বামীজীর ‘ভাব শরীর’-টি ধীরে ধীরে ছোট হয়ে ওনার শরীরে মিশে যাচ্ছে ! এর পরেই ওনার দর্শন হয় যে হিমালয়ের কোন এক পাহাড়ি গুহার মত স্থান থেকে একজন বৃদ্ধ উলঙ্গ সন্ন্যাসী ওনাকে গেরুয়া কাপড় দেখিয়ে সন্ন্যাস নেওয়ার জন্য আহ্বান করছেন! এরপর তো অন্য কাহিনী – অন্য সময় বলা যাবে ! এখন আমরা “ইউরোপে গুরুজী” – এই প্রসঙ্গে আবার ফিরে যাবো ! কিন্তু তার আগে__ বহুকাল আগে থাকতেই ভারতবর্ষ থেকে মানবকল্যানের ব্রত নিয়ে, বিভিন্ন আচার্যরা ভারতের বাইরে আধ্যাত্মিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান কিভাবে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, _সেই আলোচনা একটু হয়ে যাক্!!
গুরু মহারাজ বলেছিলেন সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় আচার্যেরা (গুরু বা শিক্ষক। তাঁরা মুখে যা বলেন__ তা নিজের জীবনে আচরণ করেন ৷) ভারতবর্ষের জ্ঞান নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন । আমরা ইতিহাস থেকেই পাই _বুদ্ধ পরবর্তী আচার্যগণ (ভগবান বুদ্ধের জন্মের আগে পৃথিবীতে কোন দেশেরই কোন লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায় নি) যেমন বাঙালি শীলভদ্র , অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান , জিন ভিক্ষু প্রমুখরা তিব্বত হয়ে চীন-জাপান-মঙ্গোলিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন দেশে বুদ্ধের শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন । ভগবান বুদ্ধকে ওই জন্যই বলা হতো – ” Light of Asia ” !
জিন ভিক্ষুর কথাটা এই ফাঁকে একটু বলে নিই (যা গুরু মহারাজের মুখে শুনেছিলাম) । সম্রাট অশোকের সময় থেকে ধর্মাচার্যদের ভারতবর্ষের বাইরে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয় !! সেই রকমই কোনো এক সময় প্রায় ১০০ জন(!)-কে (আচার্যগন ছাড়াও সেই দলে পাচক , সেবক , মুটে , রক্ষী ইত্যাদিরাও ছিল) চীন দেশের অভিমুখে পাঠানো হয়েছিল ! কিন্তু বিপদসংকুল পথ এবং দস্যু-তস্করদের অত্যাচারে একজন বাদে ঐ দলের সমস্ত লোক মারা পড়ে ! ওই একজন আবার গুপ্তচর সন্দেহে চীনা সৈন্যদের হাতে বন্দি হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন !! ঐ ব্যক্তিই ছিলেন জিন ভিক্ষু!!
কারাগারের অন্তরালে দিনের পর দিন কাটালেও জিন ভিক্ষু তাঁর শিক্ষা-দীক্ষা , তাঁর জ্ঞান-তপস্যার কথা এক মুহূর্তের জন্যেও বিস্মৃত হননি ! তিনি ওই কারাগারের মধ্যেই জেলের বন্দীদের কাছে ‘হান’ ভাষা (চীনা ভাষা) শিখে নিয়ে ওদেরকে বুদ্ধের শান্তি ও মৈত্রীর বাণী শোনাতেন এবং অন্যান্য সৎ-শিক্ষা ও সৎ-উপদেশ দিতেন ! জেলের কর্মী বা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কাগজ-কলম চেয়ে নিয়ে উনি অবসর সময়ে ‘ত্রিপিটক’ গ্রন্থের চীনা ভাষায় (হান) অনুবাদ করতেন ।
এইভাবে কিছুদিন পর থেকেই দেখা গেল – ওই জেলের কয়েদিদের Record অন্যান্য জেল অপেক্ষা সবচাইতে ভালো ! ওখানকার বন্দীরা খুবই disciplined , ওই জেলে কোন অশান্তি নাই এবং যারা ওখান থেকে সাজার মেয়াদ অন্তে ঘরে ফিরে যাচ্ছে – তারাও খুব সৎ , সুন্দর , সংযতভাবে disciplined জীবন যাপন করছে ৷ কারা কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারটা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে আনল – তারা আবার রাজার কানে কথাটা তুলল ৷ রাজা সব শুনে বিস্মিত হয়ে ঐ বিশেষ কয়েদিকে ডেকে পাঠালেন রাজদরবারে !
দীর্ঘদিনের কারাবাস (প্রায় ১৫/২০ বছর)-এর ফলে জিন ভিক্ষুর শরীর ভেঙে পড়েছিল – তাছাড়া ততদিনে তার বয়সও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল । রাজা ওনার মুখে তাঁর জীবনের সুদীর্ঘ ইতিহাস শুনে অবাক্ ! রক্ষীদেরকে আদেশ দিলেন, কারাগার থেকে_ ওই লোকটি যেসব পুঁথি লিখেছে সেগুলি রাজদরবারে নিয়ে আনার জন্য ! সেইসব পান্ডুলিপি পড়ে রাজার তো চক্ষু ছানাবড়া ! এতবড় একজন মহাপন্ডিতকে এতদিন অনাদরে-অবহেলায় কারাগারের অন্ধকারে বন্দি করে রাখা হয়েছিল !! ছিঃ – ছিঃ_ কি অন্যায়-ই না হয়েছে !!
তক্ষুনি রাজা ঘোষণা করলেন যে – “আজ থেকে এই মহাপন্ডিতকে রাজসভায় বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ স্থান দেওয়া হবে এবং উনি কারাগারে লেখা ওনার পুঁথির বিষয়বস্তু আমাদের সকলকে পড়ে শোনাবেন ও তার ব্যাখ্যা করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেবেন।”
সেই প্রথম ভারতবর্ষ থেকে বৌদ্ধধর্ম একেবারে চীনের রাজ-অন্তঃপুরে পৌঁছে গেছিল। ফলতঃ সহজেই এরপর রাজন্যবর্গ বা রাজপরিবারের লোকজন এবং সাধারণ প্রজারা বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিল।
গুরুমহারাজ এই ঘটনাটা বিস্তারিত বর্ণনা করার পর আমাদেরকে বলেছিলেন _এইরকম কতশত আচার্যরা ভারতবর্ষ থেকে বিভিন্ন দেশে, কত কষ্ট- লাঞ্ছনা-অপমান সহ্য করে, এ দেশের জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সেইসব দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন_তার ইয়ত্তা নেই!
এর আগে এই page-এ একজন ভারতীয়(বাঙালী) সন্ন্যাসী আনন্দ আচারিয়ার কথা বলা হয়েছিল, যিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভারতীয় বেদ-বেদান্তের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে ঐসব দেশে গিয়েছিলেন! এনার কথা আমরা গুরুমহারাজের কাছেই শুনেছিলাম। এছাড়া আরো অনেক যোগ-গুরুর কথা উনি আমাদেরকে বলেছিলেন _যাঁরা ভারতীয় যোগ-কে বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন মানবজাতির কল্যানের জন্য! তাঁদের দু-এক জনের কথা পরবর্তীতে…!! (ক্রমশঃ)
যাইহোক, দক্ষিণেশ্বর থেকে বেলুড়ের মধ্যে গঙ্গার তীরে গুরু মহারাজের স্বামী বিবেকানন্দের দর্শন হয়েছিল – সেই সময় ওনাদের মধ্যে কিছু কথোপকথনও হয়েছিল ৷ গুরু মহারাজের পরিব্রাজন জীবনে উনি গেরুয়া কাপড় পড়া সাধু-সন্তদের মধ্যে Perfection -যুক্ত মানুষ দেখতে পাননি ! যে কজনকে পেয়েছিলেন তাঁরা হয় সাদা কাপড়ের সাধু অথবা উলঙ্গ সাধু ছিলেন। এই জন্য সেই সময়ে গুরু মহারাজের মনে গেরুয়ার প্রতি কোন শ্রদ্ধা ছিল না ! কিন্তু ঐ দিন গঙ্গা তীরে স্বামী বিবেকানন্দ প্রকট হয়ে গুরু মহারাজকে বলেছিলেন – ” তুমি যদি গেরুয়ার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করো – তাহলে আগামী দিনের মানুষ আর কোনদিনই গেরুয়া পরা সাধুসন্তদেরকে মেনে নেবে না । তুমি আমাকে (স্বামী বিবেকানন্দকে) দেখো – আমার করা অনেক সংকল্প এখনো সিদ্ধ হয়নি – তুমি তো জানো তোমাকে কি করতে হবে ! তাই আমার অনুরোধ তুমি গেরুয়া কাপড় পড়ো !” স্বামীজি এই কথা কটা বলার পর গুরুমহারাজ দেখেছিলেন যে তাঁর শরীরটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে এবং গেরুয়া সমুদ্র থেকে উঠে আসা স্বামীজীর ‘ভাব শরীর’-টি ধীরে ধীরে ছোট হয়ে ওনার শরীরে মিশে যাচ্ছে ! এর পরেই ওনার দর্শন হয় যে হিমালয়ের কোন এক পাহাড়ি গুহার মত স্থান থেকে একজন বৃদ্ধ উলঙ্গ সন্ন্যাসী ওনাকে গেরুয়া কাপড় দেখিয়ে সন্ন্যাস নেওয়ার জন্য আহ্বান করছেন! এরপর তো অন্য কাহিনী – অন্য সময় বলা যাবে ! এখন আমরা “ইউরোপে গুরুজী” – এই প্রসঙ্গে আবার ফিরে যাবো ! কিন্তু তার আগে__ বহুকাল আগে থাকতেই ভারতবর্ষ থেকে মানবকল্যানের ব্রত নিয়ে, বিভিন্ন আচার্যরা ভারতের বাইরে আধ্যাত্মিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান কিভাবে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, _সেই আলোচনা একটু হয়ে যাক্!!
গুরু মহারাজ বলেছিলেন সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় আচার্যেরা (গুরু বা শিক্ষক। তাঁরা মুখে যা বলেন__ তা নিজের জীবনে আচরণ করেন ৷) ভারতবর্ষের জ্ঞান নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন । আমরা ইতিহাস থেকেই পাই _বুদ্ধ পরবর্তী আচার্যগণ (ভগবান বুদ্ধের জন্মের আগে পৃথিবীতে কোন দেশেরই কোন লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায় নি) যেমন বাঙালি শীলভদ্র , অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান , জিন ভিক্ষু প্রমুখরা তিব্বত হয়ে চীন-জাপান-মঙ্গোলিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন দেশে বুদ্ধের শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন । ভগবান বুদ্ধকে ওই জন্যই বলা হতো – ” Light of Asia ” !
জিন ভিক্ষুর কথাটা এই ফাঁকে একটু বলে নিই (যা গুরু মহারাজের মুখে শুনেছিলাম) । সম্রাট অশোকের সময় থেকে ধর্মাচার্যদের ভারতবর্ষের বাইরে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয় !! সেই রকমই কোনো এক সময় প্রায় ১০০ জন(!)-কে (আচার্যগন ছাড়াও সেই দলে পাচক , সেবক , মুটে , রক্ষী ইত্যাদিরাও ছিল) চীন দেশের অভিমুখে পাঠানো হয়েছিল ! কিন্তু বিপদসংকুল পথ এবং দস্যু-তস্করদের অত্যাচারে একজন বাদে ঐ দলের সমস্ত লোক মারা পড়ে ! ওই একজন আবার গুপ্তচর সন্দেহে চীনা সৈন্যদের হাতে বন্দি হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন !! ঐ ব্যক্তিই ছিলেন জিন ভিক্ষু!!
কারাগারের অন্তরালে দিনের পর দিন কাটালেও জিন ভিক্ষু তাঁর শিক্ষা-দীক্ষা , তাঁর জ্ঞান-তপস্যার কথা এক মুহূর্তের জন্যেও বিস্মৃত হননি ! তিনি ওই কারাগারের মধ্যেই জেলের বন্দীদের কাছে ‘হান’ ভাষা (চীনা ভাষা) শিখে নিয়ে ওদেরকে বুদ্ধের শান্তি ও মৈত্রীর বাণী শোনাতেন এবং অন্যান্য সৎ-শিক্ষা ও সৎ-উপদেশ দিতেন ! জেলের কর্মী বা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কাগজ-কলম চেয়ে নিয়ে উনি অবসর সময়ে ‘ত্রিপিটক’ গ্রন্থের চীনা ভাষায় (হান) অনুবাদ করতেন ।
এইভাবে কিছুদিন পর থেকেই দেখা গেল – ওই জেলের কয়েদিদের Record অন্যান্য জেল অপেক্ষা সবচাইতে ভালো ! ওখানকার বন্দীরা খুবই disciplined , ওই জেলে কোন অশান্তি নাই এবং যারা ওখান থেকে সাজার মেয়াদ অন্তে ঘরে ফিরে যাচ্ছে – তারাও খুব সৎ , সুন্দর , সংযতভাবে disciplined জীবন যাপন করছে ৷ কারা কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারটা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে আনল – তারা আবার রাজার কানে কথাটা তুলল ৷ রাজা সব শুনে বিস্মিত হয়ে ঐ বিশেষ কয়েদিকে ডেকে পাঠালেন রাজদরবারে !
দীর্ঘদিনের কারাবাস (প্রায় ১৫/২০ বছর)-এর ফলে জিন ভিক্ষুর শরীর ভেঙে পড়েছিল – তাছাড়া ততদিনে তার বয়সও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল । রাজা ওনার মুখে তাঁর জীবনের সুদীর্ঘ ইতিহাস শুনে অবাক্ ! রক্ষীদেরকে আদেশ দিলেন, কারাগার থেকে_ ওই লোকটি যেসব পুঁথি লিখেছে সেগুলি রাজদরবারে নিয়ে আনার জন্য ! সেইসব পান্ডুলিপি পড়ে রাজার তো চক্ষু ছানাবড়া ! এতবড় একজন মহাপন্ডিতকে এতদিন অনাদরে-অবহেলায় কারাগারের অন্ধকারে বন্দি করে রাখা হয়েছিল !! ছিঃ – ছিঃ_ কি অন্যায়-ই না হয়েছে !!
তক্ষুনি রাজা ঘোষণা করলেন যে – “আজ থেকে এই মহাপন্ডিতকে রাজসভায় বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ স্থান দেওয়া হবে এবং উনি কারাগারে লেখা ওনার পুঁথির বিষয়বস্তু আমাদের সকলকে পড়ে শোনাবেন ও তার ব্যাখ্যা করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেবেন।”
সেই প্রথম ভারতবর্ষ থেকে বৌদ্ধধর্ম একেবারে চীনের রাজ-অন্তঃপুরে পৌঁছে গেছিল। ফলতঃ সহজেই এরপর রাজন্যবর্গ বা রাজপরিবারের লোকজন এবং সাধারণ প্রজারা বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিল।
গুরুমহারাজ এই ঘটনাটা বিস্তারিত বর্ণনা করার পর আমাদেরকে বলেছিলেন _এইরকম কতশত আচার্যরা ভারতবর্ষ থেকে বিভিন্ন দেশে, কত কষ্ট- লাঞ্ছনা-অপমান সহ্য করে, এ দেশের জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সেইসব দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন_তার ইয়ত্তা নেই!
এর আগে এই page-এ একজন ভারতীয়(বাঙালী) সন্ন্যাসী আনন্দ আচারিয়ার কথা বলা হয়েছিল, যিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভারতীয় বেদ-বেদান্তের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে ঐসব দেশে গিয়েছিলেন! এনার কথা আমরা গুরুমহারাজের কাছেই শুনেছিলাম। এছাড়া আরো অনেক যোগ-গুরুর কথা উনি আমাদেরকে বলেছিলেন _যাঁরা ভারতীয় যোগ-কে বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন মানবজাতির কল্যানের জন্য! তাঁদের দু-এক জনের কথা পরবর্তীতে…!! (ক্রমশঃ)