গুরুমহারাজ একবার বনগ্রামের মুখার্জী বাড়িতে বলেছিলেন_”মাঝে মাঝে গভীর রাত্রিতে উঠে আমি মাঠে গিয়ে “তান্ডব” নাচি।” এইকথা শুনে তপিমা-র বাবা রমাপ্রসাদ বাবু করজোড়ে বলে উঠলেন_”ঐ নাচ টা তুমি আর নেচো না ঠাকুর!”
গুরু মহারাজ বলেছিলেন_”সাধারণতঃ মানুষ_ ঈশ্বরের সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় এই তিনটি রূপের, প্রথম দুটিকে নিয়েই থাকতে চায়_তৃতীয় রূপটাকে যেন একটু এড়িয়ে চলতে চায়! দেব বা দেবীর মূর্তি বা ছবিগুলো দেখে মনে হয় যেন কোমলতা মাখা স্নেহময় বা করূনাময়ী রূপ! হিন্দুরা ছাড়া অন্যান্য ধর্মমতেও ঈশ্বরকে ‘মেহেরবান’, ‘graceful’_এইসব রূপেই দেখতে চায় মানুষ!
সেইজন্য ঈশ্বর নিজেই মাঝে মাঝে প্রলয় নাচন নেচে_জীব সকলকে তাঁর ধ্বংসকারী রূপটিও প্রকাশ করেন।”
রামায়ন-মহাভারতে উল্লেখিত সভ্যতাগুলির কথা না ধরেও যদি অধুনা আবিস্কৃত _মেহেরগড়,হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো,মায়া,অ্যাজটেক_ইত্যাদিনগর-সভ্যতা গুলির কথা ধরি,তাহলে কি দেখব_হটাৎ করে এইসব নগর-সভ্যতা ধবংস হয়ে গিয়েছিল।আর এমনভাবে ধবংস হয়েছিল যে, তার ইতিহাস লেখার মতোও কেউ ছিল না। ফলে আজও আধুনিক সভ্য-শিক্ষিত মানুষ জানেই না তারা_কারা?
আজকের পৃথিবী আবার এক নতুন সভ্যতা_কে দেখছে। কিন্তু এ কি সভ্যতা? বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে, কত কম সময়ে কত বেশি সংখ্যক মানুষকে মেরে ফেলা যায় _সেইটা আবিস্কারের বিচারে নিজেকে উন্নত বলে জাহির করাটাই _সভ্যতা?
গুরু মহারাজ একবার বলেছিলেন_”পৃথিবীর মানুষের চেতনা এখনো শৈশব অবস্থায় আছে।” কতকগুলো শিশুর হাতে যদি AK-47-এর মতো আগ্নেয়াস্ত্র থাকে , তাহলে কিছুক্ষন পর দেখা যাবে তারা সবাই মরে পড়ে রয়েছে। পৃথিবীতে ও ঠিক এই ঘটনাটাই বারবার ঘটে চলেছে। কিছু উন্নত মানুষ মননশক্তির সাহায্যে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানব জাতিকে সভ্য করার চেষ্টা করেছে_কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে দানব শক্তি এসে তাকে ধ্বংসাত্মক কাজে লাগিয়ে দিয়েছে।
শাশ্ত্রে এই জগৎ-কে বলেছে _মর্ত্ত! এখানে সবাই মরণশীল। কিন্তু মনে হয় এখানকার মানুষেরা (অন্য জীবের কথা জানি না) মরতে ভালোবাসে।আর তাই অপরকে মারতে চায়,ধর্মের পার্থক্য তৈরি করে_রাজনীতির পার্থক্য তৈরি করে -বর্ণের পার্থক্য তৈরি করে যেভাবেই হোক অপরকে আমার মতে আনো_নাহলে মারো! নিজেরা মারামারি করে মরো_আবার অপর জীব সকলকে ও মেরে ফেলো! কেটে খেয়ে ফেলো_নাহয় জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে মারো, আমার হাতে অস্ত্র রয়েছে_অত‌এব‌ অকারণেই মারো।মারো_মারো_মারো_চারিদিকে শুধু একটাই রব উঠছে _”মারো”!
গুরু মহারাজ বলেছিলেন_”যদি মনটা মনুষ্যজগত থেকে সরিয়ে নিয়ে উদ্ভিদজগৎ বা পশুজগৎ-এর দিকে নিয়ে যাই__তখন দেখি যে, একটা সমবেত প্রার্থনা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর (আল্লাহ্)-এর দিকে ধাবিত হচ্ছে_”হে সর্বশক্তিমান! মানুষ নামক এই জাতিটা কে তুমি শেষ করে দাও প্রভূ!”
আহা_কী সভ্য আমরা! কি উন্নত আমরা! আমরা মরবো_আমরা বারবার মরবো!আমরা বারবার আমার পাশের মানুষটিকে মারতে গিয়ে মরবো!!
তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের (বুদ্ধিজীবী?) আহাম্মকি, ধর্মান্ধদের উন্মাদপণা, ধনবানদের শোষণ, শক্তিমানদের অত্যাচার_কেন সহ্য করবেন ঈশ্বর??
ঈশ্বর থেকেই সব সৃষ্টি হয়েছে_তাহলে সবাই তো আমার একান্ত আপন!! “বসুধৈব কুটুম্বকম্”_ঋষিদের জ্ঞানের গভীরতা থেকে উঠে আসা এই কথার মর্যাদা আমরা দিলাম কি?
এইটা এখন ট্রেলার_পিকচার এখনো বাকি পড়ে রয়েছে ‌। ” দূরে… দূরে…. একটা আলো জ্বলবে, মৃতদেহ ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে একজন বেঁচে থাকা মানুষ, ওই আলো লক্ষ্য করে সেখানে পৌঁছে মানুষটিকে “ভাই রে”_বলে জড়িয়ে ধরবে। জিজ্ঞাসা করবে না_ তুমি হিন্দু না মুসলমান! তুমি উচ্চবর্ণ না নিম্নবর্ণ! তুমি ধনী না নির্ধন অথবা শিক্ষিত না অশিক্ষিত?”_গুরুমহারাজ এই কথাগুলিও বলেছিলেন।।