গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল_ ‘ঈশ্বরের অবতরণ বা অধিক সংখ্যায় মহাপুরুষদের জন্ম _ভারতবর্ষেই বেশি হয় কেন’?
গুরু মহারাজ উত্তর দিয়েছিলেন_”ভারতবর্ষ হোল পৃথিবী গ্রহের মাথা!তাই এটাকে ঠিক রাখতেই বারবার এখানে আসা! শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের একটু আধটু গন্ডগোল হোলেও শরীর ঠিক থাকে, কিন্তু “মাথা” একবার গন্ডগোল হয়ে গেলে, শরীর যত‌ই মজবুত হোক না কেন_তার দ্বারা শুধু ধ্বংসাত্মক কাজ হবে কিন্তু কোন সৃজনশীলতা পাওয়া যাবে না।
আমি চিন্তা করে দেখেছি__ তোদের ভারতবর্ষের ঐ গোটাকয়েক মহাত্মা–মহাপুরুষ এবং ঋষিদেরকে বাদ দিলে, তোদের(ভারতবাসীর) গর্ব করার মতো বা উল্লেখযোগ্য আর কিছুই থাকে না, এখানে শুধুমাত্র কতকগুলো “ছাগল” পড়ে থাকবে।”
এই কথার পর আবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল_ ‘তাহলে গুরু মহারাজ_ এখানে এত বেশি মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও, এই দেশের এত দূরবস্থা কেন? বারবার বিদেশীদের দ্বারা ধর্মান্তরিত হওয়া,অত্যাচারিত হ‌ওয়া, নিজদেশে প্রবাসীর মতো লাঞ্ছিত হয়ে বেঁচে থাকার কারণ কি’?
‌ উনি উত্তর দিয়েছিলেন _”এর অনেকগুলি কারণ রয়েছে ! তার মধ্যে একটা হলো _ভারতীয়দের মধ্যে তামসিকতা বেড়ে যাওয়া! আলস্য,প্রমাদ ও জড়তা _এই তিনটির কবলে পড়ে এখানকার মানুষ তাদের নিজস্বতা হারিয়ে ফেলেছিল। তাই মহাপ্রকৃতি বাইরের রজঃশক্তির প্রবেশ ঘটিয়ে তাকে ব্যালেন্স করার চেষ্টা করেছেন।
পরবর্তী কারণ হোল_ ভগবান বুদ্ধ এবং মহাবীর জৈনের শিক্ষাকে ঠিকমতো বুঝতে না পেরে_ যখন থেকে ভারতের ক্ষত্রিয়শক্তি অকারন অহিংসক হয়ে উঠল, তখন থেকেই বিভিন্ন যাযাবর লুটেরা,মরুদস্যুগণ বারবার ভারতের পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের রাজ্যগুলিতে প্রায় অবাধে আক্রমণ চালাতো, লুটপাট করত এবং এইরকম করতে করতে স্থায়ীভাবে ওইসব স্থানে দখল নিতে শুরু করলো! আর এইভাবে ওরা ধীরে ধীরে সমগ্র ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তার করে নিল। তবে সবচাইতে গুরুতর ঘটনাটি ঘটল _যখন এই মরুদস্যুদের পৃষ্ঠপোষকতায় মরুভূমির ধর্মাচরণ সমভূমিতে প্রবেশ করল! যদি রাজশক্তির নিয়োগ করা বেতনভোগী ধর্মগুরু না হয়ে, প্রকৃত মহাত্মা-মহাজন এই ধর্মমত প্রচার কোরতো _তাহলে সেখানে বিকৃতি আসতো না! কিন্তু জোর-জবরদস্তি কোরতে গিয়েই মূল শিক্ষা থেকে বহুদূরে সরে এসেছিল এরা! এইজন্যেই বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশের followers-রা ইসলামের মূলকেন্দ্র আরবের নির্দেশ ও মানে না।এরা ভাবে যে, আরবদেশীয়দের থেকেও এরা সাচ্চা মুসলমান!
মহাবিশ্বপ্রকৃতির(মাজগদম্বা) ইচ্ছাতেই ইউরোপীয়রা ভারতে এসেছিল।ওরা না এলে _ভারতবর্ষ আরও গভীর অতলে তলিয়ে যেতো। অশিক্ষা, কুসংস্কার, গোঁড়ামি,ব্রাহ্মন্যপ্রথার নিস্পেষনে দলে দলে প্রান্তিয় মানুষদের স্বেচ্ছায় অন্য ধর্মমত গ্রহণ এবং তার সাথে অত্যাচারী মুসলমান শাসকদের জবরদস্তি ধর্মান্তকরন _এই সবকিছুর হাত থেকে ভারতবর্ষকে বাঁচালো ইউরোপীয়রা!তারাও ভারতবর্ষের সম্পদ লুটপাট করেছে, ভারতবাসীকে অত্যাচার করেছে _১৫০/২০০ বছর এদেশকে পদানত করে রেখেছে _এসব সত্য! কিন্তু এটাও সত্য যে,এই রজঃশক্তি ভারতে না এলে _ভারতবর্ষের রজঃশক্তির জাগরণ ঘটতো না! চিন্তার গভীরতায় প্রবেশ করে দেখো_ আমার কথাগুলো বুঝতে পারবে”
এছাড়া আর যে কারণটি গুরুমহারাজ বলেছিলেন তা এখনও_অর্থাৎ আজ এই ২০২০- সালের এপ্রিল মাসেও, সমানভাবে কার্যকরী! উনি বলেছিলেন _”কোন সন্তান যদি মায়ের সামনেই তার পিতাকে অপমান করে- পিতার পিতৃত্ব কে অস্বীকার করে এবং অন্যকে পিতার মর্যাদা দিতে চায় __তাহলে ওই সন্তানের প্রতি মা চরম অপ্রসন্ন হন। তেমন তেমন হলে রণচণ্ডী মূর্তিতে মা ওই সন্তানের বুকে লাথি মেরে ফেলে, তার জিভ টেনে ধরে বলেন _”কি! তোর এত বড় স্পর্ধা, তুই আমার সামনে তোর বাবাকে অপমান করিস! তোর জিভ আমি টেনে ছিঁড়ে দেবো!”
ভারতবর্ষের এখন এই দশা চলছে_punishment period ! ভারতের প্রাচীন গৌরব, প্রাচীন পরম্পরা, বেদ-বেদান্ত, গীতা এবং ঋষি ও মহাপুরুষদেরকে অগ্রাহ্য করে __অসভ্য জনজাতির জোর করে ঢোকানো ধর্মমত, বিদেশিদের সস্তা দর্শন, বিদেশের অপসংস্কৃতি, যখন থেকে এদেশে প্রাধান্য পেল, তখন থেকেই মা জগদম্বা অর্থাৎ মহাবিশ্বপ্রকৃতি অপ্রসন্ন হলেন! এখন তাই ভারতের এবং ভারতবাসীর punishment period চলছে ! যত তাড়াতাড়ি ভারতবাসী পরের বাবাকে প্রাধান্য দেওয়ার মানসিকতা ত্যাগ করে পুনরায় নিজের পিতাকে অর্থাৎ এই দেশের প্রাচীন পরম্পরাকে, ঋষি বা মহাপুরুষদেরকে, ভারতীয় সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করবে-শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দেবে _তত তাড়াতাড়ি এই দেশ প্রকৃতঅর্থেই সমগ্র বিশ্বের কাছে “সমুন্নত মাথা” হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে! “মাথা” সে হয়েই আছে কিন্তু এখন যেন অনেকটাই ঝুঁকে রয়েছে!”